হৃদয়ের আলো - পূর্বিতা পুরকায়স্থ || Hridoyer Alo - Purbita Purokaiystho || Golpo || ছোট গল্প || short story || Bengali story

    হৃদয়ের আলো

                   পূর্বিতা পুরকায়স্থ 



আজ খুব ভোরে, ঌ নং সাগর দত্ত লেনের চ্যাটার্জী বাড়ি থেকে একজন স্বপ্ন বিভোর, প্রেমিক লোকের চির প্রস্থান হোল। বাড়ির বড় ছেলে অধীর চ্যাটার্জীর। এতে সেই বাড়ির বহুদিনের পুরনো শ্যাওলাধরা পাথর টা যেন নড়ে উঠল। পঞ্চাশ বছর আগে দমবন্ধ করা কষ্ট ও অসহায়তার এই পাথরটা চ্যাটার্জী বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যের মনে চিরস্থায়ী আসন গেড়েছিল। আর তার তলায় আনন্দ, হাসি গান চিরকালের মত চাপা পড়ে গিয়েছিল । জন্ম নিয়েছিল হতাশা, আশঙ্কা আর উদ্বেগ। 

বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য কষ্ট পেতে পেতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ কারুর সাথে অধীর কে নিয়ে কোন কথা বলতেন না । আসলে আত্ম মর্যাদায় আঘাত লাগে এমন কোন কথা উচ্চারণ করলে নিজের আত্মা কষ্ট পায়। মন তলিয়ে যায় গ্লানির গহ্বরে। তাই সযত্নে ওঁরা এটা এড়িয়ে চলতেন। তা ছাড়া হয়ত বা ভয় ও পেতেন কেউ যদি শুনে ফেলে। জেনে ফেলে অধীরের গতিবিধি! ঠাকুর চাকরেরা তো চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত !  

কলেজে পড়াকালীন অধীরের ঘরছাড়ার ঘটনায় ওঁদের রাশভারী ঠাকুর্দা অঘোর চ্যাটার্জী ভেঙে চুরে খানখান হয়ে একেবারে মাটীতে মিশে গিয়েছিলেন। উনি ছিলেন রিটায়ার্ড চীফ জাস্টিস। বংশ মর্যাদায় যার কোন তুলনা খুব একটা বেশি ছিল না। ওঁর ছিল বর্ধমান জেলায় বিশাল জমিদারী। এখনও নেই নেই করে যা আছে তাতেও দু তিনটে পরিবারের ভরনপোষন খুব ভাল ভাবে হয়ে যায়। এমন একটা পরিবারের উত্তরসূরী হয়ে অধীর, কি করে আজকের অধীর হয়ে উঠল উনি বুঝে উঠতে পারেন নি কোনদিন। এমন ও নয় যে ওদের জমিদারীতে কারুর ওপর কোনরকম অন্যায় হয়েছে, বরং দেশের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত না থাকায় অনেক জমি পরের দখলে চলে গেছে। বর্ধমানের বাড়িতে এখনো দুবেলা ত্রিশ চল্লিশ টা পাত পরে। কলকাতার বাড়িতেও অঢেল ব্যবস্থা । দূর সম্পর্কের দরিদ্র আত্মীয়স্বজন এবং কৃপা প্রার্থী লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। এমন একটা পরিবেশে বড় হতে হতে কি করে অধীরের মনে বিত্তবানদের ওপর এত ঘৃণা জন্মাল সে ওঁর কাছে ছিল এক পরম বিষ্ময়। একদিকে পরিবারের মর্যাদাহানি অন্যদিকে অধীরের জীবনের অনিশ্চয়তা দুই ই অঘোর চ্যাটার্জীকে ঘুন পোকার মত নীরবে কাটত । অধীর ও আবীরের বাবা, অশেষ চ্যাটার্জী স্বাস্থ্যসচিবের গুরু দায়িত্ব পালন করেও ছেলেদের যাবতীয় ব্যাপারে ছিলেন যত্নবান। তাই অধীরের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া, ওর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সমীকরণ কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না। ওঁর মনে হোত, উনি কি ছেলেদের মনের জগতকে উপেক্ষা করে শুধু শিক্ষার দিক টাই দেখেছেন ? আবেগ দিয়ে জড়িয়ে রাখলে হয়ত এত ক্ষোভ, এত হিংসা স্থান পেত না অধীরের মনে। নিজেকে দোষারোপ করতে করতে একসময় উনি শামুকের মত নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে সরকারের প্রতি আনুগত্যের দায় চোকালেন। ওদিকে অন্দরমহলে,অধর ও আবীরের নিরীহ স্বল্পভাষী মা আরো চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু ভাবতেন ওঁর মমতায় কি কোন খাদ ছিল যে ছেলে এভাবে দূরে সরে গেল। এই ভেবে ভেবে মরমে একেবারে মরে গিয়েছিলেন উনি। 

স্কুলে পড়াকালীন আবীরের খুব রাগ হোত দাদার উপর। দাদার জন্য ওঁর ছোটবেলাটা একটা ঘষা মাজা স্লেটের মত হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে দাদু, বাবা ও মা অধীরের জন্য দুর্ভাবনা ও মন কষ্টে এতটাই ডুবে থাকতেন যে ওঁর দিকে মনযোগ দেবার মত মানসিক স্থিতিতেই ওঁরা ছিলেন না। এদিকে পাড়ায় ও স্কুলে অধীরকে নিয়ে নানা ধরনের কৌতূহল ও সমালোচনা আবীরকে কোনঠাসা করে রেখেছিল। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে দাদার আদর্শ ও ত্যাগের গভীরতার পরিমাপ করতে পারছিলেন। বুঝতে পারছিলেন হৃদয় কতটা বড় হলে এত বড় আত্মত্যাগ সম্ভব। প্রেসিডেন্সির ফিজিক্স অনার্সের উজ্জ্বল ছাত্র হয়েও নিমেষে সব কিছু পেছনে ফেলে অন্যের স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করাটা এতটা সহজ নয় ! সেই থেকে দাদার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় মনটা কানায় কানায় ভরে থাকত। সঙ্গে থাকত বেদনা জড়ানো মায়া। আবীরের মনে হোত সারা জীবনে কিছুই পেলেন না মানুষ টা। এমন একটা যজ্ঞে নিজেকে আহুতি দিলেন যে যজ্ঞের পুরোহিতদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অস্বচ্ছ ও দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভরা। অথচ সেই যজ্ঞের উৎসে ছিল মাটীর সহিষ্ণুতা আর আকাশের বরাভয়। তবু ব্যর্থ হয়ে গেল এত আহুতি ! রয়ে গেল বিষন্নতা ও ব্যর্থতা! আবীর ও সেই ব্যর্থতার কষ্টে দীর্ণ হতেন। স্বান্তনা ছিল একটাই। কতশত ছেলে মেয়ে স্বপ্নভঙ্গের সাথে জীবন ও হারিয়েছে, কিন্তু অধীর বেঁচে আছেন, যদিও পুলিশি অত্যাচারের কিছু চিরস্থায়ী প্রভাব নিয়ে। তবু আছেন তো! আবীর এই সংসারে একেবারে একা হয়ে যান নি! দাদা আছেন মাথার উপর।

আবীরের আজ মনে হচ্ছে একটা আন্দোলন যেন তার সবটুকু মহিমা ও ব্যর্থতা নিয়ে চ্যাটার্জী বাড়ির এই বারো বাই চৌদ্দ ঘরটায় নির্বাসন নিয়েছিল গত পাঁচ দশকের ও বেশি সময় ধরে। আজ এই বারো বাই চৌদ্দের ঘরটায় যেখানে অধীর থাকতেন, সেখানে আবীর আলো জ্বালতে দেন নি। একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন। প্রদীপের মৃদু আলো যেন দাদার জীবনেরই প্রকাশ। মৃদু অথচ উজ্জ্বল আলো প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে আবীরের মনে, অধীরের এই ঘরে, ওঁর ব্যবহৃত আসবাবপত্রে। অসংখ্য বই এ। শ্মশান থেকে এসে আবীর এই ঘরেই রয়েছেন। ওঁর মনে হচ্ছে এই আলো অন্ধকারের মাঝে অধীর ও রয়েছেন। ওঁর ক্ষয় নেই। এই ঘরের অসংখ্য বইতে উনি আছেন। আছেন দেওয়ালের গায়ে। আবীর দেখেছেন কি করুন বেদনাবিধুর দৃষ্টিতে অধীর দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। কিসের ছায়া দেখতেন ? পথ হারিয়ে শীর্ণ হয়ে যাওয়া কোন নদীর না কি অসংখ্য হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন মাখা চোখের বেদনার্ত আকুল দৃষ্টির ! হারিয়ে যাবার আগে কি বলে গেছে ওরা ? সেই ভাষা ই কি পড়তে চেয়েছিলেন অধীর বাকি জীবন ধরে ?

আবীর অফিস থেকে ফিরে রোজ একবার এই ঘরে এসে দাদার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতেন। একথা সেকথার পর রাজনীতির কথা চলে এলেই অধীর চুপ করে যেতেন। মাঝে মাঝে হেসে বলতেন এই ধরনের রাজনীতি আমরা চাই নি। আর এই পোকায় কাটা সংসদীয় গনতন্ত্রে আমাদের বিশ্বাস ছিল না। যদিও এও সত্য, শেষ পর্যন্ত আমরা কিছুই করে উঠতে পারি নি! কথাটা বলার সাথে সাথে একটা দীর্ঘশ্বাস ও যেন হৃদয় থেকে পাক খেতে খেতে উঠে আসত । ছড়িয়ে যেত পুরোটা ঘরে। আবীরের মনেও। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে আবীর বলতেন, দাদা, তোমার তো লেখার হাত খুব ভাল ছিল। লেখা শুরু কর না । ভাল লাগবে । সময় টা ও ভাল কাটবে। অধীর বলতেন, এখন আর মনঃসংযোগ করতে পারি না রে। ভাবনা ও অনুভূতি সব কেমন যেন টুকরো টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সবকিছু কুড়িয়ে নিয়ে চলার মত মানসিক জোর আর পাই না।

আবীরের মনে হচ্ছে আজ ঘরের আলো আঁধারিতে পুরনো ঘটনা গুলো যেন জ্যান্ত হয়ে পরপর দাঁড়িয়ে পড়েছে। দাদু, মা ও বাবা সবাই যেন ঠিক আগের মত আছেন চারপাশে। সেই ম্রিয়মান, ক্লান্ত ও হতাশ।

আবীর তখন স্কুল পড়ুয়া। অধীর কলেজে। যদিও তখন বাড়িছাড়া। কেউ কোন হদিস জানে না ওঁর। কানা ঘুষো শোনা গিয়েছিল উত্তর বঙ্গে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। গ্রামের পর গ্রামে গিয়ে কৃষকদের একজোট করার কাজে লিপ্ত ছিলেন। ঠিক সেই সময় দু একবার বাড়িতে পুলিশের সার্চ হয়েছে। যতবার সার্চ হত ততবার তারা বাড়ির লোকেদের মেরুদন্ডটাকে আরো একটু করে ভেঙে দিয়ে চলে যেত। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অধীর মাঝে মাঝে বাড়ি আসতেন। এরকমই একদিন ওঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। কিন্তু কোন এক অজানা কারন বশতঃ ওঁকে এনকাউন্টার করে নি কিন্তু জেলে প্রচন্ড অত্যাচার করেছিল। সেই খবর পেয়ে ওঁদের মা সেই যে বিছানা নিয়েছিলেন আর ওঠেন নি। বাকি দুজনেরও শরীর ও মন এমন ধ্বস্ত হয়ে গেল যে আর তারা পুরোপুরি সুস্থ কোনদিন হয়ে ওঠেন নি। আবীরের মনে পড়ে পারিবারিক প্রচন্ড এই অব্যবস্থার মধ্যে নিজের খেয়াল উনি নিজেই রাখতে শিখে গিয়েছিলেন। পড়াশোনায় একনিষ্ঠ থেকে জীবনে সফল হতে পেরেছেন। কোন মতবাদ কিংবা আদর্শ নিয়ে কোনরকম দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দেন নি। বাড়ির বড়দের যন্ত্রনাক্লিষ্ট চেহারা ওঁকে সারাজীবন তাড়া করে বেড়িয়েছে। আরেকজন অধীর যেন এই বাড়িতে তৈরী না হয় সে ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন।


অধীরের শ্রাদ্ধ শান্তির পর আবীর ঠিক করলেন অধীরের কয়েকজন কাছের লোককে নিয়ে একটা স্মরনসভার আয়োজন করবেন। খুব কাছের লোকজন যারা ওঁর সাথে যোগাযোগ রাখতেন শুধুমাত্র তারাই। তখনই একজনের কথা ওঁর মনে পড়ে গেল । অধীরকে ভালবেসে সেই সতেরো আঠারো বছর বয়স থেকেই যার জীবন চিরকালের জন্য সাদা কালোয় ঢেকে গিয়েছিল । এই পাড়ারই দত্ত বাড়ির বড় মেয়ে সুনিধি। অধীরের উপর সুনিধির এই দুর্বলতার কথা প্রথমদিকে আবীর জানতেন না। অধীর ধরা পড়ার পর একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে গলির মোড়ে সুনিধির সাথে দেখা হতে, উনি আবীরকে জিজ্ঞেস করেন, আবীর, তোমার দাদার কোন খোঁজ পেয়েছ ? কোন জেলে ওকে রেখেছে কি জান ? 

আবীরের এখনও সুনিধির সেই উৎকন্ঠা ও বেদনা মাখানো দৃষ্টি মনে পড়ে। তারপর থেকে কোনদিন আবীর ওঁকে রঙিন দেখেন নি। ও যেন বরাবরই সাদা কাপড়ে মোড়া এক বিষন্ন প্রতিমা। 

আবীরের মনে হোল এই স্মরনসভায় উপস্থিত থাকার জন্য সুনিধি কে অনুরোধ করবেন। সেই অনুরোধ পেয়ে সুনিধি এসেওছিলেন ওঁর নিজস্ব গৌরবে।

আবীর সেদিন সুনিধির দুটো হাত ধরে ওঁকে আপ্যায়ন করেছিলেন। ওঁকে দেখলেই আবীরের আত্মীয়তা বোধ হয়। সেদিন সুনিধি স্মরনসভায় আসতেই, এস সুনিধিদি, এস, বলে আবীর হাতটা বাড়িয়ে দিলেন।

চোখ তুলে চাইতেই আবীর দেখলেন সুনিধির চোখ ভর্তি জল। বললেন, সেই এলাম ও এই বাড়ির চৌকাঠ ডিঙোলাম। কিন্তু এইভাবে !

অধীরের ঘরে গিয়ে ওঁর ছবির সামনে দুজনে চুপ করে বসে রইলেন। তারপর একে একে দু তিন জন এলেন। সেই বিপ্লবের কিছু ঘটনার স্মৃতিচারন করলেন যেখানে অধীরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। শুনতে শুনতে আবীর আর সুনিধির দু চোখ দিয়ে শুধু জল ঝরেছে। এ সব খবর ওঁদের কাছে নতুন। ওঁরা আজ অধীরের ব্যক্ত্বিত্বের অনেক অজানা দিকের পরিচয় পেলেন। ওঁর মনের গতি প্রকৃতির হদিস পেলেন। নতুন করে চিনতে পারলেন ওঁকে। আবীরের আফসোস হয়েছিল, এসব কথা আগে জানতে পারলে হয়ত দাদাকে আরো গভীর ভাবে ছোঁয়া যেত!

সেদিন স্মরনসভা শেষ হতে সবাই চলে যাবার পর আবীর সুনিধিকে বললেন, দিদি, আমাদের নাহয় দাদার সাথে রক্তের সম্পর্ক ছিল কিন্তু তুমি কেন কষ্ট পেলে ?

সুনিধি ম্লান হেসে বললেন, আমার সাথে যে হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। 

দাদার সঙ্গে কি কখনো তোমার কথা হয়েছিল ?

না, কোনদিন না।

তবে ?

উনি ছিলেন আমার বন্ধুর দাদার সহবিপ্লবী। আমার কথা উনি বলেছিলেন তোমার দাদাকে।

দাদা কি বলেছিলেন ?

বলেছিলেন, কোন রকম হৃদয় দৌর্বল্যে সাড়া দেওয়া ওঁর কাছে তখন বিলাসিতা। ওঁর সেই কথা শুনে ওঁর ওপর আমার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গিয়েছিল ! সত্যিই তো যারা দশের জন্য নিজের জীবনকে বাজি রাখে তাদের কাছে ব্যক্তিগত ভাবাবেগের কোন জায়গা না থাকাটাই তো স্বাভাবিক । সেই থেকে আমিও বিপ্লবের সাথে মনে প্রাণে জড়িয়ে পড়েছিলাম।

তুমি কি মুভমেন্টে যোগ দিয়েছিলে ?

না। আমার পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। আমার পরিবার আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল। কবে আমি সংসারের হাল ধরব ! বাবা খুব কষ্টে সংসার চালাতেন। আমার তখন মনে হয়েছিল আমি যদি আমার পরিবারের দুঃখ না মেটাতে পারি তাহলে সমাজের দুঃখ কি করে মেটাব ? আগে তো পরিবার তারপর সমাজ।

তোমার বিয়ের চেষ্টা কেউ করেন নি ?

হ্যঁ, করেছেন। ভাই যখন চাকরী পেয়ে গেল তখন থেকে বাবা উঠে পড়ে লাগলেন। আমি অমত করেছিলাম। বলেছিলাম, তোমার দাদাকে আমি ভালবাসি। সব শুনে বাবা বলেছিলেন, ভুল করলি মা । সব যদি স্বাভাবিক ও হয়ে যায় তবু চ্যাটার্জী বাড়ি কোনদিন আমাদের সঙ্গে আত্মীয়তায় রাজী হবে না। ওঁরা বংশ মর্যাদা ও আভিজাত্যে আমাদের চেয়ে অনেক উঁচুতে।

আবীর এই কথায় চোখ নামিয়ে নিলেন। উনি শুধু ভাবছেন, যে ভালবাসা জীবনকে বাজি রাখতে পারে তার সামনে জাগতিক সব কিছু কত তুচ্ছ ! 

সুনিধি বলে চলেছেন, কিন্তু বাবার কথা আমাকে এতটুকু টলাতে পারে নি। আমি তো বেশি কিছু চাই নি। ওঁর হৃদয়ের আলোয় আলোকিত হতে চেয়েছিলাম। ওঁর বুদ্ধিমত্তা আমাকে উন্নীত করেছিল। একটা জীবনে এ অনেক বড় পাওয়া। নয়ত আমি আজও আবদ্ধ হয়ে রয়ে যেতাম হাঁড়ি ও আঁতুড় ঘরে। 

এই শুনে দুটো হাত জরো করে শুধু সুনিধিকে নয়, দুটো আকাশের মত হৃদয়ের উদ্দেশ্যে আবীর প্রণত হলেন ।

      

      ----------------------------



 

Comments

Popular posts from this blog

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024