আলুর চপ - অন্তরা রায় চৌধুরী || Alur chop - Antara Ray Chowdhury || Golpo || ছোট গল্প || short story || Bengali story

  আলুর চপ 

 অন্তরা রায় চৌধুরী 



জয় চাকরির সুবাদে চার পাঁচ বছর পর পর বাড়িতে আসে । এবার দূর্গা পূজার ছুটি না পাওয়ায় কালি পুজোতে বাড়ি এসেছে । 

     তাদের বাড়ির পাশেই আছে একটা জাগ্ৰত কালি মন্দির । বাড়ি ফিরে বহুবছর পর বন্ধু বান্ধব দের সাথে সময় কাটায় জয় । ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। বাজার পার করে এসে পাঁচ মিনিট পায়ে হাঁটা পথে তার বাড়ি ।

 বাজারের রাস্তায় আলো ছিল কিন্তু তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় কোনো আলো নেই এদিকে মোবাইলে ফ্লাস লাইট জ্বালাতে গিয়ে দেখে মোবাইলে একটুও চার্জ নেই। অগত্যা অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই হাঁটতে থাকে। 

রাত দশটা অমাবশ্যার রাতে জয়ের খিদেও পেয়ে গেছিল 

অগত্যা মায়ের জন্য সে যে আলুর চপ নিয়ে যাচ্ছিল ঠোঙা থেকে একটা আলুর চপ বার করে খেতে খেতে পথ চলতে লাগল । 

 কিছু দুর যাওয়ার পর হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ আসে " এত রাতে একা কেন ছোট পন্ডিত?" 

জয় পেছন ফিরে দেখে এ তো রমেন দাদু 

দাদু ভালোবেসে জয় কে 'ছোট পন্ডিত' বলতো 

_ কি গো দাদু ভালো আছো তো ? শরীর কেমন আছে তোমার? সকালে তোমাকে বাড়িতে দেখলাম না যে ?

রমেন দাশগুপ্ত জয়ের কোনো কথার উত্তর দিলেন না । বললেন এই অমাবশ্যার রাতে একা একা কোথায় গেছিলে দাদুভাই? আলো নেই কেন সাথে? 

__ আর বোলো না দাদু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেল আর এদিকে মোবাইলে চার্জ ও নেই 

_ ওহঃ তা চলো ছোট পন্ডিত তোমাকে এগিয়ে দি 

এই বলে দুজনে চলতে শুরু করল। পাঁচ মিনিট এর পথ যেন শেষ ই হয় না দুজনে নিঃশব্দে চলতে থাকে 

রমেন দাশগুপ্ত বলে দাদুভাই একটা কথা বলি যদি রাগ না করো 

-- হ্যাঁ বলো না দাদু 

_ আসলে দাদুভাই আমার অনেক দিনের থেকে আলুর চপ খেতে খুব লোভ হচ্ছিল 

রমেন দাশগুপ্ত আরো কী বলতে যাচ্ছিলেন

জয় তার কথার মধ্যে বলে 

- এ মা দাদু এ তে বলার কী আছে ? মনে মনে জয়ের খুব লজ্জা লাগে ইস বয়স্ক মানুষটার সামনে সে যে চপ খাচ্ছিল মনেই ছিলনা,তার নিজেরই দাদু কে চপ খাওয়ার কথা বলা উচিত ছিল।

জয় দাদু কে দুটো আলুর চপ দিয়ে বলে এই নাও দাদু বলে দুজনে চপ খেতে খেতে পথ চলতে শুরু করল।

জয় বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে চপের ঠোঙা টা দেয় মা দেখে একটা মাত্র চপ পড়ে আছে তাতে । মায়ের জিঞ্জাস্য মুখ দেখে জয় বলে আর বোলো না মা রাস্তায় রমেন দাদুর সাথে দেখা হল দুজনে চপ খেতে খেতে বাড়ি আসলাম কাল আবার তোমার জন্য বেশি করে আলুর চপ এনে দেব।

রমেন এর মা হতভম্ব হয়ে গেল কম্পিত স্বরে জয়কে বলল " রমেন দাশগুপ্ত দুবছর আগে মারা গেছেন এক্সিডেন্ট এ তোকে বলিনি আমি? " 

সে রাতে জয়ের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো ...ঘোরো শুধু একটা কথাই বলতে শোনা গেল "ছোট পন্ডিত আলুর চপ একা একাই খাচ্ছ ? " 


গ্ৰাম - তারালী 

পোস্ট - হাকিমপুর 

জেলা - উত্তর চব্বিশ পরগনা 

পিন- 743273

ফোন নম্বর -7063179465


  





গল্পের নাম - অভিমান 

লেখকের নাম - অন্তরা রায় চৌধুরী 


        

                মেরিনাদের গ্ৰামে আবার মেলা বসেছে । "ও গো , রহিম যাত্রা দেখতি যাবে বলি জেদ করতিচে । কি করব ? " উত্তরে আসে "হ্যাঁ যেতি বলো ! এ ও যদি মেরিনার মতো ..... " আর বলতে পারে না মেরিনার বাপ।



                   গ্ৰামের মেলায় যাত্রা হওয়ার কথা ছিল । মেরিনার সব সখীরা যাচ্ছিল , মেরিনা অনেক জোরাজুরি করলো। তবুও তাকে যেতে দিল না । উল্টে তাকে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়। ছুট্টে ঘরে চলে যায় সে।অভিমান ও কি ভয়ঙ্কর হয় ! ওই কিশোরী মেয়ে টা , সামান্য কারনে কত্ত বড় একটা পদক্ষেপ নিল সেই রাতে ।


                " মেরিনা ও মেরিনা ওঠ রে মুখ পুড়ি ! সূয্যি যে মাথায় চড়ল " বছর গড়ালো মেরিনার ঘুম আর ভাঙে না ... 

                                                         


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র