বিনির সৌর খোঁজ - মনোরঞ্জন ঘোষাল || Binir Souro khojh - Monoranjan Ghoshal || Golpo || ছোট গল্প || short story || Bengali story
বিনির সৌর খোঁজ
মনোরঞ্জন ঘোষাল
ডোমস শুধু আমাকে মেরে ফেলার প্লান করেছিল এমনটা নয়। সে আমার গবেষণাকে অসম্মান করেছে। তাই আমার গবেষণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জেদ খানিকটা সে আমার বাড়িয়েই দিয়েছে। তার মত গবেষকদের মুখে ঝামা ঘসে দিতে আমি আবার আমার গবেষণা ভীত্তিক খোঁজ শুরু করলাম। আগে তো চাঁদের দিকে তাকিয়ে জীবের দর্শন পেয়ে ছিলাম। সেই কথা বিজ্ঞানী মহলে জানিয়ে দিয়েছি। এবারে সূর্যের দিকে একবার নজর দেব বলে মনে করছি। প্রখর আলোর জন্য তার দিকে তো তাকানো যায় না। তার জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে মাইক্রোস্কোপিক দূরবিক্ষন যন্ত্রটি এখন আমার কাছে একটা মস্ত বড় হাতিয়ার। যেমনটি ছিল গ্যালিলিয়ের। তবে এটি গ্যালিলিওর টেলিস্কোপের থেকে অনেক উন্নত। আসলে আমি এটিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। আমি এক বিশেষ প্রকার লেন্স ব্যবহার করেছি এই যন্ত্রে। যেটি সাধারণ লেন্সের কার্যকারিতা বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই পদ্ধতি টিও আমার নিজস্ব।
এক বিশেষ সংকর লেন্স। লেন্সের কাঁচের সঙ্গে বিশেষ ধাতুর একটা শতকরা ভাগ মিশ্রিত করলে তার স্বচ্ছতার কোন পরিবর্তন ঘটে না। মানে কাঁচটি ঘোলাটে হয়ে যায় না। সেই কাঁচ দিয়ে লেন্স তৈরী করলে লেন্সের বিস্ফারিত করার ক্ষমতা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আসলে ঐ অপদ্রব্যটি অর্থাৎ যেটিকে এক সামান্য ভাগে গলিত কাঁচে লেন্স তৈরীর সময় মেশানো হল। সেটি স্বাভাবিক কাঁচের তুলনায় অনেকটা ক্ষমতা শালী হয়ে ওঠে। সেই অপদ্রব্য মিশ্রিত কাঁচ দ্বারা গঠিত লেন্সের মধ্যে আলোর প্রতিসরণ ঘটলে তার চ্যুতি কোনকে বাড়িয়ে দেয় বেশ অনেকটা পরিমানে। বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমি এই সত্যটি উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছি। সেই বিশেষ ভাবে তৈরী লেন্স আমি আমার মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপে ব্যবহার করে অসাধারণ ফল পাচ্ছি।
এতদিন ওই দিয়ে আমার সৌর গবেষণাকে যাচাই করার কথা মনে আসে নি। সেটিকে গাণিতিক ভাবে আমি তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠা করেছি। পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা হয় নি। আজ ডোমসের ওখান থেকে প্রত্যাবর্তন করার এক বৎসর কাল অতিবাহিত হল। সকালে আমার হাত ঘড়িটি আমাকে স্বরণ করিয়ে দিল। আমার এই ঘড়িটি এমন স্মরনীয় ঘটনা গুলিকে ওর স্মৃতিতে ধরে রাখে। আর সময় মত আমাকে মনে করিয়ে দেয়। মোবাইল ফোনেও ঐ কাজ করা যায় তবে মোবাইলের ক্ষতিকর বিকিরণের জন্য আমি ওটির ব্যবহার প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি। বদলে একটি অন্য যন্ত্র তৈরী করায় মনযোগ দেবো বলে মনে করে আছি।
ডোমসের ওখানে আমি ষোলোই আগস্ট গিয়ে ছিলাম। আর ফিরেছি তেইশে আগস্ট। আজও সেই তেইশে আগস্ট।
আজ তেইশে আগস্ট ২০১৩ সকাল দশটা। আমার অদৃশ্য কাঁচ ঘরটায় সৌর খোঁজে মন নিবেশ করব বলে মন স্থির করে নিলাম। সকলের দৃষ্টিকে আড়াল করে আমি আমার সাধের ল্যাবে প্রবেশ করলাম। সেখানে এখন অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ক দিনের জন্য আমাকে টেবিলে সৌর দর্শনের যন্ত্রপাতি সব সাজিয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কিছু হাতের কাছেই সাজিয়ে রাখতে হবে। নইলে সময় মত সব জিনিস পত্র দরকারে পাওয়া যাবে না। আমার স্টেচিং চেয়ারের পাশে যন্ত্রপাতি সজ্জিত করতে শুরু করলাম। মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ যন্ত্রটিকে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করলাম। যাতে সেটি সূর্যের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান ভাবে একই কৌনিক মাণের হারে আপনা থেকেই সরতে থাকবে। আমি তো আর সারাটা রাত আর দিন ধরে সব সময় সেই অনুবিক্ষনিক দূরবিন যন্ত্রের কাছে বসে থাকব না। মাঝে মাঝে অন্য কাজে সেখান থেকে সরে যেতে হতে পারে। তাই তার পর্যবেক্ষণের ছবি সে আপনা থেকেই তুলে রাখবে। আমার খোঁজের যাতে কোন রকম আসুবিধা না হয় তার পাকা পোক্ত ব্যবস্থা বলতে পার। এই সব জিনিস পত্র যথাযথ ভাবে সাজাতে বিকেল হয়ে গেল। সূর্য তখন দিগন্ত রেখার কাছে পৌঁছায় নি। একটি বার যন্ত্রের নলে চোখ ঠেকিয়ে তাকালাম সেই হেলে পড়া সূর্যের দিকে। ভাল দেখতে পেলাম না। লাল রঙের বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মি গুলি আকাশে ছেয়ে দৃষ্টিকে অস্পষ্ট করে তুলছে। বুঝলাম তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এই নিয়ে এক সময় মনযোগ দিয়ে ছিলাম। তখন এর প্রতিকার করার জন্য এক বিশেষ কোটেড চশমা তৈরী করে ছিলাম। আজ তার কথা মনে পড়ে গেল। সেই তৈরী করা স্পেশাল কোটেড চশমার কথা। যেটি চোখে পরে থাকলে চোখে আছড়ে পড়া উজ্জ্বল বেগ বান আলোক রশ্মিকে বাধা দেয়। ফলে চোখকে অযথা আলোর ঝাপটা সহ্য করতে হয় না। ঐ নীতি প্রয়োগ করলাম আমার মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ যন্ত্রের উপরের লেন্সে। একটি লেয়ার সেই স্পেশাল কোট লাগিয়ে দিলাম তার ওপরে। ফলে অযথা অযাচিত আলোর ঝলকানি আর লেন্সের ভেতর দিয়ে যন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারল না। তাতে আমার দেখাতে কোন বাধা সৃষ্টি হল না। ফলে আমি আরামে বিনা বাধায় সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। সেই জন্য আমার আলোক বিশ্লেষণটা অনেকটা সহজ হয়ে পড়ল।
আলোক বিশ্লেষণ হল এক বিশেষ কৌশল। যেখানে আলোক রশ্মি গুলিকে পছন্দ মত ভাবে আলাদা করে নেওয়া যায়। আলোক রশ্মি যে কণিকার প্রবাহ তা আমরা জানি। সেই কণিকার নাম নিউটন দিয়েছিলেন ফোটন। তিনিতো আলোর কণিকা তত্ত্বের উদ্ভাবক। প্রমাণ করেছিলেন আলোকের কণিকা ধর্ম। তিনি আলো যে কণিকা সেটি বললেও সে কণিকারা যে আকার ও ভরে ভিন্ন হতে পারে তা বলেন নি। তিনি বলেছিলেন আলোর কণিকা গুলি ধর্মে অভিন্ন।
এই কথা সত্য নয়। আইন্সটাইন তার সমীকরণে সেই কথা স্পষ্ট দেখিয়েছেন। তা ছাড়া সনাতনী বলবিদ্যার ধারণাকে বিশ্লেষণ করলেই তা জানতে পারা যায়। সাধারণ আলো আর এক্স লশ্মির কথা ভেবে দেখ? সাধারণ আলোকের তুলনায় এক্স রশ্মির ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তা হলেই বোঝ? হয় এক্স রশ্মির কণিকা গুলোর গতিবেগ সাধারণ আলোর কণার তুলনায় বেশি। নতুবা এক্স রশ্মির কণিকা গুলো সাধারণ আলোক কণিকার তুলনায় আকারে অনেকটা ছোট। তবে সম্প্রতি প্যারিস-জার্মানিরর এল এইচ সির গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে আলোর থেকে বেশি গতি সম্পন্ন কণিকা আছে। সত্যেন বসুর নামে সেই কণিকা কে বোসন বলে অভিহিত করা হয়েছে। অনেকে অবশ্য ঈশ্বর কণা বলে সেই ক্ষুদ্রতর কণাকে অভিহিত করছেন। ওই ক্ষুদ্রতর না ওর থেকেও ছোট ক্ষুদ্রতম কণিকার কথা আমি অনেক আগেই বলে ছিলাম। তার নাম দিয়েছিলাম একক কণিকা বা ইউনিট পার্টিকল। এটিও আমার এক অমোঘ ধারণা। আমার বস্তুবাদ তত্ত্বে এর উল্লেখ আছে।
আসলে বস্তু ছাড়া যে বস্তুর সৃষ্টি হতে পারে না সেটাকেই বলা হয়েছে সেখানে। তার সঙ্গে ইউক্লিডের জ্যামিতির ধারণা কে জুড়ে দিয়েছি মাত্র। শক্তি আর বস্তু আদতে এক জিনিস। বস্তুর এক বিশেষ অবস্থা হল শক্তি। বস্তুকে যেমন শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। তেমন শক্তিকে বস্তুতে রূপান্তর করা যায়। আমার ল্যাবে আমি তা করে দেখেছি। একটা আলোক রশ্মি থেকে ভারি কণার বস্তু গঠন করেছি। আলোক রশ্মি তো একটি কণা না। অজস্র কণার একটা স্রোত। কোয়ান্টামের ধারণায় এক ঝাঁক কণিকার সমাবেশ বলতে পার। এখন থাক সে কথা।
নানা বর্ণের আলোক রশ্মি আসলে নানা প্রকারের কণিকার প্রবাহ। নিউটনই আলোক রশ্মিকে প্রীজমের মধ্যে দিয়ে পাঠিয়ে আলাদা করে দেখিয়ে ছিলেন। চুম্বক ঐ নানা বর্ণের আলোক রশ্মির ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই যেমন লাল বর্ণের আলোক রশ্মি চুম্বক দ্বারা বেশি আকর্ষিত হয়। কারণটা খুবই সাধারণ। এতে লোহার কণা থাকে তাই। এই ভাবে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে আলোর কণা গুলিকে আলাদা করে দিয়ে আমি আমার পছন্দ মত আলোক রশ্মি টিকে কাজের জন্য বেছে নেবার পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। একেই আলোক বিশ্লেষণ বলে থাকি।
সন্ধ্যা হবার কিছুটা আগে যখন সূর্য অনেকটা দূরে সরে গেছে। তার থেকে নির্গত আলো বেঁকে তেরছা হয়ে ধেয়ে আসছে আমার কাছে। সে আলোর বেগ অনেক কমে গেছে। ঠিক তখনই কিছুটা আলো আমি ধরে নিলাম আমার আলোর ফাঁদ যন্ত্রে। এটি আমার তৈরী এক বিশেষ যন্ত্র। যেটিতে আলো ধরে রাখা যায়।
সকলেই জানে আলো প্রতিফলিত হয়। এবং দর্পণে তা অনেকটাই বেশি পরিমানে হয়ে থাকে। কতগুলো দর্পণকে বিশেষ কোনে স্থাপন করে তাতে আলো ফেললে। সেই আলো যদি সর্বদা এই সকল দর্পণের মধ্যে প্রতিফলিত হতে থাকে। তো সে আর কখনো প্রকৃতিতে মুক্ত হতে পারে না। তৈরী ঐ যন্ত্রে আটকা পড়ে থাকবে অনন্ত কাল। প্রয়োজন মত তুমি কোন একটি দর্পণকে সরিয়ে আলোকে ফাঁদ মুক্ত করে ব্যবহার করতে পারবে। আমি তাই করি। প্রয়োজন হলে আলো ধরে রাখি আর প্রয়োজনে সেই আলোকে কাজে ব্যবহার করে থাকি। আজ
দিন শেষ হবার আগে আমি কিছুটা আলো তাই ধরে নিলাম আমার আলোক ফাঁদ যন্ত্রে। এবার রাত ঘনিয়ে এল। আমি আমার অদৃশ্য কাঁচ ঘরেই সময় কাটিয়ে চলেছি। যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্র সাজিয়ে নজর দিয়ে বসে আছি। অদৃশ্য কাঁচ ঘর এমন কিছুই না। আলোর প্রতিফলন ধর্মকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা।
বস্তু থেকে আলো বেরিয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লে আমরা সেই বস্ত টিকে দেখতে পাই। সেই আলো বস্তুর নিজের দহনের আলো হতে পারে আর হতে পারে অন্য কোন উৎসের আলো। যা তার গায়ে প্রতিফলিত হয়ে ছোটে চলেছে । যখন বস্তু আলো প্রতিফলন করে এবং সেই আলো কারো চোখে ফিরে না আসে। তবে সেই বস্ত টিকে আর দেখা যাবে না। আমার কাঁচ ঘরের সূক্ষ্ম কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে আলো আনায়াসে ভেতরে চলে আসতে পারে প্রতিসৃত হয়ে। যৎ সামান্য যা কাঁচের দেয়ালে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হয় তা চোখে মালুম হয় না। আর ঐ প্রতিসৃত আলোক রশ্মি গুলিকে দর্পন দ্বারা বিশেষ কোনে প্রতি ফলিত করে একত্রিত করে এক বিশেষ কোনে মহাকাশে মুক্ত করে দিয়ে থাকি। ফলে আসে পাশের কেউ আমার ল্যাব দেখতে পায় না। উপর থেকে দেখলে আগুনের গোলা বলে মনে হয় । তাই ভয় পেয়ে উড়ন্ত কোন কিছুই এখানে উপর দিয়ে যায় না। সন্দেহের বসে অনেকে সে দৃশ্য দেখার পর খোঁজ করতে এসেছিল কিন্তু নীচে এসে দেখলে তারা কিছুই খুঁজে পায় নি। তবে আমার যন্ত্রটি পেলে তারা খুঁজে পাবে। আমি বাহিরে কোথাও গেলে এটিকে সঙ্গে নিয়ে যাই। নইলে আমি নেজেই আর ল্যাব খুঁজে পাব না। এটি এক প্রকার ডিটেক্টর। ল্যাবের মধ্যে থাকা এক বিশেষ যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বাইরে থেকে এর অবস্থান জানতে সাহায্য করে। অবস্থান সূচিত হবার পর আমি কম্পাসে দিক নির্ণয় করে ল্যাবের ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে ঢোকার পর সব কিছু দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। এটি তৈরীর মেকানিজম আমি লিখছি না। তাহলে সকলে বানিয়ে আমার ল্যাব খুঁজে বের করবে। আমি বড় বিরক্ত বোধ করব।
যদিও রাতে সূর্য আলো দেওয়া বন্ধ করে দেয় না। মনে করলে আমি স্যাটেলাইটের দ্বারা প্রতিফলিত আলোকে গ্রহণ করে কাজে লাগাতে পারি। অনেকে একটা কথা ঠিক বুঝতে পারে না। যে আকাশে সূর্যের আলো ছড়িয়ে থাকলেও আকাশ রাতে কালো থাকে কেন? আসলে আলো প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে না আসলে আমরা উৎস বা প্রতিফলককে দেখতে পাবো না। কারণ আলোক রশ্মিকে চোখে দেখা যায় না। তাই আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলোক রশ্মিগুলো কোথাও প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে আসে না। তাই কিছুই দেখা যায় না। সে যাক।
রাতে আলোর ফাঁদে থেকে আলো নিয়ে একটা আলাদা যন্ত্রে একটু নাড়াচাড়া করলাম। কোন লাভ হল না। কারণ তার সূর্যের সঙ্গে সংযোগ সূর্য থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই তার চলার পথ আর সূর্য পর্যন্ত বিস্তৃত নেই। সেই আলো সূর্যকে প্রত্যক্ষ করাতে পারছে না। এবার আর প্রতিফলিত আলোকে উৎস খোঁজায় ব্রতি হলাম না। জানি সে কাজ ভষ্মে ঘি ঢালার মত হবে। আগুনও জ্বলবে না আর ঘি টুকুও নষ্ট হবে।
পরের দিন সকাল হলেই আবার বসে পড়লাম টেবিলে সৌর খোঁজের কাজে। একেবারে সকাল এখনো সৌর কিরণ এখানে এসে পড়ে নি। দেখি বড় একটি মেচলার মত সূর্য সবে উঠে আসছে উপরের দিকে। যেন মনে হয় জ্বলন্ত কয়লা। একেবারে টক টকে লাল হয়ে জ্বলছে। দেখে মনে হয় না সেটি পৃথিবীর থেকে বড়। ধীরে ধীরে তাকে কাছে টেনে এনে বড় করতে থাকলাম। ক্রমে বড় হচ্ছে একটা ঘরের মত বড় হয়ে গেল। আরো বড় করতে লাগলাম। এবার একটা গোটা গ্রামের মত হয়ে পড়ল। তখন তাতে সৌর কলঙ্ক খুঁজতে শুরু করলাম। কিচ্ছু পাওয়া গেল না। তাকে আরো বড় করতে করতে একেবারে হাতের কাছে ছুঁয়ে ফেলার মত কাছে নিয়ে চলে এলাম। এবার তার দেহে আমাদের ঘরের মত এতটুকু জায়গা দেখতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতটাই বড় করা হয়ে গেছে তার দেহটি। ভেবে দেখলাম তাহলে তো গোটা গ্রামের মত একটা অংশ স্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বহু সময় লেগে যাবে! সম্পূর্ণ তার দেহের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজ করতে সারাটা জীবন লেগে যাবে! তাই তার আকার কিছুটা ছোট করে নিলাম। ছোট করতেই এক অদ্ভূত দৃশ্য নজরে পড়ল!
দেখলাম একটা আগ্নেয়গিরি! তার জ্বলা মুখ দিয়ে অগ্নুৎপাৎ হচ্ছে। কোন লাভার নির্গমন হচ্ছে না। বড় বড় জালার মত আগুনের গোলা নির্গত হয়ে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। কয়েকটা তো আমাকে লক্ষ্যঃ করে ছুটে এল! আমি ভয় পেয়ে গেলাম! দেখলাম সেগুলি ঠিক যেন আমার মাথার উপর এসে আছড়ে পড়ছে। আমি জানি ওতে আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আমার ল্যাবের চারিদিকে অদৃশ্য লেজার শিল্ড প্রোটেকশন চালু করে রেখেছি। বড় ধুমকেতু এসে আছড়ে পড়লেও কিছু হবে না। তবে সূর্য এসে আছড়ে পড়লে কী হবে বলতে পারবো না। হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে সেটি যে হবার না তা আমি ভাল মত জানি। আর আমি তো কেবল আমার কথা ভাবি না। পার্থিব সকল জীব জগতের কথা আমাকে ভাবতে হয়। ঐ আগুনের ছুটে আসা গোলা আমার কোন ক্ষতি না করলেও পার্থিব বাকি সব কিছুর ক্ষতি করছে। মনে মনে তাই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে ল্যব থেকে বাহিরে বেরিয়ে এলাম দেখার জন্য। এই কথা ভেবে যে ঐ ধেয়ে আসা আগুনের গোলা গুলো আসে পাশের পরিবেশের কতটা ক্ষতি করছে। বাহিরে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে গেলাম! কোথায় সেই ছুটে আসা আগুনের গোলা? কোথাও কিচ্ছু তো নেই! পরিবেশের এতটুকু ক্ষতি তো কোথাও হয় নি! চারি পাশে গাছ পালা জীব জন্তু সব কিছুই বহাল তবিয়তে রয়েছে।
বরং রৌদ্রে ঝলমল করে গাছেরা যেন খিল খিলিয়ে হাসছে। দিঘির জল হালকা সেই রোদে তাথৈ তাথৈ নৃত্য করছে। পানকৌড়ী মনের আনন্দে টুপ টুপ করে জলে ডুব দিচ্ছে। প্রকৃতিতে মহা সমারোহ। এতটুকু বিমুর্ষতার চিহ্ন কোথাও চোখে পড়ল না।
মনে সনন্দেহ হল! তবে কী আমি যন্ত্রে ভুল দেখলাম! আমার যন্ত্র কী সঠিক দিশা দেখাতে পারছে না?মনটা ভাবনায় ভরে গেল। সমস্যাটি কী খুঁজে নেবার চেষ্টা করলাম। অনেকক্ষণ ভেবে একটা আন্দাজ করলাম তবে একবার পরখ না করে একেবারে নিশ্চিত হলাম না।
আবার গিয়ে বসলাম ল্যাবের ভেতরে আমার চেয়ারে। এবারে মন টাকে শান্ত করে চেয়ে দেখলাম সূর্যের দিকে তাক করে থাকা টেলিস্কোপের মুখে লাগানো স্ক্রীন টার উপর। প্রত্যক্ষ করলাম আবার সেই দৃশ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে সেই ভাবেই আগুনের গোলাগুলো সূর্যের দেহের আগ্নের গিরির জ্বালা মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসছে আমার দিকে। যেন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র! তখনও ঠিক ভাবে আমার মাথায় আসছিল না কেন এমন দেখতে পাচ্ছি? অনেক ভাবনা চিন্তার পর বুঝতে পারলাম আসল সত্য টিকে! প্রত্যক্ষ করলাম কোয়ান্টাম তত্ত্ব! শক্তির কণা গুলো দল বেঁধে নির্গত হয় উৎস থেকে। আর এ তো সেই ঘটনা। এগুলো আলোর কণা ফোটন। আমার ম্যাগনিফাইং গ্লাসে সেই অতিব সূক্ষ্ম ফোটন কণা গুলিকে এত বিশাল আকারে দেখাচ্ছে। তাই আলোর কণার নিক্ষেপকে গোলা বর্ষণ বলে মনে হচ্ছে। আমার যন্ত্রে এতটাই বর্ধিত করা সম্ভব হয়েছে যে আলোর ঐ তীব্র গতিও ক্যামেরায় ধীর গতি সম্পন্ন মনে হচ্ছে। সিনেমার পর্দায় যেমন স্লো মোশনে ছবি দেখা যায়। এখানে তেমন সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চলা আলোক কণাদের একটি সিধারণ কণার মত গতি শীল দেখাচ্ছে। কী আশ্চর্য! এমনটাও হতে পারে? তাহলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে যে ইলেকট্রন গুলো প্রচণ্ড গতিতে ঘুরে বেড়ায় তাকেও তো একটি স্বাভাবিক গতিতে কেন্দ্রকের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকা কণার মত দেখাবে? পরমাণু পর্যবেক্ষণের একটা খুব ভাল দিক উন্মোচন হল আমার কাছে এই গবেষণা করতে গিয়ে। সেই নিয়ে আর এক সময় কাজে বসা যাবে। এই অভাবনীয় দৃশ্য সচক্ষে দেখে
একবার মনে হয়েছিল এই দৃশ্য আমি বৈজ্ঞানিক সমাজকে প্রত্যক্ষ দর্শন করাব। কিন্তু সেটি যে সম্ভব না। আমার এই ল্যাবরেটরী আর যন্ত্রের সেটাপ ছাড়া এই দুর্লভ দৃশ্য দেখা অসম্ভব। সেটি যে দ্বিতীয় কোথাও সেট করা যাবে না। আর আমার ল্যাবের সন্ধানও কাউকে দেওয়া যাবে না। একটা প্রমাণ স্বরূপ এই লেখাটি রাখলাম। তাতে যে যা বোঝে বুঝুক। অসত্য বলে মনে করে করুক। তবে কেউ কেউ সত্য বলে মনেও তো করতে পারে? তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি আমার এই উক্তি যথার্থ সত্য এবং সচক্ষে দেখা বর্ণনা। এটিকে বিশ্বাস করে গবেষণায় লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই।
এবার মনে এল আলোর কণা গুলো অগ্নুৎপাতের মত নির্গত হচ্ছে ঠিকই। তাবে তা সূর্যের দেহের সমগ্র তল থেকে নির্গত হচ্ছে না। তার দেহের কোথাও কোথাও টর্চ জ্বেলে রাখার মত এমন আগুনের গোলা বের করার আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আর বাকি বেশির ভাগ অংশটাই ফাঁকা। আমাদের পৃথিবীর মাটির মত। সমগ্র পৃথিবীর বুকে কয়েকটা মাত্র আগ্নেয় গিরি আছে তাও আবার সব গুলি জ্বলন্ত নয়। বেশির ভাগ দেহ তলই ফাঁকা। তবে আমাদে দেহ তলের মত এতটা ফাঁকা নয় সূর্যের দেহ তল। তবে সমগ্র তল যেমন আগুনের গোলা বলে মনে হয়। সূর্যের সেই দেহ তল তেমনটি না। সেখানে পাহাড় পর্বত ঘর বাড়ি সব রয়েছে। বড় বড় গর্তও রয়েছে চাঁদের মত। যেখানে কোন আগ্নেয় গিরি নেই তাই আলো জ্বলে না। বাহিরে কোথাও থেকে আলো পৌঁছে গেলেও সে আলো আর ফিরে আসে না কোথাও। তাই কালো হয়েই থাকে সব সময়। এই কালো অংশ গুলো হল সৌর কলঙ্ক।আমরা এগুলো খুব একটা দেখতে পাই না। কারণ সৌর ঝড় আর সূর্যের আবর্তণ গতির জন্য।
সূর্যের দেহে ঝড় বয়ে চলেছে প্রবল বেগে সর্বক্ষণ। সে ঝড় আলোর কণা গুলিকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তার দেহে সর্বত্র। তাই সে দিকে তাকালে ও সব আর দেখা যায় না। শুধু জ্বলছে সারা দেহ বলে মনে হয়। যদিও এর জন্য বহুলাংশে দায়ী তার আবর্তণ গতি। পৃথিবীর মত সূর্যও তার নিজের অক্ষের চারিদিকে পোঁ পোঁ করে ঘুরছে। এতটাই তার বেগ যে মুহুর্তের মধ্যে আগ্নেয় গিরির জ্বলা মুখ আবার ঘুরে আসছে চোখের সামনে এক পাক ঘুরে। তাই সব সময় ঐ জ্বলা মুখই আমাদের চোখে ধরা দেয়। অনেকটা চরকা বাজি মত ঘটনা বলে মনে করতে পার। চরকার মুখে আগুন জ্বেলে দিলে সে বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে। দেখে মনে হয় তার দেহের সর্বত্র দিয়েই আগুন জ্বলছে যেন। আদৌ তাই কি জ্বলে? এমন ঘোরার গতি আমাদের মনে করতে বাধ্য করায় তার এমন সর্ব দেহ জ্বলমান অবস্থার কথা।
তাই সূর্যের সারা গায়ে আগুন জ্বলছে বলে দেখালেও আদৌ তার সারা গায়ে আগুন জ্বলছে না। তার দেহের বিস্তৃত জায়গা রয়েছে ফাঁকা পড়ে। সেখানে বাস করে সৌর মানব। আমাদের থেকে দীর্ঘাকায় ও সোনার মত তাদের গায়ের রং। সোনা রদ্দুরের দেশে বাস করে বলে হয়তো এমনটা হয়েছে। পরিবেশের প্রভাবে এমনটা হয়ে থাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলানিজম বলে একটা ব্যাপার আছে। আমরা অনেকেই জানি। যেখানে এক এক ইন্ডাস্ট্রি অঞ্চলে ঐ ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিশেষ পরিবেশ গড়ে ওঠে। সেই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য জীব দেহে নানা রকম পরিবর্তন ঘটে থাকে। একেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলানিজম বলে। সূর্যের বাসিন্দাদের ঐ রকম সোনালী গড়ন হয়েছে সোনালী রদ্দুরের জন্য। আর দেহের আকার বড় হবার কারণ ওদের আবর্তন গতি। যেমন আমাদের বিষুব রেখার বা তার আসে পাশের অঞ্চলে থাকা লোক গুলোর আকার বেশ বড়। ততার পর অক্ষাংশ কমার কারণে আকার কমতে থাকে। অক্ষাংশ কমতে থাকলে তার আবর্তন গতিবেগ ও কম হয়। তাই বাহিরের দিকে ছিটকে যাবার বেগও কম হয়। অর্থাৎ কেন্দ্রাতিগ বল মানুষের লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠার পক্ষে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বল যত বেশি হবে তত তাকে খাঁটো করে দেবে। এটিকে অভিকর্ষ বলা হয়। অভিকর্ষের টান কাটিয়ে মানুষ কে বড় হতে হয়। মেরু দেশে মানুষের ওপর অভিকর্ষ টান বেশি তাই তারা লম্বা বেশি হতে পারে না। তাই বলে ঐ একটি কারণ শুধু লম্বা হবার জন্য দায়ী তা বলা যাবে না। অনেক কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ। না হলে গোর্খা জাতিদের বেঁটে হবার কারণ আর গাণিতিক হিসাব নিয়ে সংশয় দেখা দেবে। কারণ ঐ একই অক্ষাংশে পাহাড়ের মাথায় আর ঠিক সেই পাহাড়ের নীচের মানুষদের আকারের উল্টো পরিণতি ঘটবে কেন? সেখানে তো পাহাড়ের ওপরে বসবাসকারী গোর্খাদের লম্বা আর নীচে বসবাসকারী দের বেঁটে হবার কথা। এখানে আর একটা যে সত্য লুকিয়ে আছে তা বলে রাখি। তাহল অস্বাভাবিকতা। মানুষের ভর অনুযায়ী পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল তার জন্য বরাদ্দ আছে। সেই অঞ্চলের নীচের দিকে বা ওপরের দিকে বাস করলে তার শরীর একটা অস্বভাবিকতা অনুভব করে। ফলে সে স্বাভাবিক ছন্দে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। তখন তার সমস্ত চরিত্রে বৈশিষ্ট্যগত নানা পার্থক্য গড়ে ওঠে যেটি তাকে ঐ পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। এখন থাক ও কথা। কী আশ্চর্য! সূর্যের দেশে মানুষ!
সেখানে মানুষ দেখে উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। আরো ভাল করে খোঁজ করতে থাকলাম সেখানের মাটি। কী আশ্চর্য! তাল তাল সোনায় পাহাড় তৈরী করে রেখেছে সেখানে! আমরা একটু সোনার টুকরোর জন্য হাপিত্তেষ করে মরছি।আর সেখানের লোকে সোনা পা দিয়ে মাড়াচ্ছে। সোনার ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সোনার বাড়ি তৈরী করে তাতে বাস করছে। আরো একটু লেন্সটি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দেখলাম সাদা কিসের যেন পাহাড় রয়েছে মনে হল। প্রথমে মনে হয়ে ছিল অভ্র। তার পরক্ষণেই বুঝলাম সেটি অভ্র না। সে তো হালকা ধাতু। তার তো ওখানে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানোর কথা। তবে এটি কী? প্লাটিনাম নয় তো?
আলোর দ্যুতি পরীক্ষা করে দেখলাম যে ঠিক তাই। যা মনে ভেবেছিলাম!সেটি প্লাটিনামের পাহাড়। ওরে বাবা! এত বড় প্লাটিনামের পাহাড়! এ মুলুকে থাকলে না হয় এক ধামা নিয়ে ঘরে রেখে দিতাম। এখানে তো ওটি সহজে পাওয়া যায় না তাই বেশ দামি ধাতু। তার পর নজর পড়ল এক ঝকঝকে গাছের ওপর। ঠিক যেমন বড় দিনে আমাদের এখানে গাছকে সাজিয়ে বানানো হয় তেমন ঝকছে কিন্তু কোথায় বাতি লাগানো তা দেখতে পাচ্ছি না। বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তবে বুঝলাম যে সেটি কোন সাজানো গাছ নয়। ওটি ওখানের স্বাভাবিক গাছ। আমাদের যেমন সবুজ পাতার গাছ হয় ওখানে তেমনই গাছ তবে তার পাতা সবুজ না। রোদের মত সোনালী।
সাধারণ টেলিস্কোপে এ সব কিছুই দেখা যায় না। ওরা তো দৃষ্টিকে আলোক বলয় ছাড়িয়ে ভিতরে নিয়ে যেতে পারে না। তাই ও সব টেলিস্কোপে সূর্যকে জ্বলন্ত আগুনের গোলা বলে মনে হয়। আলোক বলয় তেমন বিশেষ কিছু নয়। অপেক্ষা কৃত ভারি আলোর কণা গুলো দেহ থেকে নির্গত হয়ে বেশি দূর পর্যন্ত ছুটে যেতে পারে না। কিছুটা দূরে গিয়ে তারা একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থান করে সূর্যের মূল দেহকে বেষ্টন করে আবর্তন করতে থাকে। ঠিক যেমন শনির বলয়। শনির বলয় তো ঘন ধুলি কণার স্তর। যেটি তার দেহের চারি পাশে বলয়ের মত ঘুরতে থাকে। নানা ভরের ছোট ছোট কণা সেখানে ভীড় করে এমন বলয় গঠন করেছে। সূর্যের দেহের চারি পাশেও তেমন ভারি আলোর কণার স্তর ঘুরে বেড়িয়ে আলোক বলয় গঠন করে। সূর্যের দেহ থেকে নির্গত সূক্ষ্ম আলোর কণা গুলোই প্রচন্ড গতিতে ঐ আলোক বলয় ভেদ করে বাহিরে বেরিয়ে আসে। সেই সূক্ষ্ম রশ্মিকে অনুসরণ করা সাধারণ টেলিস্কোপের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এমন কি হাবল টেলিস্কোপেও তাকে ধরতে পারবে না। যদি পারতো তো ওদেরকে পদ্ধতি বলে দিয়ে তা প্রত্যক্ষ দর্শন করাতাম।
অনেকে বলে থাকেন সূর্যের দেহে এত উত্তাপ ওখানে জীবন থাকা সম্ভব না। তাই গাছ পালা মানুষ এ সব কিচ্ছু নেই। তারা যে এত বোকার মত কথা বলে তা বলে বোঝাতে পারবো না। আগেই তো বললাম যে সূর্যের দেহে সর্বত্র আগুন জ্বলছে না। তাই যেখানে আগুন জ্বলছে না সেখানে জীব থাকতে পারে এবং আছে তা আমি প্রত্যক্ষ করলাম। আগুন তো অল্প কিছু জায়গাতে জ্বলছে। সেই আগুন ঝড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেহের অন্যত্র। তাই সূর্যের সমগ্র দেহ জুড়ে আগুন জ্বলছে বলে মনে হয়। সেখানের উত্তাপ যতটা মনে করা হয় ঠিক ততটা নয়। তবে আমাদের এখানের থেকে সেখানের উত্তাপ অনেক বেশি। তাই বলে ঠিক ততটাও না যতটা আমরা অনুমান করি অসহ্য বলে। আমরা তো জানি আগুনের কাছে পাশাপাশি যতটা হাত নিয়ে যাওয়া যায় উপর থেকে ততটা কাছে হাত নিয়ে যাওয়া যায় না। ঘূর্ণনে অপ কেন্দ্রিক বলের কারণে ঐ ফোটন কণা গুলি ঘূর্ণন কেন্দ্রের বিপরীতে ছুটে চলে যায়। তাই উপরের দিকে হাত বেশি কাছে আনা যায় না। ঐ কণারা তাদের চলার পথে বাধা পছন্দ করে না। যদি কোন বাধা চলার পথে পড়ে তবে তাকে হয় বিদ্ধ করে ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। নতুবা সে নিজে তার গায়ে ধাক্কা মেরে প্রতিফলিত হয়ে অন্য দিকে চলে যায়। আরো একটা কথা বলতেই হয়। যে মরুতে বা মেরুতে জীবেরা বসবাস করতে পারবে বলে আমরা কখনো ভেবেছিলাম! না তো? অথচ সেখানে জীব রয়েছে। মরুতে বিষাক্ত বালি বোড়া সাপ। কাঁকড়া বিছে ইত্যাদিরা উষ্ণ বালির ভেতরে বেশ আরামেই থেকে যাচ্ছে। আর মেরুর প্রচন্ড ঠান্ডায় ক্রায়োজেনিক্স ছত্রাক আর শৈবাল তো রয়েইছে। সঙ্গে মানুষও রয়েছে। এস্কিমো। কেউ ভেবেছিল এ সব কথা! তবে এরা সকলে ঠিক আমাদের মত না। শিতের দেশের পাখি পেঙ্গুইন কে যেমন গরমের দেশে নিয়ে গেলে তাকে তার মত ব্যবস্থা নিয়েই নিয়ে যেতে হবে। তেমনই অস্ট্রিচ এমু এদেরকে বরফের দেশে নিয়ে যেতে গেলে তাদের তার মত পরিবেশ গড়ে নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ শিতের পাখিকে গরমের দেশে নিয়ে গেলে তাকে শিতের পরিবেশ তৈরী করে সেখানে রাখতে হবে। আর গরমের পাখিকে শিতের দেশে নিয়ে গেলে তাকে গরমের বাঁসা বানিয়ে সেখানে রাখতে হবে। ঐ দুই পরিবেশের পাখি দুটি তাদের পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারলেও বিপরীত পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই বলে গরমের পাখি কী মনে করতে পারে যে শীতের দেশে কোন পাখি বাস করতে পারে না? ওদের ক্ষেত্রেও তাই। সূর্যের দেশের জীবেরা তারা তাদের পরিবেশে বসবাস করায় অভ্যস্থ জীব থাকে। তারা গরম সহ্য করতে পারে। আবার আমরা অপেক্ষা কৃত ঠান্ডার ভূখণ্ডে বাস করি ওদের মত গরমে থাকতে পারবো না। তাই বলে ওখানে জীব থাকতে পারে না বলে আমাদের মনে করাটা কল্পনা। এটিকে বৈজ্ঞানিক সত্য বলে মেনে নেওয়া যাবে না। তবে বিজ্ঞান তো না দেখে সহজে বিশ্বাস করবে না। আমি দেখেছি ফলে সেটিই প্রমাণ এই কথা কেউ মেনে নেবে না। তাদেরকে হাতে নাতে দেখিয়ে দিয়ে প্রমাণ দিতে হবে যে আমার কথা সত্য। সেটি যে করা সম্ভব না তা আমি আগেই স্বীকার করেছি। তাই আমার এই নিজের সচক্ষে দেখা ও তার সম্পর্কে লেখা বিবরণ সকলে বিশ্বাস করতে চাইবে না। সে যাই হোক ওরা বিশ্বাস না করে করুক তাই বলে আমার চোখের দেখা সত্য তো আর মিথ্যা হয়ে যাবে না। আরো একটু মনযোগ দিয়ে সূর্যের দেহ তল পর্যবেক্ষণ করছি। নানান দৃশ্যের মাঝে
এ বার আরো একটা অদ্ভূত দৃশ্য দেখতে পেলাম। সেই দৃশ্য আমাকে কেবল অবাক করে দিল না বরং এক বিশেষ ভাবনার মধ্যে ঠেলে দিল। আমি ঠিক নাস্তিক না হলেও আস্তিক বলতে পারবো না। অর্থাৎ আমি ধর্মকে তেমন অবিশ্বাস না করলেও তেমন বিশ্বাস করি তা বলা যায় না। তাই এই দৃশ্য দেখে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম! তবে কী পুরাণ কাহিনী সব সত্য! তবে কী দেবতা আর অসুরেরা এখনো জীবিত? এখনো কী তাদের মধ্যে ঘটে চলেছে মহা সগ্রাম! এমন কথা মাথার মধ্যে ভীড় জমাতে থাকছে। যখন দেখলাম সেখানে রয়েছে দু প্রকার মানুষ! কাল আর সাদা যেটি সোনালী দেখায়।
এক দল কালো যারা দল বেঁধে থাকে ঐ অন্ধকার ময় কালো গহ্বরে। আর এক দল সোনালী মানুষ যারা থাকে আলোর দিকে জড়ো হয়ে। এখন বুঝতে পারলাম তাই আলো এত উজ্বল আর অন্ধকার এতটা কালো।
তাকিয়ে আছি ঐ দিকে। দেখি ঘন কালো অন্ধকারে ভিতর থেকে বিশাল দৈত্যাকার কিম্ভূত কিমাকার সব মানুষ বেরিয়ে আসছে। হাতে তাদের অস্ত্র। তারা এগিয়ে চলেছে আলোর দিকে। সেই আলোর দিকেও চলছে তোড়জোড়। আলো আর আঁধারের দুটি দল। তারা পরস্পরের শত্রু। দিন আর রাতের মত। অসুর আর দেবতাদের মত। এখনি বোধহয় বেধে যাবে যুদ্ধ যা অনন্ত কালের আলো আঁধারের বিরোধ। কেন? কিসের জন্য যুদ্ধ তা জানি না। বোধহয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। একে অপরকে পরাস্ত্র করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সে জগতে। তাই আঁধার আলোকে গ্রাস করতে চায় সর্বদা। আর আলো অন্ধকারকে প্রতি হত করে চলেছে সর্বদা। একজন হল ধ্বংসের প্রতীক। আর অন্য জন সৃষ্টির। আমি অহিংস। হিংসাকে পছন্দ করি না আর প্রশ্রয় দিই না। তাই আমার ওই যুদ্ধ দেখার আর আগ্রহ থাকলো না। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম টেলিস্কোপ থেকে।
Comments