ভানুভক্ত আচার্য - শংকর ব্রহ্ম || Vanu vokto Acharya - Sankar Brhama || Article || প্রবন্ধ || নিবন্ধ


ভানুভক্ত আচার্য

(নেপালি আদিকবি ও অনুবাদক )

                 শংকর ব্রহ্ম

     



                            ১৮১৪ সালের ১৩ই জুলাই (২৯ শে আষাঢ়ে) নেপালের তনহুঁ জেলার রামঘা গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে ভানুভক্ত আচার্যের জন্মহয়। বাবা ধনঞ্জয় আচার্য এবং মা ধর্মাবতী আচার্য। ধনঞ্জয় আচার্য ছিলেন সরকারি কর্মচারী এবং ভানুভক্ত আচার্য ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। ভানুভক্তের পড়াশোনা ঠাকুর্দার কাছে বাড়িতেই। ভানুভক্ত তার কাছে সংস্কৃত শেখেন বাড়িতে এবং পরে বারাণসীতে। 


                      তিনি ছিলেন একজন নেপালি কবি, অনুবাদক ও লেখক। তিনি প্রথম রামায়ণ মহাকাব্য সংস্কৃত হতে নেপালি ভাষায় অনুবাদ করেন। তার কবিতার সংকলন পরে খ্যাতিমান কবি মতিরাম ভট্ট প্রকাশ করেন।



                   ভানুভক্তকে “আদিকবি” উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে নেপালি কবিতা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য, বিশেষ করে সংস্কৃত ভাষা হতে সহজ ও সরলভাবে রামায়ণের অনুবাদ সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য। তার জন্মদিনে প্রতি বছর ১৩ই জুলাই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।



                     সেই সময়ে নেপালি ভাষা সহ দক্ষিণ এশীয় ভাষাগুলি খুব কম লিখিত প্রচার ছিল, বরং মৌখিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ ছিল। যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ লিখিত গ্রন্থে সংস্কৃতের আধিপত্য ছিল, তাই বেশিরভাগই জনগণের কাছে দুর্গম ছিল। যেহেতু ব্রাহ্মণরা ছিল সেই জাতি যারা শিক্ষক, পণ্ডিত এবং পুরোহিত হিসাবে শ্রেষ্ঠ ছিল, সমস্ত ধর্মীয় শাস্ত্র এবং অন্যান্য সাহিত্যকর্মের প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং খুব কম লোকই শিক্ষা গ্রহণ করতে এবং সংস্কৃত বুঝতে পারত। অনেক কবি সংস্কৃতে কবিতা লিখেছিলেন যখন আচার্য নেপালি ভাষায় লিখতে শুরু করেছিলেন যা শুধুমাত্র ভাষাটিকে জনপ্রিয় করেনি বরং রানা শাসকদের কাছ থেকে তাকে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে।



                   বেশির ভাগ দক্ষিণ এশীয় ভাষার মত নেপালি ভাষার কেবল মৌখিক প্রয়োগ ছিল। নেপালি সাহিত্য শত শত বছর ধরে মৌখিক লোককথায় প্রচলিত ছিল। লিখিত মাধ্যমে সংস্কৃত ছাড়া অন্য দক্ষিণ এশীয় ভাষার ব্যবহার ছিল সীমিত । তাই সাধারণ মানুষের কাজে সবই অগম্য ছিল। নেপালি ভাষাভাষী মানুষের কাছে মহাকাব্য রামায়ণের রামের বীরত্বের কাহিনী নেপালি ভাষার লোককথায় নিয়ে আসাটাকে আচার্য অত্যন্ত জরুরী মনে করেন। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষই সংস্কৃত ভাষা বোঝেন না, তাই জরুরি তাগিদে তিনি মহাকাব্যটিকে নেপালি ভাষায় অনুবাদ করেন। বিদ্বজ্জনের মতে, রামায়ণের কাব্য রচনার রীতিকে অক্ষুণ্ণ রেখে, আঞ্চলিক প্রভাবে রামায়ণের আভ্যন্তরীণ অর্থকে বিকৃত না করে, কবিতার মত না করে গানের সুরে একই 'ভাব' ও 'মর্ম'-এ উপস্থাপন করেছেন।


                 রামায়ণের গীতিমূলক বর্ণনাশৈলী সংরক্ষণ করে তার অনুবাদগুলিকে পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে একই গীতিকার সারাংশ বহন করে "ভাব এবং মর্ম" যা কবিতার মতো শোনার চেয়ে বরং আঞ্চলিক প্রভাবকে বিকৃত না করে গানের মতো শোনায়। রামায়ণের অন্তর্নিহিত অর্থ।


                 তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হননি, পাশ্চাত্য সাহিত্য সম্পর্কে তার কোন ধারনাও ছিল না। কিন্তু তার রচনা ও পরীক্ষামূলক সূচনা হলেও আঞ্চলিক সাহিত্যে মৌলিক এবং নেপালি ভাষায় সম্পূর্ণভাবে পরিস্ফুট। তার রচনার মূল বৈশিষ্ট্য হল - ধর্মীয় অনুভূতি, সরলতাবোধ এবং দেশের প্রতি উষ্ণ আবেগ, যা কিনা সমকালীন অন্য কোন কবির মাঝে দেখা যায়নি। অবস্থাপন্ন পরিবারের হওয়ায়, তাঁকে কখনও আর্থিক সমস্যার পড়তে হয়নি। যে দুটি রচনার জন্য ভানুভক্তের খ্যাতি ছিল তা হল - ভানুভক্তের রামায়ণ এবং অন্যটি কারাগারে বসে শ্লোক আকারে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি। পারিবারিক নৈতিকতায় এবং আমলাতন্ত্রের বিদ্রূপ করে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সূত্রে তিনি কারাগারের বন্দীর জীবনযাপন করেন। বন্দীদশায় তার শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। কারাগারে বসে দুর্বল বন্দীদের দশা আর নিজের মুক্তির আবেদন প্রধানমন্ত্রীকে করেছেন চিঠিতে শ্লোকের আকারে। শেষে মুক্তি পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রয়াত হন ১৮৬৮ সালের ২৩শে এপ্রিল। জীবৎকালে তার সে রচনা প্রকাশিত হয় নি। পরবর্তীকালে মতিরাম ভট্ট তার পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করে ভারতের বারাণসী নিয়ে যান এবং ১৮৮৭ সালে প্রকাশ করেন।


             ১৯৮১ সালে ভানুভক্ত আচার্যের জীবনী লেখার সময় মতিরাম ভট্ট প্রথমে তাঁকে আদিকবি বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি স্পষ্ট করেছিলেন এই বলে যে, তিনি নেপালের প্রথম কবি হিসাবে কবিতার অন্তর্নিহিত 'ভাব' ও 'মর্ম' বজায় রেখে যেমন কাব্য রচনা করছেন, তেমনই জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তাই তিনিই একমাত্র এই সম্মানের অধিকারী। 



         ২৩ এপ্রিল ১৮৬৮ সালে ভানুভক্ত আচার্যের সেতিঘাট, তানাহুঁ জেলা নেপালে ৫৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয়।



ভানুভক্ত রামায়ণ (অনুবাদ) ছাড়া তার অন্যান্য বই -



১). অমরাবতী কান্তিপুরী নগরী


২). ঘাঁসি 


৩). বধু শিক্ষা


৪). ভক্ত মালা


৫). খওমিত হ্যাঁ গিরিধারী লে


৬). রোজ রোজ দর্শন পাঞ্চু (ভোলি কবিতা)


৭). মা ভানুভক্ত


৮). বালাজি দেখান


৯). প্রশনোত্তর মালা



(ভানু জয়ন্তী)



              ''ভানু জয়ন্তী'' আদিকবি ভানুভক্তের জন্মদিন উদ্‌যাপন হল ভানু জয়ন্তী। প্রতি বৎসর ভানুভক্ত জয়ন্তী পালন করেন নেপালি সরকার, নেপালের জনগণ এবং বিশ্বের সর্বত্র বসবাসকারী নেপালি ভাষার মানুষ জন। এটি সাধারণত জুলাই মাসের ১৩ তারিখে অথবা নেপালি ক্যালেন্ডারের আষাঢ় মাসের ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়।


             প্রতি বছর ভানুজয়ন্তীতে নেপালি ভাষার লেখক, ঔপন্যাসিক ও অন্যান্য সংস্কৃতি ক্ষেত্রের ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে মহা সমারোহে সাহিত্য সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। 



              দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তায় ভানুভক্ত আচার্যের একটি মূর্তি স্থাপিত আছে। তাঁর সম্মানে একটি পোস্ট স্ট্যাম্প প্রকাশিত হয়েছে।



---------------------------------------------------------------------------------------------


[সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া।



সূত্র নির্দেশিকা -



"ভানু ভক্ত আচার্য: ৫টি কারণ কেন একজন কবি নেপালে একটি পারিবারিক নাম হয়ে ওঠে" । অনলাইনখবর । ১৩ই জুলাই ২০২১ সাল। ১৩ই জুলাই ২০২১ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । ২০ই জুলাই ২০২১ সালে সংগৃহীত। 



আচার্য, নরনাথ; শিবরাজ আচার্য; সাম্বকস্লো থিয়োরাজা আচার্য ও জয়রাজ আচার্য (১৯৭৯ সাল)। আদিকবি ভানুভক্ত আচার্যকো সক্কা জীবচরিত্র । তনুনা: নরনাথ আচার্য। ওসিএলসি 10023122.



আচার্য, কাশিরাজ (১৩ই জুলাই ২০২০)। "किन স্মরণে भानुलाई" । অন্নপূর্ণা পোস্ট (নেপালি ভাষায়) । ২৮শে জুলাই ২০২২ সালে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ।



"আদিকবি ভানুভক্ত আচার্য" । কাঠমান্ডু: বস নেপাল। ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল ।



আচার্য, জয়রাজ (১০ই জুলাই ২০২১ সাল)। "ভানুभक्तीय रामायण : দৃষ্টিভঙ্গিও" । গোর্খাপাত্র (নেপালি ভাষায়) । ২৮শে জুলাই 2022 সালে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ।



অধিকার, ধ্রুবা এইচ. (৮ই জুলাই ২০২২ সাল)। "ইংরেজি পাঠকদের জন্য একটি নেপালি রামায়ণ" । রাইজিং নেপাল । গোর্খাপাত্র কর্পোরেশন । ৯ই জুলাই ২০২২ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২৯শে জুলাই ২০২২ সাল ।



বিষ্ণু কেসি (১৪ই জুলাই ২০০৬ সাল)। "ভানুভক্ত: নেপালি ভাষার প্রথম কবি" । ওহ মাই নিউজল. ৬ই নভেম্বর ২০১৯ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল।




প্রধানমন্ত্রী অলি নতুন প্রজন্মকে ভানুভক্তের আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন । কাঠমান্ডু। ১৩ই জুলাই ২০১৮ সাল। ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৯ সাল।




 "ভানু জয়ন্তী উপলক্ষে সকালের মিছিল" । কাঠমান্ডু। ১৩ই জুলাই ২০১৭ সাল। ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত - ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল। 



Sundas, Jacob (৭ই জুলাই ২০২২ সাল)। "কেন গোর্খারা ভানু জয়ন্তীকে তাদের সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে উদযাপন করে?" . মরুং এক্সপ্রেস । ৯ই জুলাই ২০২২ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে। সংগৃহীত ৯ই জুলাই ২০২২সাল ।




"Morning procession to mark Bhanu Jayanti" (ইংরেজি ভাষায়)। Kathmandu। ১৩ই জুলাই ২০১৮ সাল। সংগ্রহের তারিখ - ২১শে ফেব্রুযারী ২০১৯ সা

ল। 


---------------------------------------------------------------------------------------------





Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024