অনুপ্রেরণা - সুভাষ সিংহ || Onupreona - Subhash Singha || Golpo || ছোট গল্প || short story || Bengali story

 অনুপ্রেরণা 

    সুভাষ সিংহ 


গোটা মাঠ উপছে পড়ছে, চারিদিকে শুধু কালো কালো মাথা। আজ ফাইনাল খেলা, ফুটবলের মহাযজ্ঞে আজো গঞ্জ গ্রামে আগের মতো উন্মাদনা লক্ষ্য করা না গেলেও নিয়ামতপুরের এই প্রতিযোগিতায় এখনো আলাদা একটা ফ্লেবার কাজ করে। আশেপাশের দশটি গ্রামের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস প্রতিযোগিতা। যারা বিজয়ী হয় তারা নগদ একলক্ষ টাকা আর সুদৃশ্য ট্রফি লাভ করে। আর তার সাথে পেয়ে যায় দশটি গ্রামের সম্মিলিত দূর্গোৎসবের দায়িত্ব। যারা ফাইনালে জেতে তাদের গ্রামেই হবে পুজোর সমস্ত আয়োজন।


এবার প্রথম থেকেই বনপুকুর একাদশ দূর্দান্ত ফুটবল খেলে সবার নজর কেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বনপুকুরের সমস্ত গ্রামবাসী জড়ো হয়েছে মাঠে। অপরদিকে অনেকটা ভাগ্যের সহায় হয়ে একক নৈপুণ্যে ভর করে ফাইনালে উঠেছে ডালিমপুর একাদশ। ডালিম পুরের নয় নম্বর সম্রাট এখন পর্যন্ত এই খেলায় একায় পাঁচটি গোল করে টপ পজিশনে আছে।


এই সম্রাটের গতকাল থেকে কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ডালিমপুরের কোচ বারবার ঘড়ি দেখছেন যদি শেষ মুহূর্তে এসে উপস্থিত হয়, তায় প্লেয়িং একাদশে তার নামটা রেখে দিয়েছেন। রেফারি মাঠে নেমে পড়েছেন, চিৎকারে কান পাতা দায়। 


কোন উপায় না দেখে অন্তিম সময়ে পরিবর্ত নাম পাঠাতে বাধ্য হলেন কোচ। খেলা শুরু হয়েছে,

বলের পজেশনে এগিয়ে রয়েছে বনপুকুর। দুটি সুযোগ ইতিমধ্যে হাতছাড়া হলেও একুশ মিনিটে লং শটে প্রথম গোলটি করলো বনপুকুর। 

বারবার আক্রমণে নাজেহাল অবস্থা ডালিমপুরের। সব চেষ্টা বিফল করে হাফ টাইমের ঠিক আগে আরো একটি গোল খেয়ে গেল ডালিমপুর। বনপুকুরের সাপোর্টারদের যত চিৎকার বাড়ছে ততই মিইয়ে যাচ্ছে ডালিমপুর।


অন্যদিকে নিয়ামতপুরের মাঠের পেছনে দিঘির পাড়ে বসে আছে সম্রাট। ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে বনপুকুরের মেয়ে অনন্যা, যাকে প্রানের থেকেও বেশি ভালোবাসে সম্রাট। তার গ্রাম হেরে যাওয়া মানে তার ভালোবাসার হার হবে এমনটাই বুঝিয়েছিল তার প্রানের বন্ধু বনপুকুরের অয়ন।

অনন্যা সত্যিটা জানতে পেরে ছুটে এসেছে।


--তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে অয়ন। তোমার হার মানে আমার হার, আমি তা চায়না, তাছাড়া আমি হেরোদের পছন্দ করিনা। তুমি যদি এখনই না যাও তবে সব সম্পর্ক শেষ।


হাফ টাইমের পর খেলা আবার শুরু হয়েছে, সম্রাট ফিরে এসেছে, ওকে দেখেই ডালিমপুরের খেলোয়াড় থেকে সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত সকলে হাঁ হয়ে দেখলো একটা আহত বাঘ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। পঞ্চান্ন মিনিটে কর্নার থেকে দুরন্ত শট চকিতে বাঁক নিয়ে গোলে ঢুকে গেল। গোওওওল। আবার সেই চিৎকার ফিরে এলো বাহাত্তর মিনিটে যখন দুর্দান্ত ব্যাকভলিতে বলটা বনপুকুরের জালে ঢুকে গেল।


এই চিৎকার অনন্যার কানেও পৌঁছলে ও ঠিক করলো ওর প্রিয় মানুষের জয় দেখতে ও নিজেও মাঠে উপস্থিত হবে।

খেলা প্রায় শেষের দিকে, ২-২ অবস্থায় হয়তো ট্রাইব্রেকারে খেলা গড়াতে পারে এমন সময় পাঁচজন কে কাটিয়ে যে দৃষ্টিনন্দন গোলটা করেই সম্রাট ফ্লাইং কিস টা ছুঁড়ে দিল তার প্রেয়সীর দিকে, সমবেত জনতা চিৎকার করতে ভুলে গিয়ে সেই কিসের অনুসরণ করে খুঁজে পেল সব রহস্য।

এতলোকের দৃষ্টির সামনে লজ্জায় পালিয়ে এলো অনন্যা, ওর আর দেখা হলোনা ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার হাতে সম্রাটের হাসিটা।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র