Posts

Showing posts from June, 2022

উপন্যাস - লাস্যময়ীর ছোবল || সিদ্ধার্থ সিংহ || Lashamayir Chobol by Sidhartha Singha || Fiction - Lashamayir Chobol part -8

Image
  আট বেলা তিনটে নাগাদ টেলিফোন ভবনের নীচে এসে দাঁড়াল ঋজু। অনেক দিন পর এ রকম সময় ও এল। আগে প্রায়ই আসত। ওর জন্য টিফিন দিয়ে যেত। আপেল, আমসত্ত্ব, কাজু, কিসমিসের প্যাকেট, দই, সন্দেশ। কিন্তু কোনও দিনই আঙুর আনত না। প্রথম দিন আঙুর দেখেই কণিকা বলেছিল, আমি আঙুর খাই না। ওটা ঠাকুরের নামে উৎসর্গ করে দিয়েছি। অত টিফিন দেখে কণিকা বলেছিল, এত খাবে কে? — তুমি। — পাগল নাকি? এ তো আমার এক সপ্তাহের টিফিন। — যতটা পারবে, খাবে। না খেতে পারলে ফেলে দেবে। — পয়সার জিনিস ফেলে দেব? — তা হলে অন্যদের দিয়ে দিও। তখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ও। টিফিন দিতে আসার জন্য ঋজুকে অনেক আগে বাড়ি থেকে বেরোতে হত। তাই কণিকাই একদিন বলেছিল, শুধু শুধু এ সব দেওয়ার জন্য তোমাকে এত আগে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে না। আমাদের বেয়ারাটাকে দিয়ে আমি যা হোক কিছু আনিয়ে নেব। তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝেই এটা ওটা সেটা নিয়ে ও চলে আসত। কিন্তু ওর আজকের আসাটা একদম অন্য কারণে। সে দিন ওর অফিসের কাছে এসেও ঋজু কোনও ফোন করেনি। কণিকা বুঝি ভাবতেই পারেনি, ও আসবে। তাই গেটের কাছে ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে গিয়েছিল সে। ওকে দেখে ঋজুরও কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল। ও তো এমনিতে এত সাজে না! ত

ছোট গল্প - ফল্গুধারা || লেখক - চৈতালী রায় || Short story - Falgudhara || Written by Chaitali Ray

Image
  ফল্গুধারা     চৈতালী রায়  দিব্যেন্দু সকালে চা খেয়ে খবরের কাগজটা ওল্টাতে ওল্টাতে ভাবলো - আজ শর্মিলাকে সব কথা খুলে বলবো। দিব্যেন্দু পুরুলিয়ার ছেলে। কলেজে পড়তে কলকাতায় এসেছিলো। একটা ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতো। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। বাড়ির সকলেই ওর দিকে তাকিয়েছিল একটা চাকরির জন্য। দিব্যেন্দু শর্মিলাদের বাড়িতে আসে - তাও প্রায় বছর ঘুরতে চললো। শর্মিলা তার মনের চারপাশে গন্ডী দিয়েছে। ভেতরে যাই হোক - বাইরে কিছুই যেন প্রকাশ না পায়। শর্মিলার কথায় সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজ সব এলেও মনের কোন খবর বাইরে আসে না। সে স্রোতা হয়ে গল্প শোনে। দিব্যেন্দু বলে, বন্ধু হিসেবে তুমি খুব ভালো বন্ধু। অফিস থেকে ফিরে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে দিব্যেন্দু শর্মিলাদের বাড়িতে এলো । ওকে কিছুটা খুশি খুশি লাগছে। বললো - আজ তোমাকে তমালির কথা বলবো। তমালি আমার অনেক দিনের পুরনো বন্ধু। তখন কলেজে পড়ি। ওর দাদা আমার সাথে পড়তো। একদিন ওর দাদা আমাকে ওদের বাড়ি নিয়ে গেলো। বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে গিয়ে ওর বোন তমালির সাথে আলাপ করিয়ে দিলো। দেখলাম, ও একটা বই পড়ছে। এরপর আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -8

Image
  বাবা উদাস হয়ে জানালার পানে তাকিয়ে ছিলেন চক্ষুদ্বয়কে স্থির করে। আচার্য্য মশায়ের এতো ভাষণ দেওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম। গত কয়েক মাস আগে বাবা ওদের কোন এক মজলিসে বলেছিলেন, দাদা ডাক্তারী পাশ করলে যে সুদিন ফিরে আসবে তাতে তার খরচা তুলে নেবেন। আচার্য্য মশায় ঠাকুরদার আমল হতেই আমাদের প্রতি হিংসুটে ছিলেন। তিনি উপনিষদের কথা ব্যাখ্যা করে বোঝালেন সত্য, কিন্তু এসময়ে আমাদের কোন ফল হলো না বরং শোকের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।  বাবা তার কথায় আরো দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে কিভাবে দিনগুলো কাটাতেন তা ঈশ্বরই জানেন। তবুও নিজেকে শক্ত করে নানা ভাবে বাবাকে বুঝিয়ে কয়েক মাস অশেষ দুঃখ ভোগের পর মনে চাঞ্চল্য কাটিয়ে স্থৈর্য আনলাম সত্য, কিন্তু বাবা কোন প্রকারে দাদার কথা ভুলতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। তার এই শোকাহত জীবনের মুখচ্ছবি আমাকে আকুল করে তুলে ছিল। তাই ঐ জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ঐ দৃশ্য দেখে মাঝে মাঝে আমাদের উভয়ের মৃত্যু কামনা করতাম। আবার কখনও কখনও ভাবতাম আমাদের জীবন রথ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।  প্রতিদিনই একরকম উপবাসে দিন যেতো। সুতরাং দারিদ্রই ছিলো তখন দ

ছোট গল্প - থিম || লেখক - চিরঞ্জিৎ সাহা || Short story - Theme || Written by Chiranjit Shaha

Image
      থিম         চিরঞ্জিৎ সাহা       অষ্টমীর রাতেই ঘটল বিপর্যয়টা। ঘড়ির কাঁটা সবে আটটা পেরিয়েছে। বাইরে তখন লাখো মানুষের ঢল। হঠাৎই জ্বলে উঠল মূল মণ্ডপের সামনের দিকের বৈদ্যুতিক তার। কয়েক সেকেন্ড আলোর দপদপানি। মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গেল সব। ছিটকে আসা আগুনে ঝলসে উঠল মাতৃমূর্তির একাংশ। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল লাইনসমেত রেলগাড়ি। তারপর পেরিয়ে গেছে তিনটে ঘন্টা। প্রাথমিকভাবে দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও দায়িত্বসহকারে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে মুক্তিদূতের স্বেচ্ছাসেবকগণ। পুড়ে যাওয়া থিমের মাতৃমূর্তিকেও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র। পরিবর্তে সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে শাস্ত্রীয় উপাচারের নিমিত্তে নির্মিত মণ্ডপের একপাশে রাখা ফুট তিনেকের সাবেকি দুর্গাপ্রতিমা। ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। সামনে অপেক্ষমান বিশাল জনসমুদ্র। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছে দর্শনার্থীদের। উদ্যোক্তাদের তরফে মাইকে বারংবার আশ্বস্ত করা হলেও পরিস্থিতি পুরো বিশ বাঁও জলে। জনপ্রিয় সংবাদপত্র থেকে লিডিং নিউজ চ্যানেল , প্রখ্যাত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকার --- পুরস্কারের বন্যা এবার মুক্তিদূতে। ইতিমধ্

উপন্যাস - লাস্যময়ীর ছোবল || সিদ্ধার্থ সিংহ || Lashamayir Chobol by Sidhartha Singha || Fiction - Lashamayir Chobol part -7

Image
  সাত টেলিফোন ভবনে ঢোকার মুখেই পর পর তিন-চারটে কয়েন-বুথ। এক টাকার কয়েন ফেলে ঋজু টপাটপ বোতাম টিপল কণিকার মোবাইলে— আমি এসে গেছি। — কে বলছেন? থমকে গেল ঋজু। এত দিন কথা বলার পরেও ওর গলার স্বরটা কণিকা চেনে না! — আমি। — ও। — কখন নামবে? — আমি বেরিয়ে পড়েছি। আর এক বার ধাক্কা খেল ঋজু। কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ও প্রায় রোজই ঠিক এই সময়ে আসত। এসে, ফোন করলে কণিকা নামত। কোনও কোনও দিন পাঁচ-দশ মিনিট, আবার কখনও সখনও আধ ঘণ্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে হত ওকে। কিন্তু কণিকা তো কোনও দিন পাঁচটার আগে বেরোয় না! তা হলে কি পাঁচটা বেজে গেছে! ও কোনও দিন ঘড়ি পরে না। সামনে দিয়ে একটা লোক যাচ্ছিল। ও তাকে জিজ্ঞেস করল, ক’টা বাজে? লোকটা বলল, পাঁচটা পঁচিশ। মাত্র দু’দিন আসেনি সে। তাতেই এই! একটু অপেক্ষা করতে পারল না! মুক্তাঙ্গনের ওই অনুষ্ঠানে ঋজুর অনেক বন্ধুবান্ধব এসেছিল। যাদের সঙ্গে ওর নিয়মিত যোগাযোগ আছে, তারা যেমন এসেছিল, এসেছিল তারাও, যাদের সঙ্গে ওর দেখা হয় ছ’মাসে ন’মাসে এক-আধ বার। এসেছিল বারুইপুরের হাননানও। তার সঙ্গে এসেছিল বীরেন্দ্র পুরকাইত নামে একজন। উনিও বারুইপুরে থাকেন। বারুইপুরের লোক শুনেই, অত ব্যস্ততার মধ্যেও ঋজু তাকে জিজ্ঞেস করেছ

ছোট গল্প - বোধনের রোদ্দুর || লেখক - রঞ্জিত মল্লিক || Short story - Bodhoner Roddur || Written by Ranjit Mallick

Image
  বোধনের রোদ্দুর রঞ্জিত মল্লিক                           "........শঙ্খ শঙ্খ মঙ্গল গানে                 ..........জননী এসেছে দ্বারে......."               পুজো আসতে আর বেশী দেরী নেই। শরৎ প্রকৃতির নয়নাভিরাম রঙীন জ্যামিতি প্রতিনিয়ত ইঙ্গিত দিচ্ছে মা দশভূজার মর্ত্যে আসার আগমন। ঢাকের মাতাল করা মোলায়েম মল্লারে ভেসে আসছে আগমনীর সুর।              তাঁর টুকরো টুকরো অণু, পরমাণু  চোখে মুখে ছড়াতেই উৎসবের আনন্দে বুকের "ভিসুভিয়াস"টা দপদপ করে উঠছে সকলের। শিরায় শিরায় ফুটন্ত হিমোগ্লোবিনে আবেগের আঁচ ধরা পড়ছে।              শতুর পাড়ার পুজো এবারে পঞ্চাশে পড়ল। পাড়ার সকলের ব্যস্ততা বেশ তুঙ্গে। প্রতিদিনই চলছে শলা পরামর্শ। পুজোকে সার্বিকভাবে সফল করে তুলতে সকলেই দল দলে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। আট থেকে  আশি সকলের চোখে মুখে খুশীর ঝলসানো সোনামুগ রোদ্দুরটা হামাগুড়ি  দিচ্ছে।              পঞ্চমীর সকাল থেকেই শুরু হল নিন্মচাপের দাপুটে ব্যাটিং। সকলের  মনখারাপ,  দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেকের চিন্তা পঞ্চাশ বছরের পূর্তির আনন্দটাই না মাটি হয়ে যায়।                  শতু সারাদিন ঘরের মধ্যেই ছিল গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -7

Image
  তিন  ক্রমান্বয়ে বছরের পর বছর কেটে গেলো। কিভাবে যে কাটলো তা আমি ও বাবা ছাড়া কেউ অনুভব করেনি। দাদার ডাক্তারী পড়া প্রায় শেষ হতে চলেছে। জমি জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। উপরন্তু হেট মাস্টার মশায় সুরজিৎ বাবু কিছু টাকা ধার দিয়েছেন। এখন আর টাকার দরকার হবে না। এবার একবছর Compulsary Internship করার পর বাড়ী আসবে। কলেজে থেকে যে টাকা পাওয়া যাবে ওতে নিজের খরচা সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারবে।  দাদার পত্র পেয়ে আমরা উভয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। বড় চিন্তায় ছিলাম এ কারণে বাবা কপর্দক হীন ছিলেন। সুখ যে কি জিনিস তখন ভুলে ছিলাম অতীত তো অনেক আগেই ভুলে গেছি। তাই দুঃখকে আকড়ে ধরে দিন যাচ্ছিল আমাদের দারিদ্রের অমানিশা কেটে সুখের স্বর্ণালি প্রভাতের প্রতীক্ষায় ছিলাম। অনেক সময় ভাবতাম, সেই সুখের তরীতে নিশ্চয় চড়তে পারবো।  কিন্তু বাবার ও আমার আশা কি পূর্ণ হয়েছিলো? সত্যি বলছি, আমি এক ভোরের স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে দেখছিলাম, আমার দাদা ডাক্তারী পাশ করে গ্রামে এসে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় একটা ছোট ডিসপেনসারি করেছে। মহামান্য গণপতি চ্যাটার্জী নানা সুগন্ধি ফুলে সাজানো ডিসপেনসারিকে উদ্বোধন করলেন। এই শুভ দিনে মাননীয় রামক