উপন্যাস - তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন || সুদীপ ঘোষাল || Tantrik Pisemosay oo Amra by Sudip Ghoshal || Fiction - Tantrik Pisemosay oo Amra Dujon Part -2




রতন বলে নারীপিশাচ কেমন হয়?  -্প্রাচীনতম সভ্যতা বিশ্লেষণ  করলে দেখি, কৃষিকেন্দ্রিক প্রাচীন সমাজে তাই নারীরাই ছিল অধিপতি। নব্যযুগে থেকে চলে আসা রীতি অনুযায়ী  ফসল কাটার পরে অপদেবী তার পুরুষ সঙ্গীকে বলি দিয়ে অপদেবতার পুজা করত।  এই আধিপত্য  ধর্মের প্রসার কালে এসে কমতে  শুরু করে। কৃষিকাজ যেহেতু মেয়েদের হাতে প্রথম হয়।  সেহেতু বাংলায় এই আধিপত্য বিলোপ  সহজ ছিল না। বরেন্দ্র অঞ্চলের অপদেবীর পুরুষ সঙ্গীরা আর সহজে বলি হতে চাচ্ছিল না। এ বিষয়ের   নারীদের দেশে বন্দী  উদ্ধার করে তারা।   এরা ওঝা হলো। নারীওঝা যারা বাণ মেরে মানুষকে মারতে পারত আবার তার ভালোও করতে পারত। এরা মরে গিয়ে নারীপিশাচ হয়।আমি বললাম, ফালতু সব কথা। তান্ত্রিক হয়ে আপনি অলৌকিক কিছু করে দেখান দেখি। পিসেমশায় বললেন, বেশ পাঁচমিনিট পরে তুই এখান থেকে উঠতেও পারবি না নড়তে চড়তেও পারবি না।রতন বললো, আমিও দেখবো। দুজনকেই সম্মোহন করুন।পিসেমশায় বললেন, বেশি পাকামি মারতা হ্যায়। শালা বিপদে পরেগা। তারপর পিসেমশায়  বসলেন এবং আবার সাধনা করতে শুরু করলেন। পাঁচ মিনিট পরে ঠিক আমাদের বললেন, ওঠ এবার।তারপর তাকালেন আমাদের দিকে  । আমি আর রতন চেষ্টা করলাম অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। ওঠা তো দূরের কথা। নড়াচড়া করতে পারলাম না। চুপ করে বসে আছি। কথা বলতে পারছি না।  পিসেমশায় সত্যিই  নড়াচড়া করতে পারছি না আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। কি হবে পিসেমশায়। ক্ষমা করে দাও। এবার মতো ক্ষমা করে দাও। আমাদের ঠিক করে দাও। আমাদের দুজনের আর্তচিৎকারে পিসেমশায় বলল ভয় নেই আমি আছি । তারপর পিসেমশায় আবার পাঁচ মিনিট সময় সাধনা করলেন। চুপচাপ বসে থাকলেন আমাদের দিকে তাকিয়ে। তারপর 5 মিনিট পর আমাদের বললেন এবার ওঠ। রতন আর আমি এবার উঠে পড়লাম উঠে নাড়াচাড়া করে দেখলাম না সব ঠিক আছে।কি সমস্যা বললেন না জেনে কারো সঙ্গে তর্ক করতে নেই। কম জ্ঞান হলো বিপদের লক্ষণ জানবি পড়বি পড়াশোনা করবি, তারপর তর্ক করবি। মানুষকে মারণ, উচাটনের দ্বারা  অতিষ্ঠ করে দেওয়া যায়। তাকে এমনকি মেরে ফেলাও যায়। তারপর থেকে আমরা পিসেমশায় সঙ্গে তর্ক করতাম না।






 ৩
রতন বলল,পিসেমশাই তান্ত্রিকরা অনেক বছর বেঁচে থাকেন। যেমন তৈলঙ্গস্বামী,বাবা লোকনাথ সকলে অনেকবছর বেঁচে থেকেছেন। অলৌকিক কাজ করেছেন কত। কি করে সম্ভব এটা?
পিসেমশাই বললেন,ওনারা বলেন, কচ্ছপের মতো বসে থাকুন, কবুতরের মতো হাঁটুন আর কুকুরের মতো ঘুমান। এর সঙ্গে দে’হ-মন-প্রাণের অভ্যন্তরের শান্তির জন্য তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস সং’ক্রান্ত কিছু কৌশলের চর্চা চালাতেন। এসব করেই তিনি শিখেছিলেন দী’র্ঘ জীবন লাভের সত্যিকার কৌশল। বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন পশ্চিমে মানুষের গড় জীবনকাল ৭০-৮৫ বছরের মধ্যেই থাকে। কেউ শত বছর বেঁ’চে আছেন শুনলে বেশ অবাক লাগে।অথচ এনারা চারশ পাঁচশ বছরও বাঁচেন। সংযমী আর শান্ত স্বভাবের মানুষ দীর্ঘজীবন লাভ করেন। আর অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে সাধনার প্রয়োজন। বাবা লোকনাথ তো বাঘ, কুকুরের রূপ ধরতে পারতেন। 



কোনো বিষয়ে যা বলতেন আমরা শুনতাম। আমরা তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম তার পিছনে পিছনে ঘুরতাম যদি কিছু জানা যায় যদি কিছু শেখা যায় । একবার রতন আর আমাকে নিয়ে পিসেমশাই গেছিলেন পাহাড়ি অঞ্চলে। সেখানে একটা বাড়িতে বন্ধুর বাড়িতে তিনি ঢুকেছিলেন এবং বন্ধুটার সঙ্গে তার  অনেক দিন পর দেখা। সেই বন্ধুটাও তান্ত্রিক ছিল।পিসেমশায় বললেন, এখানে এসে তোদের পাহাড়টা দেখাবো বলে এই বন্ধুর বাড়ি এলাম এই বন্ধুটা মোটেও আমাকে পছন্দ করে না আমাকে হিংসা করে। তবু বাধ্য হয়ে এলাম। খুব সাবধানে থাকবি।পাহাড়ে ঘুরতে ঘুরতে পিসেমশায় একটা সত্যি ঘটনা বললেন, গর্ভবতী মিনার বাচ্চা হবে।  সমস্যা হল এখন লকডাউন চলছে। বাইরে বেরোনো যাবে না। বেরোলেও সব হাসপাতালে করোনা রোগীর ভিড়। চিকিৎসক ডেট দিয়েছিলেন ৮ই এপ্রিল, কিন্তু তিন তারিখ রাত্রেই প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বছর ২৭এর গর্ভবতী মেয়েটির । তারপর ১২ ঘণ্টা ছাঁট লোহার ছোট কারবারি তাঁর স্বামী অসুস্থ মেয়েটিকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে দৌড়ে বেরিয়েছেন। মুম্বইয়ের উত্তর শহরতলির নালাসোপারা থেকে মুম্বইয়ের মধ্যে ৭০ কিলোমিটারে চারটি হাসপাতাল পড়েছিল। তার একটিতেও ভর্তি করতে না পেরে পরের দিন বিকেলে  স্ত্রীকে মরতে দেখল যুবকটি। বাঁচানো যায়নি গর্ভস্থ সন্তানটিকেও। তাঁর মৃত্যুর পরেই সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন হয়ে যায় নালাসোপারার ধানেব বস্তি এলাকায়। এই মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই এলাকায় কনট্যাক্ট ট্রেসিং করতে গিয়ে পড়েছেন আর এক বিপদে। লোকজন বলতে শুরু করেছে এঁরা এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ করতে গেছেন। একদিকে করোনার আতঙ্ক , এনপিআর-এর ভয়, অন্যদিকে হাজার পঁচিশেক বাসিন্দার খাবার ফুরিয়ে আসছে, পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট- সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা।মিনা মারা গেল , সে আর তাঁর স্বামী উত্তরপ্রদেশ থেকে এই বস্তিতে আট মাস আগে আসে। থাকতে শুরু করে দশ ফুট বাই দশ ফুট একটি গ্যারেজে। রাতে যখন মেয়েটির দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে , তাঁর স্বামী দুই আত্মীয়কে নিয়ে একটি অটোরিক্শা ভাড়া করে নিউ আয়ুশ নার্সিংহোমে যায়। করোনা ভাইরাস সন্দেহে সেখানকার ডাক্তার মেয়েটিকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে, তখন তাঁরা দৌড়য় সরকারি সর্বোদয় মেটারনিটি হোমে। সোখানকার ডাক্তার বলেন তাঁর চিকিৎসা করার ব্যবস্থা ওই হাসপাতালে নেই। সেখানে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এঁরা যখন ৪০ কিলোমিটার দূরে কান্ডিভেলির শতাব্দী হাসপাতালে পৌঁছয়, ততক্ষণে রাত আড়াইটে বেজে গেছে। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায় মেয়েটির ফুসফুসে জল জমে গেছে, তখন তাঁকে রেফার করা হয় নায়ার হাসপাতালে , যেটা আরও ৩০ কিলোমিটার দূরে। সেখানেই তাঁর গলা থেকে লালারস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে মেয়েটি মারা যায়। পরীক্ষার ফল আসে কোভিড-১৯ পজিটিভ। এই ঘটনার পরে ওই বস্তিতে যখনই তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়েছেন, তাঁরা কোনও সাহায্য পাননি। কেউ কোনও বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে এই মৃত্যুর পরে মেয়েটির স্বামী ছাড়াও আশপাশের পাঁচটি পরিবারের ৩২ জনকে স্থানীয় একটি স্কুলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় সাড়ে ছ হাজার মানুষের ওই বস্তিকে কন্টেইনমেন্ট জোন বলে ঘোষণা করে চারদিকে কড়া পাহারা বসানো হয়েছে, যাতে কেউ যথেচ্ছ ঢুকতে বেরতে না পারে।



                            ক্রমশ...

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024