এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৭ || part - 7 || Era Kara part 7 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা


                     ।। তিন।।


এবার আপনাদের সামনে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করছি পড়লেই বুঝতে পারবেন, জানতে পারবেন ঐ হাড়হাঞ্জার কতখানি মনি ইজ্জত। তবে মিঃ হাজরাকে আমি ছাড়িনি। আমি সূঁচের সুতোর মত ওর পিছনে ধাওয়া করেছি বা ফলো করেছি। এই প্রসঙ্গ একটু অন্য রকমের।


"লালবিহারী জুনিয়ার হাইস্কুল" এই স্কুলে নীল রতন রায় নামে এক ভিন জায়গার মানুষ কেরানী পদে জয়েন করেছেন মাস খানেক পূর্বে। নীলরতন ছেলেটি মেধাবী, পড়াশোনাতে ভালো। বহু কষ্টে, লড়াই করে চাকুরীটা যোগাড় করেছেন। পারত পক্ষে কোন মন্ত্রী ওকে মদৎ করেছেন, শোনা যায় নীলরতন সেই মন্ত্রীর ছাত্র ছিলেন। জয়েন করার দুই মাস পর হিড়িম্ব মহারাজ ও সাথে তিন জন দুনম্বরী মাকড়াকে নিয়ে বডি ফেললেন নীলরতনের ভাঁড়া বাড়ীর সামনে। নীলরতন প্রথমতঃ একটু হকিয়ে গেলেন। মি হাজরা একটা দামী সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটাকে বত্রিশ মিলি মিটার রেডিয়াস করে বেশ কয়েকটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে নীলরতনকে বললো- মহাশয়ের কতদিন আগমন হয়েছে এই স্কুলে? নীলরতন বাবু বললেন,- সবে মাত্র চল্লিশদিন হলো। তিনি বুঝতে পেরেছেন এরা এক একটি পলিটিক্যাল মাকড়া। তবে এই লোকটা চেনা মনে হচ্ছে নামটা মনে পড়ছে না। এদের সাথে সংযত ভাবে কথা বলতে হবে। নতুবা নীলরতনের মাথা গরম হলে কোন মাকড়াকে পরোয়া করেন না। কোনদিন অন্যায়কে সমর্থন করেননি। শয়তানদের কথা বলার ঢঙ্গ দেখে মাথার উপর রক্ত উঠে গিয়েছিল। সেই সময় এক মহাপুরুষের বানী মনে পড়ে গেল "ক্রোধকা পাল্লা শিখো ব্যাটা"। ততক্ষনাৎ একশো ডিগ্রী হতে শূন্যতে রাগ নামিয়ে নিলো।


তোমার নাম কি? ব্যাটারা ভদ্রতাও জানে না। নম্র কন্ঠে বললেন,


- নীলরতন রায়। ট্যারাচে চোখে হাজরা বললো,


- আমাকে চেনো? নীলরতন বাবুর সরল উত্তর- না।


- আমার নাম হিড়িম্ব হাজরা পার্টীর লোকাল কমিটির সেক্রেটারী। আমিই এই অঞ্চলের সর্বেসর্বা।


তাই নাকি! ভালোই হলো আপনার সাথে পরিচয় হয়ে। ভেতরে আসুন, চায়ের ব্যবস্থা করি। হাজরা সিগারেট টেনে বললো,


তোমার বাড়িতে চায়ে চুমু দিতে আসিনি। এসেছি পার্টির স্বার্থে ডোনেশন নিতে। আরে এ পঞ্চা একে কত টাকা ডোনেশন দিতে হবে? পঞ্চা একটা মোটা খাতা খুলে বললো,


- গুরু বেশী না মাত্র কুড়ি হাজার পার্টি ফান্ডে, আর বার হাজার টাকা শিশুকল্যানের স্বার্থে। নীলরতন ধীর কন্ঠে বললো,


-এ এমন কিছু নয়। কবে দিতে হবে। অন্য আরেক চাচা বললো,


এখানে যখন চাকুরী করতে এসেছেন, তখন আমাদের সাথে হাত মিলিয়ে চলতে হবে। পায়ের তালে তালে এগোতে হবে। মিটিং মিছিলে সামিল হতে হবে। তাহলে আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন।


নীলরতন ব্যঙ্গ স্বরে বললেন,- আপনারা এই অঞ্চলের মধ্য মনি আপনাদের কথায় না চললে মানে, জলে বাস করে কুমীরের সাথে বিবাদ করলে চলবে? ঠিক আছে আপনারা আগামী মাসের দশ তারিখে আসবেন বত্রিশ হাজার টাকা আমি রেডি করে রাখবো মাইনে পাই বা না পাই ও ব্যাপারে আপনাদের পরিশ্রান্ত হতে হবে না। ছুঁচোরা পয়সা পাবি? আপন মনে নীলরতন বাবু অংক কষে বসলো; একটা ছেদাম পাবি না। অনেক কাট খড় পুড়িয়ে এখানে এসেছি। নিজেকে শক্তিশালী করে এখানে এসেছি। জয়েন করার পূর্বে এখানে একবার এসেছিলেন। সেই সময় এই হিড়িম্ব হাজরার জালচিত্র কাঠামো, চারিত্রিক এমন কি ওর ঠিকুজি সমন্ধে জানতে পেরেছে। নীলরতন জানতো একদিন যে কোন সময় ঝড় আসতে পারে। এরা অর্থ পিপাসী, গৃধনু, লোভ এরা সমাজের শত্রু এরা মনুষ্যত্ব কে হারিয়ে ফেলেছে। এহেন নেই এরা করতে পারে না। প্রথমেই বলেছি প্রশাসন এদেরকে ছত্রছায়ায় রেখেছে। হঠাৎ হিড়িম্ব হাজরা সাঁড়া হাঁসের মত গলার কন্ঠস্বরে নীলরতনের তন্দ্রা কাটলো- কি ভাবছেন টাকা টা আজই দিলো ভালো হতো। নীলরতনবাবু বললেন- দশ তারিখে আসুন খালি হাতে ফিরে যাবেন না। ওদের মধ্যে ঝন্টু নামে ছেলেটি ভিলেনের মতো পোজ করে বললো,- ফিরে যাচ্ছি ঠিক কথা, কিন্তু কথার যেন নড়চড় না হয়। চলো গুরু বাদুরপুর যেতে হবে ওখানে একটা সভা আছে। ওরা সকলে প্রস্থান করলো। ওরা চলে যেতে পুনরায় দেশের চিন্তায় ডুব দিলেন নীলরতন বাবু। আমাদের দেশের এই চাল চিত্র শয়তান, বদলোক, বেইমানি, মাস্তানদের নিয়ে পার্টী। আপনারাই বলুন এরা কি কখনো দেশের ও দশের ভাবনা ভাববে? এরা এক এক জন লাইসেন্স ধারী গুন্ডা। এদের চাল চলন সাধারন মানুষের থেকে অনেক পৃথক। এরা কখনো মানুষের ভালো করতে পারে না। সেদিন ওদের নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না, কারন যেখানে মানুষের চরিত্রের ঠিক নেই সেখানে চরিত্রহীন মানুষরাই আধিপত্য পাবে সব চেয়ে বেশী।


ক্রমান্বয়ে দিন ঘনিয়ে এলো। মাসের দশ তারিখ। স্বয়ং হিড়িম্ব বাবু সাঙ্গদের নিয়ে পুনরায় বডি ফেললেন। বত্রিশ হাজার টাকা বিনা পরিশ্রমে রোজগার। ভাগ বাটোয়ারা তো হবেই। খুব অল্প কথায় বলি, "ছেলের নামে পোয়াতি বাঁচানো" নীলরতন বাড়ীতে ছিলেন। ওদের গুরু গম্ভীর ডাক শুনে বেরিয়ে এলেন। ঝন্টে নাটকের কায়দায় বললো, - আমরা এসে গেছি মাগুর ছাড়ুন চলে যাবো আমাদের তাড়া আছে। নীলরতন বললো আপনাদের আদেশ অমান্য করবে কার এতো ক্ষমতা আছে? টাকা নিয়ে আসছি। নীল রতনবাবু পুনরায় বাইরে এসে হিড়িম্ব বাবুর দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, হিড়িম্ব বাবু দেখুন তো আপনাকে কে যেন ফোন করেছেন। হিড়িম্ব মোবাইল টা হাতে নিয়ে হ্যালো করতেই একটা কাঁচা খিস্তি শোনালেন। - কেরে দুঃশাসন, কতদিন পার্টী করছিস? হিড়িম্ব ছেড়েদেবার পাত্র নয়। সেও গলার শির ছিঁড়ে জোরে বললো- তুই কেরে স্টুপিট? নীলরতন বাবু মোবাইলের স্পীকার ভালো রকম বাড়িয়েছেন তাই সকলে তাদের খিস্তি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে। - আমি তোর বাপ। আমি মন্ত্রী অসীম রায় বলছি, শোন শয়তানের দল এই সব মস্তানী ছাড়। তোদের মত মস্তানদের জন্য পার্টীকে একদিন ডুবতে হবে। তোদের মত জানোয়ারদের জন্য পায়ের নীচে মাটি থাকবে না। ফোনটা ছাড়বি না। শোন এই নীলরতনের গায়ে যদি একটা আঁচরের দাগ বসে তাহলে তুই যেখানে থাকিস না কেন, যে কোন গর্তে থাক না কেন ঠিক খোঁজ করে বের করবো। মনে রাখবি আমি অসীম রায় বলছি। মন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যরা বেশ ভালো ভাবেই চেনেন ও জানেন। অমানুষের দল, এই রাজনীতি করছিস্? মিঃ হিড়িম্ব হাজরা বাবু মোবাইলটা নীল রতনের হাত দিয়ে বাঘের গর্জনের মতো আওয়াজ করে ততক্ষনাৎ কপূরের মতো উবে গেলো।


মিঃ হাজরা অসীম রায়কে ভালো ভাবেই চেনে। লোকটা ভীষন রাশভারী, অধিকাংশ মানুষ ভয় ও করেন আবার শ্রদ্ধা ও করেন। নীল রতনের সাথে লড়াই করা মুশকিল হবে। হয়তো ওর জন্য নিজের আধিপত্য না থাকতে পারে। এই ব্যাপারে লেজকে একটু গুড়িয়ে নিতে হবে। তবে সুযোগ পেলে নীলরতনের বাপের শ্রাদ্ধ করবে করে ছাড়বে। অদ্যাবধি কারো কাছে মাথা নত করেনি। ব্যাটা একেবারে বুকের মধ্যিখানে লাথি মারলো? বদলা সে নেবেই, তবে এ কথা ঠিক এই হিড়িম্ব হাজরাকে যে মাকড়া অপমানিত করবে তাকে সহজে ছাড়বে না। ফাটা রেকর্ড এর মতো অপমানের সুর মাথায় বাজতে থাকলো।



পর্ব - 6 || part -6


পর্ব - 8 || Part -8

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024