এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৫ || part - 5 || Era Kara part 5 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা

 



দিন তারিখ মনে না থাকলেও সময় ছিলো। গ্রীষ্মকাল আমি মামা বাড়ী হতে ফিরছি। প্রখর রোদে পথ ক্লান্ত হয়ে ভাবলাম এই বটবৃক্ষের তলায় বিশ্রাম নিই। সুতরাং বিলম্ব না করে ঐ বটবৃক্ষতলায় বসে পড়লাম। আমার মত আরো কয়েকজন বৃক্ষতলে বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ গামছা পেতে শুয়ে ঘুমোছে। আবার কেউ মাটিতে বসে গামছাটাকে ভাঁজ করে পাখা স্বরুপ ব্যবহার করে গরম থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। আমি ও একপাশে বসে ছিলাম সামনে চওড়া রাস্তা, ঐ দিকে অনেকে যাতায়াত করছে। রাস্তা পানে আমি তাকিয়ে আছি, হঠাৎ একটা ছেলে তার মুখ দিয়ে এমন অশ্লীল খিস্তিবের করলো যে একশো মিটার বেগে আমার কানে ধাককা মারলো। বললো- শালা ছোট লোকের বাচ্ছা একটা আই.সি.ডি.এস চাকুরীর জন্য এক পার্টির নেতার শয়ন কক্ষে বৌমাকে পাটাতে দ্বিধা করলো না। আমাদের জাতির কলঙ্ক। মুখ থেকে প্রায় ২০ গ্রাম থুথু বের করে মাটিতে নিক্ষেপ করলো। আমি কাছে গিয়ে ওর সাথে বন্ধু পাতালাম। আমার ধান্দা কি সকলেই বুঝতে পারছেন। তাছাড়া প্রতিমানুষের সাথে এমন ভাবে মিশে যাই সে আমার যেন আপন মানুষ হয়ে উঠে। কিছুক্ষন নানা আলোচনা করে তার ব্রেনটাকে এমন ওয়াশ করলাম যে, সে গলগল করে পুরো ঘটনা আমাকে প্রকাশ করলো। আমি লেখক, মানুষের কাছে যে ঘটনায় শুনি না কেন আমার মস্তকে ঠিক জায়গাতে আটকে রাখি যথা সময়ে কাজে লাগাই। ঘটনা কি, কোথাকার তা প্রকাশ করছি। মন দিয়ে পড়ুন। ঘটনা হলো "পানুড়ী” একটি ছোট্ট গ্রাম পনের-কুড়ি ঘর মিলে গড়ে উঠেছে এই পানুড়ী গ্রাম। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ব্রেন একেবারে ঝক ঝকে কাঁচের মতো পরিস্কার। তবে বুধুরামের বুদ্ধি খাঁসা। নিজের স্বার্থ ছাড়া একপা এগোই না। বুধুরামের রিং মাষ্টার হলেন স্বয়ং ধর্মরাজ হিড়িম্ব হাজরা। বুধুরাম হাজরা বাবুকে ভগবানের মত মান্য করেন। বহুদিন ধরে পার্টি করছেন বিশিষ্ট ভদ্রলোক বুধুরাম। তিনি জানেন হাজরা বাবুকে যদি সন্তুষ্ট করতে পারেনকোন দিক দিয়ে, তাহলে কেল্লা ফতে। একদিন কথায় কথায় বলে ফেললেন বুধুরাম - আপনার মতো মানুষ হয় না হাজরা বাবু। আপনি কথায় কথায় চাকুরী দিতে পারেন, আত্মায় আঘাত থাকলে সর্বনাশও করতে পারেন। আই.সি.ডি.এসের চাকরী, পার্শ্ব শিক্ষকের চাকরী আপনার হাতের মুঠোয়। তবে গরীবের স্বার্থে কোন দিনই গা ভাসান না। ওকথা শুনে হাজরা বাবু বললেন- শোন বুধুরাম, কথায় আছে না, "ফেলো কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর?" যুগ অনুপাতে কাজ করতে হয়। তাছাড়া বহু লড়াই করে ঐ আসনটি নিজের আয়ত্বে এনেছি। তুমি টাকা দাও তোমার ও পরিবারের সদস্যর চাকুরী হতে পারে। আই.সি.ডি.এস এ পাঁচটি পদ খালি আছে। বুধুরাম বললো- তাহলে আমার বৌমার একটা হিল্লে করুন হাজরা বাবু।


টাকা দিলে হয়ে যাবে, সত্তোর থেকে আশি হাজার লাগবে।

হাজরা বাবু ওর পরিবর্তে যদি কোন কিছু উপহার দেওয়া যায়।

অন্য কি উপহার দেবে?

হাজরা বাবু খুব ভালো উপহার দেবো। আপনার বাম কানটা একটু আমার দিকে এগিয়ে দিন চুপি চুপি বলবো। শুধু আপনার আর আমার মধ্যে থাকবে। হাজরা হলো এক নম্বরের শয়তান। "সাপের হাঁচি যেমন বেদে চেনে," তেমনি বুধুরামের মুচকি হাসিতে কিসের ইঙ্গিত রয়েছে সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। সে জন্য ততক্ষনাৎ বাম কানটা বাড়িয়ে দিতে, বুধুরাম, ফিস্ ফিস্ করে বললো,- বৌমা আপনার পাশে পর পর কয়েকটা রাত অর্থাৎ নিশিযাপন করলে নিশ্চয়ই আপনি খুশি হবেন? চরিত্রহীন হিড়িম্ব হাজরা আলতো ভাবে গালে একটা চাপড় মেরে বললো- তোমার বৌমার চাকুরী প্রথমেই হবে। এতো সুন্দর উপহার দেবে আমি না করতে পারি? তবে বৌমাকে আমার অফিসে সোমবার দিন দুপুর বারটার সময় নিয়ে যাবে ফর্ম ফিলাপ হবে আর দর্শন করাও হবে। বুঝছো বুধুরাম কথাটা মগজে রেখ ঠিক দুপুর বারটা। হাজরা এইখানে কথাকে যবনিকা করে খুশী মনে রওনা হলেন। আপনারা সকলেই বুধুরামকে বাহবা দিন। তবে বিশ্বাস করুন বুধুরাম বাবুর বাবা হাইস্কুলের অংকের টিচার ছিলেন। ঐ তল্লাটে সকলেই তাঁকে সম্মান দিতেন। মানুষটা গুরু গম্ভীর হলেও মনটা ছিলো পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন এবং পরউপকারী। এক সময় তিনি দেশের কাছে লিপ্ত ছিলেন। এক কথায় স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঐ জন্য অঞ্চলগত ভালোনাম ছিলো। কিন্তু এবার মনে হয় নিজের ও পরিবারদের মানইজত সব খোয়াবেন। মান যশের চেয়ে অর্থই হলো তার কাছে প্রধান। বর্তমান যুগে চায় টাকা। টাকা না থাকলে দুনিয়াটাই ফাঁকা। তাই সেদিন কথায় কথায় তার বৌমা শ্যামলীকে বললেন, শোন বৌমা, যে কাজটা করাবো একমাত্র তোমার ও আমার মধ্যে থাকবে। দ্বিতীয় প্রাণীর যেন কর্নগোচর না হয়। বর্তমানে টাকাই হলো পরম রতন ও পরম ধন। অবশ্য এও জানি অর্থই হলো অনর্থের মূল। কিন্তু ঐ পূর্বপুরুষদের বানী এখন অচল পয়সার মত। যার অর্থনেই তার জীবন কয়লা। শুধু নিম পাতার মত তেঁতো মনে রাখবে। তাছাড়া সুযোগ যখন হাতের মুঠোর মধ্যে তখন তাকে কাজে লাগানো বুদ্ধি মানের কাজ। তুমি বুদ্ধিমতী ও শিক্ষিতা তোমাকে বোঝান আমার কাজ নয়। লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়েরা যে কোন চাকুরীর জন্য শত কষ্ট ছাড়া দিনের পর দিন হতাশ হয়ে, মনের মধ্যে গভীর বেদনা নিয়ে নিঃস্পভ হয়ে দিনকাটাচ্ছে। বারংবার জীবনটাকে ধিককার দিচ্ছে, শুধু একটাই প্রশ্ন, ঈশ্বর কেন এই মাকড়াদের সমাজে এনে সমাজ টাকে ধ্বংস করে দিলো, বেকারত্ব বাড়ালো। এক শ্রেণীর মানুষ হাত পা তুলে গৌরাঙ্গের মতো নাচানাচি করছে আর এক শ্রেণী অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বুভুক্ষু হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শ্যামলী ওর ভাষন শুনে উত্তর দিতে চাইছিলো কিন্তু পারলো না নিজের দুর্বলতার জন্য। কারন কোন এক দিন ওর খুড়তুতো দেওর (ঠাকুরপো) দিবাকরের সাথে এক আপত্তিকর সম্পর্ক করতে চেয়েছিলো। তার কারন হলো সে দিন শ্যামলীর ফুলশয্যার রাত্রে তার স্বামী হরে রাম তাকে সরাসরি বলে ছিলো- দেখ বৌ, আমি তোকে কোন দিন দেহ ও মনের সুখ মেটাতে পারবো না। কারন আমি এক রকম হিজড়া বলতে পারিস। আমি বিয়ে করতাম না, এক মাত্র মার জন্য আমার বিয়ের মালা পড়তে হয়েছিল। তোর রূপ যৌবন, উন্মাদনাকে শান্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি অথর্ব, নপুংসক, আমায় ক্ষমা করিস। সেদিন রাত্রে ঘর হতে বেরিয়ে গিয়েছিল। সেই রাত্রে হরেরামের কথা শুনে ক্ষোভে, দুঃখে মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করেছিলো শ্যামলী। ঈশ্বর তার প্রতি কেন অবিচার করলেন! কেন এ ভাবে প্রতারনা করলেন! তবে কি পতিত পাবনকে অপমানিত করার জন্য ঈশ্বর তার প্রতিশোধ নিলেন!



পর্ব - 6 || part -6


পর্ব - ৪ || part - 4

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024