রুদ্র গায়ত্রী কথা - মৌসুমী সরকার || Rudra Gayatri kotha - Mousumi Sarkar || বড় গল্প || Story || Bengali story || Big story || Bengali audio story || Short story

 রুদ্র গায়ত্রী কথা 

          মৌসুমী সরকার 



১ম পর্ব  


চিতোর হইতে একটি টি ঘোটক উদয়পুর যাইতেছে , অপরাহ্নের প্রখর রৌদ্র , শুস্ক , কঠিন তাপ চারিপাশে বিকীর্ণ হইতেছে , , রুদ্র নিজ গৃহে ফিরিতেছে । তাহার পিতা উদয়পুরের প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী , রুদ্রর বয়স ২২ হইবে , তাহার বাটি তে মাতা ও দুই ভ্রাতা রহিয়াছে , সে আসিয়াছে , ভগিনী কে দেখিতে । তাহার ভগিনীর চিতোরে বিবাহ হইয়াছে , নাম তারা । মহা রানা প্রতাপের কল্যানে তাহাদের রাজপুতানায় শান্তি তে দিবস কাটিয়া যায় । শত্রূ দিগের লোলুপ আঁখি রাজ পুতানার ওপর পড়িলেও , মহা রানা শক্ত হস্তে দমন করিয়াছেন, আপাতত নিরুপদ্রবে দিন কাটিয়া যাইতেছে । কিছু দিবস ভগিনী কে না দেখিয়া মাতা উতলা হইয়াছিলেন , মাতার আদেশে সে তারা কে দেখিতে আসিয়া দুই দিবস থাকিয়া ফিরিয়া যাইতেছে । তাহার ভগ্নিপতির ও চিতোরে বৃহৎ বস্ত্র বিপনী রহিয়াছে । ভগিনী ভালো আছে , স্বামী , শ্বশুর শশ্রু মাতা সবাই ভারী ভালো মানুষ , তারা সৌভাগ্য বতি । কিন্তু রুদ্র নিজে ভারী চিন্তিত ! তাহার চিন্তার কিছু কারণ রহিয়াছে ! 


২ পর্ব 

  তারা একমাত্র পুত্র বধূ , তাহার দেওর বা ননদ নাই । পারিবারিক সম্পত্তি যাহা রহিয়াছে , তাহাতে তাহার বা তাহার স্বামীর স্বচ্ছন্দে কয়েক পুরুষ চলিয়া যাইবে । এক কিশোরী আসিয়াছে তারা দের গৃহে , তাহার নাকি পরিবারে কেহ নাই , অল্প বয়সে পিতৃ মাতৃ হীনা । তারার শ্বশুর , শাশুড়ি যথেষ্ট ভালো মানুষ , তাহাকে যত্ন করিয়া আনিয়া কন্যার মতন রাখিয়াছেন । কন্যাটি র গলার আওয়াজ পাওয়া যায় না বলিলেই চলে , কেহ না জানিলে মনে করিবে ও বোধ করি বোবা ! কথা জিজ্ঞেস করিলে উত্তর পাওয়া যায় , কিন্তু নিজে হইতে কোনো কথা কহে না ! এই স্বভাবের কথা তারাও তাহাকে হাসি মুখে বলিয়াছে , অর্বাচীন , প্রগলভা তারা ! পিতা , মাতা না থাকিবার বেদনা তে কিশোরী টি এরূপ , একথা সে আর ভগিনী কে বুঝাইতে যায় নাই ! এমন তো কত আছে সংসারে ,পিতা মাতা থাকে না , সাধ্য মতো সবাই সবাই কে দেখিয়া রাখে হয়তো , হয়তো বা দেখেও না ! তাহার মাতাও কত সময় উদয়পুরের পিতৃ হীন বা মাতৃ হীন বা অনাথ শিশুদিগকে সাহায্য করেন , সে জানে ! রুদ্র কে বাণিজ্য সূত্রে দিল্লি , ও উদয়পুর যাওয়া আসা করিতে হয় । তবে চিতোর সে বিশেষ আসে নাই ! সে সবার বড়ো , পিতা মাতার দুঃখ বুঝে চিরকাল , একাই যাতায়াত করে , কোনোরকম ভীতি দুশ্চিন্তা তাহার অন্তরে স্থান পায় না , তাহারা’ যে রাজ পুত ! বীরের জাত , কাহাকে ভয় ? কিসের ভয় ? পৃথিবীতে আসিয়াছি , বীরের মতো বাঁচিতে , অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করিতে , পিতা মাতা গুরুজন দিগকে শ্রদ্ধা করিতে , ভ্রাতা ভগিনী দিগকে স্নেহ করিতে , আর , আর কি ? ভাবিতে গিয়া তাহার কর্ণ মূল রক্তিম হইয়া ওঠে , কাহাকেও নিজের মতন করিয়া ভালো বাসিতে ! সেও প্রাপ্ত বয়স্ক হইয়াছে , তাহার মাতা কন্যা প্রায় স্থির করিয়া ফেলিয়াছেন তাহার জন্য , উদয়পুরেই এক বৃহৎ ব্যবসায়ীর কন্যার সহিত তাহার তিলক অনুষ্ঠান হয়তো হইবে কিছু দিনের মধ্যেই কিন্তু এই কিশোরী গায়ত্রী কে দেখিয়া তাহার কি হইলো ? 

 

পর্ব ৩


 কিশোরী টি যে অপূর্ব সুন্দরী তাহা নহে , গাত্রবর্ণসম্পূর্ণ হরিদ্রার ন্যায় তাহা বলা যায় না , এমন কি তাহাদের রাজস্থানে , নারী রা যেরূপ সু স্বাস্থ্য বতি , তাহাও নহে , কিন্তু তাহার আঁখি ? সে যেন সমুদ্র ন্যায় গভীর , তাহাকে কিছু বুঝাইয়া বলিতে হয় না , সে আপনি বুঝিয়া লয় । রক্তিম ওষ্ঠ , সুন্দর নাসিকা , বিশাল চক্ষু লইয়া সে যেন এক স্নিগ্ধ চিত্র , কোঁকড়া কেশ রাশি বৃষ্টি স্নাত পুষ্পের ন্যায় শান্ত , মুখশ্রী কে জড়াইয়া রহিয়াছে । তাহাকে দেখিলে মনে হয় উহার যেন এই জগতের উপর আর বিশেষ কোনো দাবি দাওয়া নাই ! তাহার পিতা , মাতার সহিত সব কিছু চলিয়া গিয়াছে । উহাকে দেখিয়া রুদ্রের বুকের মধ্যে কি যে চলিতেছে , তাহা সেই জানে , না কাউকে বলিতে পারিতেছে , না পারিছে নিজে হইতে নিজে কে লুকাইতে । এক অদ্ভুত দোটানার মধ্যে পড়িয়াছে সে ! তাহার বিপণির কর্মে ভুল হইয়া যাইতেছে !! মাতার সহিত সর্বদা ই চিরকাল তাহার সব কিছু আলোচনা হয় । মাতা তাহাকে জিজ্ঞাসা ও করিয়াছেন সে এত অন্য মনা কেন ? সঠিক উত্তর কিছু দিতে পারে নাই রুদ্র ! 


পর্ব ৪

 ওদিকে গায়ত্রী ! সে তো কিশোরী , পিতৃ , মাতৃ হীনা , যে গভীর আঘাত সে অন্তরে পাইয়াছে এই স্বল্প বয়সে , তাহা যে চির দিনের ! তাহার অন্ন সংস্থান রাখিয়া পিতা মাতা অসুখে , কিছু দিবসের ব্যবধানে স্বর্গে গিয়াছেন । নিরাপত্তার কারণে তাহাকে কাকিমা , কাকাবাবু একা বাটি তে রাখেন নাই । সে তারা দিদির বাটিতে থাকে । সবাই তাহাকে ভালোবাসে । সে , তারা দিদির দাদা , , জামাই বাবু র সহিত চিতোরে ভগবানের মন্দির দর্শনে আসিয়াছিল । ছোট হই তেই সে এখানে আসে , কি অপূর্ব প্রস্তরের কারু কার্য , দেখিলে চক্ষু জুড়াইয়া যায় ! ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মন্দির , দিবারাত্র সেখানে ভগবানের ভজনা হয় , মীরা বাই যে তাহার একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন ! একমাত্র ভগবানের মন্দিরেই তাহার যেন একটু ভালো লাগে ! পিতা মাতা নাকি ঈশ্বরের কাছে চলিয়া গিয়াছেন , সে কবে যাইবে ? রাত্রি দিন এই কথা তাহার মনে আন্দোলিত হয় ! সে কি করিয়াছিল ঈশ্বর তাহাকে এত বড়ো শাস্তি দিলেন ! সে বিশেষ কথাও কহে না কাহারো সহিত , প্রতিদিন পিতা মাতার কথা ভাবিয়া তাহার আঁখি অশ্রুসিক্ত হইয়া যায় । নানা কথা ভাবিতে ভাবিতে সে মন্দিরে চলিতেছিল , ভগবানের মন্দিরে আসিয়া সে আর অশ্রু ধরিয়া রাখিতে পারে নাই ! কেহ দেখে নাই , তারা দিদির দাদা, রুদ্র নাম 

  বোধ করি , সে দেখিয়া ফেলিয়াছে ! ছি , ছি , কি লজ্জার কথা ! সে কাহাকেও তাহার বেদনা দেখাইতে চাহে না ! এ বেদনা তাহার একান্তই নিজের , এত বড়ো পৃথিবীতে এই বেদনার সহিত ই তাহাকে থাকিতে হইবে ! মন্দিরে কত লোক পূজা দিতেছে , প্রসাদ বিতরণ হইবে একটু পরেই , প্রতিদিন কত গরিব লোকের ও অন্নভোজন হয় , মহারানার নির্দেশে , চিতোরে কেউ যেন অভুক্ত না থাকে ! চিতোর ! আহা ! তাহাদিগের স্বর্ণের ন্যায় অপরূপ চিতোর ! তাহার জন্ম ভূমি !গভীর রাত্রি তে যখন বিশ্ব চরাচর নিদ্রা যায় , সে মধ্যে মধ্যে তাহার শয়ন গৃহের বৃহৎ জানালা খুলিয়া বাহিরে তাকাইয়া দেখে , কি বৃহৎ প্রকৃতি , সব কিছু যেন একাকী , দূর দূরান্তের তারা গুলি ও একাকী শান্ত , তাহাকে যেন আকাশের চন্দ্র , এই পৃথিবীর চিতোরের মৃত্তিকা , দূর মন্দিরের চূড়া সবাই .. বলিতে থাকে … তুমি আমাদেরই কন্যা , আমাদের ছাড়িয়া কোথাও কোনো দিন যাইয়ো না । এই বিশাল নিঃসীম প্রকৃতির কাছে ই সে যেন নিজেকে সমর্পন করিতে পারে , একাত্ম করিতে পারে ! কুন্দ পুষ্পের সু ঘ্রান ভাসিয়া আসে , দূরে নীলকণ্ঠ মন্দিরের পুরোহিতের রাত্রি কালীন আরতি র শব্দ ধ্বনিত হয় , সে নিকষ অন্ধকার গগনের দিকে তাকাইয়া , তারা দের দিকে তাকাইয়া তাহার পিতা , মাতা কে খুঁজিতে থাকে , আঁখি দিয়া বারি বহিতে থাকে । তারা দিদি তাহাকে সহজ করিবার চেষ্টা করিয়াছে অনেক দিন ! কিন্তু হইতেছে না কিছুতেই , সে নিজেও বোঝে তাহার এই কঠিন মানসিক পরিস্থিতির কথা ! সে বিবাহ করিবে না , ওই মীরা বাইয়ের মতন ঈশ্বরের ভজনা করিয়া জীবন কাটাইয়া দেবে স্থির করিয়াছে !কিন্তু একটি মুশকিল হইয়াছে তাহার এই ঝড় বিধস্ত ছোট্ট জীবনে ! 


পর্ব ৫


, রুদ্র কে দেখিয়া তাহার কি যে মনে হইয়াছে , তাহা সে কাহাকেও বলিতে পারিতেছে না ! মনে হইতেছে সে যেন তাহার বহু দিনের চেনা , সব দুঃখ কষ্ট ইহাকে বলা 

 যায় ! না , না সে ইহাদের পরিবারে আসিয়াছে , অসময়ে উহাকে কাকিমা সহ সবাই আপন করিয়া লইয়াছেন ! সে কেন জানিয়া , বুঝিয়া ক্ষতি করিবে কাহারো ? সে নাকি মাঙ্গলিক কন্যা ! ইহার অর্থ সে জানিত না , পরে তাহার কিছু বিশেষ হিতাকাঙ্খী র কল্যানে সে জানিয়াছে , ইহার অর্থ ! তাহার ভাগ্য খারাপ তো বটেই , বিবাহ পূর্বেই যাহার পিতা মাতা ইহলোক ছাড়িয়া চলিয়া যায় , সে কাহার কাছে পাইবে আদর যত্ন ? বহু কাঁদিয়াছে সে , কান্নার এখনো শেষ হয় নাই তাহার , কাকা বাবু সু পাত্র খোঁজ করিতেছেন , বয়স যে বাড়িয়া যাইতেছে  

    , তাহাদের সমাজে তো বিবাহে বিশেষ দেরি হয়না ! কিন্তু , সে যে সারা জীবন অবিবাহিত থাকিবে স্থির করিয়াছে , ইহা তো সবাই এর অজানা । মন্দিরে দিদিরা একটু আগাইয়া গিয়াছিল , সে ঈশ্বরের কাছে মনে মনে দুঃখের কথা বলিতে ছিল , তাহার অশ্রু সিক্ত আঁখি দেখিয়া ফেলিয়াছে তারা দিদির দাদা ! সে দৃষ্টিতে যে কত বেদনা ছিল ! তাহার মনে হইতে লাগিল এই যেন সেই মানুষ , যাহার কাছে শান্তিতে কাঁদা যায় ! না , সে কোনো কথা ভাবিতে চাহে না আর ! সে তো মাঝে মধ্যেই কাকিমার সহিত , দিদির সহিত মন্দিরে আসিয়া বসিয়া থাকে, পুরোহিত মহাশয় তাহার চেনা, সে একদিন তাহার ইচ্ছার কথা উহাকে জানাইবে , পুরোহিত নিশ্চয়ই তাহার কথা শুনিবে , তাহাকে মন্দিরের কাজে নিযুক্ত করিয়া দিবে ! আচ্ছা ,তাহার গাত্রে কি মাঙ্গলিক লেখা ছিল জন্মের সময় ? জানিতে ইচ্ছা করে !!


পর্ব ৬

রুদ্র ভাবিতেছে কিছু কথা তাহার মাতা কে জানাইয়া দিবে ! তিলক অনুষ্ঠান করিয়া যে বিবাহ হইবার কথা তাহার , সেই বিবাহ সে করিবে না ! কন্যা কে সে দেখেও নাই , পিতা মাতা যাহা ঠিক করিবেন , সেই বিবাহই হইবে , তাহাই রীতিও বলা চলে , কিন্তু এখন তাহার মানসিক অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা । বিবাহ করিলে সে গায়ত্রী কেই করিবে , নচেৎ করিবে না ! অপর কোনো রমণী কে সে ঠকাইতে পারিবে না ! তারা আবার হঠাৎ আসিয়াছে বাপের বাড়ি , এই তো সে গিয়াছিল ! প্রগলভা , নির্বোধ নারী ! বুদ্ধিহীনা চিরকালই ছিল , এখন যেন আরো হইয়াছে ! ইচ্ছা করে কেশ ধরিয়া শাসন করিতে ! কিন্তু সম্ভব হয় না যে ! ক দিন পর তারা চলিয়া গিয়াছে । রুদ্র মাতা কে বলিয়া দিয়াছে সে এখন বিবাহ করিতে পারিবে না ! পিতা হয়ত অসন্তুষ্ট হইয়াছেন , শুনিয়া মাতা কিছু বলেন নাই !


কর্মে মন বসাইতে পারে না রুদ্র ঠিক ! দিন বহিয়া যাইতেছে ! একদিন গৃহে আসিয়া শুনিতেছে তারার শশ্রু মাতার নাকি একেবারেই শরীর ভালো নহে , কে চিতোর গিয়াছিল , আসিয়া খবর দিয়াছে । চিতোর ! সেই অপরূপ নগরী . . সেই কন্যা ! যাহাকে ভুলিতে পারে নাই রুদ্র , বলিতেও পারে নাই কিছু পরিবারে ! বেশ ! পুনরায় যাইতেই হইবে ! মাতৃ আদেশ ! মাতার কথা তো আর ফেলিতে পারিবে না । সে পরের দিন আবার চিতোর পৌঁছিয়াছে ! পৌঁছিয়া দেখে কোথায় কি ? শশ্রু মাতা দিব্য আছেন ! তারাও হাসিয়া আল্হাদে গলিয়া পড়িতেছে ! একি ! তাহাকে হঠাৎ করিয়া এরূপ ভাবে চিতোর পাঠাইবার মানে কি ? রুদ্রর মাতার ওপর রাগ হইতে লাগিল খুব । শীঘ্রই সে ফিরিয়া যাইবে উদয়পুর , থাকিবে না ! প্রগলভা তারা ! কি বলিতে কি বলিয়াছে ! সন্ধ্যা কাল উপস্থিত ! একটি দুটি করিয়া নক্ষত্র ফুটিয়া উঠিতেছে গগনে । তাহার ঘরে পিদিম দিতে আসিয়াছে সেই কিশোরী ! রুদ্র র গলা কেমন শুকাইয়া উঠিয়াছে উহাকে দেখিয়া ! “আমাকে বিবাহ করিবে গায়ত্রী ? “ , মনের কথা সোজা বাহির হইয়া গিয়াছে তাহার ! “না , আপনি চলিয়া যান ! আমি 

   মাঙ্গলিক কন্যা , অমঙ্গল হইবে আপনার !” জোরে কথা বলিতে গিয়া আবার যেন কিশোরীটির আঁখিতে অশ্রু ! বেশ ! আর রুদ্র কোনো দিন কিছু বলিবে না কাহাকেও ! প্রত্যুষ হইলেই সে উদয় পুরের উদ্দেশে বাহির হইবে ! সবে সূর্যালোক ছড়াইয়া পড়িতেছে চিতোরের গগনে , মনুষ্য দিগের সাধারণ জীবন যাত্রা শুরু হইয়াছে , শুধু রুদ্রের ই মনে শান্তি নাই ! তারা তাহাকে বারংবার আরো কিছু দিবস থাকিয়া যাইতে অনুরোধ করিয়াছিল , সে কর্ণ পাত করে নাই ! সেও কাহারো জীবনে অশান্তি বহিয়া আনিতে চাহে না ! দ্রুত বেগে ঘোটক চলিতেছে তাহার , জীবনে আর হয়তো চিতোর আসিবে না সে ! এ জীবনে ভিক্ষা যাচিতে পারিবে না কোনো দিন সে কাহারো কাছে ! … কি হইবে ? সবাই কে কি গৃহী হইতেই হইবে ? সে ও পারিবে একা জীবন কাটাইতে ! পিতা হয়তো রাগ করিবেন , কিন্তু তাহার তো আরো পুত্র আছে .. দিন কাটিয়া যাইবে ! একি ! তাহার সহিত নির্দিষ্ট দূরত্বে দুই টি অশ্বারোহী কেন চলিতেছে ? সে কি দস্যুর কবলে পড়িল ? অস্ত্র আছে ঠিকই , কিন্তু ইহা তো চিন্তার বিষয় হইলো ? এক পুস্করিণী দেখা যাইতেছে , বারি গ্রহণ আবশ্যক , দূরে এক মন্দির ও দেখা যাইতেছে ! বোধ করি ভীত হইবার কারণ নাই । রুদ্র নামিল বারি গ্রহণের জন্য । মন্দির হইতে ঘন্টা ধ্বনি আসিতেছে ! কিন্তু একি ! সে বারি গ্রহণ করিয়া ফিরিতেই দস্যু গুলি তাহাকে পিছমোড়া করিয়া বাঁধিয়া ফেলিয়াছে ! কি সর্বনাশ ! কোথায় লইয়া যাইবে তাহাকে ! অস্ত্র সব কাড়িয়া লইয়াছে ! কি মুশকিল ! তাহাকে মন্দির দিকে ধরিয়া লইয়া যাইতেছে ! ইহা কি চিতোরের দস্যু দিগের মন্দির ?    


শেষ পর্ব  

দস্যু দুটি  

 তাহাকে ধরিয়া পার্বতী মাতার মন্দিরে হাত বাঁধিয়া বসাইয়া রাখিয়াছে , অত্যাচার কিছু করে নাই । আশ্চয তো ! কি চায় উহারা ? আর এক কান্ড দেখিতেছে , একটি কন্যা কেও উহারা পালকি করিয়া আনিয়াছে । কে কন্যাটি ? যেন গায়ত্রীর র মতন চলন ! মুখশ্রী দৃশ্য মান নহে ! মন্দিরের সাজানো উপকরণ দেখিয়া বোধ হইতেছে কন্যাটির যেন বিবাহের আয়োজন চলিতেছে বৃক্ষের সহিত ! তাহাকে লইয়া ইহারা কি করিবে ! পরিষ্কার করিয়া কেহ কিছু বলিতেছেও নহে । আরো কিছু পরে আরো একটি পালকি আসিয়াছে , দুইটি ঘোটক ও আসিয়াছে । স্বর শুনিয়া সে বুঝিতেছে তাহার মাতা , পিতা , তারারশশ্রূ মাতা , জামাই ও আসিয়াছে । জামাই তাহাকে হাসিয়া বলিতেছে , মাঙ্গলিক বলিয়া গায়ত্রীর  


র প্রথমে বৃক্ষের সহিত বিবাহ দিয়া পরে তাহার সহিত বিবাহ এখনই দেওয়া হইবে ! সব নাকি তারা পূর্বেই বুঝিয়াছিলো , বুঝিয়া মাতা কে জানাইয়াছিলো । মাতার কোনো আপত্তি হয় নাই , এমন কি পিতারও আপত্তি নাই ! জীবন ! একটি মাত্র ছোট্ট জীবন ! কয় দিনেরই বা ? কি লাভ অশান্তি করিয়া ? মাঙ্গলিক হইলো তো কি হইলো ? বাধা যেমন আসিবে জীবনে , বাধা কাটাইয়া চলিতেও হইবে ! পুরোহিত বলিয়াছেন , কোনো অসুবিধা নাই !আজ নাকি খুব ভালো তিথি ! পরে আবার উদয় পুরে বড়ো করিয়া অনুষ্ঠান হইবে । এই দস্যু দিগকে নাকি জামাইই ঠিক করিয়াছে , তারা ও তাহার পিতা মাতার অনুরোধে । বলিতে গিয়া জামাই আর হাসি চাপিয়া রাখিতে পারিতেছে না ! তাহার সব আচরণ তাহা হইলে তারা সহ সবার কাছে ধরা পড়িয়া গিয়াছে ! দূর হইতে ভগিনীর ও হাসির শব্দ পাওয়া যাইতেছে ! গায়ত্রী কি চাহিল তাহার দিকে মৃদু হাসিয়া ? কে জানে ! রুদ্রর বক্ষ মধ্যে কেমন যেন আওয়াজ হইতেছে , কর্ণ দুটি কি রক্তিম হইয়া গেছে ? বোধ বুদ্ধি কেবল পুরুষ দিগেরই নহে , নারী জাতিও কিছু রাখে তাহলে ! রুদ্র কি পুস্করিণী তে যাইয়া ডুব দিবে ? নাকি গায়ত্রীর আঁখিতে তাকাইয়া থাকিবে ? নাকি প্রগলভা ভগিনীর কেশ ধরিয়া টানিয়া তাহাকে শাস্তি দিবে ? সন্ন্যাসি হইবার আশা যে একেবারে ধূলিসাৎ হইয়া গেল এ জীবনে !!


পাঠক, রুদ্র , গায়ত্রী এবার যাহা পারে বুঝিয়া চলুক , আমরা দূর হইতে উহাদের জীবনের মঙ্গল কামনা করিয়া নিজ কর্মে মনোনিবেশ করি !!

Comments

Popular posts from this blog

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024