ছোট গল্প - অশিক্ষক || লেখক - সন্দীপ কুমার পণ্ডা || Short story - Osikhokh || Written by Sandip Kumar panda


 


অশিক্ষক

  সন্দীপ কুমার পণ্ডা



          আজ সরস্বতী পূজা তাই রোহনের মন আবেগে, আনন্দে,উৎসাহে  সজনে ফুলের মতো দোলা খাচ্ছে , সকাল - সকাল  উঠে মুখে ব্রাস নিয়ে বাথরুমে চলে গেল সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে মোবাইল খুলে দেখতে পেল হোয়াটসঅ্যাপে স্কুলের বন্ধুরা মেসেজ করেছে স্কুল যাবার জন্য সে রিনার বাদে সবার রিপ্লাই দিল ।রিনার রিপ্লাই না দিবার কারণ রিনাকে রাগিয়ে দেওয়া,তাকে রাগিয়ে দিলে অসম্ভব সুন্দর লাগে তার চেয়েও সুন্দর লাগে তার অভিমানের সুরে কথা গুলো।মনের মধ্যে মিটি মিটি হেসে ভাবল একবার কল করবে কিন্তু পরমুহুর্তেই মনে হল আর একটু রাগানো ভালো।তারপর ভাবতে লাগলো গতবছর এই দিনেই রিনাকে প্রথম দেখে রোহন আর প্রথম বার দেখেই চোখ সরাতে পারেনি রিনার সুন্দর  চোখের  চাহুনি ও হাসি দেখে মনে হয়েছিল স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী নীচে নেমে এসেছে রিনারও একই অবস্থা দুজন দুজনকে দেখে স্থানু হয়ে গেয়েছিল। অল্প সময় পর রিনা লজ্জায় চোখ নামায় সেই থেকে ধীরে ধীরে আলাপ ও আলাপ থেকে বন্ধুত্ব সেই বন্ধুত্ব এক বৃষ্টির দিনে প্রেমে পরিণত হয়।তারপর অনেক দিন কেটে গেছে দুজনে দুজনকে চোখে চোখ রেখে ।পরস্পর পরস্পরকে হাতের ছোঁয়ায় রমাঞ্চ হত। এমনি করে বছরটা কেটে গেল। হঠাৎ মায়ের ডাকে তার সঙ্গা ফিরল-রোহন স্কুলে যাবি না আজ যে সরস্বতী পূজা। সঙ্গে সঙ্গে রোহন স্নানের জন্য বাথরুমে চলে গেল কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে নতুন পাঞ্জাবি সুগন্ধি সেন্ট,দামি হাতঘড়ি পরে বাবা বাইক নিয়ে স্কুলের দিকে বেরিয়ে পড়ল। সরস্বতী পূজা দিন বলে অনেক বলে - কয়ে বাবার কাছে বাইক নিয়ে যাবার অনুমতি পেয়েছে।এরপর সে সোজা স্কুলে বাইক রেখে হল ঘরে গিয়ে পুস্পাঅঞ্জলী দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেন‌ রোহনের চোখ কাওকে খুঁজছিল হঠাৎ সে রিনাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে পেল গতবছরের মতো এবারেও তাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে হলুদ রঙের শাড়ি লাল ব্লাউজ চোখের কাজল সেইসঙ্গে ঠোঁটের  রক্তিম আভা‌ চারিদিকে ছড়িয়ে অপরূপ লাগছিল রিনাকে। এগিয়ে এসে অভিযোগ সহিত বলতে লাগল'এত দেরি হল আসতে?আমার মেজেসের রিপ্লাইও দাও নি কেন? মিটিমিটি হাসতে হাসতে শুনছিল রোহন।তারপর কয়েক ঘণ্টা বেশ হাসিখুশি ভাবেই পেরিয়ে গেল। হঠাৎ সবার ডাক পড়ল খাবার প্যান্ডেলে যাবার রোহন ও রিনা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ওরা একসাথেই খাবে ।সবাই কুপন‌দেখিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে লাগলো। রাজকীয় খাবারের আয়োজন তাই কুপনের ব্যবস্থা যাতে বহিরাগত কোনো ব্যাক্তি খাবারের স্বাদ অনুভব করতে না পারে।রোহন মনে মনে হাসল এমনিতেই  প্রচুর পরিমাণে খাবার বাড়তি পড়ে থাকে যেগুলো পরে কোথাও ফেলে দেওয়া হয় আর রাস্তার কুকুরগুলো খায় ওই সব খাবার দুই জন বা দশ জন খেলে কী যে মহাভারত অসুদ্ধ হয় তা রোহন বুঝতে পারেনা। হঠাৎ একটা গোলমাল শোনা গেল একজন লোক যার কুপন নেই সে প্রবেশ করতে যাচ্ছে কিন্ত একজন শিক্ষক তাকে বাধা দিয়েছেন। সেদিকে রোহনও গেল দেখতে পেল দাড়ি গোঁফে ভর্তি মুখ,পরনে একটা নোংরা ও ধুলোমাখা ধুঁতি একজন ৫৫-৬০বছর বয়স্ক লোক কাতরে বলে চলেছে'সার অনেক বেলা কুচু মুলে দি লাই।গরীব লোক আমি বাবু'আর কেঁদে চলেছে।ওদিকে ইংরেজি শিক্ষক ও অহংকারী মনের মানুষ তরুণ বাবু বলে উঠলেন খাবারের এমনি তেই সট্ তার উপর এক বেগার এসে উঠেছে।'দু -এক জন স্যারের বিরোধীতা করলেও কেও কিছু বলতে পারল না।আবার শিক্ষক মহাশয় বলতে লাগলেন 'এই চেহারার কোনো মানুষ বসলে ছেলেরা খেতে অরুচি বোধ করবে। ' এইসময় রোহন বলে উঠল 'স্যার একটা মাত্র লোক খেলে খাবারের অভাব হবে না তাছাড়া  উনি খেলে আমাদের কোনো অরুচি হবে না।' রোহনের কথার উত্তরে স্যার বললে 'একজনকে দিলে হাজার জন খাবার চাইবে আর খাবার সস্তা নাকি?'
____'এখন তো একজনই তো আছে তাছাড়া খাবার গুলো তো ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় আর রাস্তার কুকুরগুলো খায়।'
_____'তোমার যদি এতই দরদ তা তুমি তোমার কুপনটি দিয়ে দাও।একটি কুপন একটি মানুষ।বিনা কুপনে কেও খাবার পাবে না।'
_____'স্যার এম .এর .এ সাহেবের তো কোনো কুপন নেই তাহলে তিনি এসেছেন কেন?'
রিনাও যেন বলতে চায় এই সব ফালতু লোক নিয়ে মাথাব্যথা কীসের ? তারা পাশাপাশি বসে খাবার খাবে একটা উটকো লোককে নিয়ে স্যার দের সাথে ঝগড়া না করতে।
______'এম. এর. এ স্যারের সঙ্গে তুমি এই ইডিয়েট ,বেগার,নিগার  লোকটার কমপেয়ার (তুলনা)করছ। উনি একজন অতিথি।'
_______'না স্যার আমি আমি কুপনের কথা বলছি।'
______' তোমার কুপন যদি দিতে চাও তাহলে ও খাবার পাবে তাছাড়া নয় এটাই আমার ফাইনাল ডিসিসন।'
সঙ্গে সঙ্গে রোপনের নিজ কুপন ওই লোকটির হাতে দিতে গেল।'
কিন্তু লোকটি বলল 'ছোট বাবু তুমি কেন্ তোমার কুপন দিচ্চ আমি বুড়া মানুষ আর তুমি ছেলে ছোকরা এটাই তো তোমাদের সময়।'
 রিনাও চাইছিল না রহোন কুপনটা দিয়ে দিক কিন্তু রোহন বলে উঠল'আমি প্রতিদিন এই রকম খাবার খায় কিন্তু তুমি অনেকদিন না খেয়ে থাকো আমার একদিন এরকম খাবার না খেলেও চলবে। আর এই খাবার আমার মুখে উঠবে না যে খাবার রাস্তার কুকুর দিকে দেওয়া চলে এমএলএ, মন্ত্রী ,মিনিস্টার দেওয়া চলে শুধুমাত্র গরিব মানুষদের দেওয়া চলে না ।'
এই বলে রোহন বেরিয়ে এলো। তার চোখ জুড়ে এক প্রতিবাদের মেঘ।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024