পুতুলের অন্নপ্রাশন - সান্ত্বনা ব্যানার্জী || Putuler Onnoprasan - Santwana Banerjee || Short Story || ছোটগল্প|

    পুতুলের অন্নপ্রাশন

                সান্ত্বনা ব্যানার্জী


 

   "আরে অনু দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? এসো 

এসো, হারিয়ে যাবে কিন্তু!" বলতে বলতে ওর হাতটা ধরে হাঁটতে থাকে তপতী। এই প্রথম কলকাতায় দুর্গাঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে অনু

বন্ধুদের সঙ্গে। ওরে বাপরে!কি সুন্দর!!! যেমন

প্যান্ডেল, তেমন লাইট, তেমন থিম! আলোয় আলোয় একেবারে ইন্দ্রপুরী। তার ওপর কি নেই!

নানা রকমের খাবারের স্টল, সেরামিকের বাসন,

ঘর সাজানোর রকমারি শোপিস, পোশাক , সাজের জিনিস কত কি!গ্রামেই জন্ম কর্ম, শহরের সঙ্গে এভাবে মেশার সুযোগ এই প্রথম।

তাই যা দেখে তাই দেখেই অবাক হয়ে হাঁ করে

দাঁড়িয়ে পড়ে অনু।

             ছেলের চাকরির সূত্রে মাস ছয়েক কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এসেছে,আর পার্কে

হাঁটতে গিয়ে কয়েকজন বন্ধু পেয়েছে। নিজের

ভাগ্যকে কুর্নিশ জানায় অনু। ওর মত সাধারণ

গ্রামের মেয়েকে ওরা খুব অল্প দিনেই বড়ো আপন করে নিয়েছে। সামান্য একটু খালি গলায় গান যে ওদের এত ভালো লাগবে কে জানতো!ওদের আগ্রহেই পার্কে, কারও না কারও বাড়ীতে গান,কবিতার আসর বসে যায়। তপতী, সুমনা তো ওকে ছাড়া কোথাও যায় না। ওদের দৌলতে বেশ কয়েকটা ভালো সিনেমা, থিয়েটার, দেখে ফেলেছে অনু। এই দলে ক ' দিন

পর যুক্ত হলো পর্না। ভারি সুন্দর দেখতে। খোদ

কলকাতায় জন্ম, পড়াশোনা, গ্রাম দেখেনি সে ভাবে। কথাবার্তা সাজসজ্জা সব কিছুই কেতাদুরস্ত, একেবারেই অন্যরকম। কনভেন্টে

পড়া মেয়ে, বিলেত ফেরত হাজব্যান্ড, কথার মধ্যে বেশির ভাগই ইংরেজী শব্দ। কিন্তু আশ্চর্য

বন্ধুত্ব হতে একটুও সময় লাগলো না। খুব হাসিখুশি সহজ সরল। আর একটা অভিনব 

অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেয়ে গেলো, পুতুলের অন্নপ্রাশন। অবাক হয়ে যায় অনু। তপতী হেসে

বলে," আরে পর্নার এক মেয়ে আর একটি পুতুল

ছেলে। তাকে উপলক্ষ্য করে একটু গেট টুগেদার

এই আর কি"। 

              অন্নপ্রাশন বাড়ীতে এসে তো অবাক! এলাহি আয়োজন। সঙ্গে সত্য নারায়ণ পুজো। পুজোর পর মানব শিশুর মতোই ধুতি, পাঞ্জাবী,

মালা চন্দন টোপর পরে সুসজ্জিত পুতুল ছেলের

অন্নপ্রাশন হলো মহা সমারোহে। আসন পেতে ,পঞ্চব্যঞ্জন কাঁসার থালা বাটিতে সাজিয়ে,

ছেলেকে বসিয়ে , ধান দূর্বা উলু শঙ্খধ্বনি সহযোগে আশীর্বাদ, পুতুল পুত্র কোলে নিয়ে স্বামী স্ত্রীর আনন্দে মাখা রাঙা মুখ, ফটো তোলা,

কিছুই বাদ গেলনা!তার পর রীতিমত ক্যাটারার

দিয়ে ভোজবাড়ীর মতোই খাওয়া দাওয়া!

                   বাড়ী ফিরে কি এক ঘোরের মধ্যে থাকে অনু। একটা পুতুল নিয়ে ওদের এই আনন্দ

আয়োজনে তো কোনো খামতি নেই! এমন কি আনন্দ খুশী তে ওরা যে ভরপুর হয়েছিল সে তো

মিথ্যে নয়! পুতুল সন্তান নিয়ে যদি ওরা এত আনন্দ পায় তবে মানব সন্তান নিয়ে তো আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে!

              হঠাৎই অনুর চোখ আলোয় ঝলমল করে ওঠে! চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত মাসে

ছেলে বৌমার সঙ্গে দেখে আসা অনাথ আশ্রমটি।

ছোটো ছোটো মলিন মুখের শিশু গুলি যেন চেয়ে

আছে স্থির চোখে অনুর দিকে! তাড়াতাড়ি সেলাই মেশিনটা টেনে নিয়ে জড়ো করে রাখা ছিট গুলো নিয়ে বসে পড়ে অনু। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বৌমা রূপসা,"কি হলো মা, এখন আবার সেলাই মেশিন নিয়ে বসলে যে!"ছোট ছোট জামা প্যান্ট তৈরী করার জন্য কাঁচি নিয়ে ছিট কাটতে কাটতে বলে অনু,"আজ একবার আমায় বাজার নিয়ে যাবি তো রূপসা, অনেক জামা, প্যান্ট, বিস্কুট লজেন্স, মিষ্টি কিনতে হবে, অনেক...!"

                





Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র