উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -10


 চার


পরদিন অশ্রুসিক্ত অবস্থায় ভাগ্যান্বেষণে কলকাতা মহানগরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা। করার জন্য বাবার কাছে সাশ্রু নয়নে বিদায় নিতে এলাম। বিদায় নেবার আগে পাড়ারই। এক পিসিমার উপর ভার দিলাম বাবাকে পরিচর্যা করার জন্য। তথাপি বাবাকে ছেড়ে যাবার আগে কি দারুন মর্মপীড়া পেয়েছিলাম তা বর্ণনাতীত। তবুও সেদিন ভবিষ্যতের রঙ্গীন আশায় ও নারীজীবনের বিপদ আপদ অগ্রাহ্য করে রন্টুদার সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে বেরিয়ে পড়েছিলাম। 


যখন হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলাম, তখন সন্ধ্যে সাতটার কাছাকাছি। হাওড়া স্টেশনে নেমে শুধু কালো কালো মাথা দেখতে পেলাম। এতো লোকের জামায়েত কখনো দেখিনি। গ্রামে অবশ্য মেলা দেখেছি, কিন্তু এভাবে বিভিন্ন আলোতে উদ্ভাসিত মানুষগুলোকে দেখিনি। একের পর এক প্রশ্ন করে , রন্টুদাকে অতীষ্ট করে তুললাম। অগণিত মানুষের ভিড়ের মাঝে আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। শক্ত মুষ্টিতে রন্টুদার হাতটা চেপে ধরে আছি, তবুও কত লোকের সাথে ধাক্কা সাগলো তার হিসেব নেই। বিশেষ করে আকর্ষণীয় নানান রঙের সজ্জিত বৈদ্যুতিক আলোগুলোর পানে তাকিয়ে মুখ ফেরাতে পারছিলাম না। রন্টুদার হাত ধরে কখন যে স্টেশনের। বাইরে গেছি খেয়াল ছিলো না। হঠাৎ নজরে পড়লো হাওড়া সেতুকে। বিভিন্ন প্রকার চোখ ঝলসানো আলোয় আলোকিত হাওড়া সেতু দীর্ঘ দিন ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্বাগত জানাচ্ছে। 

হাওড়া সেতুর ছবি বই এর পাতায় ও বড় ক্যালেন্ডারে দেখেছিলাম। এখন চাক্ষুষ দেখলাম বলে আনন্দিত হলাম। অজস্র মানুষ ওর উপর দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে দেখলাম, কিন্তু কেউ আমার মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তার দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকছে না। দূর দিগন্ত পানে তাকিয়ে দেখলাম আলোর আলোকিত শহরকে।

 রন্টুদাকে জিজ্ঞেস করতে জানতে পেরেছিলাম ঐ কলকাতা। এপারে হাওড়া, ওপারে কলকাতা। মধ্যিখানে শান্ত, নীরবতার মধ্যে “মা গঙ্গা” প্রবাহিত হচ্ছে। সহজ সরল শিশুর মতো তার গতি। সন্ধ্যের সময় কত টুকুই তার ঐতিহ্য বুঝলাম। শুধু গঙ্গার জল মাথায় নিয়ে মায়ের নিকট আশীর্বাদ চেয়েছিলাম। হঠাৎ নজরে পড়লো গঙ্গার বুক চিরে বিভিন্ন আলোয় ঘেরা একটা জলযান এগিয়ে আসছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি ওটা ষ্টিমার, বেশ গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিলাম। রন্টুদার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। 

রন্টুদা বললেন, এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকা চলবে না রমা। আমাদের অনেকখানি পথ যেতে হবে। তার আগে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। একদিন সময় করে মহানগরীর দ্রষ্টব্য স্থানগুলো তোমাকে দেখাবো। রন্টুদার কথা শুনে আমার চোখ দুটো কৃতজ্ঞতা দীপ্তি বেরিয়ে এলো। হোটেলে এসে হাজির হলাম। হোটেলে রন্টুদা আমাকে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যে আপ্যায়িত করলেন। বাবার দুরাবস্থার কথা স্মরণ করে এই সময় খাবারে ছিলো না তৃপ্তি ও মনে ছিলো না শান্তি। 

রন্টুদার কথায় অতীতকে মুছে ফেলতে হলো। রন্টুদা বললেন, তোমাকে যে জায়গাতে নিয়ে যাচ্ছি, খুব সাবধানে থাকবে। কারণ আমি সর্বদা বাড়ীতে থাকবো না, প্রতিদিন রাত্রে বাড়ি ফিরি। আমার বিজনেসটাই ঐ প্রকৃতির। কোন প্রকারে বাড়ী হতে বাইরে পা দেবে না। কারো প্রলোভনে প্রলুব্ধ হবে না। কারণ কলকাতার মানুষকে চেনা বড়ই মুশকিল। দলে দলে শয়তানেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই আর রেহাই নেই। আপাততঃ চার পাঁচ দিন বাড়ীতে বসে থাকতে হবে। আমার ইচ্ছে, তুমি টাইপ ক্লাস শেষ করে নাও, তারপর আমার বন্ধুর ফার্মে চাকরীর ব্যবস্থা করে দেবো। মেসোমশায়ের জন্য ভাবতে হবে না, মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দেবো। 

কোন কথা না বলে ছলছল চোখে, রন্টুদার কৃতজ্ঞতা স্মরণ করে ছিলাম। রন্টুদা বলেছেন, তাহলে আজই টাইপ স্কুলের মাষ্টার মশাই কেদার বাবুর সাথে দেখা করে যাবো। যদি সিট খালি থাকে নতুবা পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা হবেই। আমি বিশ্বাস রাখি ঈশ্বর আমাদের একাজে সহায় হবেন। আমি নীরব ছিলাম। ওকে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা পাচ্ছিলাম না।



                                          ক্রমশ...

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024