আধুনিক সাহিত্য সভা - অরবিন্দ সরকার || Adhunik Sahitya sobha - Arabinda Sarkar || রম্যরচনা || Ramaya rachana

   আধুনিক সাহিত্য সভা                   

              অরবিন্দ সরকার 



সেদিন বহরমপুর শহরে,এক পাড়ার মোড়ে মঞ্চ বানিয়ে লেখা বড়ো বড়ো অক্ষরে "আধুনিক সাহিত্য সভা"। মঞ্চে উপবিষ্ট যারা আছেন তারা বেশির ভাগ শহরের কঞ্জুস ঘৃণিত ব্যক্তি। পাড়ার সুদখোর রাধে গোবিন্দ চন্দ্র অনুষ্ঠানের সভাপতি। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে বিশিষ্ট সমাজসেবী তিনি। ভোম্বল দাস ওই রাস্তায় তার যাতায়াত। পাশের দোকান থেকে এক কাপ চা নিয়ে একটি ফাঁকা চেয়ারে বসে পড়লো। মঞ্চে বসে শহরের টাকা পয়সা ওয়ালা গুণীজন, তাঁদের কপালে তিলক এঁকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হলো। সামনে বসার জন্য মাইকে চিৎকার সত্বেও আনাচে কানাচে লোক দাঁড়িয়ে। চেয়ারগুলো ফাঁকা বেশীরভাগ। পাড়ার কয়েকটি নব্য কবি তারা উপহার পাবার আশায় এখানে হাজির হয়েছে। ভোম্বল দাস সামনে বসে আছে দেখে মাইকে তাকে মঞ্চে আসার জন্য আহ্বান জানানো হলো।

ভোম্বল দাস - সবাই যদি মঞ্চে যাই তাহলে দর্শক আসন যে শূন্য। তাছাড়া ওই স্থানে বসার আমি অযোগ্য। মোটকথা আমি সমাজসেবক কিন্তু সুদখোর নই? মানুষকে সাহায্য করি তার বদলে তার কাছ থেকে অনুদান নিই না। কারো উপকার করতে না পারলেও অপকার বা অপকর্ম করি না। মঞ্চে এমন লোক আছেন যিনি টাকা ধার দেন বিনিময়ে সুদ নেন এবং মহিলা হলে সুদের সুদ তার কাছ আদায় করে ছাড়েন।

সভাপতি মশাইকে সংক্ষিপ্ত ভাষন দেবার জন্য মাইকে ঘোষণা হলো। সভাপতি মাইক নিয়ে শুরু করলেন - আমি কাউকে ফেরাই না। আমার কাছ থেকে সবাই সাহায্য নেয়। খালি হাতে তো টাকা দেওয়া যায় না। যা দিনকাল পড়েছে মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। তাই আমি কাঁসার বাসন, সোনার অলঙ্কার গচ্ছিত রেখে টাকা দিই। কেউ যদি সুদের ভার না নিতে পারে তখন আমি সেটা মূলধন হিসেবে কাছে রাখি। আজ এই সভায় সভাপতি হয়েছি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। টাকা কি সঙ্গে নিয়ে এসেছি।আনিনি ? তাই খরচ করলাম আসনের বিনিময়ে। এ পর্যন্ত কোথাও টাকা পয়সা জীবনে দিইনি। এখানে এঁরা বোঝালো যে সভাপতি করবে। তাছাড়া বাড়ীর বৌ চাকর বাকর দেখুক আমার আসন কোথায়? টাকা পয়সাওয়ালা হলে সম্মানের ঘাটতি হয়না। যেমন "স্বদেশে পূজ্যতে রাজা, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে" । তেমনি আমি ধনকুবের রাজা। স্বদেশে পূজিত হলেই যথেষ্ট। আমার নামে যদি রাস্তার নামকরণ করে নিতে পারি টাকার বিনিময়ে, তাহলে বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে মানে বিদেশের সবাই যারা আসবেন তারা আমার নাম দেখতে পাবে। আমার নামে জয়জয়াকার পরে যাবে। আমি আজ সাহিত্যের পৌরহিত্য করতে এসেছি।যার হিতাহিত জ্ঞান নাই তার দ্বারা সাহিত্য চলতে পারে না। এসব শাহী, মহারাজ, রাজরাজার ব্যাপার।আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খোঁজ নেওয়া যায় না! পিছন থেকে কাপড়ের টান অনুভব করে পিছনের দিকে তাকিয়ে বললেন - আমি এগিয়ে যেতে চাই,পিছন ফিরে তাকাতে চাই না। 

আবার টান পড়তেই কাপড় খুলে গেলো। এবার সভাপতি বললেন - অনেক অনেক অপমান হয়েছি জীবনে, যা লোকের সামনে বলা যাবে না, কিন্তু এমন টাকা দিয়ে বেইজ্জত হইনি কোনো দিন। আমাকে ন্যাংটা করেই ছাড়লো এরা? দে আমার টাকা ফেরত দে। তোদের সাহিত্য সভার নিকুচি করেছে! 

ভোম্বল দাস বললো - হাততালি হাততালি। মঞ্চে সবাই হাততালি দিলেন। ভোম্বল বললো - ভালো বক্তব্য রাখলেন তাই হাততালি পড়লো।

সভাপতি - তাই নাকি? তাহলে টাকা ফেরত দিতে হবে না। আবার অনুষ্ঠান হলে বলবে আমি কাজ ফেলে সমাজসেবা করতে ছুটে আসবো। দেখি বাড়ি ফিরি। বাদবাকি অনুষ্ঠান তোমরা করো। আমি তো সাহিত্যের লোক নই-- আমি সমাজসেবী। এই চলে যাবার আগে আমার ছবি তুলে খবরের কাগজে দিবি যেন? সবাই যেন করে ধন্য ধন্য! আমি নই ছাপোষা নগন্য।

Comments

Popular posts from this blog

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024