ছোট গল্প - আমি তো জারজ || লেখক - অষ্ট দেয়াশী || Short story - Ami to jaraj || Written by Asto deasi


 আমি তো জারজ

অষ্ট দেয়াশী




আমাদের দেশে এখন ও একটি শিশু তার বাবার পরিচয়ে পরিচিত হয়। এটা আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা। কেন একটি শিশু তার মায়ের পরিচয়ে বাঁচতে পারেনা। 
মীরা একটি গরীব ঘরের মেয়ে পড়াশোনা কি জানেনা। 
ছোট বেলায় বাবা মা মারা যাওয়ার জন্য সে স্কুলে ভর্তি হয়নি। জেঠা জেঠি তাকে মানুষ করেছে। সারাদিন গাধার মতো খাটুনি খাটতে হয় তাকে জেঠি তাকে একদম দেখতে পারেনা। কথায় কথায় খাওয়ার খোটা দেয়। সব মুখ বুঝে সহ্য করতে হতো তাকে। কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই যে তার। 
এদিকে গ্রামের দুষ্ট ছেলেদের মীরার দিকে নজর ছিল। এদের মধ্যে মাধব নামে একটি ছেলের নজর বেশি ছিল মীরার দিকে কিন্তু মীরার আবার মানবকে খুব বিশ্বাস করতো। এই বিশ্বাস এনে দিল তার জীবনে সর্বনাশ। 
একদিন কথার ছলে মীরাকে ডেকে নিয়ে গেলো কাজ দেবে বলে। মাধব তাকে রেফ করে এবং বলে যদি কাউকে বলে তাহলে তাকে মেরে ফেলবে। তাই মীরা কাউকে সেই কথা বললো না। 
মাধব ছিল গ্রামের মোড়লের ছেলে। একদিন মীরা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। জেঠা ডাক্তার বলে মীরা মা হতে চলেছে। শুনে জেঠা জেঠির মাথায় হাত কি করবে মীরাকে বলে তার এই অবস্থার জন্য কে দায়ী। মীরা সব কথা বলে জেঠা মীরা কে নিয়ে মোড়লের বাড়ি যায় মোড়ল কথা শুনে মীরা কে তার জেঠা কে মারে। লোক ডেকে বলে এই মেয়ে দুচরিত্রা তাই একে গ্রামে রাখা যাবেনা। গ্রামের অন্য মেয়েরা খারাপ হয়ে যাবে তাই গ্রাম থেকে মীরাকে তাড়িয়ে দিলো। 
মীরা কোথায় যাবে কে তাকে আশ্রয় দেবে। 
মীরা শহরের দিকে যাত্রা শুরু করলো সে  ট্রেনে মাথা দিতে গেলো এক বৃদ্ধা মীরা কে তাদের বস্তিতে নিয়ে গেলো। মীরা কে সে তার বোনের মেয়ের পরিচয় দিলো। 
কিছু মাস পর বস্তিতে মীরা ছেলে হলো। হঠাৎ একদিন সেই বৃদ্ধা মারা গেলো। মীরার জীবনে আবার দুঃখ নেমে এলো কী দোষ করে ছিল মীরাকে ঈশ্বর বার বার তাকে কষ্ট দিচ্ছে। বস্তির সকলে তাকে তার মাসীর কাঁচা আনাজের ব্যবসা করতে বললো। ছেলেকে মানুষ করার জন্য মীরা তাই করলো। 
দেখতে দেখতে মীরার ছেলে ছয় বছরের হয়ে গেলো রকি দেখে কতো ছেলে মেয়েরা তার বয়সি রোজ স্কুলে যায় তাহলে সে কেন স্কুলে যাবে না। সে মায়ের কাছে স্কুলে যাবার জন্য বায়না করলো। 
পরের দিন মীরা রকিকে নিয়ে স্কুলে গেলো হেডমাস্টার মীরা কে রকির বাবার নাম জানতে চাইলো কিন্তু মীরা নাম বলতে পারলো না তাই রকি কে স্কুলে ভর্তি করাতে পারলোনা। তিরস্কার হয়ে তারা স্কুলে থেকে চলে এলো। সারাদিন ধরে রকি স্কুলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে যদি দয়া করে তাকে ভর্তি করে বাচ্চা ছেলে মন সে জানে না এই সমাজে নিয়ম। 
বস্তিতে সকলে তাকে বে জন্ম বলে ডাকে একদিন রকি একটি ছেলের মাথা ফাটিয়ে দেয়। বস্তিতে সকলে তাকে অপমান করতে লাগলো রোজ অপমানের লজ্জা মীরা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মা হত্যা করলো। 
পরের দিন রকি দেখলো তার মায়ের ঝুলন্ত দেহ টা মায়ের পা ধরে চিৎকার করতে লাগলো বস্তির সকলে ছুটে এলো। থানা থেকে পুলিশ এলো মীরা কে নিয়ে চলে গেলো 
কে দেখবে রকি কে খিদের জ্বালায় রকি একটি বাড়িতে রুটি চাইতে গেলো বেজন্মা বলে তাকে তাড়িয়ে দিলো। 
বেশ কয়েক বছর কেটে গেলো রকি এখন মস্ত গুন্ডা অনাহাসে সে মানুষ খুন করতে পারে। দিনের পর দিন শহরের ডাকাতি বাড়তে লাগল। কিন্তু পুলিশ ধরতে পারলো না। 
একদিন রকি এক নেতাকে মারার সুপারি নিলো একজনের থেকে দশ লক্ষ টাকা। প্রতিটি ছেলের ব্যাঙ্ক কে সেই টাকা জমা করে দিলো কারণ সে জানতো যদি সে ধরা পরে আর দশটি ছেলে বেঁচে যাবে তাদের ভবিষ্যৎ। 
একটি পিছিলে রকি ঢুকে নেতার মাথায় গুলি করে দিলো নেতা সেখানে মরে গেলো। পালাতে গিয়ে রকি ধরা পড়লো। ২২ শে জানুয়ারি রকি বিচার রকি কে বিচার কিছু বলার সুযোগ দিলো রকি চিৎকার করে বলে কোথায় ছিল সেই দিন যেদিন তাকে তার মা স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়ে ছিল বাবার পরিচয় দিতে পারেননি বলে স্কুলে থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সে আইন মানেনা আদালত মানেনা। তার একটি পরিচয় সে জারজ সন্তান। 
বিচারে তাঁর ফাঁসি হলো। সে হাসতে লাগলো আর চিৎকার করে বলে এ সমাজে কোন সন্তান যেন রকি মতো না হয় রকি হারিয়ে গেলো। 

Comments

Popular posts from this blog

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024

রাজ্যে নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ || WB ICDS Supervisor Recruitment 2024 || সুপারভাইজার ও হেলপার নতুন নিয়োগ