এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৯ || part - 9 || Era Kara part 9 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা

 



হঠাৎ পশ্চিম পাড়ার পানু ঠাকুর দৌড়ে গৌরবাবুর বারান্দায় এসে শ্বাস নিতে শুরু করলেন। বললেন, পালিয়ে চলো মাষ্টার পালিয়ে চলো। মাষ্টার মশায় থতমত খেয়ে বলে উঠলেন- একি বলছো পানু? কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে পালিয়ে যেতে বলছো?


কোন কথা বলার সময় নেই। ছোট ভাই, বৌমাকে কিছু বলার পূর্বে বাড়ী হতে পঞ্চাশ হাত দুরে পরপর তিনটি বোমার বিকট আওয়াজ। গৌরবাবু ছাত্র/ছাত্রীদের পাশের ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ীর উঠানে পর পর চার/পাঁচটি বোমার আওয়াজ। গৌরবাবু, কিশোরী লাল বলে ডাক দিতেই পানু ঠাকুর গৌরবাবুর মুখখানি দাবা দিয়ে বললেন- পালিয়ে চলো মাষ্টার আর উপায় নেই। মাষ্টার মশায় কে টেনে হিঁচড়ে রাতের অন্ধকারে বনজংগল ভেদ করে দূর্গম রাস্তা অতিক্রম করে কোন এক ষ্টেশনে বিশ্রাম নিয়ে রাত্রেই ট্রেনে চড়ে প্রায় ৫৫০/৫৬০ কিলোমিটার দুরে একটা ছোট্ট গ্রামে উপস্থিত হলো। গৌর বাবুর মনে সেই চিন্তা ছোট ভাই, বৌমা কেমন আছে, ওরা কি বেঁচে আছে! বার বার মনকে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পাচ্ছে না। কে দেবে উত্তর। কেন এমন হলো, সরাসরি কাকেই বা জিজ্ঞেস করবেন। পানুঠাকুর ওর অস্থিরতা দেখে বললেন- এই যুদ্ধ থামবেন না মাষ্টার। এই যুদ্ধ বেড়েই চলবে। হিন্দু মুসলিমের লড়াই। কিছু হিন্দু ওদেরকে উসকানী দিয়ে হিন্দুদের মধ্যে কিছু লোক নিজেদের আখের গুছোনোর জন্য এই লড়াই লাগিয়েছে। হিন্দুদের মধ্যে মীর জাফর তো কম নেই? এই যুদ্ধ লেগেই থাকবে। গৌর বাবুর মনে শান্তি নেই। ছোট ভাই বৌমা তবে কি বোমার আঘাতে মারা পড়লো! গৌরবাবুর চোখ দুটো ছল্ ছল্ করে উঠলো। পানুঠাকুর গৌরবাবুকে বুঝিয়ে বললেন- এছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর ছিলো না। মৃত্যু ছাড়া কোন পথ ছিলো না। এর পরে বীভৎস রূপ নেবে। হাজার হাজার মানুষ মারা পড়বে। এ পরিকল্পিত সন্ত্রাস। গৌরবাবু অনেক পরে শান্ত হলেন। চিরদিনের মত তাদেরকে পরিত্যাগ করতে হলো। ক্ষানিক পর বললেন, কিশোরীলাল আমার ছোট ভাই। ললিতা আমার ছোট ভাই এর বৌ। আমি ভেবেছিলাম ওরা আমার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। এসো বাবা আমার কাছে এসো। স্বরুপকে বুকে জড়িয়ে ধরে টপ্স্টপ্ করে চোখের জল ফেলতে থাকলেন। তার বংশের শেষ প্রদীপকে আঁকড়ে ধরে ঈশ্বরকে সহস্রাধিক ধনবাদ দিলেন। ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বললেন হে ঈশ্বর তুমি আছো। যথা সময়ে মানুষের জমে থাকা বেদনা যন্ত্রনা মালিন করে দাও। কনিকা এ তোর দাদা। স্বরুপবাবুর পাশা খেলা উলটে গেলেও তার জেঠু মনিকে কাছে পেয়ে কম আনন্দিত হলেন না। ঈশ্বর মানুষকে কখন কি ভাবে মিলন করে দেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। আপন জেঠু মনিকে ফিরে পাবে কখনো কি ভাবতে পেরেছিলো! কিশোরীলাল বাবু তার জেঠুমনির জন্য গোপনে কাঁদতেন। জেঠুমনির জন্য তাঁর হৃদয়কে কতখানি যে ক্ষত বিক্ষত করেছিলেন স্বরুপ তা জানতেন। অনেক দিন ঐ শোকে স্তব্ধ হয়েছিলেন। ভালো ভাবে কথা বলতেন না। মাঝে মাঝে ঘুমের অবস্থায় দাদা বলে চিৎকার করে উঠতেন। স্বরুপের মা তার বাবাকে বার বার বলেছেন দাদা নিশ্চয় বেঁচে আছেন। কিন্তু কিশোরী বাবু তা বিশ্বাস করতেন না। গৌরবাবু ছিলেন কিশোরী বাবুর প্রান। ভাতৃ বিচ্ছেদে কতখানি যে আঘাত পেয়েছেন তা গৌরীবাবু এবং কিশোরীবাবু উভয়েই সহ্য করতে পারেন নি। সেই জন্যই কিশোরীবাবু কম বয়সে মারা গেছেন। গৌরবাবু বললেন স্বরুপকে তোমার মা কেমন আছেন? স্বরুপ বাবু বললেন মা ভালো আছেন। একদিন মাকে নিয়ে আসবো। আপনার খবর পেয়ে মা কতখানি যে খুশি হবেন তা ঈশ্বর জানেন। গৌরবাবু অন্য প্রসঙ্গ তুললেন না। স্বরুপ বাবু তখনকার মতো বিদায় নিলেন।


_____________________________________


পর্ব ১০ পড়তে -

Click here 🔴



পর্ব ৮ পড়তে -

click here 🔴

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024