উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -21


 

ঠিক আছে , এ্যায়সা হোগা । হামার আড্ডামে আনবো না । দো রোজ বাদমে এ পত্তামে হাজির হবি । চলা যা বহিন , চিন্তা মত কর । 


শ্যামলীদি অত্যন্ত আনন্দিত হল ওর কথা শুনে । আমরা নিরাপদে যেন আমাদের কুঞ্জে পৌঁছতে পারি তার ব্যবস্থা করতে বললাম শিবাজীদাকে , কারণ অনেক রাত হয়ে গেছে । তিনি একজন তাঁর সাকরেদকে আমাদের সাথে দিলেন । আমরা যাতে সসম্মানে পৌঁছতে পারি তার সমস্ত রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করলেন । 

আমরা বিলম্ব না করে সাকরেদ রহিম মোল্লার সাথে বস্তীতে গিয়ে হাজির হলাম । ট্যাক্সি করে । শ্যামলীদি রহিম মোল্লাকে কিছু জলযোগ না করিয়ে যেতে দিলো না । সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের সাথে উপস্থিত হলো আমাদের বাসার আঙিনায় । শ্যামলীদি বাসাতে প্রবেশ করতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল । আমি ওকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে একরকম দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম ।

 দেখলাম বস্তির অধিপতি বাবুগুণ্ডা দেওয়ালের আড়ালে হতে শংকর মাছের চাবুক নাড়তে নাড়তে শ্যামলীদির কাছে এগিয়ে এসে বলল , বহুত আস্পর্স্কা দেখেছি তোর ! মনে হচ্ছে পিঠের দগদগে ঘা খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেছে ! আমি জানতে চাইছি কার অনুমতিতে বাইরে গিয়েছিলি ? 

শ্যামলীদি কোন উত্তর দিলো না । শুধু মুখখানা ক্রোধে রক্ত রাঙ্গা হয়ে উঠল । আমি শ্যামলীদির হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম শ্যামলীদি আমাকে বাধা দিল ।

 রহিম মোল্লা একটু দূরে নবাবী কায়দায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছে । শ্যামলীদির মুখ দিয়ে কোন উত্তর বেরুচ্ছে না দেখে বাবু গুন্ডা হুংকার দিয়ে চাবুকের ঘা মারল । 

যেই আরেকটা চাবুক মারতে যাবে ঠিক সে সময় রহিম মোল্লা ক্যাঙ্গারুর মতো লাফ দিয়ে চাবুকটা ধরে বাবুগুন্ডার তলপেটে এমন জোরে লাথি মারল যে মাটির উপর ছিটকে পড়ল বাবুগুন্ডা ।

 শ্যামলীদি রহিম মোল্লার কাছ হতে চাবুকটা ছিনিয়ে নিয়ে বাবুগুন্ডার কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো । শ্যামলীদির চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকী বেরুচ্ছে । আজকে শ্যামলীদির বদলা নেবার দিন এসেছে । এই সুযোগ নেবার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছিল । 

গম্ভীর গলায় বলল শ্যামলীদি , উঠ বাবুগুন্ডা , আজ প্রতিশোধ নেবার দিন এসেছে ।

এবার তোর শরীরকে আলগা করে দিই । অতীতের পঞ্চাশ ঘা , আর আজকার এক , অর্থাৎ একান্ন ঘা তোকে আজ ফিরিয়ে নিতে হবে ।

 বাবুগুন্ডা উঠবার চেষ্টা করতেই মুখে একটা চাবুকের ঘা মারল । সে তীব্র চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । শ্যামলীদি ছাড়বার পাত্রী নয় ।

 কি রে খুব লাগল বুঝি ? না - না , আমার মনে হচ্ছে তেমন লাগেনি । তাহলে আরেকটা দিই কেমন ? বৃষ্টিধারার মতো সমস্ত শরীরে চাবুকের আঘাত পড়ল । সেই অবস্থায় কাটা ছাগলের মতো ছটপট করতে থাকল বাবুগুন্ডা । আদরী মাসী আটকাতে এসে কয়েক ঘা চাবুক তার গায়ে এসে পড়ল , সেই আঘাতে সেও মাটিতে কাতরাতে থাকল । 

শ্যামলীদি চাবুক থামিয়ে অবসন্ন হয়ে রহিম মোল্লার কাছে এসে হাঁফ ছেড়ে বলল , আমাকে সেদিন ঐ জানোয়ারটা রেহাই দেয়নি দাদা । পিঠের ঘা এখনো শুকায়নি । আমার অপরাধ একটা মেয়েকে এই নোংরা পথ হতে বাঁচাতে গিয়েছিলাম তাই ।

 শ্যামলীদিকে সান্ত্বনা দিয়ে রহিম মোল্লা বলল , হামার সব মালুম হুয়া বহিন । হমারা বস হামকো বতায়া । ডর মত কর । বাবুগুন্ডা বিষ মাখানো দৃষ্টি নিয়ে কাত হয়ে পড়ে আছে স্যাঁত স্যাঁত মাটিতে । রহিম মোল্লা ধীরে ধীরে ওর কাছে এসে কলার ধরে বলল , উঠিয়ে ভাইসব , বহুত পরেশান হুয়া । শোন্ কই জানানাকে জবরদস্ত এ লাইনমে লে আয়েগা তো তুমকো টুকরো বানাকর গঙ্গামে ফেক দেঙ্গে । হামকো পহচানতে হো ? শিবাজী সিংকা আদমী হ্যায় । 

বাবুগুন্ডার মুখ দিয়ে কোন বাক্য বের হয় না । কেউ যেন ওর বাকশক্তি রোধ করে । দিয়েছে । রহিম মোল্লা শ্যামলীদির কাছে এসে চিন্তা করতে নিষেধ করল । যদি কোন বিপদের ঝুঁকি আসে বিনা দ্বিধায় ওদের আড্ডায় গিয়ে খবর দিলে উপযুক্ত বিচার এসে করবে । বিলম্ব না করে সে সেখান হতে অদৃশ্য হল । 

হঠাৎ যে এরকম কান্ড ঘটে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি । কারণটা হয়েছিল পর পর দুদিন কোন নিশিবন্ধু শ্যামলীদির খোঁজে এসেছিল । ওকে ঠিক সময়ে পায়নি বলে আদরী মাসীর লোকসান হওয়াতে সে বাবুগুন্ডাকে বলেছিল শায়েস্তা করতে । সেদিন রাতটা থমথমে ভাবে কেটে গেলো । শত চিন্তা বুকে নিয়ে শ্যামলীদি সারারাত্রি চোখের জলে ভেসেছিলো । এই সৌন্দর্যময় জীবনে যে এইরূপ অশান্তির ঝড় বইবে তা কি জানতাম ? 

কোন প্রকারে শ্যামলীদির অব্যক্ত যন্ত্রণাকে চাপা দিয়ে ওর কোমল হৃদয়কে শান্ত করেছিলাম । এছাড়া কিইবা করার আছে আমাদের ? এই অশান্ত পরিবেশের মধ্যে দিনের পর দিন অতিবাহিত করতে হবে । 

হায়রে বিধাতা কেন এই নির্যাতন সহ্য করার আগে আমাদের মৃত্যু দিলে না । পরদিন সকালে ঘুম হতে উঠতে একটু ইচ্ছে করেই দেরী করলাম । শ্যামলীদি ঘুম হতে উঠে বাইরে বেরুতে আমাদের সখীরা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল । একজন কাছে । এসে শ্যামলীদিকে সাবাস দিলো । কোন অন্যায় করেনি শ্যামলীদি । এবার বাবুগুণ্ডা । বুঝুক চাবুকের ঘা কতখানি শরীরকে আরাম দিয়ে থাকে । 

সেদিন বিনাদোষে শ্যামলীদিকে চাবুক মেরেছিল , কারণ ওর ইচ্ছা মতো কাজ করতে হবে । প্রয়োজন হলে তার সখিরা শ্যামলীদিকে সাহায্য করবে । আর অত্যাচার সহ্য করবে না তারা । ওদের কথা শুনে আমর মনে হল এখান থেকে এবার আন্দোলনের সৃষ্টি হবে । অফিস , কারখানায় যখন অন্যায় এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সৃষ্টি হয়ে থাকে , এখানে কেন হবে না । এখানের লড়াই হবে শান্তিতে বাঁচার অধিকারের জন্য । 

হঠাৎ নজরে পড়ল , আদরী মাসী কোমর বেঁকিয়ে লটপট করতে করতে আমাদের মজলিসে এসে উপস্থিত হলো । বলল , কাজটা ভালো হলো না পদ্মা । 

আমি শ্যামলীদির মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম , প্রয়োজন হলে তোমার আদরের দুলাল আদালত করতে পারে , আমি সাক্ষী দেব । কিরে লতিকা , সাক্ষী দিবিতো তার হয়ে ? 

আদরি মাসীর ঠোঁট কাঁপতে থাকল । কিছু বলতে গিয়েও পারল না । মুখটা গম্ভীর করে ধীরে ধীরে কেটে পড়ল ।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024