প্রণয় পাশা - তপন তরফদার || Pronoy pasa - Tapan Tarafdar || Short Story || ছোটগল্প
প্রণয় পাশা
তপন তরফদার
তাস পাশা সবই সর্ব নাশা। তাস খেলা সর্বনাশা কেন। কারণ সময়ের অপব্যবহার করার অন্যতম উপকরন এই তাস। তাস আবার জুয়া খেলার খেলায় মাথা গলিয়ে লাগাম ছাড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সবাই ইশারায় তিন পাত্তি খে লতে চায়। পাশা যে সর্বনাশের খেলা, বাড়ির বৌকেও বাজি রেখেছে তা সবাই জানে। প্রণয় ও এক রকমের হাইভোল্টেজের খেলা তাই সমাজে এই প্রণয় পাশাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে ও থাকবে। এই প্রণয় পাশা খেলায় প্রণয়ীরা প্রণোদিত হয়ে অনেক অনেক এগিয়ে গেছে।
যুগের পরিবর্তন হয়েছে, মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে চায় এবং হচ্ছেও। মুক্ত বাজারে ক্রেতারা তাদের পচ্ছন্দসই দোকানের থেকে মাল খরিদ করতে পারে, সেরকমই বিক্রেতাও তার পছ্ন্দের দাম ক্রেতা অনুযায়ী ঠিক করে।
বাজারে চালু আছে ছেলরাই মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর করে।এটি এখন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি একজন সুর্দশন সুপুরুষ। আমি বুঝতে পারি কেষ্টর কোনো দোষ ছিলনা। অনেকে মনে করে কেষ্ট বাঁশী বাজিয়ে রাধিকাদের ঘর থেকে ফুসলে আনতো।বাজে কথা, সত্যের অপলাপ করা হয়। ঘরে সম্পুর্ন অসত্য কথা বলে মিথ্যাচার করে কলসিতে জল ভরার ছুতো করে কেষ্টর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে আসতো। ক্লাস টুয়েলভে উঠেই মালুম হলো আমার ক্ষমতা। বন্ধুরা পরামর্শ দিলো সাতজন্ম তপস্যা করেও এমন সুঠাম-সুন্দর-সুললিত হওয়া যায়না। তুই উশুল করেনে।আমাদের পৌরাণিক যুগের সব থেকে বর্ণময় চরিত্র কৃষ্ণ। ঝালে,ঝোলে,অম্বলে এমনকি দুগ্ধজাত দ্রব্যেও ওই ক্ষীর-ননীতেও ডন দায়ুদ গ্যাং স্টার থেকেও অনেক অনেক এগিয়ে। বালগোপাল থেকে শেষ বয়সেও জ্ঞান ছড়িয়ে নরলোকের আলোয় সর্বদাই বিরাজমান। আমি কৃষ্ণকেই গুরু মেনে চলি। এরকম সর্বগুনাসম্পন চরিত্র আমাদের দেশেতো বটেই অন্য কোনো দেশের পৌরাণিক চরিত্রে পাওয়া দুস্কর। সর্বকালের সর্ব ঘটের কাঁঠালি কলা ওই “কৃষ্ণ”।
আমি এখন সাতদিনে সাত প্রণয়ী রাধিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওদের সঙ্গ দিয়ে থাকি। প্রত্যেকেই বলেছে, আমার জন্য ঘর ছেড়ে গাছ তলায় থাকতে রাজি। হাসতে হাসতে জীবন দিতে রাজি। পালা করে ওদের সঙ্গ দিই। আজ ভুল হয়ে গেছে মৌমিতা আর জয়িতাকে একই সময়ে একই জায়গায় মিলিত হবার ডাক দিয়ে ফেলেছি। আহাম্মকের কাজ হয়ে গেছে। অবশেষে ভেবে ঠিক করলাম আমি লুকিয়ে থেকে দেখবো কে বেশিক্ষন আমার জন্য অপেক্ষা করে। কে বেশি ভালোবাসে।একটু পরীক্ষা করা কোনো দোষের নয়।
দুজনেই এ্যসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে। আরও অনেক মেয়েরা উগ্র সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে আছে। পথচলতি কিছু লোক কিছু মেয়ের সঙ্গে কথা বলে ট্যাক্সিতে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মৌমিতাকে কোনো একজন লোক কি বললো কে জানে। মৌমিতার হাত নাড়া দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়না ও লোকটাকে কড়কে দিচ্ছে। এই যা ওরা দুজনে এক হয়ে কি গল্পকথন শুরু করলো। একঘন্টা কেটে গেছে।দুজনেই ফোন করতে শুরু করলো। আমি বুদ্ধি খাটিয়ে আমার ফোন সুইচ-অফ করে রেখেছি।
অবাক হয়ে হঠাৎই দেখি আমাদের সঙ্গে পড়তো নিখিলেশ হাজির।মাথায় কিছু ঢুকছেনা। নিখিলেশ বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে মৌমিতার হাত ধরে কি কথা বলছে কে জানে।মৌমিতার মুখের উচ্ছল হাসি চলকে পড়ছে। দুজনে একটা ট্যাক্সিতে উঠে রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিল। এরপরেই এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো। আমি চোখ চলকে দেখি দুধসাদা রঙের বিদেশি চারচাকা থামিয়ে জয়িতাকে তুলে নিল অনিমেষ চন্দ্র, বিখ্যাত জুয়েলারির মালিকের ছেলে।
এইক্ষণেই আমার বোধগম্য হলো, কোনো কিছু ফাঁকা পড়ে থাকেনা। প্রকৃতই পূরণ করে দেয়। অর্জুনকে বলেছিল আমার গুরু ওই শ্রীকৃষ্ণ।
Comments