উপন্যাস - তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন || সুদীপ ঘোষাল || Tantrik Pisemosay oo Amra by Sudip Ghoshal || Fiction - Tantrik Pisemosay oo Amra Dujon Part -3


 



পিসেমশাই বললেন, এই লকডাউনে রাতের কলকাতায় হেনস্থার শিকার এক রুপান্তরকামী। অভিযোগ, একা পেয়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়েছে তাঁর গায়ে। পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আক্রান্ত। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে ফুলবাগান থানার পুলিশ।কাঁকুড়গাছির সেকেন্ড লেনের বাসিন্দা বছর ২০–এর ওই রুপান্তরকামী শুক্রবার রাতে ওষুধ কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। সেই সময় এলাকাতেই আড্ডা দিচ্ছিল কয়েকজন যুবক। অভিযোগ, রুপান্তরকামীকে দেখতেই কটুক্তি শুরু করে তারা। এরপর আচমকা পিছন দিক থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে ওই যুবকেরা কেরোসিন ছুঁড়ে দেয় বলে অভিযোগ। এমনকী সেই সঙ্গে লাগাতার তাঁকে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দেয় বলে জানা গিয়েছে। এরপর বাড়ি ফিরে গোটা ঘটনাটি জানানোর পর পরিবারের সঙ্গে ফুলবাগান থানার দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মেরে দিল রূপান্তরকামিকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে।এলাকার কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ফুলবাগান থানা। শুক্রবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় এক যুবককে। যুবক সব দোষ স্বীকার করে তারা হয়তো ভবিষ্যতে ফাসি হবে কিন্তু মিনার কি হলো সংসার ভেসে গেল সে তার গর্ভস্থ সন্তানকে নিয়ে আজ মৃত্যুর কোলে। মিনার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরেফিরে বেড়াতে লাগলো। আর সেই রূপান্তরকামী রাস্তায় ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগলো তাদের দেখা হল দুজনের তারা ঠিক করল এদের সর্বনাশ করবে।রূপান্তরকামী বলল আমাকে যে হত্যা করেছে তাদের সংসারের সবকটাকে আমি একা একা মারব আর এই মিনার আত্মা বলল আমাকে যে পুড়িয়ে মেরেছে একজন ধরা পড়েছে কিন্তু আরও পাঁচজন ছিল সবকটাকে আমি মারবো ।তারা কিন্তু কথা রেখেছিলো। পিসেমশায়,মানে তান্ত্রিক বললেন, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী,   ভূত হল মৃত ব্যক্তির আত্মা যা জীবিত ব্যক্তিদের সামনে দৃশ্য, আকার গ্রহণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ গল্প প্রায়শই শোনা যায়। এই সকল বিবরণীতে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: কখন অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় সত্ত্বায়, কখনও বা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী করার বিদ্যাকে  কালা জাদু বলা হয়ে থাকে।প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতিগুলোর  মধ্যে ভূতের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সেযুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ভূত-তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হত মৃতের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্য। প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, ভূতেরা একা থাকে, তারা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, জীবদ্দশায় যেসকল বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল সেগুলিকে বা তাদের তাড়া করে ফেরে। তবে ভূত বাহিনী,এমনকি ভৌতিক জীবজন্তুর কথাও শোনা যায়।মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মা দেহত্যাগ করে। জীবাত্মা অবিনশ্বর। তবে কখনো কখনো জীবিত সামনে আকার ধারন করে। এটি পূরাণভিত্তিক একটি আধিভৌতিক বা অতিলৌকিক জনবিশ্বাস। প্রেতাত্মা বলতে মৃত ব্যক্তির প্রেরিত আত্মাকে বোঝায় ।সাধারণের বিশ্বাস কোনো ব্যক্তির যদি খুন বা অপমৃত্যু হয় তবে মৃত্যুর পরে তার হত্যার প্রতিশোধের জন্য প্রেতাত্মা প্রেরিত হয় । বিভিন্ন ধরনের কাহিনী ও রয়েছে এ সম্পর্কে । বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু ধর্মে করা হয় না, যেমন ইসলাম বা ইহুদী ধর্মে। এসব ধর্মাবলম্বীদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা চিরস্থায়ীভাবে পরলোকগমন করে আর ইহলোকে ফিরে আসে না। মিনার  খুনিরা একটা বাড়ি ভাড়া করে বাসায় এল মালপত্তর নিয়ে। তারা বড়লোকের ছেলে। ফুর্তি করে আর ধর্ষণ করে মারে মেয়েদের। পিসেমশায় বলছেন গল্প।তারা  নাকি পুরনো বাড়ি কিনে রিনোভেট করে বাস করছেন,অথবা নতুন ফ্ল্যাটে মুভ করেছেন। যা-ই করে থাকুন, মোদ্দা কথায়, নতুন বাসস্থানটিতে এসে স্বস্তি পাচ্ছেন না কিছুতেই। কেন জানা নেই, বার বার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ছন্দপতন রয়েছে। তালে মিলছে না সব কিছু। প্যারানর্মাল বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ব্যাপারটা মোটেই অবহেলা করার মতো নয়। আপনার আবাসটিতে ‘তেনা’দের আনাগোনা থাকতেই পারে।ভূতে বিশ্বাস করুন বা না-করুন, এমন কিছু অস্বস্তি রয়েছে, যার সর্বদা চটজলদি ব্যাখ্যা হয় না। তেমন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করেছেন জন এল টেনি-র মতো খ্যাতনামা অতিলৌকিক বিশেষজ্ঞ। টেনি জানাচ্ছেন, কয়েকটি বিশেষ দিকে নজর রাখাটা জরুরি এমন ক্ষেত্রে। তাঁর বক্তব্য থেকে পাঁচটি বিষয় তুলে দেওয়া হল—হঠাৎই আপনার মনে হল, পিছন থেকে কেউ আপনার কাঁধ বা পিঠ স্পর্শ করল। ফিরে দেখলেন, কেউ নেই। তন্ত্রমতে, এমন ক্ষেত্রে সাবধান। স্পর্শকারী রক্তমাংসের জীব না-ও হতে পারেন। যদি মনে হয় ঘরের আসবাবপত্র নিজে থেকেই স্থান পরিবর্তন করছে, তা হলে খামোখা ভয় পাবেন না। তিনি জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভৌতিক না-ও হতে পারে। নিজেই হয়তো সরিয়েছেন সেন্টার টেবল  তার পরে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু যদি খাটখানাই টোটাল ঘুরে যায় অথবা চেয়ার উল্টো হয়ে বিরাজ করে, তবে ভাবার অবকাশ রয়েছে।আবার নতুন বাসায় পা রেখে যদি শোনো সেখানে কেউ আগে মারা গিয়েছেন অথবা যে জমিতে বাড়ি করেছে কেউ সেটি আগে কবরখানা ছিল, তা হলে ভয় আছে।  পুত্রহারা গৌতমীকে তথাগত বলেছিলেন এমন কোনও বাড়ি থেকে একমুঠো সরষে নিয়ে আসতে, যেখানে মৃত্যু বা শোক প্রবেশ করেনি। তার বক্তব্যও একই প্রকারের। মৃত্যু একটা সাধারণ বিষয়। তা কোথাও ঘটে থাকলেই যে প্রেত কিলবিল করবে তার কোন কথা নেই। 


পিসেমশাই  আজ নতুন একটা গল্প শুরু করলেন। সেদিন ছিল ভীষণ কুয়াশা। শীতকালের পৌষ মাসের সকাল। যথারীতি ভোর পাঁচটার ট্রেন ধরে হাওড়া যাবে বলে লাইন পার হচ্ছিল মনোজ। আর ঠিক সেই সময়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছিল গ্যালোপিং ট্রেন। তাকে পিষে দিয়ে চলে গেল নিমেষে।একটু পরেই মনোজের শরীর বেশ হালকা লাগছে। সে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে শুরু করলো। কিন্তু দেখলো সে হাওয়ায় ভাসছে কেন? আর তার শরীরটা পড়ে আছে লাইনের উপর।শরীর ছাড়া হয়ে মনোজ বেশ উপরে উঠে উড়ে উড়ে বেড়াতে লাগল। তারপর দুপুর গড়িয়ে রাত নামলো রাতে আরো অনেকে শরীর ছাড়া। শরীর ছাড়া আত্মা উড়ে উড়ে বেড়াতে বেড়াতে তার কাছে এলো। সকলের সাথে পরিচয় হলো। সে দেখল সে একা নয় তাদের একটা দল আছে। মনোজের আত্মা দেখছে,  আজ সুপার মার্কেটের পুরো গাছগাছালির আড়াল ঘিরে শুরু হয়েছে পৌষ পিঠের মেলা। এই মেলার সামনের পাড়ায় বস্তি এলাকায় কিছু গরীব সংসারের আবাস। তারা সুপার মার্কেটের সামনে থাকে এই নিয়ে তাদের গর্বের শেষ নেই। কারণ এই মার্কেট জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় মেলা,সার্কাস আর বাজার। আর সেখানে কাজ করে তাদের ভালমন্দ খাবার জুটে যায়। শুধু বর্ষাকালে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। তখন ঝড়ে ডালপালা ভাঙ্গে আর সেই ডালপালা নিয়ে এসে তারা বাড়িতে ফুটিয়ে নেয় দুমুঠো চাল। পুকুরের গেঁড়ি, গুগুলি তখন তাদের একমাত্র ভরসা। শরীরবিহীন মনোজ দেখছে,  আজ পৌষ পিঠের মেলা। দুটি বছর দশেকের শিশু চলে এসেছে মেলায়। তাদের টাকা পয়সা নেই। ঘুরে বেড়ায় উল্লাসে। তারপর বেলা বাড়ে আর তাদের খিদে বাড়ে সমানুপাতিক হারে। খিদে নেই ওদের যারা ঘুরে ঘুরে পিঠে খায়। ফেলে দেয় অর্ধভুক্ত পিঠের শালপাতার থালা। ডাষ্টবিন ভরে  যায় খাবারসহ শালপাতায়। শিশু দুটি লোভাতুর হয়ে ওঠে। পাশে আলো মুখে একজন মহিলা এগিয়ে আসে। সে বলে, তোদের বাড়ি কোথায়। শিশু দুটি দেখিয়ে দেয় তাদের পাড়া। মহিলা বলে, আমাকে তোদের বাড়ি নিয়ে যাবি?  শিশু দুটি হাত ধরে নিয়ে আসে তাকে। পথে হাঁটতে হাঁটতে মহিলাটি বল, আমি তোদের দিদি। আমাকে দিদি বলে ডাকবি।বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শিশু দুটি বলে, মা মা দেখ দিদি এসেছে আমাদের বাড়ি। মা তো অবাক। তারপর জানতে পারে সব। পেতে দেয় তালপাতার চটাই। একগ্লাস জল খেয়ে দিদি ব্যাগ থেকে বের করে পিঠের প্যাকেট। সকলে একসাথে বসে খায়।দিদি বলে শিশু দুটির মা কে,  আমার ছেলেপুলে হয় নি। তোমার বাচ্চাদের দেখে চলে এলাম তোমাকে দেখতে। জানো ভগবান, সকলকে সবকিছু দেয় না। তোমাকে যেমন টাকা পয়সা দেয় নি আর আমাকে আবার সন্তান দেয় নি। তোমার পুত্রসন্তানদের আমি আজ থেকে দেখাশোনা করব। তুমি অনুমতি দাও    ।


 ৬


মনোজ মরে গিয়েও পৃথিবীর মায়া ছাড়তে পারে নি। আকাশে ওড়ে আর মানুষের সুখ দূঃখ দেখে। হাওয়াতে ভেসে চলেছেন সুদর্শন বাবু । ফুরফুরে মেজাজে তার নিত্য আসা যাওয়া   কলেজের পথে ।একজন ছাত্রী তার নিত্য সাথী । ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা, কলিগরা অন্য চোখে দেখে । বাঙালি একটি যন্ত্র প্রথম আবিষ্কার করে ।সেটি হলো ষড়যন্ত্র । হাসতে হাসতে বলেন কলিগদের ।উত্তরে তারা বলেন ,সত্য উদ্ঘাটিত হোক । বেশ কয়েক মাস পরে একদিন কলেজ ছুটির পর পিছু পিছু কলিগরা তাদের অনুসরণ করলো । সুদর্শন বাবু ছাত্রীদের নিয়ে ঘরে ঢুকলেন কলেজ ছুটির পরে। কলিগরা বাইরে থেকে দেখলো শিক্ষক ও ছাত্রীরা পড়াশুনোয় ব্যস্ত।  তারা শিক্ষার  আলোর সাধনায় নিবিষ্ট ।অব্শ্য সঠিক সময়ে ছাত্রীটির অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য কলেজের সকল অধ্যাপকদের  পুরস্কৃত করা হলো । মনোজের দাদু বলতেন, প্রথম স্তরে মৃত্যুর পরে আমাদের দেহ থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হই। এবং দেহের কিছুটা উপরে ভাসমান অবস্থায় বিরাজ করি। এই অবস্থায় এই বোধ জন্মায় যে, আমাদের দেহ আর ‘আমি’ এক জিনিস নয়। কোনো দুর্ঘটনায় চৈতন্য হারিয়ে অথবা কোনও কোনও অনেকই এই অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হয়েছেন। এই জাতীয় অভিজ্ঞতা সব সময়েই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় না।এখন মনোজ দেখছে সত্যি তাই। মনোজের দাদুর বাবার লাঠি। যত্ন করে তুলে রাখা আছে বাঙ্কে। কার জন্য?  বৃদ্ধ আমার জন্য। কত সুখস্মৃতি জড়িয়ে লাঠির অঙ্গ প্রত্যঙ্গে। দাদামশাই লাঠি ধরে পথ চলতেন। লাঠিকে বলতেন, বাবা ভাল করে ধরে রাখিস। ফেলে দিস না এই বুড়ো বয়সে। কোমর ভেঙ্গে যাবে তাহলে। বিশ্বস্ত লাঠি তার দায়ীত্ব পালন করেছে পলে পলে। এবার তার নাতির পালা। পিসেমশাই মজার হিন্দী বললেন, লে আও চায়ে। তারপর গল্প হবে। 



                     ক্রমশ...


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024