শৃংখলা - সত্যেন্দ্রনাথ পাইন || Srinkhola - Satyendranath pain || Article || Essay || প্রবন্ধ || নিবন্ধ
শৃংখলা
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
শৃংখলা একটা মশলা। যা দিয়ে নতুন বসন্তে নতুন করে সাহিত্যের নবজীবনের লক্ষণ প্রস্ফুটিত হয়।।
শৃংখলা শিখতে হয়। সেটা একেবারে গোড়ায় পরিবারের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকেও শৃংখলা জন্মগ্রহণ করে।
সেই শৃংখলা, বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যদি না থাকে তাহলে সৈন্য বাহিনী যেমন ছন্নছাড়া তেমনি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো শৃংখলা। সেটা ভুললে চলবে না।
শৃংখলাবদ্ধ প্রাণী হিসেবে আমরা মানুষ কে বেছে নিয়েছি। সেই মানুষ যদি শৃংখলা বদ্ধ না হয় তাহলে কিসের সমঝোতা এবং কিসের সমাজের মধ্যে প্রয়োজনীয়তা? আমরা তাই শৃংখলাবদ্ধ হয়ে যদি না চলি তবে পদে পদে বিপদ মাথা চাড়া দেবেই।
আমাদের দেশে শৃংখলা বাহিনীর মধ্যে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর নাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশাল ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আজাদ বাহিনী যে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল সেটা শৃংখলার ই প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয় কি! আমরা বর্তমানে যে পরিমান উচ্ছৃঙ্খল আচরণের প্রকাশ লক্ষ্য করছি সেটা আমাদের নৈতিক পরাজয় বলেই মেনে নিতে হবে।।।
বর্তমানে শৃংখলা শিখতে গিয়ে আমরা যেটা করছি তা মোটেও গ্রহণযোগ্য কি? ।-।। আমাদের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের মধ্যে বিরাট অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে এ ব্যাপারে।
আমাদের মধ্যে সর্বদাই একটা অসহনীয় উচ্ছৃঙ্খল আচরণের প্রকাশ লক্ষ্যিত হচ্ছে। । শৃংখলা রক্ষা কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। কেন, কিসের প্রয়োজনে?..
বিদ্যালয়ে যে শৃংখলা ছিল এখন সেটাতেও বড়ই ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু কেন?
শৃংখলা বাহিনীর মধ্যেও যেন শৃংখলার অভাব! যে শাসক সেই শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।...
আমিও নিজেই যেন শৃংখলা হীন হয়ে পড়েছি।
যে ছেলেমেয়েদের আমাকে রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত ঠিক মতো করছে না-- এই অজুহাতে। এটাও সুলক্ষণ নয় নিশ্চিত। তবুও নিজের গুণাবলী প্রকাশ না করে ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে সেটা কি শৃংখলাহীনতা বোঝায় না!
মানুষের মনে আমার সম্বন্ধে যতটুকু সহানুভূতি প্রকাশ পায় সেটা পরক্ষণেই হাসির খোরাক হয় নাকি !
অতএব সেটা সর্বতোভাবে বর্জনীয়।
মশাল টা জ্বালিয়ে রাখতে জানতে হয়। আমাদের ভারতীয় দের মধ্যে সে দুঃসাহসী টিনটিন আছে বলেই আমাদের সুশৃঙ্খল হবার বাসনা। বিবেকানন্দ বোধহয় জানতেন আমাদের ভাষাটার মধ্যে দ্বিধা - দ্বন্দের মেঘটাকে সরাতে পারলেই হবে আমাদের সাহিত্যের প্রতি , সমাজের প্রতি ন্যায্য অধিকার এবং সুন্দর সুশৃঙ্খল মানবজাতির ভবিষ্যত ।
আমাদের বিবেকানন্দ আজ আর বেঁচে নেই। আছে তাঁর অমোঘ বারতা। আমরা শৃংখলা বদ্ধ হলেই ঘটবে মহাপ্রলয় ।
বিবেকানন্দ বোধহয় ভুল করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন আমাদের নৈতিকতা এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি র আস্বাদ পাবার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট তথ্য ও শৃঙ্খলতা বোধ।। আমাদের সেই হেন শৃঙ্খলা আজ ভেঙে খানখান। ক্লান্তশিশু যেমন মায়ের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে কিছু না জেনে , না বুঝে এ- ও যেন সেই রকম। আমাদের শৃংখলার বড়ই এখন অভাব। স্বামীজীর কথায় কান দিয়ে যদি আপামর জনগণ শৃংখলাবদ্ধ হয় সেটা বড়ই মঙ্গলের হবে । আমরা পেয়েছি সিস্টার নিবেদিতা কে। তিনিই স্বামীজীর বানী প্রচার করে বস্তিতে বস্তিতে আগুন জালিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় যে শৃঙ্খলার জন্য দরবার করেছেন সেটাই শিক্ষনীয় বিষয় নয় কি! আমাদের সাহিত্য আঙিনা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আমাদের পরনির্ভরতার গ্লানি।
এসময় আমাদের আরও বেশি সুশৃঙ্খল হতে হবে, পাঁচিল টপকে পদ্ম চক্ষু উন্মোচিত করে মুখে প্রশান্তির জন্য স্বামীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে।লাঠি , মুগুরের দরকার নেই , দরকার আছে নিরবচ্ছিন্ন অধ্যাবসায়। এবং মুক্তির জন্য শৃংখলাবদ্ধতার কর্মযজ্ঞ।। আমাদের মননে আইরিশ বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে।
আমাদের মধ্যে সর্বদাই স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখে "মৃদু" আর্তনাদ ধ্বনিত হয়নি। হয়েছে শৃংখলা বাহিনীর একটা সুমহান আদর্শ।!
আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে " অনুশীলন সমিতির" পূর্নিমার চাঁদের আলো।। মহাধ্যানে মহাযোগী হয়ে যেতে শৃংখলা রক্ষা করতে হবেই হবে।। আমাদের মধ্যে আছে শ্যামসুধা তরঙ্গিনী, কালী সুধা তরঙ্গিনী উপস্থিতি তৈরি করার। নির্বাহিত হবে যেখানে বিরাট তপস্যায় তুষ্ট করার স্বামীজীর অমোঘ বাণী।
আমাদের মধ্যে সর্বদাই অতীত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রয়েছে সদলবলে বক্তৃতার বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার প্রবণতা।। তাঁর জন্য শৃংখলা খুবই জরুরি। আমাদের আয়ু বেশী নয়,। সেই অল্প আয়ুর মধ্যেই আমাদের দিন ফুরিয়ে আসছে মনে করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলিয়ে না দিয়ে আসুন না সবাই মিলে একজোট হয়ে শৃংখলাপরায়ন হই।।
আমাদের সমাজ ও সাহিত্যের উন্নতি হবেই হবে। আমাদের শ্রীরামকৃষ্ণমুখী হয়ে স্বামীজীর সহিত একাত্ম হতে হবে।। স্বামীজীর নির্দেশ মেনে চলতে শৃংখলা পরায়ন হয়ে প্রজ্বলিত দীপশিখা নিয়ে চলতে হবে দূর পানে সন্তানকে অভয়বাণী শোনাতে। যিনি যতবড় ই হোন না কেন শৃংখলা তাঁকে মানতেই হবে। ব্যাংক ম্যানেজার, স্কুলশিক্ষক, প্রফেসর বা সাংসদ, বিধায়ক যিনিই হোন।।
শৃংখলা একটা সুনির্দিষ্ট তথ্যসম্বলিত কর্মস্থলে নিয়ত প্রাণিত করে। কাল রাতে আমি যদি আর না বাঁচি এই ভাবনায় ভাবিত হয়ে শৃংখলা পরায়ন হয়ে প্রজ্বলিত দীপশিখা নিয়ে এগোতে হবে। তবেই হয়তো মিলবে মুক্তির আস্বাদ। স্বামীজীর চিরনিদ্রায় শায়িত। আমরা সত্যিই কি সেই শিক্ষা নিয়ে চলতে পারছি!!!! নতুন স্বামীজী আর হয়তো আসবেন না। কিন্তু আমরা কি সত্যিই তাঁকে দর্শনে পেতে চাই! তাহলে শৃংখলা অবশ্যই চাই।
অতএব শৃংখলা খুবই জরুরি।
পড়ে উত্তর দেবেন আশা করি।
Comments