এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৩ || part - 3 || Era Kara part 3 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা
।। দুই।।
নিভারানী সাতদিন পর বাড়ীতে এসে নবীন বাবুর সাথে দেখা করলো। নবীন বাবু বহু খোঁজা খুঁজির পর বিধবা ভাতার আবেদন পত্র যোগাড় করে, যত্ন করে ফিলাপ করে বি.ডি.ও সাহেব কে সই করিয়ে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিভারানীকে বললো, তিন মাস পর তোমাদের পোষ্ট অফিসে খোঁজ নেবে, আমি সব রকম ব্যবস্থা করলাম কোন ত্রুটি থাকলো না। নিভারানী তুমি এক কাজ করো, এই টাকা রাখো ভাগ্নে-ভাগ্নিদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিলাম। তুমি আমার বোন, ভবিষ্যতে দরকার পড়লে দেখা করবে। কোন দ্বিধা করবে না। নিভারানী বারংবার তাকে দাদার আসনে বসিয়ে প্রনাম করে বাড়ী মুখে রওনা হলো।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কখন যে পেরিয়ে গেল বুঝতে পারলো না। তিন মাস পরেই পোষ্ট অফিস থেকে নিভারানীর শাশুড়ীর নামে একটা পত্র এলো। তার বিধবা ভাতা অনুমোদন হয়েছে পরের মাস হতে তিনি ঐ ভাতা পাবেন। কেউ আপত্তি করতে পারবে না।
কিন্তু নবীন বাবুর জীবনে একটা বিশাল ঝড় এসে উপস্থিত হলো। পার্টির কতগুলো নেতা অর্থাৎ জানোয়াররা নবীন বাবুকে অফিসে ঢুকতে দিলো না। ঐ মানুষগুলো এতো নিষ্ঠুর যে নিভারানী ও নবীনবাবুকে কেন্দ্র করে এমন মিথ্যে গল্পটি তৈরী করলো যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অমানুষগুলো কোন দিন কোন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কি, উপকার বা সহযোগিতার মানে বুঝবে? তারা কি করলো জানেন? তারা প্রচার করলো নবীনবাবুর সাথে নিভারানীর অবৈধ্য সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে, প্রায়ই নিভারানীর বাড়ীতে যাতায়াত করে নবীন বাবু। তারপর বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই গল্পটি তৈরী করেছেন মহানুভব ব্যক্তি অভিরাম বাবু। ব্যেটা মিথ্যুক, শয়তান ও 'নরকের কীট তো বটেই। নবীন বাবু এতো ভালো মানুষ যে কোন দিন নিভারানী র বাড়ীতে পা রাখেন নি। অফিসের কোন লোকটা মিথ্যা তৈরী করা গল্পকে কেউ বিশ্বাস করে নি। কিন্তু ঐ জানোয়ারদের চাপে পড়ে তাকে বদলি নিতে হয়েছিলো।
এবার শুনুন ঘটনাটা কি। তিন মাস পর পোষ্ট অফিস থেকে বিধবা ভাতার পত্রটা এলো, তখন নিভারানী বাড়ীতে ছিল না। সে সাত দিন পর পর বাড়ীতে আসে। কমলাদেবীর হাতে পত্রটি পড়তেই সেই পত্রটি অভিরামের নিকট নিয়ে যায়। অভিরাম পত্রটি পড়ে বুঝতে পারে ব্যাপারটা কি। অভিরাম পত্রটা পড়ে কমলা দেবীকে মিথ্যে বলে ওটা বাজে কাগজ ওকে আর্বজনা স্তুপে ফেলে দেওয়া উচিত। সেই সময় নিভারানীর কথাটা মনে পড়ে, যদি কোন কাগজ পত্র বা চিঠিপত্র এলে নির্দিষ্ট জায়গায় যেন রাখা
হয়। কোন রূপ যেন ফেলা ফেলি না হয়। হঠাৎ অভিরামের বাড়ী হতে আসার সময় বাটুল নামে একটি শিক্ষিত ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হয়, বাটুল তাদের পাড়ারই ছেলে। ওকে পত্রটা পড়তে দিলে জানতে পারে ওটা বাজে পত্র নয় কমলা দেবীর বিধবা ভাতা আগামী মাসে শুরু হবে। একথা শুনে কাগজ পত্রটি যত্ন সহকারে বাকসে রেখে দেয়। এদিকে অভিরাম তার চাচাতো, পিসতুতো, মামাতো পাটিভাইদের কানে তুলতেই নিবারণ গোপ বলে উঠলো, যে লোকটা এই মহান কাজটি করেছে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারন তোমরা তো কখনো ভালো কাজ করতে শিখলে না। সেই সময়ই দলপতি মহারাজ ইন্দ্র অর্থাৎ হিড়িম্ব, ডাকনাম হাড়াম্বা সশরীরে আর্বিভাব হলেন। ব্যাপারটা শুনে বিচার হলো আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত না নিয়ে যে কোন লোক যদি আমাদের মুকুটমনি হতে চায় তাহলে ভালো/মন্দ মানুষ বিবেচনা করে ছেঁটে দেবার ব্যবস্থা করবে। ঐ ভদ্রলোককে বিদায় করার ব্যবস্থা কর। এই অফিসে যেন তাকে না দেখতে পাওয়া যায়। নিভারানীর সাথে অবৈধ্য সম্পর্ক নিয়ে কুৎসা রটিয়ে ওকে বদলির ব্যবস্থা কর। আর নিবারণ তোমাকে একটা কথা বলি আমাদের এই উঠতি যুবক দের বেশী জ্ঞান দিতে যেওনা। ওদের ব্রেনকে কাজে লাগাতে দাও। যাতে কমলাদেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করা যায় তার ব্যবস্থা আমি করবো। আমি চললাম আমার জরুরী মিটিং আছে। আমি ও চললাম অভিরাম বললো। প্রস্থান উদ্যত হতেই নিবারন গোপ বললেন- কাজটা ভালো করলে না অভিরাম এর ফল ভোগ করতেই হবে মনে রেখো।
নিভারানী সেবার পনের দিন পর বাড়ীতে এসে শাশুড়ীর কাছে অভিরামের কুকীর্ত্তির কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। কি করবে ভাবতে থাকে। তবুও স্থির করলো নবীনদার সাথে দেখা করবে। এক কাপ চা খেয়েই নবীন দার অফিসে উপস্থিত হলো। নবীনের সহকর্মী বিজয় বাবু ওর বদলি ও পার্টির শয়তানদের নোংরা ও কুকীর্ত্তির কথা সারাংশ করে প্রকাশ করলেন। ওরা এখনো চেষ্টা করছে যাতে কমলা দেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করতে পারে তবে এটা ঠিক কোন পার্টির নেতার ক্ষমতা নেই কমলা দেবীর বিধবা ভাতা বন্ধ করবে। অবশ্য নানান লাফড়া আসতে পারে। একটু চিন্তা করে বিজয় বাবু বললেন,- আপনি এক কাজ করুন নিভাদেবী, উত্তর পাড়ার মেদিনী সরকারের সাথে দেখা করুন। আপনি জিরো থেকে শেষ পর্যন্ত্য সে ঘটনা বলুন তাঁর কাছে প্রকাশ করুন। আমি একটা পত্র লিখে দিচ্ছি ওকে দেবেন। তিনি উত্তর পাড়ার চৈতালী ক্লাবের সম্পাদক। চৈতালী ক্লাবটা নিশ্চয় বের করতে পারবেন? নিন পত্রটা নিভারানীর হাতে দিলেন। মোটেই বিলম্ব করবেন না। আপনি উঠে পড়ুন। মনে রাখবেন ভদ্রলোক অতি সৎ এবং পরউপকারী। এই শয়তানদের মত নন।
নিভারানীর ওখান হতে চৈতালী ক্লাবে এসে হাজির হল। মেদিনী বাবু ক্লাবে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। বিপরীত পাশে চারটি ছেলে আপন মনে ছবি আঁকছিলো। নিভারানী ক্লাবের দরজার সামনে গিয়ে অনুমতি চাইলো ভেতরে যাবার জন্য। মেদিনী বাবু পেপার হতে মুখ তুলে বললেন কিছু বলছো? নিভারানী ছল্ ছল্ চোখে বললো- আপনি মেদিনী বাবু?
- হ্যাঁ আমি মেদিনী বাবু। নিভারানী বিজয়ের দেওয়া পত্রটা তাঁর হাতে দিলেন। মেদিনী বাবু পত্র হাতে নিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখলেন পত্রটা মাত্র এক লাইনে লেখা,
মাননীয়, এই মহিলার কথা মন দিয়ে শুনবেন, আপনি হবেন এর বিচার্য। প্রমানান্তে বিজয়। পত্রটা পড়ে বললেন,- তুমি বসো মা। তুমি জল খাবে? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তিনি পঁচা বলে ডাক দিতেই চারটি ছেলের মধ্যে উঠে এসে বললো- বলো জেঠু তোমার আদেশ কি। তিনি বললেন-আমার বাড়ীতে জলযোগের ব্যবস্থা করে নিয়ে এসো। পঁচা প্রস্থান করলো। এবার বল মা তোমার বক্তব্য। নিভারানী চোখের জলে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করলো। মেদিনী বাবু শুনার পর দাঁত গুলো কড়মড় করতে থাকলেন। ঘটনার সবকটা হিরোকে যেন চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। আর তর সইলো না, হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন,- বোদা, ফোল্লা, বকা চল্লো আমার সাথে ঐ নোংরা লোকটার চাঁদ বদন খানি দেখে আসি। তুমিও চলো অভিরামের বাড়ীটা আমাকে দেখিয়ে দেবে।
Comments