উপন্যাস - তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন || সুদীপ ঘোষাল || Tantrik Pisemosay oo Amra by Sudip Ghoshal || Fiction - Tantrik Pisemosay oo Amra Dujon Part -4


 



পিসেমশাই  বলছেন, নাতি বয়স বাড়লেই পাবে তিনপুরুষের পরশ...।তারপরেই হয়ত মনোজের মত হবে তার অবস্থা।মনোজ ভাবে, তখন আমার আস্তানা নদীর ধারের বাংলোয়। ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে বসেছিলাম বারান্দা। সব কিছুর  মাঝেই ঋতুজুড়ে আনন্দের পসরা সাজাতে ভোলে না প্রকৃতি।  সংসারের মাঝেও সাধু লোকের অভাব নেই।  তারা মানুষকে ভালোবাসেন বলেই জগৎ সুন্দর  আকাশ মোহময়ী, বলেন আমার মা। সব কিছুর মাঝেও সকলের আনন্দে সকলের মন মেতে ওঠে।  সকলকে নিয়ে একসাথে জীবন কাটানোর মহান আদর্শে আমার দেশই আদর্শ।সত্য শিব সুন্দরের আলো আমার দেশ থেকেই সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করুক। এইসব চিন্তা করছি এমন সময়ে  হঠাৎ আমার কানের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেল সশব্দে এক গুলি। আমি অবাক। জঙ্গলের ভিতর আমার বাংলোর হদিশ কেউ জানে না নিজের লোক ছাড়া। তাহলে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার লোক কে?  পেশায় আমি গোয়েন্দা। শত্রুর অভাব নেই। কিন্তু আমার এই গোপন বাংলোর খবর পাঁচজন জানে। তারা সকলেই আমার নিকট আত্মীয়। আমার বৌ, ছেলে, রমেন, পিয়ু আর শ্যামল। বৌ, ছেলেকে সন্দেহ তালিকায় রাখি কি করে?  তবু...আর রমেন, পিয়ু আর শ্যামল তিনজনই আমার খুব ভাল বন্ধু। তাহলে কে?  কে? কে? এই রহস্যে মোড়া ব্যক্তি।তারপরদিন সকালে অফিসে গেলাম। হাসিমুখে সকলের সঙ্গে কথা বললাম। বুঝতে কেউ যাতে না পারে তার জন্য অনেক অভিনয় করলাম। কোন হদিস পেলাম না।খুব কঠিন এক পরীক্ষায় আমাকে সফল হতেই হবে। ছেলে, বৌ কাউকে বললাম না কথাটা।প্রায় একমাস পর বাংলোয় বসে আছি অন্ধকারে। একটা কালো মূর্তি মনে হল সামনে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। অমাবস্যার রাতে অন্ধকারের সুযোগ নিতে চায় খুনী। আমি পাশ থেকে দেখলাম চেয়ারে বসানো বড় পুতুলটার উপর পরপর তিনটে গুলি করে খুনী পালাচ্ছে। ও বুঝতেই পারে নি আমার সাজানো নাটক। আন্দাজ করেছিলাম ঠিক। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছুটতে লাগলাম মুখোশধারীর পিছনে পিছনে। শেষে ধরে ফেললাম বাম হাতে কলার চেপে। ডান হাতে আমার সার্ভিস রিভলবর। মুখোশ টেনে খুললাম। তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।অনেকদিন থেকে শ্যামল আর পিউয়ের একটা পরকিয়া সম্পর্ক চলছিল। পিউ শ্যামলকে পছন্দ করত না। সে বারবার সেকথা আমাকে বলেছে। পিউ বলত শ্যামল কবি । ওসব কবিত্ব আমার ভাল লাগে না। শালা ভিখারি, ভ্যাগাবন্ড। বেশ পয়সাওয়ালা এক রসিকের খোঁজে আমি আছি। দুদিন শালা আমার সঙ্গে বিছানায় শুয়েছে। একদম বিনা পয়সায়। বিয়ে করা বৌ নয় আমি। ওকে বারণ করে দিবি। আমি বলেছিলাম, ও তোকে ভালবাসে। ওরকম বলিস না। টাকাপয়সার সঙ্গে প্রেমের তুলনা করিস না।পিউ বলেছিল, আমি তোকে ভালবাসি। ওর কাছে আমি যাব না।আমি রেগে বলেছিলাম, পিউ আমার সংসার আছে। ছেলে আছে। আর শ্যামল বিয়ে করেনি আর তুই বিধবা। তোরা বিয়ে করে নে। সুখে থাকবি দুজনে।পিউ জেদ করে বলল, আমি তোকেই চাই। আর যদি না পাই আমি সব শেষ করে দেব।আমি বলেছিলাম, কি শেষ করবি।

--- আমি নিজেকে শেষ করে দেব।


তারপর হয়ত চিন্তাভাবনা পাল্টে পিউ প্ল্যান পাল্টেছিল। আমি বিষয়টা গুরুত্ব দিই নি। কিন্তু পিউ শ্যামলের পোশাক পরে ছেলের সাজে কালো কাপড় ঢাকা দিয়ে আজ আমাকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার প্ল্যান করেছিল।


একটুর জন্য আমি বেঁচে গেছি...


পিউ বলল, তাহলে আমি কাকে গুলি করে মারলাম।

আমি বললাম, সব কথা থানায় হবে। প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।

মনোজ ভাবে, অতি সুক্ষ্ম তরঙ্গের স্পন্দন শোনার অপেক্ষায় মৌন হয়ে  অপরূপ প্রকৃতির, কোলে আশ্রয় নিতে চাই।চাওয়া,পাওয়ার উর্ধ্ব জগতে ভাসতে ভাসতে ছাই হোক নশ্বর দেহের অহংকার।


স্থূল  পদার্থ নিয়ে পরমাণু বিজ্ঞানীরা অপেক্ষায় থাকেন না।অণু পরমাণু নিয়েই তাঁরা ব্যস্ত।তা না হলে হিমালয়ের চূড়া কিংবা জমি জায়গা নিয়েই তারা টানাটানি করতেন বেশি।

আকাশকে আমরা পৃথিবীর মানুষ, স্বার্থপরের মত খন্ড খন্ড করেছি।এটা কাটোয়ার আকাশ, ওটা দিল্লীর, ওটা রাশিয়ার আকাশ। অখন্ডতার বাণী আমরা ভুলে যাই।আকাশ চিরদিন অখন্ডই থাকে।তাকে খন্ডিত করার অকারণ অপচেষ্টা না করাই ভালো।তবু কাঁটাতার হয়,সীমানা ভাগ হয়। অদ্ভূত মূর্খতার অন্ধকারে ডুবে আছে প্রাণীকুল।আলোর অন্তরে বাদ্য বাজে, 'অনন্ত নাদ' এর ভেরী।সূক্ষ্ম তরঙ্গে মিশে যায় তার অস্তিত্ব,ভুলে যায় তার  অবস্থান। এ অনুভূতি ঝর্ণার মত,কবিতার মত,ভালোবাসার মত, নদীর প্রবাহের মত। জোর করে সে গতি পাল্টায় না। সৃষ্টির সবাই ভয়ে কাজ করি। অস্তিত্ব বিনাশের ভয়ে।পৃথিবী ঘোরে ভয়ে,তা না হলে সে ধ্বংস হবে। সূর্য তাপ দেয় ভয়ে, তা না হলে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

সৃষ্টি মানুষের প্রশ্বাস,স্থিতি মানুষের ক্ষণিক ধারণ ,প্রলয় মানুষের নিশ্বাস।আলোর অনুসন্ধানীর  ভয় নেই, তাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই নেই।  লোভ নেই, তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নেই।অকাল বার্ধক্য নেই।

 আছে শুধু আনন্দ,ছেলেমানুষি,বোকামি,সরলতা,সোজা পথে হাঁটার সোজা রাস্তা...বন্ধু, জাতপাত নির্বিশেষে অখন্ডতার অসীম ভালোলাগায়  মনসায়রে আপনি ডুব  দিতেই পারে।মনোজ জানত,অভিনবকে সবাই নার্ভলেস বয় বলেই ডাকে।



 ছোটো থেকেই সে প্রচন্ড সাহসী। নদীতে সাঁতার কাটা কিংবা উঁচু গাছ থেকে লাফিয়ে পুকুরের জলে ঝাঁপ দেওয়া তার কাছে জলভাতের মত সহজ। তার বন্ধু চিনু বলছে বন্ধুদের আড্ডায় আত্মার অবস্থানের কথা।  দ্বিতীয় স্তরে কেউ যদি দেহ ত্যাগ করেন এবং তাঁর মৃত্যু হয়, তিনি সেই ফেজ-এ প্রবেশ করেন, যেখানে চৈতন্য মন থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়। মনের প্রকাশ চিন্তায়। চিন্তাই আমাদের জগৎকে তৈরি করে। এই পর্যায়ে চৈতন্য সেই জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং নিজেকে বিযুক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এই স্তরে আরও একটা ঘটনা ঘটে, যিনি যে ধর্মের মানুষ, যে বিশ্বাসের মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন, তিনি সেই বিশ্বাস অনুযায়ী অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত হবেন। খ্রিষ্ট-বিশ্বাসী জিশুকে, কৃষ্ণ-বিশ্বাসী কৃষ্ণকে দেখতে পাবেন। স্বর্গ বা নরকের যে ধারণা তাঁরা পোষণ করে এসেছেন, তেমন স্বর্গ বা নরক তাঁদের সামনে প্রতীয়মান হবে। যিনি নাস্তিক, তাঁর কাছে এই স্তরটি একটি পাসিং ফেজ হিসেবেই থাকবে। তিনি পরবর্তী স্তরের দিকে এগিয়ে যাবেন।এই দুই স্তরের সমান্তরালে আসবে তৃতীয় স্তর। মনে রাখতে হবে, এই স্তরগুলি ‘পর পর’ ঘটে না। এগুলি সমান্তরাল। কারণ ‘সময়’ বলে কিছুই হয় না। কোনও ঘটনা আগে বা পরে ঘটে না। আমরা জীবদ্দশায় ঘটনা দিয়ে সময়ের ক্রমিকতা তৈরি করি। সেটা একেবারেই ইলিউশন। মৃত্যু-পরবর্তী তৃতীয় স্তরে এক আলোকসম্ভব অস্তিত্বের মুখোমুখি হই আমরা। এই অস্তিত্বই মহাচৈতন্য। আমরা বুঝতে পারি, আমদের আত্মা বলে যে বিষয়কে আমরা লালন করে এসেছি, তা-ও ‘আমার’ নয়। সে সেই আলোকসম্ভব মহাঅস্তিত্বেরই অংশ। আমাদের আত্মা বলে আলাদা কিছু হয় না। তা বিশ্বাত্মা। তার আমি-তুমি-সে-তাহারা ভেদ নেই। তার ক্ষয় নেই, নাশ নেই।এর একটু পরেই চলে এল নার্ভলেস বয় অভিনব। সে এসেই বসল বন্ধুদের মাঝে। বন্ধুদের বড় প্রিয় এই নার্ভলেস। সে এলেই বন্ধুদের আড্ডায় চারটে চাঁদ নেমে আসে। আলোচনা আরও জমে ওঠে। নার্ভলেস শুরু করে তার পাহাড়ে ওঠার গল্প।একবার মটর সাইকেলে ভারত ভ্রমণে বেড়িয়েছিল নার্ভলেস বয়। উত্তর ভারত ঘুরতে তার সময় লেগেছিল একমাস। সব জায়গা ঘোরা না হলেও বেশির ভাগ স্থান ঘোরা হয়েছিল। স্বামী চলে যাওয়ার পরে একদম একা হয়ে পরেছিলেন, কবিতা। মনে পরতো ফুলশয্যা,  আদর।   কি করে যে একটা একটা করে রাত, দিন পার হয়ে যায়, বোঝাই যায় না। তবু বুঝতে হয়, মেনে নিতে হয়। একটা ঘুঘু পাখি তার স্বামী মরে যাওয়ার পর থেকেই এবাড়িতে আসে। আম গাছের ডালে বসে আপন মনে কত কথা বলে। ঘুঘুর ঘু,ঘুঘুর ঘু। সবিতাদেবীর সঙ্গে পাখিটার খুব ভাব।তার মনে হয় স্বামী, ঘুঘুর রূপ ধরে আসেন। তিনি আম গাছের তলায় খুদকুড়ো ছিটিয়ে দেন। ঘুঘু পাখিটা খায় আর গলা তুলে কবিতাকে দেখে । কিছু বলতে চায়। তিনি বোঝেন। আর আপনমনেই পাখিটার সঙ্গে বকবক করেন। পুরোনো দিনের কথা বলেন। ছেলের বৌ বলে,বুড়িটা পাগলী হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা অতশত বোঝে না। হাসাহাসি করে। শুধু তার ছেলে বোঝে মায়ের অন্তরের কথা, ব্যথা। ঘুঘু পাখিটা সারাদিন ডেকে চলে। এবার আয়, এবার আয়। কবিতার বয়স হল আশি। একদিন সবাই দেখলো, বুড়ি ফুলশয্যার রথে শ্মশানে গেলো বোধহয় স্বামীর কাছে। ঘুঘু পাখিটা ডেকে চলেছে তখনও,, ঘুঘুর ঘু... দাদুর বাবার লাঠি। যত্ন করে তুলে রাখা আছে বাঙ্কে। কার জন্য?  বৃদ্ধ আমার জন্য। কত সুখস্মৃতি জড়িয়ে লাঠির অঙ্গ প্রত্যঙ্গে। দাদামশাই লাঠি ধরে পথ চলতেন। লাঠিকে বলতেন, বাবা ভাল করে ধরে রাখিস। ফেলে দিস না এই বুড়ো বয়সে। কোমর ভেঙ্গে যাবে তাহলে। বিশ্বস্ত লাঠি তার দায়ীত্ব পালন করেছে পলে পলে। এবার তার নাতির পালা।স্মৃতিকন্ঠ গ্রামের মান্যগণ্য লোক। বংশগত একটা বিরাট আভিজাত্য তার চলনে বলনে প্রস্ফুটিত। স্বভাবতই সবাই তাকে সমীহ করে চলেন। তার একটিমাত্র পুত্র সন্তান। তার পড়াশোনার জন্য গ্রামের স্কুলে নিজের অর্থে সাজিয়ে তুলেছেন লাইব্রেরী রুম। যতরকমভাবে  স্কুলকে সাহায্য করা যায় তিনি করেন। তার ছেলের নাম রতন। স্কুলে ছেলে মেয়ে একসঙ্গেই পড়াশুনা করে। রতন পড়ে এখন ক্লাস নাইনে। আর শুভ বাবুর মেয়ে পড়ে ক্লাস সেভেনে। গ্রাম্য রাজনীতিতে রেষারেষি লেগেই আছে এই গ্রামের তিনটি পাড়ার লোকজন স্বচ্ছল। টাকা পয়সার অভাব নেই। স্মৃতিকন্ঠবাবুর পাড়ায় আভিজাত্যের লড়াই লেগেই আছে। এক বাড়িতে গাজনে একটা পাঁঠা থাকলে অন্য বাড়িতে বাঁধে দুটো। পাঁঠার ঝোল আর মদ। একদম কম্পিটিশন। প্রয়োজনে চার পাঁচটা পাঁঠা এনেও বড়লোকি দেখানোর ব্যাপারটা লেগেই থাকে। বাকি গ্রামবাসীদের ভুরিভোজ ভালোই হয়। তারা মজামারা দল। একজনকে বাহাদুরি দিয়ে তাতিয়ে দেয় তো অন্য বাবুর জেদ বেড়ে যায়। ব্যবসায়ী যারা তারা এই সুযোগটাই কাজে লাগায়। এক গানের দল হঠাৎ একদিন শুভ বাবুর নাটমন্দিরে ডেরা বাঁধল। তারা ধর্মিয় নানা গানের মধ্য দিয়ে পালাগান শোনায়। রামায়ণ, মহাভারতের ঘটনা, যীশুখ্রীষ্টের ঘটনা গান আর নাটকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে। 


মনোজ জীবনের কথা ভুলতে পারে না মরে গিয়েও। কত জীবনের কথকথা তার মনে পড়ছে তৃতীয় স্তরের আত্মা হয়ে। হয়ত কোনদিন প্রথম স্তরের আত্মা তাকে টেনে নেবে স্বর্গদ্বারে। তাদের গ্রামে

রাত বাড়লে নাট মন্দির লোকের ভিড়ে ভরে যায়। শুরু হয় নাটক। দেবতার গলায় গাঁদা ফুলের মালা।অভিনয় দেখে সকলেই মোহিত হয়ে যায়। নাটকের শেষে দেবতার গলায় থাকা মালা নিয়ে দরাদরি শুরু হয়। স্মৃতিকন্ঠ হাঁকেন, আমি মালার দাম দশ হাজার দিলাম। শুভবাবু পারিষদদল নিয়ে বসে আছেন। তিনি ভাবলেন,এ মালা আমাকেই নিতে হবে। তা না হলে মান সম্মান থাকবে না। তিনি মালার দর হাঁকলেন কুড়িহাজার টাকা।এইভাবে চলতে থাকল নীলামের খেলা। এদিকে নাটকের দলের মহিলা একজন বলছেন, আপনাদের গ্রামের লোক এত কৃপণ কেন। এই তো পাশের গ্রামে মালার দর পেয়েছি এক লক্ষ টাকা।শুনে মালার দর আরও বেড়ে গেল। এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় নীলামে একটা গাঁদার মালা কিনল গাধার দল।মুচকি হাসি আগত অভিনেত্রীর চোখেমুখে। তিনি সফল আপন কারবারে।এইভাবে  বেশ কয়েকদিন টাকা কামিয়ে নাটকের দল চলে যেত আরও মুরগির সন্ধানে....



---ওরে যাস না ওদিকে, পুকুর আছে ডুবে যাবি

----- না মা, কিছু হবে না


ছোট থেকে চিনু দুরন্ত, একরোখা ছেলে। ভয় কাকে বলে সে জানে না। এই নিয়ে তার পরিবারের চিন্তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মনোজের বন্ধু চিনু। মনোজ জানে এই চিনুর আত্মা তাকে উদ্ধার করবে মরার পরে। 

এইভাবে প্রকৃতির কোলে বড় হয়ে যায় মানুষ । কত কি শেখার আছে প্রকৃতির কাছে। কিন্তু কজনে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। কিন্তু চিনু সেই শিক্ষা নিয়েছিল। গ্রামের সকলে তাকে একটা আলাদা চোখে দেখত।বেশ সম্ভ্রমের চোখে। পরিবারের সকলে জানে না, কি করে চিনু শিক্ষা পেল। প্রথাগত শিক্ষা সে পায় নি। তবু বাড়িতে দাদুর কাছে লেখাপড়া শিখেছে। বই পড়া শিখেছে। চিনু বলত, দাদু কি করে তুমি বই পড়। আমি পারি না কেন?  দাদু বলতেন, নিশ্চয় পারবি। মনে মনে  বানান করে পড়বি। দেখবি খুব তাড়াতাড়ি বইপড়া শিখে যাবি।হয়েছিল তাই। দুমাসের মধ্যে চিনু গড়গড় করে বই পড়ত।কোনো উচ্চারণ ভুল থাকত না।দুপুরবেলা হলেই চিনু বন্ধুদের নিয়ে কদতলা, বেলতলা, আমতলা, জামতলা দৌড়ে বেড়াত। কাঁচা কদ কড়মড় করে চিবিয়ে খেত। লাঠিখেলা,কবাডি সব খেলাতেই তার অদম্য উৎসাহ। গ্রামের লোকের উপকারে তার দল আগে যায়।এই দাপুটে ছেলে চিনু একদিন এক সাধুর সঙ্গে ঘরছাড়া  হল। বাড়ির সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। কিন্তু চিনুকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। একদিন গ্রামের একজন গিয়ে দেখল, সাধুর আশ্রমে সবুজ গাছ যত্নের, কাজ করছে চিনু.

 ভূত বলে কিছু হয় না জানি। তবু  ভূতের প্রতি আমার ছোট থেকেই দূর্বলতা আছে। বিশ্বাস করি। ভগবান আছেন ভূতও আছে। আমার এক বন্ধু মাঠে খেলতে গিয়ে আমাকে বললো, আমার দাদু এসেছিলেন এখনি। হয়ত তিনি মরে গেলেন। দুজনেই বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেখলাম কথাটা একদম সত্যি। দাদু বলেছিলেন মরার পরে তোকে একবার দেখা দেব। এই ঘটনাকে আপনি কি বলবেন বলুন? আর তাছাড়া ভূত সমাজে ভাল, মন্দ সব রকমের ভূত আছে। আমার দাদু বলতেন, একবার চাষের জমিতে জল লাগবে। টাকা পয়সার অভাবে জল দিতে পারি নি। রাতে শুয়ে ভাবছি, আমি রোগী আবার সত্তর বছরের বুড়ো। এ ঘোড়া আর ঘুরে ঘাস খাবে না।চাঁদের আলোয় বসে আছি জেগে। কি সুন্দর পৃথিবীর রঙ। সকলের যদি আহারের ব্যবস্থা থাকত তাহল দুঃখ থাকত না। আর তারজন্য চাষের জমির পরিমাণ বাড়াতে হবে। জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এইসব ভাবছি, এমন সময়ে দরজায় টোকা। আমি বললাম, কে?


  বাইরে থেকে আওয়াজ এল, চলে আয় বাইরে।


 মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে  চলে গেলাম বাইরে, তারপর মাঠে। সে আমাকে বলল, তুই বসে থাক। এখানকার সব জমিতে জল দেব। একটু দূরে বড় পুকুর ছিল। ওই পুকুরে ভয়ে আমরা যেতাম না। দিনের বেলায় পর্যন্ত ওখানে হাসির শব্দ পেত সবাই। হি হি হি করে কারা যেন হাসত ব্যঙ্গ করে। শুনলাম ভয়ংকর হাসি। বার বার পাঁচবার। ভয় পেলাম প্রচন্ড। 

তারপর আর কিছু মনে নেই। 

পরের দিন মাঠে গিয়ে দেখি, ভালোই হয়েছে। জলে জলময় সব মাঠ। এই খরার সময় এত জল দেখে সবাই অবাক। লোকে বলল,এ তো একদম ম্যাজিক। চাষিরা বলল, এই ম্যাজিক যেন বার বার প্রতিবার হয়। 




                           ক্রমশ...

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024