কিছু পলাশের নেশা
সুমিতা চৌধুরী
শরৎ বিদায়ের পর ভোরের শিশির মাখছে সবে তৃণদল। উত্তুরে হাওয়া ফিসফিসিয়ে কথা কইছে প্রকৃতিতে। চারিদিকে নতুন আমন ধান মাথা দোলাচ্ছে আনন্দে। উৎসবেরই গন্ধ মেখে প্রকৃতি যেন গ্রাম বাংলাকে বলছে, "আসছে যে নবান্ন/ শোন, তোকেই শুধু বলি/ সাদরে বরণ করতে তাকে/ খুলিস মনের ডালি।"
দোলাদের বাড়িতেও এবার যেন নবান্ন আরো রঙিন। পলার সদ্য বিয়ে হয়েছে, তাই নতুন আত্মীয়কুটুম্বরা সবাই নিয়ন্ত্রিত। নবান্ন শুরু হওয়ার আগে-ভাগেই দিদি, জামাইবাবু আর দিদির ছোট দেওর পলাশ এসে উপস্থিত হওয়ায় বাড়ি সরগরম হয়ে উঠল।
শহুরে পলাশদের গ্রাম দেখানোর দায়িত্ব পড়ল দোলার কাঁধেই। যদিও এ কাজ পলাই করতে পারত আজন্ম গ্রামে থাকার সুবাদে, কিন্তু তার জীবনের নতুন ফাগুন হাওয়ায় সদ্য সওয়ার সে, তাই উপরি দায়িত্ব দিতে চাইল না কেউই এই উৎসবের আবহে। অগত্যা দোলাকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হলো।
পলা আর আকাশকে কিছুটা তফাতে রেখে পলাশ দোলার সাথেই গ্রাম দেখছে আজ দিন দুই/তিন। নতুন পরিবেশ, নতুন প্রকৃতির মাঝে কখন যেন তার শহুরে মনটায় গ্রামের বাউল বাতাস ফেরারী হওয়ার ডাক দিল। দোলার সাথে গ্রাম দেখার মাঝে দোলার চোখেই এ পৃথিবী দেখার অদম্য সাধ জাগলো তার। ওদিকে দোলার মনেও হেমন্তেই বসন্ত বাতাস দোলা দিয়ে গেল পলাশের অনুরাগে।
বাতাসের কানাকানি থেকে দুই পরিবারে জানাজানি হতে বেশী সময় লাগল না। নবান্নের নতুন ধানের গন্ধের সাথেই মিশে গেল নতুন প্রেমের আতর গন্ধও। এক উৎসবের রেশ নিয়ে আরেক উৎসব সাজল অচিরেই পলাশের রাঙা নেশায়।
No comments:
Post a Comment