ভীরু ভালোবাসা - দীনেশ সরকার || Viru Valobasha - Dinesh sarkar || Anugolpo || অনুগল্প || Golpo || ছোট গল্প || short story || Bengali story
ভীরু ভালোবাসা
দীনেশ সরকার
বীথি এত দেরি করছে কেন? অশোক পথের দিকে চেয়ে উস্খুস্ করতে লাগল। বীথিকে যে কথাটা এতদিনেও বলতে পারে নি এই গঙ্গার তীরে বসে গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে সেই কথাটা আজ বীথিকে বলবেই বলবে। মাস তিনেক আগে এক বন্ধুর বিয়েতে বাসরঘরে বীথির সাথে প্রথম আলাপ। বন্ধুর বউভাতের অনুষ্ঠানে আরও একটু ঘনিষ্ঠতা, মোবাইল নাম্বারের আদান প্রদান। কলকাতা বইমেলায় একবেলা একসঙ্গে ঘোরাঘুরি, কত কথা, কত গল্প। তারপর রবিবার হলেই চুম্বকের মতো টানে এই গঙ্গার ঘাট। বীথিও আসে, বসে, গল্প হয় কিন্তু যে কথাটা মনের মধ্যে ছট্ফট্ করে মরছে সে কথাটা অশোকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে না। এখন সারা সপ্তাহে অফিসের কাজের মধ্যেও বীথির মুখটা অশোকের মনের অলিন্দে ঘুরপাক খায়। বীথির মনের আরও কাছে পৌঁছুতে চায়, বীথির পাশে থাকতে চায় অশোক। বীথির জন্য অশোকের মনের ভিতরে কেমন একটা অনুভূতি হয়। অশোক জানে না একে ভালোবাসা বলে কিনা। কিন্তু কিছু একটা তো বটে। তাই অশোক আজ ঠিকই করেছে, যে কথাটা মনের গোপন কুঠুরিতে ছট্ফট্ করছে তাকে আজ বীথির সামনে প্রকাশ করবেই করবে।
হন্তদন্ত হয়ে বীথি এল, বলল, ’ও, তুমি এসে গেছো।‘
অশোক বলল, ‘বোসো বীথি, আজ আমার অনেক কথা বলার আছে।‘
বীথি বলল, ‘আজ যে আমার একেবারেই বসার সময় নেই অশোক। আজ আমাকে আরও চার-পাঁচ বন্ধুর বাড়ি যেতে হবে। পরে শুনব, কেমন? এই নাও।‘
বীথি অশোকের দিকে একটা কার্ড বাড়িয়ে দিল।
অশোক জিজ্ঞেস করল, ‘এটা কি?’
বীথি বলল, ‘আমার বিয়ের কার্ড। আগামী রবিবার বিয়ে। মা-বাবার পছন্দ করা পাত্র। হঠাৎ ঠিক হয়ে গেল। বিয়ের পর সোজা অ্যামেরিকা। বিয়েতে তুমি আসবে কিন্তু। ইনভাইট করতে আরও চার-পাঁচ বন্ধুর বাডি যেতে হবে। এখন চলি?‘
বীথি দু-পা এগিয়ে পিছন ফিরে অশোকের দিকে তাকিয়ে বলল,’ইডিয়েট।‘ তারপর পা চালাল।
অশোক বীথির চলে যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। বড় ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে। মনে মনে বলল, ’ভালো থেকো বীথি, সুখে থেকো।‘ বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে এল।
Comments