উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -2


 

পর্ব -২


অগ্রহায়ণের প্রথম ভাগ। সূর্যের রক্রিম আলো তখন মলিন হতে চলেছে। মেঘের এক কোণে থালার মত লাল টুকটুকে সূর্যটা প্রায় অর্ধেকের উপর অদৃশ্য হয়েছে। শীতের ভাব কম নয়। তবুও ঠাকুরদা পায়ে হেঁটে প্রতিদিন ঐ সময়ে মাঠে বেড়াতে যেতেন। মাঠের মধ্যে সোনালী রং এর ধান গাছ। গাছগুলো মাঠের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চাষীরা মাঠ হতে বাড়ী ফিরছে। ঠাকুরদা আপন মনেই ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছেন।  

   হঠাৎ কাদের কণ্ঠস্বরে দাঁড়িয়ে পড়লেন, মেঠো রাস্তার উপর। কারা যেন আলোচনা করছে ধনী ব্যক্তির ছেলে সে, জানিস তো মেয়ের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে এঁটো পাতার মত ফেলে দেবে। ছোট জাত আমরা, প্রতিবাদ করতে যাবি কেউ তোকে সহযোগিতা করতে যাবে না। তোর মেয়ে যে কান্ড করেছে কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবি? পারবি না, মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে যতীন। এ আশা করিসনে জমিদার ব্রজকিশোর সিংহের ছোট ছেলে প্রেমাংশু ছোট জাত যতীন বাগদীর মেয়ের জামাই হবে।

      ওকথা ঠাকুরদার কর্ণে প্রবেশ করতেই তাঁর মাথায় যেন বাজ পড়ল। মনে হয় ঠাকুরদাকে উদ্দেশ্য করেই ঐ কথাগুলো আলোচনা করছিল। তিনি ওখানে আর অপেক্ষা করেন নি। অন্দর মহলে প্রবেশ করে বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন। ঘন ঘন নিঃশ্বাসে মনে হয় ভারাক্রান্ত মনকে হালকা করার চেষ্টা করছিলেন।

    কিছুক্ষণ পর ছোট কাকার ডাক পড়লো। ছোটকাকা বাড়ীতে ছিল না। বাগদি পাড়ার মজলিসে লিপ্ত ছিল। সেই সুযোগে মেজকাকা মুচকি হেসে বলেছিলেন, তিনি বারংবার বলে ছিলেন প্রেমাংশুর প্রতি নজর দিতে, নইলে একদিন আমাদের মান সম্মান, আভিজাত্য ধুলাতে লুণ্ঠিত হবে। 

       ওকথা শোনার পর ঠাকুরদা মেজকাকার মুখ পানে শুধু তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু মেজকাকা কোন দিন একথা বলেন নি, নতুবা তিনি যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বণ করতেন। এখন কথা হচ্ছে ঠাকুরদাকে বিচার করতে হবে। ন্যায়, আভিজাত্যের গৌরব নিয়ে তিনি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। তা সহজে নত হবেন না। 


     তিনি নিশ্চয়ই এই ঘটনা যাচাই করে দেখবেন। ছোটকাকা ঠাকুরদাকে জানিয়ে ছিলেন তাঁর শোনা কথায় যথেষ্ট সত্যতা আছে। ওকথা শোনার পর ঠাকুরদা প্রেমাংশু বলে চিৎকার করে উঠে ছিলেন। সেই সময় মনে হয়েছিল তাঁর মাথায় কেউ যেন কঠিন ধাতু দিয়ে আঘাত করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে ছোটকাকা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। 

   শুধু ছোটকাকা কেন, যে কোন মানুষ ঠাকুরদার গুরু গম্ভীর আওয়াজ শুনে এস্ত হয়ে যেতেন। এমনকি তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, তার জানা উচিত ছিল কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ছোট কাকা বজ্রাহতের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। এই অপরাধের বিনিময়ে ছোটকাকার যে কি শাস্তি, সেকথা স্মরণ করিয়েছিলেন। 

    ছোটকাকা নিঃস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ঠাকুর্দার নির্মম কঠোর বিচারের কথা জানতেন। সুতরাং তাঁর অন্যায় অবিচারের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে প্রয়াসী হত না। ঠাকুর্দার বিচারকে ছোটকাকা মেনে নিতে পারেনি বলে তিনি তখন হতে গ্রাম হতে নির্বাসিত হলেন। কি অন্যায় তিনি করেছেন তা ভালভাবেই অভিজ্ঞ। তবুও মনে মনে ভাবতে থাকেন তিনি যেন নিষ্কলুস। হয়ত একজন খ্যাতনামা আভিজাত্য পরায়ণ ধনবান প্রভাবশালীর পুত্র এক ছোটজাতের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছেন। ছোট কাকা ন্যায় নিষ্টাবান পুরুষ। তিনিই ছোট জাতদের অন্ধকারে জ্যোতির্ময়ী শিখা দেখিয়েছেন। ওদের জ্ঞান দিয়েছেন, তাহলে তার অন্যায়টা কোথায়? 

    তিনি জানতেন তাকে নির্বাসিত হতে হবে। এই নির্বাসন স্বেচ্ছায় গ্রহণ করবেন। বিলম্ব না করে বাড়ীর চৌকাঠ পার হতে গিয়ে পুনরায় দাদুর কথায় তাকে দাঁড়াতে হল। ছোট পুত্রের মায়া ত্যাগ করতে পারছেন না। তিনি প্রাণের চেয়ে ভালবাসেন তাঁকে। আট বছরের মা মরা ছেলেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছিলেন। ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। 

প্রেমাংশুকে দিয়ে চন্ডীপুরে এক নতুন আলোর সঞ্চার করবেন। যে আলোর অভাবে অন্ধকারে ডুবে আছেন গ্রামবাসীরা একতাবদ্ধ হয়ে ঠাকুরদার কাছে আবদার করে বলেছিলেন, গ্রামে যদি একজন ডাক্তারকে বসানো হতো তাহলে চন্ডীপুর গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য পাঁচ মাইল পথ হেঁটে দূর গ্রামে যেতে হত না ও উপরন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতীক্ষা করতে হত না।  

   শহরও অনুকে দূর। তাই ঠাকুর্দার কাছে সকলের অনুরোধ এই গ্রামে কোন ডাক্তারকে আশ্রয় দিতে পারলে গ্রামবাসীর অনেক উপকার হবে। 

  ঠাকুরদা কথা দিয়েছিলেন নিশ্চয় গ্রামে কোন ডাক্তারকে নিয়ে আসবেন। তাঁর কুঠীর মধ্যে তাকে ডিসপেনসারি করে দেবেন। হাজার চেষ্টা করা সত্ত্বেও কোন প্রকারে ডাক্তারকে আনতে পারেন নি। এই প্রেত পুরীতে কোন ডাক্তার বাস করতে পারবেন না।

      ঠাকুর্দা এ অপমান সহ্য করতে পারেনি। গ্রামের পাশে চারিদিকে জঙ্গল ও পোড়ো বাড়ী আছে বলে চন্ডীপুর প্রেত পুরী। গ্রামবাসীদের কথা দিয়েছিলেন আরো কয়েক বছর ধৈর্য ধরতে। কোন ডাক্তারকে তোষামোদ করবেন না। নিজ পুত্র প্রেমাংশুকে ডাক্তারী পাশ করিয়ে গ্রামবাসীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে বলবেন। কিন্তু সব আশা - আকাঙ্খার, স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে চলেছে  ও কথা গুলো মনে পড়তেই প্রেমাংশুকে দাঁড়াতে বললেন। 


                                                   ক্রমশ...


প্রথম পর্ব টি পড়তে নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করুন--



তৃতীয় পর্বটি পড়তে নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করুন--


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024