ছোট গল্প - লোনাজলে হাবুডুবু || লেখক - রানা জামান || Written by Rana Zaman || Short story - Lonajole Habudubu


 


লোনাজলে হাবুডুবু 

রানা জামান




ফিরে যাচ্ছে দুই ছেলে রবিউল আহমেদ ও সায়মন আহমেদ। সাথে বিদেশি স্ত্রী ও সন্তানগণ। নায়লা আহমেদ ওদের বাড়িতে ঢুকতে দেন নি। বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দুই ছেলের কেউ আসে নি জানাজায় অংশ নিতে। এক বছর পরে এসেছে বেড়ানোর মনোভাব নিয়ে বাবার কবর জিয়ারত করতে। 

মা নায়লা আহমেদ ওদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে বললেন, আহমেদ বাড়ি এখন আর কারো বাড়ি নেই। এই বাড়ি এখন জামশেদ বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমে কোনো জোয়ান ছেলেমেয়ের স্থান হয় না! ওরা বৃদ্ধ হবার পর সন্তান কর্তৃক অবহেলিত হয়ে এখানে এলে আশ্রয় মিলতে পারে!

বিদেশি দুই স্ত্রী নায়লা আহমেদের কথা না বুঝে তাকিয়ে থাকলো নিজ নিজ স্বামীর দিকে; আর রবিউল আহমেদ ও সায়মন আহমেদ বিস্মিত হয়ে মার দিকে তাকিয়ে নিস্প্রাণ হাসার চেষ্টা করছে। দুই ছেলের দুই সন্তান মার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। 

রবিউল বললো, মা, তুমি ঠাট্টা করছো আমাদের সাথে।

নায়লা আহমেদ বেশ রুক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন, তোদের সাথে কি আমার ঠাট্টার সম্পর্ক? 

খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন ছুটে এসেছে জামশেদ বৃদ্ধাশ্রমের সামনে। এ বিষয়ে গ্রামের কেহই নায়লা আহমেদের সাথে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। 

সায়মন আহমেদ এগিয়ে এসে বললো, তখন আমরা কাজ থাকায় আসতে পারি নি মা। আমাদের ক্ষমা করে দাও!

নায়লা আহমেদ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখে বললেন, তোরা যেদিন তোদের বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েও আসতে অস্বীকার করলি, সেদিনই তোদেরকে আমি মনে মনে ত্যাজ্য করে দিয়েছি। আজ আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ত্যাজ্য করলাম। তোদের সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক রইলো না! তোরা যা!

রবিউল আহমেদ ও সায়মন আহমেদ ধীর পায়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মাইক্রোবাসে উঠলো। মাইক্রোবাস চলে যেতে থাকলে নায়লা আহমেদ তাকিয়ে থাকলেন ওদিকে। ওঁর চোখের কোলে চলে এলে এক ফোঁটা অশ্রু।তিনি চলে গেলেন এক বছর আগের অতীতে-


তখন নায়লা আহমেদ স্বামী জামশেদ আহমেদ সহ বড় ছেলে রবিউল আহমেদের সাথে অস্ট্রেলিয়া ছিলেন। পুত্র ও অস্ট্রেলিয়ান পুত্রবধূ সারাদিন বাইরে থাকে চাকরির সুবাদে। বাসায় তিন বছরের ছেলে ডেভিড দাদির কাছে থাকে; অর্থাৎ নাতি লালন-পালনের দায়িত্ব দাদা-দাদির। কোনো কাজ নেই, কথা বলার কেউ নেই,সারাদিন বাসায় থেকে হাঁপিয়ে উঠতে থাকেন জামশেদ আহমেদ। এর উপর সারা বছর পরে থাকতে হয় শীতের কাপড়।

জামশদে আহমেদ ও নায়লা আহমেদ উভয়ই সরকারি চাকরি করতেন। ছয় মাসের ব্যবধানে দু’জনই সরকারি থেকে অবসরে আসেন। জামশেদ আহমেদ অতিরিক্ত সচিব এবং নায়লা আহমেদ অধ্যাপক পদে অবসরে যান। নায়লা আহমেদর ছেলেদের কাছে গিয়ে থাকার ইচ্ছা থাকলেও জামশেদ আহমেদের ছিলো না। স্ত্রীর পীড়াপিড়িতে যেতে বাধ্য হলেন অস্ট্রেলিয়া। 

তিন মাস পেরোবার পরে একদিন জামশেদ আহমেদ স্ত্রীকে বললেন, আমি ক্রমেই হাঁপিয়ে উঠছি এখানে থেকে। দেশে ফিরে যেতে চাই। 

নায়লা আহমেদ বিস্মিত হয়ে বললেন, কী বলছো তুমি! আমার ভালোই লাগছে। নাতির সাথে খেলা করে দিন চলে যাচ্ছে বেশ।

তাহলে তুমি থাকো। আমি চলে যাই।

তা কী করে হয়! তুমি চলে যেতে চাইলে আমাকেও যেতে হবে তোমার সাথে। বুড়ো বয়সে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না!

রবিউল আহমেদ বাবাকে মানাতে ব্যর্থ হয়ে কানাডাবাসী ছোটভাই সায়মন আহমেদকে জানালে সে ভিডিও কলে বাবাকে বোঝাতে চেষ্টা করে; ও বাবা ও মাকে অস্ট্রেলিয়া ভালো না লাগলে কানাডা চলে আসতে বলে। সেও ব্যর্থ হয়।

মাতৃভূমি টানতে থাকায় জামশেদ আহমেদ নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এক সপ্তাহ পরে চলে আসেন বাংলাদেশে।


খবরটা শুনে গ্রামের সবাই অবাক হলেও তৎক্ষণাৎ কেউ এলো না এবাড়িতে। কারঙ্কা গ্রামে এখন ওরকম চাকুরিজীবির সংখ্যা অনেক। আহমেদ বাড়ির সাথে পার্থক্য হলো: জামশেদ আহমেদের দুই ছেলে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় চাকরি করে ওখানকার সভ্যকে বিয়ে করেছে- ওরা ঐ দেশের নাগরিক হবার প্রচেষ্টায় আছে। পেয়ে যাবে অচিরেই। এই প্রবনতাই চলছে এখন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত পরিবারে। গ্রামের লোকজন যতদূর জানে: জামশেদ আহমেদ স্ত্রীসহ ঢাকার এপার্টমেন্টে থাকেন; মাঝে মাঝে ছেলেদের কাছে যান। এখন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন; ক’দিন থেকে ফের চলে যাবেন ঢাকায়।

প্রায় কুড়ি বছর পরে নিজ গ্রামে এসেছেন জামশেদ আহমেদ। মা-বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন প্রতিবছর আসতেন মা-বাবার সাথে একটা ঈদ করতে। বাবা মারা যাবার পরে মা যতদিন বেঁচে ছিলেন এসেছেন। বাবা মারা যাবার পরে মা জামশেদ আহমেদের সাথেই থাকতেন; তবে একটা ঈদের উছিলায় স্বামীর কবর জিয়ারত করতে মা চলে আসতেন গ্রামের বাড়িতে। এক সময় মা ইন্তেকাল করলে জামশেদ আহমেদ গ্রামে আসা বন্ধ করে দিলেন।

ঢাকার জীবন আর অস্ট্রেলিয়ার জীবনের মাঝে পার্থক্য খোঁজে না পেয়ে বাকি জীবন গ্রামে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে এবার গ্রামে চলে এসেছেন জামশেদ আহমেদ। কুড়ি বছরে গ্রামে অনেক পরিবর্তন হয়েছে- অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে অনেক; সব রাস্তা পাকা হয়ে গেছে এবং অধিকাংশ বাড়ি পাকা হয়েছে; ঘরে ঘরে বিদ্যুৎও চলে এসেছে, যদিও সন্ধ্যার পরে লোডশেডিং হয় প্রায় দিনই। 

দু'দিন হলো জামশেদ আহমেদ এসেছেন গ্রামে। জমিজমা সব পত্তন দেয়া আছে; তাই চাষাবাদের চিন্তা আপাততঃ নেই। তিনি ভাবছেন আঙ্গিনায় শাকসব্জির আবাদ শুরু করবেন। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। ফতুয়া গায়ে চলে এলেন পুকুরঘাটে। পুকুরঘাটটা ওঁর অনেক প্রিয়। শানবাঁধানো ঘাট। উপরের পাকা বেঞ্চে বসলেন। মার্চ মাসেই বেশ গরম পড়তে শুরু করেছে। ঘামছেন জামশেদ আহমেদ। পুকুরঘাটে এসি থাকলে বেশ হতো! নিজের রসিকতায় মুচকি হাসলেন জামশেদ আহমেদ। গায়ের সুবাসে বুঝতে পারলেন নায়লা আসছেন। প্রথম জীবনের মতো রোমাঞ্চ না থাকলেও নির্ভরতা বেড়েছে অনেক।

নায়লা আহমেদ উল্টোদিকের বেঞ্চে মুখোমুখি বসে ওড়নায় মুখের ঘাম মুছে বললেন, এতো গরম! দুই দিনেই হাপিয়ে উঠেছি! এর চেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ভালো ছিলাম!

জামশেদ আহমেদ বললেন, কী যে বলো না! এরকম পরিবশে ওখানে আছে? এভাবে নিজের পুকুড়পাড়ে বসতে পারতে? ভাবছি আমি নিজ হাতে কিচেন গার্ডেন করবো। তাতে সময় কেটে যাবে বিন্দাস।

নায়লা আহমেদ বললেন, আমি কী করবো? কিভাবে আমার সময় কাটবে? ওখানে নাতিদের সাথে হৈচৈ করে দিন কেটে যেতো।

সত্যটা হলো নাতিদের গভর্নেসগিরি করে সময় কাটতো। ছেলে ছেলের-বৌ তোমার কাছে সন্তান রেখে নিশ্চিন্তে চাকরি করতে পারতো!

হয়তোবা প্রকারান্তরে তোমার কথাই সত্য। আমার খারাপ লাগতো না। সময় কেটে যেতো। এখানে কিভাবে সময় কাটবে আমার?

তুমি রান্না শুরু করে দাও। শখের রান্না। দৈনিক নতুন রেসিপি। দুই বুড়োবুড়ি খাবো কব্জি ডুবিয়ে। 


ঐদিন রাত এগারোটায় বড় রবিউল আহমেদ ভিডিও কলে এলে কান্না গিলে নায়লা আহমেদ বললেন, গ্রামে এসে বেশ ভালো লাগছে। আমি ফের রান্না শুরু করবো।...

তখন জামশেদ আহমেদ বসা ছিলেন পাশেই। জামশেদ আহমেদ দুই ছেলেকে নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন বেশ উচ্ছসিত কণ্ঠে।

গ্রামের ওঁর সমবয়সী গোলাম আলীকে ডেকে এনে নিজের পরিকল্পনার কথা আলোচনা করতে লাগলেন এবং পরামর্শও চাইলেন। 

গোলাম আলী বললেন, গ্রামে এখন কৃষি শ্রমিকের সংকট চলছে। শ্রমিকদের প্রায় সবাই চলে গেছে ঢাকা। ঢাকায় গিয়ে পুরুষরা রিক্সা চালাচ্ছে বা অন্য কাজ করেছে; আর মহিলারা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে বা কারো বাসায় ঠিকা ঝি-এর কাজ করছে।

জামশেদ আহমেদ বিস্মিত হয়ে বললেন, তাহলে কৃষি কাজ চলছে কিভাবে?

চাষাবাদ মেকানাইজড হয়ে গেছে। পাওয়ার টিলারে চাষ হচ্ছে, হার্ভেস্টিং মেশিনে ধান কাটা ও মাড়াই হচ্ছে।

তাহলে আর সমস্যা কী! সবাই যেভাবে চাষাবাদ করছে আমিও সেভাবে করবো! আমি তো আর ধান আবাদ করতে যাচ্ছি না! শখের সব্জি আবাদ করবো।

দু'দিন পরে জামশেদ আহমেদ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন তখন মসজিদ থেকে মাইকে একটা ঘোষণা এলো। ঘোষণাটি এমন:

পুব পাড়ার মরহুম আব্দুল মতিনের জানানা মায়মুনা বেওয়া কিছুক্ষণ আগে ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। আজ বাদ মাগরেব ঈদগাহ মাঠে মাইয়াতের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।...

জামশেদ আহমেদ অস্ফুট স্বরে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন বলে স্মরণ করার চেষ্টা করলেন মায়মুনা বেওয়া কে। আব্দুল মতিনের চেহারা ঝাপসা মনে করতে পারলেও মায়মুনা বেগমের চেহারা মনে করতে পারলেন না। তখন ফজরের আযান শুরু হলো। 

নায়লা আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন, কে মারা গেলো গো?

জামশেদ আহমেদ বললেন, পূর্ব পাড়ার আব্দুল মতিন ভাই-এর ওয়াইফ মায়মুনা বেগম। ফজরের নামাজ আদায় করে দেখতে যেতে হবে।

আমিও যাবো তোমার সাথে। 

জামশেদ আহমেদ ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান না; বাড়িতেই স্ত্রীর সাথে নামাজ আদায় করেন। তিনি ইমামতি করেন। আজকেও একইভাবে ফজরের নামাজ আদায় করে দু’জন বের হলেন মরহুম আব্দুল মতিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

আব্দুল মতিনের বাড়ি লোকে লোকারণ্য। জামশেদ দম্পতিকে দেখে ভেতরে যাবার পথ করে দিলো উপস্থিত লোকজন। লোকদের জিজ্ঞেস করে মায়মুনা বেগম সম্পর্কে জামশেদ দম্পতি যা জানতে পারলেন তা এরকম:

মায়মুনা বেওয়া একাই থাকতেন গ্রামের বাড়িতে। ছেলে দুটো বিয়ে করার পরে মা-বাবার ভরনপোষণ করতে পারে নি; গ্রামের কৃষিকাজে না পোষানোয় একসময় ওরা মা-বাবাকে গ্রামে রেখেই চলে গেলো ঢাকা। ছেলেরা ঢাকায় হকারি করে এবং ওদের স্ত্রীগণ পোশাক কারখানায় কাজ করে। মেয়ে দুটোর বিয়ের পরে স্বামীর অলক্ষ্যে বাবা-মাকে সাহায্যের চেষ্টা করতো। আব্দুল মতিন মারা যাবার পরে বৃদ্ধা মায়মুনা বেওয়ার শরীর সায় দিলে মাঝে মাঝে ভিক্ষায় বের হতেন। কিছুদিন যাবৎ মায়মুনা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার দেখাতে না পারায় কেউ জানতে পারে নি কী অসুখ হয়েছিলো ওঁর। ছেলেরা কখনো মাকে দেখতে আসে নি, চিকিৎসা করা দূরের কথা! 

হাঁ, মার মৃত্যু সংবাদ ওঁর সন্তানদের জানানো হয়েছে। সবাই আসছে। সেকারণে বাদ মাগরেব মাইয়াতের জানাজা রাখা হয়েছে। 

দুপুরের পরে ছেলে দুটো এসে মায়ের মৃতদেহ রাখা খাটিয়া ধরে ডুকরে কাঁদতে থাকায় জামশেদ আহমেদের খুব রাগ হলো। নায়লা আহমেদ ওঁর হাত ধরে টেনে রাখায় ওদের কিছু বলতে না পারলেও মনে মনে বললেন: এরকম কুলাঙ্গার পুত্র না থাকাই ভালো! 

রাতে জামশেদ দম্পতির মাঝে এ নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো দ্বিমতের সৃষ্টি হয়নি।

নায়লা আহমেদ: এই শ্রেনীতে আজো ছেলেগুলো মা-বাবার মর্যাদা বুঝলো না! মা-বাবার ভরণপোষণ করে না। এ নিয়ে কাউন্সেলিং করা দরকার। তাতে হয়তোবা পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হতো। 

জামশেদ আহমেদ: এটার কারণ আর্থিক। কিন্তু অমানবিক না। দেখলে না মার লাশের উপর কিভাবে কাঁদলো ওরা। 

এই ঘটনার এক সপ্তাহ পরে জামশেদ আহমেদ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে না উঠায় নায়লা আহমেদ ভাবলেন জামশেদ আহমেদ সপ্তাহের একদিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন না; তবে ইশরাকের নামাজ আদায় করেন। হয়তোবা আজ সেই দিন। কিন্তু ফজরের নামাজ আদায়ে জামশেদ আহমেদ না উঠায় ভ্রু কুচকে নিজেই ওঁকে জাগানোর জন্য গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠলেন। 

আলো জ্বেলে ফুপিয়ে উঠলেন নায়লা আহমেদ। হঠাৎ এ কী হয়ে গেলো? তিনি শেষ ঘুমে থাকা স্বামীর গায়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত হাত বুলাতে থাকলেন। ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরছে মৃত জামশেদ আহমেদের গায়ে। যেনো কিছুই হয়নি এমনভাবে স্বর সংযত করে আস্তে আস্তে মৃত জামশেদ আহমেদের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এভাবে হঠাৎ চলে গেলে কেনো? এখন আমি কী করবো? বড্ড স্বার্থপরের মতো কাজটা করলে তুমি জামশেদ!

প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ফোন করে বাবার মৃত্যু সংবাদ জানালেন নায়লা আহমেদ। রবিউল আহমেদের কথা শুনে বিস্মিত হবার সাথে সাথে সেদিনের ঘটনা মনে পড়লো ওঁর: মায়মুনা বেগমকে আর্থিক কারণে ভরণপোষণ করতে না পারলেও মার মৃত্যু সংবাদ শোনার সাথে সাথে গ্রামে এসে ছেলেগুলো মার শবের উপর আছড়ে পড়ে কী কান্নাটাই কাঁদলো। আর নিজের পেটকাটা ছেলেটা কী বললো এখন? সায়মন আহমেদকে ফোন করে একই রকম কথা শুনে আর বিস্মিত হলেন না নায়লা আহমেদ।

জামশেদ আহমেদের মৃত্যু সংবাদ শুনে সকালে গ্রামের লোকজন ছুটে এলো এই বাড়িতে। সমবেদনা প্রকাশের পরে ছেলেদের জন্য লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাইলে নায়লা আহমেদ আজই জানাজা শেষে জামশেদ আহমেদের মরদেহ কবরস্থ করার অনুরোধ জানালেন।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024