Monday, May 30, 2022
টাটা কোম্পানিতে নিয়োগ হবে 1 লক্ষ পদে || Tata consultancy Recruitment 2022 || TCS Recruitment 2022
Sunday, May 29, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -4
সুরজিৎ বাবু অতি আনন্দিত হলেন। সুমন্ত গ্রামের গৌরব। সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিসনে পাস করেছে। প্রতিটি সাবজেক্টে ৯৩ পারসেন্ট নাম্বার আছে। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন সমুন্তকে যাতে ডাক্তারী পড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন।
তিনি বললেন, সুমন্তর কাছে মত নিতে। কারণ সংসার যদি বিচ্ছিন্ন না হতো তাহলে গলা হাঁকিয়ে বলতে পারতেন। বাবা, সুরজিৎ বাবুকে বলেছিলেন, সুমন্তকে ডাক্তারী পড়াতে হলে যদি পথে বসতে হয় তাতেও তিনি রাজী আছেন। স্বপ্ন পূরণ করা তার কর্তব্য। তাই অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেও পিছু হটবেন না। সুমন্তকে ডাক্তারী পড়াবেন এ তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
দাদাকে ডাকা হলো, দাদা বলতে সুমন্তদা একাই। দ্বিতীয় কোন ভাই ও বোন ছিল না আমার। দুই ভাই বোনকে জন্ম দিয়ে মা পৃথিবী হতে চিরবিদায় গ্রহণ করছিলেন অনেক আগে। মা বিদায় নিয়ে ভালই করেছিলেন। নতুবা পরিনতি ভয়াবহ হতো তা অজানা নয়। এখন ও পরের কথা।
সুমন্তদা বাবার কাছে হাজির হতে বাবা খোলাখুলি আলোচনা করলেন। সে সময় সুরজিৎ বাবু উপস্থিত ছিলেন। দাদা কোন মতেই রাজী হতে চাইলেন না। বারবার এক কথা ও স্বপ্ন দেখে কি লাভ। একান্নবর্তী পরিবারে থাকলে তার বাবার ইচ্ছা পূরণ করা যেত। এখন তাদের ছন্নছাড়া জীবন। অভাব অনটন ও দারিদ্রই তাদের জীবনের নিত্য সহচর। ডাক্তারী পড়তে হলে কত টাকা যে খরচ হবে তার হিসেব নেই। শেষ কালে কি পথে বসবে তারা?
সুরজিৎ বাবু বুঝিয়ে বললেন। যদি বা বাবার কথা কাটতে পারতো বিশেষ করে সুরজিৎ বাবুর কথা কাটতে পারলেন না। তিনি বললেন, শুধু তোমার বাবার স্বপ্ন নয় সুমন্ত, প্রতিটি গ্রামবাসীর ইচ্ছা তুমি ডাক্তারী পাস করে গ্রামবাসীদের মৃত্যুর কবল হতে রক্ষে করবে। জানতো, কোন ডাক্তার এই পল্লী অঞ্চলে আসতে চায় না। কারণ ডাক্তারী পাশ করার সময় শহরের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে পল্লী অঞ্চলে চেম্বার করতে তাদের অত্যন্ত অনীহা থাকে। আমরা তোমাকে কোলে - পিঠে মানুষ করেছি। যদি শহর হতে আসতে ইচ্ছে না করে জোরপূর্ব্বক গ্রামে আনার ক্ষমতা আমাদের আছে। তবে গ্রামে যদি আশানুরূপ রোজগার না হয় তাহলে শহরে সপ্তাহে চারদিন থাকলে, গ্রামে হয়তো তিন দিন এসে চেম্বারে বসলে গ্রামের অনেক উপকার হবে।
তারপর কি জানো তোমার ঠাকুরদা স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রেমাংশুকে ডাক্তার করে গ্রামের অভাব পূরণ করবেন। কিন্তু ভাগ্যচক্রে এ রকম যে বিপর্যয় হবে কেও কি কোনদিন কল্পনা করেছিলো?
সুমন্ত মাষ্টার মশায়ের সব কথা শুনে বললো, তা না হয় হলো, কিন্তু বাবার যে সম্পত্তি আছে ওতে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠতে পারবেন কি?
সুরজিৎ বাবু বললেন, কোন ভয় নেই তোমার। তোমার বাবা যদি শেষ পর্যন্ত পেরে উঠতে না পারেন, আমি তোমাকে সাহায্য করব। সেজন্য তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।
সুমন্তদা আরো কিছু বলার জন্য সচেষ্ট হতে থাকে। কিন্তু বিরুদ্ধ অন্তরের কথাকে কোন প্রকারে বাঙ্ময় করতে পরলো না। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
সুরজিৎ বাবু বললেন পুনরায়, সুমন্ত, তুমি আর বিলম্ব করো না। আগামীকাল আমার কাছে যাবে, নীহার বাবুর সাথে আলোচনা করে ওর সাথে কলকাতা পাঠিয়ে দেব।
সেদিন আর আলোচনা না করে সুরজিৎ বাবু আপনি বাড়ি পানে পা বাড়ালেন। দাদার ডাক্তারী পড়ার সব রকম আয়োজন হলো। বাবা গ্রামীণ মানুষ, দিনক্ষণকে ভীষণ মানেন। তাই পাড়ারই একজন এ্যাস্ট্রোলজারকে দিয়ে ভালো দিন দেখিয়ে পাড়ারই বিশিষ্ট ব্যক্তি নীহার বাবুর সাথে কলকাতা পাঠিয়ে দিলেন। ভর্তি হতে কোন বাধা হলো না।
তিনি বলেছিলেন, সমুন্তর ভাগ্য অত্যন্ত সুপ্রসন্ন। ডাক্তারী পাশ করার জন্য কোন বাধা বিঘ্ন নেই। সে সুন্দরভাবে ডাক্তারী পাশ করে গ্রামে ফিরে আসবে। সেই এ্যাস্ট্রোলজারের কথা মনে ছিলো বলে বার বার তার চরণে প্রণাম জানিয়ে ইচ্ছে করছিল। এ জন্য যে, দাদা সুস্থ সকল শরীরে ডাক্তারী পাশ করে বাড়ীতে এসেছিলো বলে। একটু ধৈর্য্য ধরুন পরের পর সবই জানতে পারবেন। কারণ আমি মনযোগে লিখে চলেছি। ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছি পরের পর ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
দাদা শুভ দিনে কলকাতায় ভর্তি হলো। বাবা ও সুরজিৎ বাবু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কারণ দাদার মোটেই ইচ্ছে ছিলো না ডাক্তারী পড়বার। তাকে জোর পূর্ব্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডাক্তারী পেশায় যেন নামানো হলো। এ কথা শুনে মেজকাকা জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কেন যে আমাদের প্রতি এতো হিংসে হয়েছিলো তা বুঝতে পারিনি। বাবা জমিদার পরিবারের আভিজাত্যকে পরিত্যাগ করে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে কায়িক পরিশ্রমের পথ বেছে নিলেন।
সেই সময় ভাবতে বড় আশ্চর্য লাগছিলো, যে মানুষটা চব্বিশ ঘন্টা জঙ্গলে পড়ে থাকতেন, বন্য জন্তুর পিছনে সর্বদাই ছোটাছুটি করতেন। সে মানুষটা যে এরূপ পাল্টে যাবে কোন দিন ভাবতে পারিনি।
আমাকে পড়াশুনা ছাড়তে হলো। স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার পর এগোতে পারলাম না। বাবার পরিশ্রমের পয়সাতে সুন্দরভাবে সংসার চালাতে চেষ্টা করলাম। একদিন কোথা হতে ছোট কাকা উদয় হলেন; প্রথমে তাকে চিনতে পারিনি। শরীর একেবারে ভেঙ্গে গেছে। তিনি যে এতো রোগা হয়ে যাবেন কল্পনা করিনি। কাকা ছিলেন সুপুরুষ, তেজদীপ্ত চেহারা ও দেহে আভিজাত্যের ছাপ। গ্রামের অধিকাংশ লোকই ছোট কাকার চেহারা নিয়ে প্রশংসা করতেন। কিন্তু ছোটকাকার ঐ রূপ রোগা শরীর দেখে চোখ দুটো যেন গাম আঠা দিয়ে চিটিয়ে রেখেছিলেন।
ছোটকাকা এসেই বললেন, কিরে রমা আমায় চিনতে পারছিস না? কি করে পারবি বল, আমি যে তোদের বংশের নাগাল হতে অনেক দূরে সরে গেছি। দুর্ভাবনায়, দারিদ্রতায় নিজেকে তিলে তিলে দগ্দ করছি। ভগবান যে আমাকে এতো কঠোর নির্যাতন দেবেন তা কোন দিনই মনে আনিনি। সবই ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া কিছু নয়রে।
ছোট কাকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বললেন, জানি না জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করে কি পাপ করেছি। সেই পাপের যন্ত্রণা প্রতিটি শিরা , উপশিরায় প্রবেশ করে আমাকে মৃত্যুমুখী করে তুলেছে।
আমি ছোট কাকার কথাগুলো শুনে শোকাহত যে হলাম না তা নয়। আমাকে মনমরা হতে দেখে তার দুঃখের কাহিনীকে অন্তরালে চাপা দিয়ে বললেন , তা হ্যাঁরে তোর বাবা কোথায়?
বললাম, বাবা উপার্জনে গেছেন।
কি বলছিস তুই ? তবে কি মেজদা, বড়দাকেও ফাঁকি দিয়েছেন?
আমি নীরব ছিলাম। মেজকাকাকে নিয়ে নানা কটু কথা বললেন তাঁর নিষ্ঠুরতার জন্য। যদি কোন দিন সবল হতে পারেন তাহলে একদিন বদলা নেবেন। এখন ছোট কাকা ভাগ্যের বিপর্যয়ে পর্যুদস্ত পরে যেদিন ঈশ্বর ওর মুখপানে তাকাবেন সেদিন, এদিন তার থাকবে না। বাবা একটু পর বাড়িতে এলেন। কাকার দূরাবস্থার কথা শুনে প্রচুর দুঃখ পেলেন। কাকার আগমন বার্তা শুনলেন। বাবা যদি কিছু আর্থিক দিক দিয়ে সাহায্য না করেন তাহলে কাকা অসহায়ভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন।
কাকার দুঃখে বাবা কাতর হয়ে পড়লেও সাহায্যের উদার হস্ত প্রসারিত করলেন। যেটুকু দিয়ে সাহায্য করলেন তা বহু কষ্টের উপার্জিত অর্থ। দাদার ডাক্তারী পড়ার ব্যবস্থা না করে বাবা আরো আর্থিক সাহায্য দিয়ে প্রকৃত ভ্রাতৃ প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন।
দাদার ডাক্তারী পড়া কথা শুনে ছোট কাকা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। বিশেষ করে আনন্দিত হয়েছিলেন এ কারণে, ঠাকুর্দার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে বলে তিনি আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়তেই বললাম, ছোট কাকা একটু দাঁড়াও আমি আসছি।
দ্রুত বেগে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বাক্স হতে এক জোড়া কানের দুল বের করে তার হাতে দিলাম। ছোট কাকার চোখ দুটো বাষ্পাকূল হলে আমাকে শান্ত স্বরে
বললেন, আমার অবস্থা এখন চরম সীমানায় উপস্থিত হয়েছে। তবুও তোর কানের দুল দুটো নেবার কোন স্পৃহা আমার নেই। তুই রেখে দে রমা, একদিন দারুন কাজে লাগবে। আমি জানি এই দুটো নিলে আমার অভাব মিটবে না। কিন্তু তোরা যে শপথ নিয়ে যে পথের যাত্রী হয়েছিস আমারও কর্তব্য ছিলো তোদেরকে সাহায্য করা। দুল দুটো রেখে দে মা।
আমি বললাম, আমরা ঠিকই এগিয়ে যাবো ছোট কাকা তোমাদের আশীর্বাদে এ দুটো নাও, এ সময় টাকার প্রয়োজন তোমার। খোকনকে বাঁচাতেই হবে । সেও তো আমার ভাই। তোমাকে নিতেই হবে এ দুল দুটো।
বার বার অনুরোধে আমার কথা কাটতে পারলেন না। শুধু ঠোঁটে হাত দিয়ে আমাকে বললেন, তুই আমার মায়ের কাজ করলি রমা। তবে এই চন্দ্র সূর্য্যকে সাক্ষী রেখে শপথ করে বলছি, ঈশ্বর যদি কোন দিন আমার প্রতি সদয় হয়ে থাকেন, তাহলে আমার মায়ের ঋণ শোধ করবই। এই ঔ
ছোট কাকা আর দাঁড়াননি ওখানে। ছল ছল চোখে স্থান ত্যাগ করলেন। তিনি স্থান ত্যাগ করতে আমারও চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো ও বার বার তার মলিন মুখখানি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ওকে অনুসরণ করে দাদুর স্মৃতি মনে উদিত হয়ে আমাকে ভীষণ ব্যাকুল করে তুললো। কি ছিলো আমাদের অবস্থা আর কি হয়েছে। এখন কোন অপরিচিত লোকদের যদি বলে থাকি, আমি জমিদারের নাতনী, কেউ বিশ্বাস করবে না! সকলে হেসে উড়িয়ে দেবেন। সেদিন কি আর ফিরে আসবে । জানি না এরপর ঈশ্বর আর কোন ভাগ্যবিপর্যয়ের জাল ফেলবেন। অতীত মনে পড়লে কিছুক্ষণ মনকে উতলা করে একটু পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্তির আস্বাদ মিটিয়ে থাকি। ধীরে ধীরে আমাদের অভাবের সংসার এগিয়ে চললো।
ক্রমশ...
তৃতীয় পর্বটি পড়তে নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করুন-
পঞ্চম পর্ব টি পড়তে নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করুন--
Friday, May 27, 2022
দুয়ারে সরকার প্রকল্পে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাজে নতুন কর্মী নিয়োগ || Data Entry oparator Recruitment 2022 || WB government jobs news
Thursday, May 26, 2022
উপন্যাস - লাস্যময়ীর ছোবল || সিদ্ধার্থ সিংহ || Lashamayir Chobol by Sidhartha Singha || Fiction - Lashamayir Chobol part -3
Wednesday, May 25, 2022
রাজ্যে নতুন আশা কর্মী নিয়োগ || কয়েক হাজার নতুন আশা কর্মী নিয়োগ || asha karmi recruitment 2022
##রাজ্যের মহিলাদের জন্য একটা বড় সুখবর। জেলায় জেলায় স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জেলায় আশা কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে প্রায় 13 হাজার, মুখ্যমন্ত্রীর নিজে ঘোষণা করেছেন বর্তমানে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন ব্লকে আশা কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে যার বিবরণ নিচে দেয়া হল।
Sunday, May 22, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -3
প্রেমাংশু ধীরে ধীরে কাছে এসে দাদুর বক্তব্য জানলেন! ঠাকুর্দার ইচ্ছে, ভুলবশতঃ হোক আর অন্য কোন কারনেই হোক বাগদীর মেয়ের যখন সর্বনাশ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে। তবে শুধু আমার স্বার্থের জন্য নয় বাবা গ্রামবাসীদের কথা চিন্তা করে আমার অনুরোধ তোমাকে রাখতে হবে বাবা।
প্রেমাংশু বললেন, বলুন আপনার কি অনুরোধ রাখতে হবে।
পুষ্পকে কোন নার্সিংহোমে ভর্তি করে তার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করলে কোন ক্ষতি হবে না। তারপর পুষ্পর বিয়ের ব্যাপারে যত টাকা খরচ হবে আমি যতীনকে দেব।
প্রেমাংশু বলল, ছিঃ বাবা, নব আগত একজন অতিথিকে কোন মতে বিনাশ করতে পারব না। এজন্য যদি আমাকে গৃহত্যাগ করতে হয় আমি রাজী।
ঠাকুর্দা প্রেমাংশুকে দ্বিতীয়বার বুঝিয়ে বলার জন্য মুখ ফাঁক করতেই মেজকাকা কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলেন, প্রেমাংশু তুমি একজন সদ্বংশের সন্তান হয়ে শেষ পর্যন্ত একটা বাগদীর মেয়েকে উৎকৃষ্ট বলে মনে করলে? তোমার লজ্জা নেই বলে এখানে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। এই মুহুর্তে বাবার কাছ হতে দূরে সরে যাও। মনে রাখবে চিরদিনের জন্য তোমার এই দরজা বন্ধ। কোনদিন এখানে পা দেবে না।
মেজকাকার রাগন্বিত ভাব দেখে শান্তস্বরে বলেছিলেন ঠাকুর্দা, প্রেমাংশু তোমার ছোট ভাই , হয়তো কোন রূপ ভুল করেছে, ঠাকুর্দার কথা লুফে নিয়ে আরো ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন মেজকাকা , ওকে ক্ষমা করতে বলছেন এইতো? না বাবা না, এ ক্ষমার অযোগ্য। আমাদের বংশের মান - মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে হলে ওকে গৃহত্যাগ করতেই হবে। এ আমার শেষ কথা।
ঠাকুর্দার কথা শুনলেন না মেজকাকা । অবশ্য ষড়যন্ত্র করে তাড়ানোর চেষ্টা যখন করেছেন, তখন কি সহজে রাজী হবেন ? ছোটকাকা আর দাঁড়াননি সেখানে। দ্রুতগতিতে বেরিয়ে কোথায় যে গিয়েছিলেন বুঝতে পারিনি বা জানতে পারিনি। পুষ্পকে নিয়ে কোন গ্রামে বা শহরে বাসা বেঁধেছিলেন। দাদুর অনুনয় উপেক্ষিত হওয়ায় অন্তরে অনুশোচনার তীব্র দহন জ্বালা ঠাকুরদাকে শয্যাশায়ী করে তুলেছিল।
সেই সময় বাবা আরন্যক জীবনকে শিকারীর প্রধান অবলম্বন মনে করে বেশ কয়েক দিন ধরে ছুটেছেন শিকারের পিছনে। বাড়ীতে এসে ঠাকুরদাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেখে উদিদ্ধ হলেন। বাবার ইচ্ছা ছিল মেজকাকার নিকট হতে ঠাকুরদার স্বাস্থ্য
সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি শুনে বাবাকে আরো চিন্তাকূল করে তুলেছিল। স্বার্থপর মেজকাকা ঠাকুরদার অসুস্থতা উপেক্ষা করে সবান্ধব দীঘা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। পুত্রের উপযুক্ত কাজই করেছেন।
নিরুপায় হয়ে বাবা গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে শহরের অভিমুখে যাত্রা করলেন রুগ্ন পিতাকে নিয়ে। ছোটকাকাকে খোঁজ করার জন্য লোক পাঠালেন। গ্রাম হতে শহর অনেক দূর। জমিদার ব্রজকিশোর সিংহকে সুস্থ করার জন্য যে শহরে পাড়ি দিতে হবে, বাবা কোন দিন ভাবতে পারেননি । তবু তাঁকে বাঁচাতে পারলেন না। মৃত্যু যখন কোন মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, তখন মৃত্যুর হাতছানিকে কোন পরাক্রমশালী ব্যক্তিও এড়িয়ে যেতে পারে না।
পথিমধ্যে চন্ডীপুরের ধনবান প্রভাবশালী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ততক্ষণাৎ সারা চন্ডীপুরে শোকের ছায়া নেমে এল। কেউ কি কল্পনা করেছিলেন ঠাকুরদা এভাবে মারা যাবেন ? বয়স যে হয়নি তা নয়, তবুও মানুষটাকে দেখলে মনে মনে অঙ্ক কষতো কতই বা বয়স হবে। হয়তো সত্তরের কাছাকাছি হবে। ঐ বয়স হলেও তখনও ইস্পাতের মত শক্ত ছিলেন।
গ্রামবাসীদের কর্ণে মৃত্যু সংবাদ পৌঁছতেই দলবদ্ধ হয়ে জমিদারের প্রাসাদে ছুটে এলেন। সকলেই পরস্পরের মুখপানে তাকিয়ে আলোচনা করতে থাকলেন।
মৃত্যু নিয়ে নানা লোকের মুখে নানা কথা। কেউ কেউ যাত্রা দলের পাট আওড়ানোর মতো বলতে শুরু করল , প্রেমাংশুর কলঙ্কিত জীবনের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ছেলেটা যে শিক্ষিত হয়ে রাজপরিবারের আভিজাত্যকে এইরূপ হীনভাবে ধুলায় লুণ্ঠিত করে দেবে তা কেউ বুঝতে পারেনি।
পুষ্পের সঙ্গে ছোট কাকার গৃহত্যাগের সংবাদ এই অঞ্চলের জনগণের নিকট অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ঠাকুরদার শবদেহ শ্মশানে নিয়ে আসা হল গ্রামবাসীদের সহযোগীতায়। দাহনের কাজ শেষ হলে পর বাবা বাড়ীতে এসে দেখলেন কাকা ছোট ছেলের মতো মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছেন। মেজকাকার শোকাতুর ভাব দেখে প্রতিটি মানুষের ধারণা হয়েছিল তাঁর পিতৃভক্তি প্রগাঢ় ছিল।
ঠাকুরদার মৃত্যুর পর বেশ সুখ - দুঃখের মধ্য দিয়ে মাসখানেক কেটে যাবার পর আমাদের সংসারে অন্ধকার নেমে এলো। নেমে এলো অভাব অনটনের দুঃখ জ্বালা। ছোট কাকা ও বাবার প্রতি মেজকাকার বিশ্বাসঘাতকতা বাবা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন নি। বাবা ও মেজকাকা দুই বৎসরের ছোট। সেই জন্য বাবার ধারণা ছিল মেজকাকা তার সঙ্গে আগের মতো রহস্যলাপ করছে। কিন্তু যখন সমস্ত সম্পত্তির একটি উইল বাবার হাতে দিলেন, তখন তিনি বজ্রাহত হলেন। মনে করেছিলেন, মাটি যেন তার পায়ের কাছ হতে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। তবু দুই হাতে উইলকে চেপে ধরে
নির্দ্বিধায় বলেছিলেন মেজকাকাকে, ঠাকুরদা যখন নিজ হস্তে এই উইল করে গেছেন, মেনে নেবেন। কিন্তু ছোট ভাইকে তিনি কি দিয়েছেন?
মেজকাকা সানন্দে জানালেন, সে আমাদের বংশের অমর্যাদা করেছে বলে তাকে তাজ্যপুত্র করেছেন। তিনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতেন বলে বাকী সম্পত্তি আমার নামে লিখে গেছেন। বাবার বিশ্বাস ছিল আমি সমস্ত সম্পত্তি আগলে রাখতে পারব। তিনি তোমাকেও বিশ্বাস করতেন না। হয়তো তোমার নৈতিক অধঃপতনের কথা স্মরণ করে এই রকম অংশ দিয়ে গেছেন। এই বলে তিনি গম্ভীর মুখে চলে গেলেন।
ওকথা শুনে বাবা বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। মাথার কোষে কোষে চিন্তা এসে উপস্থিত হল। সেই সময় বাবার স্মরণে এলো ভারতের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি । যা আজও পর্যন্ত ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষণে লেখা আছে। ভাই হয়ে ভাই এর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা। পুত্র হয়ে পিতার আসনে বসার জন্য পিতাকে খুন করা। সবই তো সম্পত্তির জনাই। মেজকাকাকে এত দিনে চিনতে পারলেন ও বুঝতে পারলেন তার নিষ্ঠুরতাকে।
গ্রামের লোকেদের ধারণা ছিল, প্রেমাংশুর নির্বাসনের পশ্চাতে একমাত্র কারণ ছিল মেজকাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ - এর জঘন্য ষড়যন্ত্র। কিন্তু সবচেয়ে বড় আশ্চর্য হচ্ছেন মেজকাকা কি করে ভিলেন হলেন। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে তিনি আনমনা হয়ে গিয়েছিলেন। এই পৃথিবীতে এমন কতকগুলো মানুষ আছে, যারা আপন স্বার্থ চরিতার্থ করা সবচেয়ে বড় মনে করে। নিজেকে বড় করার জন্য মানবিকতাকে, পৌরষত্বকে নৃশংসভাবে হত্যা করে নিঃসংকোচে আত্মসুখ অনুভব করে। প্রয়োজনবোধে আপনজনকে বঞ্চিত করতে দ্বিধাবোধ করে না।
এই উইলের পরেও বাবা শত দুঃখের মাঝে স্থির করেছিলেন তিনি ঘরবাড়ী পর্যন্ত ভাগ নেবেন না। কারণ মেজাকার শতা ও বিশ্বাসঘাতকতা একদিন জমিদার পরিবারের উপর একটি নিষ্ঠুর অভিশাপ রূপে নেমে আসবে। তাই মেজকাকার কাছ হতে বাবা সরে পড়লেন। গ্রামের শেষে কুঁড়ে ঘরে বসবাস করতে আরম্ভ করলেন।
মেজকাকা কোন রূপ বাধা দিলেন না। বরং অতিশয় আনন্দিত হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় আশ্চর্য গ্রামবাসীদের এবং এমনকি বাবারও যে, একজন জমিদারের বড় পুত্র সাধারণ মানুষের মত কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। বিশেষ করে গ্রামের লোকেরা যখন বাবার কানে তুলে ছিলেন ঠাকুরদার প্রচন্ড ইচ্ছে ছিল ছোটকাকাকে ডাক্তারী পড়িয়ে গ্রামবাসীদের আশা - আকাঙ্খাকে সার্থক করে তুলবেন।
বাবা গ্রামবাসীদের হতাশা অনুভব করে কথা দিলেন যে গ্রামবাসীদের এই আশা আকাঙ্খা তার ছেলে সুমন্তকে দিয় পূরণ করবেন। পরদিনই ডাকা হল গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার মশাই সুরজিত বাবুকে। তার কাছে পরামর্শ নিলেন ডাক্তারী পড়াতে হলে কত টাকা খরচ হবে। কুড়ি একর জমি বিক্রি করলে পর ডাক্তারী পড়ানো যাবে কি না।
ক্রমশ...
দ্বিতীয় পর্ব টি পড়তে নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করুন-
চতুর্থ পর্ব টি পড়তে নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করুন-
রাজ্যে জমি রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মী নিয়োগ || WB Govt Job Reqruitment || Land Register office recruitment 2022
Thursday, May 19, 2022
গ্রামীণ ডাক সেবক (GDS) নিয়োগ 2022 || WB GDS recruitment 2022 || Post office peon recruitment 2022 || https://indiapostgdsonline.in/
উপন্যাস - লাস্যময়ীর ছোবল || সিদ্ধার্থ সিংহ || Lashamayir Chobol by Sidhartha Singha || Fiction - Lashamayir Chobol part -2
বিভিন্ন মতবাদ ও তার বিজ্ঞানীর নাম || General science for all Competitive exams || General science for Rrb group d || G.S
Tuesday, May 17, 2022
ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এর কর্মী নিয়োগ, বেতন -২১,১৮৪ প্রতি মাসে || Data Entry oparator Recruitment 2022 || Becil Recruitment 2022 || Government Jobs News
Sunday, May 15, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -2
পর্ব -২