চোদ্দো শাকের ঔষধিগুণ - কালী শঙ্কর মিত্র || স্বাস্থ্য বিভাগ
চোদ্দো শাকের ঔষধিগুণ
কালী শঙ্কর মিত্র
কার্তিক মাসে অমাবস্যার দিন কালীপুজো হয়। শাস্ত্রমতে কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী হিসাবে পালন করা হয়। এই দিন যম-তর্পনও করা হয়। তাই এই দিনটি যম-চতুর্দশী হিসাবে পালিত হয়। আবার এই দিনটি নরক-চতুর্দশী হিসাবেও পালন করা হয়। এই দিনে দেবগৃহাদিতে চতুর্দশ দীপদান করা হয়।
শাস্ত্রমতে এই দিনে চোদ্দো শাক খাওয়া হয়। চোদ্দো শাক খেলে যমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এইসব হল শাস্ত্রমত। কিন্তু কার্তিক মাস হল ঋতু পরিবর্তনের সময়। এই সময়ে হেমন্তের হিমেল হাওয়া বয়। তাই সর্দি,কাশি বৃদ্ধি পায়। কার্তিক মাসে বেশি খাওয়া-দাওয়া করলে পেটের অসুখ হয়,বায়ু কফও বৃদ্ধি পায়। তাই,এই সময় চোদ্দো শাক শরীরের পক্ষে দারুণ উপকারী।
এই সময় চোদ্দো শাক নিয়মিত খেলে নানারকম রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে এই চোদ্দো শাক খাওয়া প্রায় উঠেই যেতে বসেছে। তবুও বর্তমানে কিছু মানুষ ভূত-চতুর্দশীর দিনে চোদ্দো শাক খেয়ে থাকেন। তাঁরা চোদ্দো শাক বাজার থেকে কিনে খান। কিন্তু,বাজারে চোদ্দো শাক বলে যা পাওয়া যায় তা আসলে চোদ্দো শাক নয়। চার-পাঁচরকমের শাক মিলিয়ে চোদ্দো শাক তৈরি করে বাজারে বিক্রি হয়। তাই,শাস্ত্রমতে চোদ্দো শাকের নাম জানা দরকার। এই চোদ্দো শাকের নাম ও ঔষধিগুণগুলি হল-
১) সরিষা(Brassica Campesstres):-এই শাক পেটের পক্ষে খুব ভাল।
২)ওল(Amarphophallus Campanulatus):-এই শাক শরীরের পক্ষে ভীষণ উপকারী। এই শাক অর্শরোগে দারুণ কাজ দেয়। এছাড়া হজমেও সাহায্য করে।
৩)বেতো(Chnopodium Album):-অরুচিতে এই শাক রুচি আনে। অনিদ্রা ও পেটের রোগে এই শাক উপকারী। এছাড়া প্রস্রাব ঠিকমতো না হলে এই শাক খেলে ভাল কাজ দেয়।
৪)কেঁউ(Costus Speciousus):-চর্মরোগ ম্যালেরিয়া এবং পেটের ব্যথায় এই শাক খুব ভাল কাজ দেয়। এছাড়া এই শাক ক্রিমি নাশ করে।
৫)কালকাসুন্দে(CassiaSophera):-সর্দি এবং কাশির জন্য এই শাক দারুণ উপকারী।
৬)শুষনি(Marsila Qudrifolia), :-এই শাক সুনিষন্নক নামেও পরিচিত। এই শাক খেলে খুব ভাল ঘুম হয়।
৭)নিম(Azadirachta India):-নিমপাতা ক্রিমিনাশক এবং আমাশয় রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া বায়ু,পিত্ত এবং কফ নাশ করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বসন্ত রোগের প্রতিষেধক চর্মরোরোগকে প্রতিহত করতে এই পাতা দারুণ কাজ দেয়। নিমপাতা জীবাণুনাশক হিসাবেও খুব ভাল। তাছাড়া নিমপাতা নিয়মিত খেলে রক্তদূষণ রোধ করে।
৮)জয়ন্তী(Sesbania Sesbau):-ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি,কাশি রোগের পক্ষে এই শাক খুবই উপকারী।
৯)শাঞ্চে(Alternanthera Sessilis):-এই শাকের অপর নাম শালিও। এই শাক পেটের পক্ষে খুবই ভাল।
১০)পলতা(Tricho Santhes Dioica):-এই শাককে পটুক শাকও বলা হয়। এই শাক ক্রিমিনাশক ও পিত্তজনিত রোগের পক্ষে দারুণ উপকারী।
১১)শেলকী(Cordia Dichotoma):-এই শাক খিদে বাড়ায় এবং রুচি আনতে সাহায্য করে। পেটের পক্ষে এই শাক উপকারী।
১২)গুলঞ্চ(Tinospora Cardifolia):-এই শাককে গুড়চী শাকও বলা হয়। পেটের রোগ ও বাতের যন্ত্রণায় এই শাক খুবই উপকারী। এছাড়া অরুচিতে রুচি আনে এই শাক।ম্যালেরিয়া রোগে এই শাক দারুণ কাজ দেয়। বায়ু নাশ করার পক্ষে এই শাক খুব ভাল।
১৩)হিলঞ্চা(fluctunus):-এই শাক হিঞ্চে নামে বেশি পরিচিত। এই শাক ডায়াবেটিস ও ব্লাড সুগারের পক্ষে দারুণ উপকারী। গ্যাসট্রিক আলসারের পক্ষে এই শাক খুব ভাল। দৃষ্টিশক্তি হ্রাস,রক্তাল্পতা,জন্ডিস রোগের উপশম করে। এছাড়া মজ্জার পীড়াজনিত রোগে এই শাক দারুণ কাজ দেয়।
১৪)ভন্টাকী(Clerodendram Infortunation):-এই শাকের অপর নাম ভাঁট। পেটের ব্যথায় এই শাক দারুণ উপকারী।
Comments