একটি মর্মান্তিক খুশির সংবাদ - সাইয়িদ রফিকুল হক || Ekti Mormantik Khushir Sangbad - Sayed Rofikul Haque || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প
একটি মর্মান্তিক খুশির সংবাদ
সাইয়িদ রফিকুল হক
লোহাগাড়া-বাজারে ঢুকতেই বড় পান-দোকানটিই গোবিন্দ সাহার। এটা বড় রাস্তাটার একপাশে। তাই, দোকানটা সবাই চেনে।
এখান দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে থাকে। পানও কেনে লোকজন তার কাছ থেকে। তার ভালো ব্যবহারের জন্য প্রায় সবাই তাকে আপন ভাবে।
কাদের মেম্বার রোজ এখানে একবার-দুইবার আসবেই। নইলে, ওর পেটের ভাত হজম হবে না। সে পান কিনতে আসে না। হিন্দুর হাতের পান সে খায় না! আর হিন্দু-লোকজনকে দেখতে তার ভালোও লাগে না। তবু সে এখানে আসে!
আর সে এখানে আসে বড়সড় একটা স্বার্থ নিয়ে। রোজ সে জিজ্ঞাসা করতে আসে গোবিন্দ সাহাকে—কবে তারা ভারতে চলে যাবেন?
গোবিন্দ সাহা এই একই প্রশ্নের একই উত্তর দিচ্ছেন আজ ত্রিশ বছর যাবৎ। তবু সন্তুষ্ট নয় কাদের মেম্বাররা।
মাঝেমাঝে সে এখানে বসে গোবিন্দ সাহার সঙ্গে নানান রকম গল্পজুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর বলে, “হিন্দুদের আসল দেশ ভারত। এখানে থাকা মানে পরাধীন হয়ে থাকা। তারচে হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়াই ভালো!”
গোবিন্দ সাহা তার সঙ্গে তর্কাতর্কি করতে যান না। তবে মাঝেমাঝে তার আপত্তিকর কথার দুই-চারটা উত্তর দেন। আজও মেম্বার তাকে বলেছিল, “দাদা, কবে ভারতে যাইতেছেন?”
গোবিন্দ সাহা তাকে বলেছিলেন, “কোনোদিনও যাবো না। এখানে জন্মেছি। আর এখানেই মরবো। ভারতে যাবো কোন্ দুঃখে?”
তবু তার পিছ ছাড়ে না কাদের মেম্বার। সে জোঁকের মতো লেগে থাকে গোবিন্দ সাহার পিছনে। তার এই বাড়িটা মেম্বারের খুব পছন্দের।
বাড়ির সামনে আছে কেয়ারি ফুলের বাগান। নিকানো একটা উঠোন আছে বাড়ির মাঝখানে। তিনটি ভিটায় তিনটি ঘর। আর পাশের একটি ভিটায় আছে মন্দিরের মতো বড়সড় ঠাকুরঘর। বড় সুন্দর লাগে এই বাড়িটা দেখতে! এর পিছনের দিকে আছে বিশাল একটা পুকুর! তার আবার শানবাঁধানো ঘাটও আছে!
ওই পুকুরের শীতল জলে নামতে ইচ্ছে করে কাদেরের। তার বাপেরও বড় ইচ্ছে ছিল এই বাড়িটা কোনোভাবে হাতিয়ে নেওয়ার। দেশের ভিতরে কতবার কতরকম ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বাড়িটা হাতিয়ে নিতে পারেনি কাদেরের বাপ। তখন কাদেরের বাপের টাকাপয়সা ছিল না। তাই, সে বাড়িটা ভয়দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো। এখন তার ছেলে কাদেরের টাকাপয়সা হয়েছে। কাদের এখন রিলিফের গম চুরি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই―যা সে করেনি। তার টাকাপয়সা হবে না কেন? আর সেই টাকার জোরে তার এখন ক্ষমতা ও দাপট বেড়েছে।
কাদেরের বাপ একসময় দিনমজুরি করতো। সাহাদের জমিতেও কতদিন কামলা খেটেছে। তখনই সে সাহাবাড়িটা দেখে একেবারে পাগল হয়েছিল! সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে বাড়িটা হাতিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু কোনোভাবেই তা সে করতে পারেনি।
তার তিন ছেলে আর চার মেয়ে। অতটুকু বাড়িতে জায়গা হতো না। এখন অবশ্য তার দুই ছেলে এখান থেকে সরে গেছে। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েরা বাড়ির কিংবা জমির ভাগও পায়নি। জমি থাকলে না ভাগ পাবে।
কিন্তু কাদেরের অবস্থা এখন ফিরেছে। তবু সে এই সাহাবাড়িটার উপর থেকে লোভ ছাড়তে পারেনি। মাসখানেক হলো তার বাপ মরেছে―বলতে গেলে অনাহারে। তিন ভাইয়ের একটাও বাপকে ভাত দিতো না। আর তাদের মা মরেছিল বাপের আগেই। একেবারে ভিক্ষা করে খেতো অসহায় মহিলাটা।
সেই কাদের কেমনে-কেমনে দু্বার মেম্বারও হয়েছে! এখনও চলছে তার মেম্বারগিরি। কিছু লোক বলে―সামনেও নাকি সে হয়ে যাবে!
সে এখন ছলে-বলে-কলে-কৌশলে গোবিন্দ সাহার বড়বাড়িটা কিনতে চায়! আসলে, যেন-তেন-প্রকারে দখল করতে চায়।
গোবিন্দ সাহা বেশি কথা বলেন না। তিনি বড় পান-দোকানটা সামলাতেই সময় পান না। তার ছোট ছেলেটা তার কাজে সাহায্য করে থাকে। আর-এক ছেলে ঢাকায় বড় চাকরি করে। তাও আবার সরকারি। মেজো ছেলেটা কাস্টম-অফিসার হয়েছে। টাকাপয়সার অভাব নেই গোবিন্দ সাহার। বড় দুই মেয়েকে আগেই বিয়ে দিয়েছেন অবস্থাসম্পন্ন ঘরে।
বড় ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন ধনীপরিবারে। মেজোটির জন্যও ভালো একটা বংশীয় মেয়ে খুঁজছেন। তার ছোটো ছেলেটা কলেজে পড়ছে। পাশাপাশি তাকে দোকান সামলাতেও সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও তার একজন কর্মচারীও আছে। তবে সে মাঝেমাঝে আসে না।
তার বাড়িঘরের চেহারা আগের চেয়ে আরও সুন্দর হয়েছে। তাই, কাদের পাগলের মতো এখানে প্রতিদিন কয়েকবার ছুটে-ছুটে আসে। কিন্তু গোবিন্দ সাহা তার সঙ্গে দুর্বব্যহার করেন না। চুপচাপ সব সয়ে যান। তাদের সয়ে যেতে হয়। সংখ্যালঘু মানুষের অনেক জ্বালা। সবটা সবাই বোঝে না। দূর থেকে তা বোঝাও যায় না। কাছে এলে তবু কিছুটা আঁচ করা যায়।
আজ গোবিন্দ সাহার উপর ভয়ানক ক্ষেপে গেল কাদের মেম্বার। সে রেগেমেগে বলে উঠলো, “শালা, মালাউন, ভারতে যাইতে মনে চায় না কেন? এখানে থাইকে কী করবেন? বাঁচতে চাইলে ভারতে চইলে যান!”
গোবিন্দ সাহা বললেন, “তুমি কী করবে এইখানে থাইকে?”
কাদের বলে, “এইটা মুসলমানের দেশ। তাই, আমরা থাকপো এইখানে।”
গোবিন্দ সাহা আজ খুব প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন। কত আর সহ্য করা যায়! তিনি শান্তভাবেও কঠিন কয়েকটা কথা বলে ফেললেন, “এটা মুসলমানের দেশ না। মুসলমানের দেশ তো পাকিস্তান। তুমি সব বেচেটেচে পাকিস্তানে চলে যাচ্ছো না কেন? এটা হিন্দু-মুসলমান সবার দেশ।”
কাদের এই এককথায় একেবারে ঠান্ডা হয়ে যায়। একজন মুসলমান-দোকানদার এসে তাকে ধমকায় কিছুক্ষণ। বলে, “এই কামলার ব্যাটা মেম্বার হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। সামনে এরে আর ভোট দেওয়া যাবি নানে।”
কাদের এতে দমে যায়। শেষে তার আম-ছালা দুটোই না চলে যায়! ধমক খেয়ে সে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো।
ওর উৎপাত দেখে বাজারের আরও কয়েকজন মুসলমান-দোকানদার এসে ও-কে আচ্ছামতো ধমকালো, ‘এই ব্যাটা রোজ-রোজ কী ফাজলামি শুরু করছিস? এই লোকটা ভারতে যাবে কেন? কওয়া লাগে তার চৌদ্দপুরুষ এইখানে থাকে। তোর জন্য সব ছেড়ে দিয়ে তিনি ভারতে চলে যাবেন?’
কাদের আর দাঁড়ায় না। আহত নেকড়ের মতো ভিতরে-ভিতরে জ্বলে উঠে লেজগুটিয়ে পালিয়ে যায়। পালানো যে তার স্বভাব।
গোবিন্দ সাহা এতে খুশি মনে সবাইকে ডবল-ডবল পান বানিয়ে খাওয়ালেন। লোকগুলো কাদেরের বিরুদ্ধে মারমুখো হওয়ায় তিনি খুশি হয়েছেন খুব।
সবাই ভাবলো, সে চলে গেছে। আর হয়তো এই ব্যাপারটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করবে না। কিন্তু গোবিন্দ সাহা জানেন―সে একটা আস্ত পিশাচ। সে কোনোভাবেই এ-পথ ছাড়বে না। তাকে বারবার জ্বালিয়ে খাবে।
দুপুর হওয়ায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরলেন গোবিন্দ সাহা। তিনি মনখারাপ করেননি। তবু তার আনন্দ যে, আজ মুসলমান-দোকানদাররাও তার পক্ষে জোরালোভাবে কথা বলেছেন। আগেও অবশ্য তারা এব্যাপারে কাদেরকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাদের তা শোনেনি। সেইজন্য সে আস্তে-আস্তে এসে গোবিন্দ সাহার দোকানে বসে তাকে বোঝাতো―ভারতে গেলে তার বিরাট লাভ।
গোবিন্দ সাহা ওর চেয়ে ভালো বোঝেন। তবু সে এ-ব্যাপারটা নিজে বোঝে না।
গোবিন্দ সাহার ছোট ছেলেটা আরও নিরীহ। সে সবসময় চুপচাপ থাকে। এসব ব্যাপারে সে কারও সঙ্গে কোনো কথা বলতে যায় না। যা করার তার বাবাই করবে। এমন একটা ভরসা আছে তার।
দুপুরের পর বাজারের প্রায় সব দোকানপাটই বন্ধ হয়ে যায়। ভিতরের দিকে কেউ-কেউ দোকান খুলে বসে থাকে। তবে এই সময় বেচাকেনা খুব কম হয়। অনেকে তাও থাকে। ওদের বাড়িঘর দূরে হওয়ায় ওরা একবারে বাড়ি ফিরবে বলে।
গোবিন্দ সাহার বাড়ি বেশি দূরে নয়। তাই, তিনি বাড়ি গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে খানিকটা বিশ্রাম করে তবেই দোকান খোলেন।
তিনি দুপুরে ভাত খেয়ে বিশ্রাম করতে যাবেন। এমন সময় তার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো দুটি যুবক। তারা বললো, ‘দোকানটা সরকারি রাস্তায় পড়েছে―তাই, এটা ভেঙে দিতে হবে, কাকা।’
গোবিন্দ সাহা ওদের কথা শুনে হাসলেন। তারপর বললেন, “তোমাদের টাকাপয়সা দিয়ে কে পাঠিয়েছে? কাদের মেম্বার তা-ই না?”
যুবক দুটি এবার থতমত খেয়ে বলে, “না, মানে, না।”
তারা আর-কিছু বলতে পারে না। মোটর-সাইকেলে স্টার্ট দিয়ে তাড়াতাড়ি সটকে পড়ে।
বিকালে তিনি দোকান খুলে বাজারের প্রায় সব দোকানদারকে এই ঘটনাটা জানিয়ে রাখলেন।
তার পাশের রঙের দোকানদার বললো, “ব্যাটার মেম্বারগিরি এইবারই শেষ। সামনে ভোট আর পাওয়া লাগবে না। ভোট চাইতে আসলে জুতাপেটা করে দেবো।”
গোবিন্দ সাহা কিছু বলেন না। তিনি সব শুনে মনে মনে হাসেন। কাদের মেম্বারদের তিনি খুব ভালোভাবে চেনেন। এরা হলো শকুনের বাচ্চা। একবার যেদিকে চোখ দেয় তা আর ভুলতে পারে না। ছাড়তেও পারে না। শকুনের চোখ বড় ভয়ানক।
দুপুরবেলা পুকুরে স্নান করতে গিয়ে ফিরে এলো গোবিন্দ সাহার বড় পুত্রবধূ।
সে দেখতে পেয়েছে, পুকুরের ওপাড়ে বড়-হিজলগাছটার তলায় একটা লোক বসে রয়েছে। তার ভাবসাব আর চাউনি মোটেই ভালো নয়। সে ভয় পেয়েছে।
মেয়েটা দৌড়ে এসে শ্বশুর-শাশুড়িকে সব বলেছে।
গোবিন্দ সাহা সেখানে গিয়ে দেখলেন, কাদের মেম্বার গাছতলায় বসে রয়েছে! বিড়ি ফুঁকছে মনের আনন্দে।
তিনি অবাক হয়ে বললেন, “মেম্বার, তুমি এইখানে কেন? বাড়ি ফিরে যাও। আমার বউমা স্নান করবে এখানে।”
সে গায়ে মাখে না গোবিন্দ সাহার কথা। চুপচাপ বসে থাকে আগের মতো। একটু পরে তার এক সাগরেদ এসে বসলো সেখানে। দুটিতে মিলেমিশে গানজুড়ে দিলো।
সে হেসে বলে, “এইখানে বাতাস ভালো। তাই, বইছি, দাদা।”
গোবিন্দ সাহা সব বুঝতে পারলেন। তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকে বললেন, “স্নানঘরে স্নান করো, বউমা। আমি পরে দেখবো ব্যাপারটা।”
এরপর প্রায় প্রতিদিন মেম্বার পুকুরপাড়ে বসে থাকে। সে এখানে আরও লোকজন নিয়ে আড্ডা জমায়। সাহাবাড়ির বউঝিরা পুকুরে নেমে স্নান করতে পারে না।
সবাই বুঝতে পারে, সে নতুন কোনো ফন্দি করেছে। আর এভাবে জ্বালাতন করতে থাকলে একদিন সাহারা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু সে জানে না যে, গোবিন্দ সাহা কখনো এদেশ ছেড়ে যাবেন না। এটা তার প্রতিজ্ঞা। আর এটা তার জন্মভূমি।
হঠাৎ এক মাঝরাতে গোবিন্দ সাহার ঘরের চালে সমানতালে, একের-পর-এক ঢিল পড়তে লাগলো। আর তা প্রায় একটানা দশ-বারো মিনিট পর্যন্ত চললো।
সাহাবাড়ির সবার ঘুম ভেঙে গেছে ঢিলের শব্দে।
গোবিন্দ সাহা সবাইকে নিয়ে ঠাকুরঘরে ঢুকলেন। ঠাকুরের সামনে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে আর্তনাদ করলেন অনেক সময় ধরে। পরিবারের প্রায় সবাই ভেসে গেল চোখের জলে।
এরপর প্রায়ই মাঝরাতে ঢিল পড়তে লাগলো সাহাবাড়ির টিনের চালে। আর তা চলতে থাকে দীর্ঘসময় পর্যন্ত। আশেপাশের বাড়িঘর থেকে লোকজন আওয়াজ দিলে উৎপাতকারীরা পালিয়ে যায়। কাউকে চোখে দেখতে পাননি তিনি। কার নামে কার কাছে তিনি বিচার দিবেন? নিশ্চিন্তে মাঝরাতে কাদের মেম্বার তার লোক দিয়ে উৎপাত করাচ্ছে। তবু তারা এরই মধ্যে খাবার খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন, আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন।
গোবিন্দ সাহা নানাকারণে মনমরা হয়ে সেদিন সন্ধ্যায় পান-দোকানে বসে ছিলেন। তার মনটা ভালো নেই। বাড়ির বউঝিরা পুকুরে নামতে পারে না। রাতে এখনও মাঝেমাঝে ঘরের চালে ঢিল পড়তে শুরু করে। আর তা চলে প্রায় মিনিট দশেক থেকে আধঘণ্টাখানেক।
তিনি গুম হয়ে বসে ছিলেন। এমন সময় তার তিন-চারটা পরের দোকানদার দিদার বক্স দৌড়ে এসে তার দোকানের একপাশে বসে পড়লো। তারপর হাঁপাতে-হাঁপাতে বললো, “খবর শুনেছেন কিছু, দাদা?”
গোবিন্দ সাহা মনখারাপ করে বললেন, “না, দাদা। কিছু শুনিনি। কীসের খবর? কী খবর?”
সে এবার সোল্লাসে যেন বলে উঠলো, “আমাগরে কাদের মেম্বার মারা গেছে! খানিকক্ষণ আগে হাট থেকে ইজিবাইকে করে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ তিনমাথার মোড়ে ওর ইজিবাইকটা উল্টে একেবারে বাঁধের তলায় গিয়ে পড়েছে। সঙ্গে-সঙ্গে মারা গেছে সে। ঘাড়টা নাকি ভেঙে গেছে!”
খবরটা শুনে কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান গোবিন্দ সাহা। এটা তার বিশ্বাস হতে চায় না। কিন্তু দিদার বক্স যখন পুনরায় তাকে বলেছে, সে এটা নির্ভরযোগ্য কয়েকজনের নিকট থেকে এইমাত্র শুনেছে। তখন আর এতে অবিশ্বাসের কিছু বাকি থাকে না।
খবরটা শুনে তার দেহমন কেমন করে যেন কেঁপে উঠলো কয়েকবার! তারপর তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলেন। কারও মৃত্যুকামনা তিনি করেননি কখনো। তিনি শুধু এই জুলুমের একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে এ কী হয়ে গেল! তিনি হতভম্বের মতো বসে রইলেন আরও কিছুক্ষণ। তবু একসময় তার কাছে হঠাৎ এই খবরটাকে মনে হলো―একটা মর্মান্তিক খুশির সংবাদ!
তিনি এবার আপনমনে ভাবতে লাগলেন―ত্রিশ বছরের এই উৎপাত আর এই জ্বালাতন আর কখনো ফিরে আসবে না তার জীবনে! কেউ কখনো তাকে ভিটেমাটি থেকে আর উচ্ছেদ করতে চাইবে না! এবার কেউ ছলে-বলে-কৌশলে তার সবকিছু গ্রাস করতে চাইবে না! আর তাকে প্রতিদিন ভারতে চলে যাওয়ার কথা বলতে আসবে না কেউ!
তিনি যেন সংবিৎ ফিরে পেলেন। তারপর তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যেতে লাগলেন। এখনই তাকে একবার ঠাকুরঘরে ঢুকতে হবে।
তিনি বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই ভক্তিভরে কয়েকবার হাত ঠেকালেন কপালে। তারপর মনের খুশিতে বিড়বিড় করে বলে উঠলেন, “ঠাকুর! ঠাকুর! ঠাকুর!”
Comments