রতনের প্রেমের স্বর্গাভা - রানা জামান || Rataner premer sargova - Rana Zaman || ছোট গল্প ||Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

 রতনের প্রেমের স্বর্গাভা

রানা জামান


 

 


রতন কাঁদছে। মাঝে মাঝে বিলাপের মতো শোনা যাচ্ছে; তবে বিলাপে কী বলছে বুঝা যাচ্ছে না।


পাশে ধবধবে শাদা শশ্রুমণ্ডিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্বিকার বসে থেকে গিটারের তার টাইট দিচ্ছেন।


হেচকি টানার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথকে আড়চোখে বারবার দেখছে রতন।


রতনের কান্না আর কবিগুরুর নির্বিকারভাব আমার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছিলো। রতনের প্রতি সহানুভূতি শতভাগ; বয়োবৃদ্ধ কবির প্রতি রাগতে গিয়েও পারছি না। এতো প্রিয় কবি; নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নিজ হাতে গীতাঞ্জলী ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য।


আর রতনটাও যেনো কী! সেই কিশোর অবস্থায় কোন এক পোস্টাপিসে চাকরি কালে যুবক রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়েছিলো। যুবক রবীন্দ্রনাথ রতনের প্রেমে পড়েনি। যুবক রবীবাবু অনুগ্রহ করে রতনকে কিছু অ আ শেখাতে চেষ্টা করেছেন মাত্র। এতেই মেয়েরা প্রেমে পড়ে যায়! সেকারণে ঠকেও খুব তাড়াতাড়ি। 'বড় প্রেম শুধু কাছেও টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।'


এসব ভেবে রতনের প্রতি রাগ হলো আমার। রতনের কাঁধে হাত রেখে বললাম, সেই কিশোর কালে এই লোকটাকে দেখেছিলে। এখন উনি বৃদ্ধ, থুরথুরে বুড়া। উনার প্রতি তোমার প্রেম আজও অটুট আছে! এই বৃদ্ধ এখন তোমাকে কী দিতে পারবে রতন?


একবার হেচকি টেনে রতন বললো, তুমি কী বুঝবে প্রেমের মর্ম? তোমাদের আজকের প্রেম শরীর নির্ভর হয়ে গেছে। আমারটা সেরকম না। উনি যেমনি যে অবস্থায় থাকুন, উনাকে ভালোবাসি। উনি আমার আরাধ্য। আমৃত্যু উনাকে ভালোবেসে যাবো।


গিটারের তারটানা ঠিক হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গিটারে একবার টুং শব্দ করে স্বগতোক্তি করলেন, এইবার ঠিক হইয়াছে।


রতন ফের ডুকরে কাঁদতে শুরু করলে রবীবাবু নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কে কাঁদে ওখানে? কান্নার স্বরটা কেমন যেনো চেনা মনে হচ্ছে।


আমি বললাম, ও রতন।


কোন রতন? দাঁড়াও দাঁড়াও! সেই পোস্টাপিসের রতন! পোস্টাপিসের নামটা মনে করতে পারছি না।


রতন এগিয়ে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে একবার হেচকি টেনে বললো, আমি সেই রতন বাবু। এখন বেশ বড় হয়েছি। সব বুঝতে পারি।


রবীন্দ্রনাথ প্রলম্বিত কন্ঠে বললেন, আমি যাকে ভালোবাসি সে তুমি নও রতন। তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।


রতন মুখে ওড়নার আঁচল চেপে ডুকরে কাঁদতে লাগলো।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গিটার বাজানোয় মগ্ন হয়ে গেলেন।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র