দশ টাকার নোট
পার্থ প্রতিম দাস
একটা সময় ছিলো যখন মোবাইল ফোন ভারতে আসেনি। টেলিভিশনে কেবল ডিডি বাংলা দেখাতো। সেই সময় বিভিন্ন জেলা থেকে কোলকাতায় পড়তে যাওয়া ছেলেমেয়েরা সবাই কফি হাউসে আড্ডা দিতো।
মেদিনীপুর থেকে পড়তে যাওয়া মৃদুল আর তার তিন বন্ধু মিলে বিকেলে কফি হাউসে এসে আড্ডা দিচ্ছে। গরম কফির ধোঁয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে প্রেম, সব বিষয়ে গসিপ করছে তারা। তাদের মধ্যে থেকে একজন, নাম তার বিধু, সে হঠাৎ করে জিগ্যেস করে, "কি রে চিন্ময়, তোর প্রেম কতদূর? "
চিন্ময় ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "ব্রেকাপ হয়ে গেছে। বাদ দে। যে যাওয়ার সে আসে না। "
মৃদুল তখন বলল, "যে আসার সে ঠিক আসবে। "
চিন্ময় বলল, "কেমন করে সম্ভব? "
মৃদুল বলল, "এখন একটা ট্রেন্ড চলছে, টাকার নোটে নিজের নাম লিখে বাজারে ছেড়ে দিলে সেই নোট ফিরে আসছে। তাই বললাম।"
বিধু কথাটা শুনে অবাক হলো। সে উৎসাহিত হয়ে মৃদুলকে বলল, "ঠিক আছে তুই কফির টাকাটা পেমেন্ট করার সময় একটা দশ টাকার নোটের উপর আমাদের চার বন্ধুর নাম লিখে ওয়েটারকে টিপস দিয়ে দে। "
সেই মতন মৃদুল দশ টাকার নোটের উপর চার বন্ধুর নাম লিখে ওয়েটারকে দিলো।
তারপর চারজন ভালো রেজাল্ট করে কোলকাতা ছেড়ে সবাই আলাদা আলাদা জায়গায় চাকরি নিয়ে চলে গেল। চিন্ময় এখন হাওড়া রেলওয়েজের টিটি। সবাই বেমালুম দশ টাকার নোটের কথা ভুলে গেছে।
মহালয়ার দিন থেকে কোলকাতায় ঠাকুর দেখার জন্য রেলে ভীড় করে যাত্রীরা আসছে। চিন্ময় ও তার টিম দিন রাত যাত্রীদের টিকিট চেক করছে। যাদের টিকিট নাই তাদের কাছ থেকে ফাইন নিচ্ছে। চিন্ময় ফাইনের টাকা গুনতে গুনতে হঠাৎ চোখে পড়ল একটা দশ টাকার নোটের উপর। এই তো সেই দশ টাকার নোট। চিন্ময়ের চোখে ভেসে উঠল সেই কফি হাউস, সেই দুরন্ত ছাত্র জীবন।
"স্যার আমার টিকিটটা দেখুন "কথাটা শুনে চিন্ময়ের সম্বিত এলো। তার এখন চিন্তার সময় নাই। তাই সে দশ টাকার নোটটা জামার বাম পাশের পকেটে স্বযতনে রেখে দিলো।
No comments:
Post a Comment