Sunday, June 30, 2024

রাজ্যের নতুন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ 2824 || Data Entry Operator Recruitment 2024 || WB Data entry Operator Recruitment 2024 || Data entry Operator Recruitment || Data entry Jobs 2024

 



রাজ্যের নতুন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ 2824 || Data Entry Operator Recruitment 2024 || WB Data entry Operator Recruitment 2024 || Data entry Operator Recruitment 


রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক পোস্ট অফিসে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। মাধ্যমিক পাস যোগ্যতায় পোস্ট অফিসে গ্রুপ সি পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।




নিয়োগকারী সংস্থা: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ জেলা লেভেলে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এর অধীনে এই নিয়োগটি হবে।


পদ – ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (DEO)


শিক্ষাগত যোগ্যতা: যে কোনো স্বীকৃত স্কুল বোর্ড কিংবা সংস্থা থেকে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পাশ,তবে এটি বিজ্ঞান শাখার ওপর।


সঙ্গে থাকতে হবে কম্পিউটার কাজের দক্ষতা এবং টাইপিং এর দক্ষতা ।



প্রার্থীর বয়সসীমা: আবেদনকারীর বয়স হতে হবে 18-28 বছরের মধ্যে।



মাসিক বেতন: এই পদে চাকরি প্রার্থীর শুরুতে মাসিক বেতন 18,000/- টাকা ।


নিয়োগ প্রক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা কিংবা টাইপ টেস্ট, একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, এক্সপেরিয়েন্স এবং ইন্টারভিউ ইত্যাদির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে।


আবেদন পদ্ধতি: শুধুমাত্র অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। নীচে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হল।


1. নীচে দেওয়া নোটিফিকেশন লিংক থেকে নিয়োগের আবেদনপত্র অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন ফরম্যাট সংগ্রহ করুন। ওখানে আরো ও বিস্তৃত আলোচনা করা আছে।


2. নিজের সম্পূর্ণ ডিটেইলস তথা নাম, জন্মতারিখ, অভিভাবকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেল, , বয়স, জেন্ডার, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি তথ্য দিয়ে সম্পূর্ণ ফর্মটি পূরণ করুন।


3. পাসপোর্ট সাইজের একটি রঙিন ফটো যোগ করুন এবং ফর্মের নিচে ডানদিকে নিজের সিগনেচার করবেন।


4. ফর্মের সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট এর জেরক্স এবং সেই ডকুমেন্টস গুলোতে অবশ্যই সেল্ফ আটেস্টেট করে দেবে।


5. আবেদন পত্র সহ এই ডকুমেন্টস গুলো একসাথে যুক্ত করে একটি খামের ভেতর ভরে তা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হবে পোস্ট অফিস বা কুরিয়ার করে। আপনি নিজে গিয়েও জমা করে আসতে পারেন।



আবেদনের সময়সীমা: প্রতিটা চাকরি প্রার্থী আগামী 05/07/2024 তারিখের পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পারবেন। অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আপনার আবেদন পত্র নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছাতে হবে। তাই বন্ধুরা দেরি না করে আজই আবেদন করে ফেলুন।



ইন্টারভিউ তারিখ : আগামী 10/07/2024 তারিখে অর্থাৎ আগামী জুন মাসের 10 তারিখে বুধবার বেলা 11 টাই ইন্টারভিউ শুরু হবে। তাই বন্ধুরা সবাই প্রস্তুত হয়ে নাও। খুব তাড়াতাড়ি এই নিয়োগ টি সম্পন্ন হবে।



নোটিফিকেশন লিংক -

Download notification



Official website -


Click here 🔴


Friday, June 28, 2024

পোস্ট অফিসে মাধ্যমিক পাশে নতুন কর্মী নিয়োগ || Post Office Recruitment 2024 || Post Office Group C Recruitment 2024 ||। Gds Requirements 2024 || গ্রামীণ ডাক সেবক নিয়োগ ২০২৪


 


পোস্ট অফিসে মাধ্যমিক পাশে নতুন কর্মী নিয়োগ || Post Office Recruitment 2024 || Post Office Group C Recruitment 2024 



রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। এতদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে চাকরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রাজ্যে আবার বিপুল সংখ্যক পোস্ট অফিসে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। মাধ্যমিক পাস যোগ্যতায় পোস্ট অফিসে গ্রুপ সি পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব এছাড়া সরকারি ভাবে নতুন কি কি সুযোগ দেওয়া হবে‌ তা নীচে আলোচনা করা হল।


পদের নাম : নতুন স্টাফ এবং গাড়ি চালক তথা ড্রাইভার (অর্ডিনারি গ্রেড) সহ বিভিন্ন পদে কর্মী নেওয়া হবে। 



বয়স সীমা : আগ্রহী আবেদন কারীর বয়স হবে সর্বোচ্চ ৫৬ বছরের মধ্যে । তবেই এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।



বেতন : বিভিন্ন পদে বিভিন্ন রকম বেতন উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পোস্ট অফিসে সরকারি সুযোগ-সুবিধা মত প্রতি মাসে বেতন প্রদান করা হবে। 



শিক্ষাগত যোগ্যতা : ন্যূনতম মাধ্যমিক পাশ যোগ্যতা থাকলেই ড্রাইভার পদে আবেদন করার সুযোগ পাবেন তবে এর পাশাপাশি প্রার্থীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।


আবেদন পদ্ধতি : সম্পূর্ণ অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। নীচে দেওয়া নোটিফিকেশন লিংক থেকে সর্বপ্রথম বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করে নেবেন । ঐ বিজ্ঞপ্তি নিচে আবেদন পত্রটি রয়েছে। আবেদন পত্রটি সঠিকভাবে ফিলাপ করে তার সঙ্গে যাবতীয় ডকুমেন্টস কে যুক্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্দিষ্ট ঠিকানায় মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে।


আবেদনের শেষ তারিখ – আগামী ৩১ শে জুলাই ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ।


বিঃ দ্রঃ - নিয়োগ পদ্ধতি ও অন্যান্য বিবরণ নোটিশে পেয়ে যাবেন।



নোটিফিকেশন লিংক - 


Download Notification

Wednesday, June 26, 2024

এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৯ || part - 9 || Era Kara part 9 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা

 



হঠাৎ পশ্চিম পাড়ার পানু ঠাকুর দৌড়ে গৌরবাবুর বারান্দায় এসে শ্বাস নিতে শুরু করলেন। বললেন, পালিয়ে চলো মাষ্টার পালিয়ে চলো। মাষ্টার মশায় থতমত খেয়ে বলে উঠলেন- একি বলছো পানু? কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে পালিয়ে যেতে বলছো?


কোন কথা বলার সময় নেই। ছোট ভাই, বৌমাকে কিছু বলার পূর্বে বাড়ী হতে পঞ্চাশ হাত দুরে পরপর তিনটি বোমার বিকট আওয়াজ। গৌরবাবু ছাত্র/ছাত্রীদের পাশের ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ীর উঠানে পর পর চার/পাঁচটি বোমার আওয়াজ। গৌরবাবু, কিশোরী লাল বলে ডাক দিতেই পানু ঠাকুর গৌরবাবুর মুখখানি দাবা দিয়ে বললেন- পালিয়ে চলো মাষ্টার আর উপায় নেই। মাষ্টার মশায় কে টেনে হিঁচড়ে রাতের অন্ধকারে বনজংগল ভেদ করে দূর্গম রাস্তা অতিক্রম করে কোন এক ষ্টেশনে বিশ্রাম নিয়ে রাত্রেই ট্রেনে চড়ে প্রায় ৫৫০/৫৬০ কিলোমিটার দুরে একটা ছোট্ট গ্রামে উপস্থিত হলো। গৌর বাবুর মনে সেই চিন্তা ছোট ভাই, বৌমা কেমন আছে, ওরা কি বেঁচে আছে! বার বার মনকে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পাচ্ছে না। কে দেবে উত্তর। কেন এমন হলো, সরাসরি কাকেই বা জিজ্ঞেস করবেন। পানুঠাকুর ওর অস্থিরতা দেখে বললেন- এই যুদ্ধ থামবেন না মাষ্টার। এই যুদ্ধ বেড়েই চলবে। হিন্দু মুসলিমের লড়াই। কিছু হিন্দু ওদেরকে উসকানী দিয়ে হিন্দুদের মধ্যে কিছু লোক নিজেদের আখের গুছোনোর জন্য এই লড়াই লাগিয়েছে। হিন্দুদের মধ্যে মীর জাফর তো কম নেই? এই যুদ্ধ লেগেই থাকবে। গৌর বাবুর মনে শান্তি নেই। ছোট ভাই বৌমা তবে কি বোমার আঘাতে মারা পড়লো! গৌরবাবুর চোখ দুটো ছল্ ছল্ করে উঠলো। পানুঠাকুর গৌরবাবুকে বুঝিয়ে বললেন- এছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর ছিলো না। মৃত্যু ছাড়া কোন পথ ছিলো না। এর পরে বীভৎস রূপ নেবে। হাজার হাজার মানুষ মারা পড়বে। এ পরিকল্পিত সন্ত্রাস। গৌরবাবু অনেক পরে শান্ত হলেন। চিরদিনের মত তাদেরকে পরিত্যাগ করতে হলো। ক্ষানিক পর বললেন, কিশোরীলাল আমার ছোট ভাই। ললিতা আমার ছোট ভাই এর বৌ। আমি ভেবেছিলাম ওরা আমার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। এসো বাবা আমার কাছে এসো। স্বরুপকে বুকে জড়িয়ে ধরে টপ্স্টপ্ করে চোখের জল ফেলতে থাকলেন। তার বংশের শেষ প্রদীপকে আঁকড়ে ধরে ঈশ্বরকে সহস্রাধিক ধনবাদ দিলেন। ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বললেন হে ঈশ্বর তুমি আছো। যথা সময়ে মানুষের জমে থাকা বেদনা যন্ত্রনা মালিন করে দাও। কনিকা এ তোর দাদা। স্বরুপবাবুর পাশা খেলা উলটে গেলেও তার জেঠু মনিকে কাছে পেয়ে কম আনন্দিত হলেন না। ঈশ্বর মানুষকে কখন কি ভাবে মিলন করে দেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। আপন জেঠু মনিকে ফিরে পাবে কখনো কি ভাবতে পেরেছিলো! কিশোরীলাল বাবু তার জেঠুমনির জন্য গোপনে কাঁদতেন। জেঠুমনির জন্য তাঁর হৃদয়কে কতখানি যে ক্ষত বিক্ষত করেছিলেন স্বরুপ তা জানতেন। অনেক দিন ঐ শোকে স্তব্ধ হয়েছিলেন। ভালো ভাবে কথা বলতেন না। মাঝে মাঝে ঘুমের অবস্থায় দাদা বলে চিৎকার করে উঠতেন। স্বরুপের মা তার বাবাকে বার বার বলেছেন দাদা নিশ্চয় বেঁচে আছেন। কিন্তু কিশোরী বাবু তা বিশ্বাস করতেন না। গৌরবাবু ছিলেন কিশোরী বাবুর প্রান। ভাতৃ বিচ্ছেদে কতখানি যে আঘাত পেয়েছেন তা গৌরীবাবু এবং কিশোরীবাবু উভয়েই সহ্য করতে পারেন নি। সেই জন্যই কিশোরীবাবু কম বয়সে মারা গেছেন। গৌরবাবু বললেন স্বরুপকে তোমার মা কেমন আছেন? স্বরুপ বাবু বললেন মা ভালো আছেন। একদিন মাকে নিয়ে আসবো। আপনার খবর পেয়ে মা কতখানি যে খুশি হবেন তা ঈশ্বর জানেন। গৌরবাবু অন্য প্রসঙ্গ তুললেন না। স্বরুপ বাবু তখনকার মতো বিদায় নিলেন।


_____________________________________


পর্ব ১০ পড়তে -

Click here 🔴



পর্ব ৮ পড়তে -

click here 🔴

Monday, June 3, 2024

May Sonkha 2024 || মে সংখ্যা ২০২৪






 প্রাচীন কালের সাক্ষ্য বহন করে চলা মাতৃভাষার শ্রমিকের নির্মিত সৃষ্টিকার্যের কাছে আজও অনেক নব শ্রমিক অর্বাচীন। যে ভাষা মানুষকে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শেখায়, প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরতে শেখায় সেই ভাষা দিয়ে শব্দচয়ন করা উচিৎ - এটা সমাজের স্বার্থে খুব মূল্যবান সিদ্ধান্ত। আসলে সত্যের প্রকাশ সমাজের কালো অন্ধকারকে সব সময় দূর করে। এই সিদ্ধান্ত গুলো মেনে চলে সাহিত্য ও সত্যের আঁধারে চলবে। এটা আসল ধর্ম। এটা বাস্তবতা।


সৃষ্টিকর্তা যে জ্ঞান আপনাকে প্রদান করেছে তা আপনাকে সত্যের পথে ছড়িয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আপনার জ্ঞানের মহিমা নষ্ট হবে। সাহিত্যকে ভালোবাসা দিয়ে লালন পালন করুন। সাহিত্য আপনাকে দ্বিগুণ ভালোবাসা ফিরিয়ে দেবে। এই পথটি সুগম করব আমরা অর্থাৎ আপনাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা ব্লগ ম্যাগাজিন। আমাদের সাথে থাকুন, সাহিত্যের সাথে থাকুন। ভালোবাসুন আমাদের ওয়েবসাইট ম্যাগাজিনকে। ভালো থাকবেন সবসময়।



                                       ধন্যবাদান্তে 

                                 সম্পাদকীয় বিভাগ 


______________________________________________


কবিতা : 

অমল কুমার ব্যানার্জী, অভিজিৎ দত্ত 


English poem : 

Md Mazharul Abedin, Anjali Denandee, Samir Kumar Dutta



ছোট গল্প ও অনুগল্প: 

জিনিয়া কর, প্রদীপ সেনগুপ্ত, রানা জামান, অমিত কুমার রায়, তপন তরফদার, দেবাংশু সরকার

ব্যাচেলার্স পার্টি - দেবাংশু সরকার || Bachelor party - Devanshu sarkar || ছোট গল্প ||Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

              ব্যাচেলার্স পার্টি

                      দেবাংশু সরকার



                            এক

      - "আমার নাম রিমি। আমি ফার্স্ট সেমিস্টারের ছাত্রী। তুমিও কি নিউ কামার?"


      - "হ্যাঁ। আমার নাম সুদীপা। আমারও আজ কলেজে প্রথম দিন। কলেজে এসে আমার কোনো পুরানো বন্ধুকে দেখতে পাচ্ছি না। যারা আমার সঙ্গে স্কুলে পড়তো, মনে হয় তাদের কেউ এই কলেজে ভর্তি হয় নি।"


      - "আমারও একই সমস্যা। চেনা শোনা কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তোমার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালোই হলো। আর একা মনে হবে না। আমার বাংলা অনার্স। তোমার সাবজেক্ট কি?"


       - "আমারও বাংলা অনার্স।"


      - "বাঃ খুব ভালো। আমরা তাহলে একসঙ্গে ক্লাসে গিয়ে পাশাপাশি বসবো। তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাওতো।"


      - "তোমার নাম্বারটা বলো, কল করছি।"


      - "ওফ, এই 'তুমি' 'তুমি' আর নিতে পারছি না! বিয়ের পর তোর হাজব্যান্ভকে যত খুশি 'ওগো', 'হ্যাঁগো', 'তুমিগো' বলিস। আমাকে ছাড়। দয়া করে তুমি ছেড়ে তুইতে নেমে আয়।" হেসে ওঠে দুজনেই। 


       রিমি, সুদীপা দুজনেই এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। দুজনেরই স্কুলের কোনো বন্ধু এই কলেজে ভর্তি না হওয়াতে প্রথম দিন কিছুক্ষণের জন্য একাকীত্ব বোধ করলেও, অচিরেই নিজেদের সঙ্গীকে খুঁজে নেয় তারা।


      সুদীপার তুলনায় রিমি কিছুটা ছটফটে, চঞ্চল। কিছুটা প্রগলভ। সারাক্ষণ সে কিচির মিচির করেই চলেছে। কোনো কথা সে চেপে রাখতে পারে না। অন্য দিকে সুদীপা বেশ চাপা স্বভাবের। মুখ দেখে বোঝা যায় না তার মনে কি আছে। বন্ধুদের সঙ্গে হেসে কথা বললেও, মনের দরজা পুরোপুরি খুলে দেয় না। দুজনের মধ্যে কিছুটা অমিল থাকলেও, খুব তাড়াতাড়ি তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিনত হয়। কলকাতার দুই প্রান্তে দুই বন্ধুর বাড়ি। বেহালা থেকে কলেজে আসতে সুদীপার মাঝে মাঝে দেরি হলেও, দমদম থেকে রিমি যথা সময়ে পৌঁছে যায়। কখনো কিছুটা আগে পৌছে কলেজের সামনের বাস স্ট্যান্ডে সে অপেক্ষা করে সুদীপার জন্য। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে রিমি লক্ষ্য করে সুদীপা বাস থেকে নেমে, বাসের দিকে হাত নাড়ে। কার উদ্দেশ্যে সুদীপা হাত নাড়ে? রিমি জানতে চাইলে সুদীপা এড়িয়ে যায়। আবার কখনো কলেজ ছুটির পর দুই বন্ধু যখন কলেজের গেট থেকে বের হয়, রিমির মনে হয় কেউ যেন অপেক্ষা করছিল, তাদের দেখতে পেয়েই গা ঢাকা দিল! রিমি বারে বারে সুদীপার কাছে জানতে চায়। সুদীপা হেসে উড়িয়ে দেয়, বলে রিমির চোখের ভুল। রিমি কথা বাড়ায় না। কিন্তু অবাক হয়ে ভাবে, বারে বারে তার এক ভুল হচ্ছে!


      এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস, এসে যায় দুর্গা পুজো। পুজোর ছুটির জন্য কলেজ বন্ধ হয়। সুদীপারা পুজোর কয়েক দিনের জন্য মেদিনীপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে যায়। বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজো। এই চারটে দিন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয় স্বজনরা এসে জড়ো হয় পৈতৃক ভিটেতে। বছরের এই কয়েকটা দিন দেখা হওয়া আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মহানন্দে পুজোয় মেতে ওঠে সুদীপা।


      রিমিও পুজোর কয়েকটা দিন কাটাবে কলকাতার বাইরে। সে তার বাবা মায়ের সঙ্গে পুরী যাচ্ছে পুজোর দিনগুলো ছুটি কাটাতে। যথা সময়ে রিমিরা পৌছে গেছে হাওড়া স্টেশনে। তেইশ নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন এসে গেছে। প্লাটফর্ম জুড়ে বেশ ভিড়। নিজেদের কামরা খুঁজে ট্রেনে উঠলো রিমিরা। রিমির মা রাতের খাবার বের করছেন ব্যাগ থেকে। রিমি লক্ষ্য করছে বিপরীত দিকের সিটে বসা এক মাঝবয়সী মহিলা হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।


     - "রমা চিনতে পারছিস?"


      ঘুরে তাকান রমা, অর্থাৎ রিমির মা। কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে চিনতে। তার পরেই উচ্চসিত হয়ে ওঠেন।


      - "অপর্ণা! কতদিন পরে দেখা! স্কুলে পড়তে পড়তে তোর বাবা তোর বিয়ে দিয়ে দিল। বিয়ে করে সেই যে দিল্লি চলে গেলি, তারপর আর পাত্তা নেই!"


      - "হ্যাঁ, প্রায় সাতাশ বছর পর তোর সঙ্গে দেখা। আমার হাজব্যান্ড দিল্লিতে চাকরি করে। কিন্তু আমার ছেলে অনীক দুবছর হলো কলকাতায় চাকরি পেয়েছে। মামার বাড়িতে থাকে। আর আমি এখন শাটল কক্ হয়ে একবার দিল্লি একবার কলকাতা করছি। পুজোর ছুটিতে সোমনাথ, মানে আমার হাজব্যান্ড কলকাতায় এসেছে। অনীকের নতুন চাকরি। একদম ছুটি পায় না, অনেক দিন একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তাই চার দিনের জন্য দুরে কোথাও না গিয়ে পুরী যাচ্ছি।"


      সোমনাথ, অনীকের সঙ্গে অপর্ণা পরিচয় করিয়ে দেন রমার পরিবারের সদস্য রিমি এবং রিমির বাবা অরূপের সঙ্গে।


      সামান্য লেট করে প্রায় এগারোটা নাগাদ ছাড়লো পুরী এক্সপ্রেস। রাতের খাবার ব্যাগে পড়ে আছে। রমা আর অপর্ণা জমিয়ে গল্প করছেন। সাতাশ বছরের জমে থাকা কথা যেন এক নিঃশ্বাসে বেরিয়ে আসতে চাইছে দুজনের মুখ থেকে। পাশে বসা সোমনাথও জমিয়ে নিয়েছেন অরূপের সঙ্গে, বাংলা দিল্লির দুর্গাপুজো থেকে রাজনীতি সব কিছুই উঠে আসছে তাদের আলোচনায়। অনীক আর রিমি অবশ্য চুপচাপ নিজেদের মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। অনীক মাঝে মাঝে আড় চোখে রিমিকে দেখছে। রিমিও সেটা টের পেয়েছে। ব্যাপারটা সে উপভোগ করছে।


      পুর্ণ গতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। দিনের আলো ফুটতে এখনও কিছুটা দেরি আছে। রাতে ঠিকঠাক ঘুম না হলেও, ভোরের দিকে অনেকেই ঘুমোচ্ছে। রিমির চোখে ঘুম নেই। সে নিজের জায়গা থেকে নেমে একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অনীকের চোখেও ঘুম নেই। তবে সে তার জায়গাতেই শুয়ে আছে।


      চাওয়ালাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। একজন চাওয়ালা রিমিকে জিজ্ঞাসা করলো, "মেম সাহেব চা খাবেন?" উত্তর রিমি "না" বললো।


      নিজের জায়গা থেকে অনীক ফোড়ন কাটলো, "দাদা আপনি জানেন না, মেম সাহেবরা সকালে চা খায় না। হুইস্কি খায়। আপনি এই নেটিভ আদমিকে চা দিন। ঠিক আছে আপনি দু কাপ চা দিন। মেম সাহেব না হয় হুইস্কি মনে করে খেয়ে নেবে।"


      মৃদু হাসি খেলে যায় রিমির মুখে। সে বলে, "আমি মোটেই মেম সাহেব নই। হুইস্কিও খাই না। সবাই ঘুমোচ্ছে। একা চা খেতে ভালো লাগে না। তুমি খেলে আমিও খাবো।"


      রাতে হালকা বৃষ্টির পর চকচকে রোদ উঠেছে। থিকথিকে ভিড় পুরী স্টেশন জুড়ে। ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ট্যুরিস্টরা বেরিয়ে আসছে স্টেশন থেকে। চলছে অটো, ম্যাজিক গাড়ির ড্রাইভারদের সঙ্গে দরাদরি। স্বর্গদ্বারের কাছে দুটো হোটেল বুক করে রেখেছে দুটো পরিবার। দুটো হোটেলের মধ্যে দুরত্ব খুব বেশি নয়। দরাদরি করে একটা বড় ম্যাজিক গাড়িতে উঠলো দুই পরিবার।


      রাতে ট্রেনে ভালো ঘুম হয়নি তাই হোটেলে ঢুকেই অপর্ণা, সোমনাথ বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অনীক টিভি চালিয়ে পছন্দের চ্যানেল খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে রমা, অরূপেরও চোখ জুড়িয়ে আসে। হোটেলের ঘরে বোর হতে থাকা রিমি ফোন করে অনীককে, "কি করছো?"


      - "বাবা মা ঘুমোচ্ছে। আমার এখন কিছু করার নেই, তাই টিভি চালিয়ে উড়িয়া ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি।"


      - "আমারও একই অবস্থা। বাবা মা নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। ঘুরতে এসে মানুষ যে কি করে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করে বুঝতে পারি না! আমি এখন বের হবো। সমুদ্র দেখবো। তুমি আসবে?"


      - "ঠিক আছে যাচ্ছি। তুমি চৈতন্য দেবের সামনে দাঁড়াও।"


      হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ে রিমি। চড়া রোদ উঠেছে। চৈতন্য দেবের মুর্তির সামনে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। সে একটু সরে এসে একটা কাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণের মধ্যে অনীকও চলে আসে। কিন্তু রিমিকে দেখতে পায় না। এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে সে রিমিকে ফোন করে, "মেম সাহেব তুমি কোথায়? বেরিয়ে পড়েছো, নাকি এখনো হোটেলে সাজুগুজু করছো?" 


      - "পেছন দিকে তাকাও, আমাকে দেখতে পাবে।"


      ঘুরে তাকায় অনীক। রিমিকে দেখে হাত নাড়ে। এগিয়ে যায় রিমির দিকে।


      - "নেটিভ আদমি, তুমি কি ছাতা এনেছো? খুব চড়া রোদ উঠেছে। খালি মাথায় হাঁটা যাবে না"


      - "নাতো, ছাতা আনিনি। রোদে আমার কোনো অসুবিধে হবে না। কিন্তু তুমি এভাবে হাঁটতে পারবে না।"


      - "এখনো ট্রলি খোলা হয়নি। ছাতা ট্রলিতে আছে। তাই আনা হয়নি।"


      - "ডোন্ট ওরি মেম সাহেব। ঐ দেখো তোমার সমস্যার সমাধান।"


      রিমি দেখে একটা কম বয়সী ছেলে বেতের টুপি বিক্রি করছে। অনীক দুটো টুপি কিনে একটা নিজে পরে, অন্যটা রিমির মাথায় পরিয়ে দেয়।


      - "কাম অন নেটিভ আদমি। চলো আমরা বালির ওপর দিয়ে হাঁটি।"


      রাস্তা পেরিয়ে দুজনে নেমে পড়ে বেলাভুমিতে। হাজারো মানুষের ভিড় বেলাভুমি জুড়ে। বিরাট বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বেলাভুমিতে। মানুষ সমুদ্রের জলে ভিজছে। মানুষ হাসছে, মজা করছে। আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে তাদের মনে। বলতে গেলে অশান্ত সমুদ্রের উন্মাদনাকে চেটে পুটে খাচ্ছে।


      - "অনীক, দেখো কত লোক সমুদ্রে স্নান করছে, মজা করছে। চলো না আমরাও স্নান করি।"


      - "এতো সকালে ভিজতে ইচ্ছা করছে না। তাছাড়া তোয়ালে আনা হয়নি। আর একটু বেলা হলে স্নান করতে আসবো।"


      - "ঠিক আছে স্নান না করো, চলো অন্তত সমুদ্রের জলে পা ভেজাই"


      রিনি অনীক পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় সমুদ্রের দিকে। হাতে হাত ধরে তারা দাঁড়িয়ে আছে। লোনা জল এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুর থেকে সাদা মুকুট পরা ছোটো ছোটো ঢেউগুলো বিশালাকার ধারণ করে আছড়ে পড়ছে বালির ওপরে। জলের সঙ্গে সরে যাচ্ছে পায়ের তলার বালি। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে যেতে রিমি জাপটে ধরেছে অনীককে। অনীক শক্ত হাতে ধরে আছে রিমিকে। দুজনে দুজনের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ। হয়তো দুজনেই উপভোগ করছে এই ঘনিষ্ঠতা।


      - "অনীক আমার পায়ের তলার বালি সরে যাচ্ছে। আমি পড়ে যাবো।"


      - "কেন পড়ে যাবে? আমিতো তোমাকে ধরে আছি। ভরসা নেই আমার ওপর?"


      - "আমাকে এভাবে চিরকাল ধরে রাখবেতো অনীক? বলো ছেড়ে দেবে নাতো?"


      - "আমিতো ধরে রাখতে চাই। তুমি আমার হাত ছেড়ে চলে যাবে নাতো মেম সাহেব?"


      - "একবার যখন ধরেছি, আর ছাড়বো না এ হাত।"


      ওরা সমুদ্র দেখছে। অপলক দৃষ্টিতে সমুদ্র দেখছে। বিভোর হয়ে সমুদ্র দেখছে। দেখতে দেখতে একাত্ম হয়ে যাচ্ছে। হয়তো মনের ভেলায় চড়ে ভেসে চলেছে অকুল সাগরে।


      কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে কারো খেয়াল নেই। এক সময়ে অনীক বলে ওঠে, "এবার হোটেলে ফিরতে হবে মেম সাহেব। এতক্ষণে বাবা মায়ের হয়তো ঘুম ভেঙে গেছে।"


      হাত ধরাধরি করে বেলাভুমি ছেড়ে রাস্তা পার হয়ে দুজনে এসে দাঁড়িয়েছে চৈতন্য দেবের মুর্তির সামনে। এখান থেকে দুজনের রাস্তা দুদিকে চলে গেছে। এবারে হাত ছাড়ার পালা। অনীকের হাত ছেড়ে আবার আঁকড়ে ধরে রিমি। অবাক হয়ে অনীক প্রশ্ন করে, "কি হলো মেম সাহেব, আবার ধরলে কেন?"


      - "ছাড়তে ইচ্ছা করছে নাতো।"


      - "ঠিক আছে এখনতো ছাড়ো। ঘন্টা খানেক পরে আবার ম্যানেজ করে চলে আসবো।"


      শ্রী মন্দিরে পুজো দেওয়া, সকালে বিকালে সমুদ্র তীরে রুটিন ভিজিট, টুকটাক কেনাকাটা, চোখের পলকে কেটে যায় দিনগুলো। এবার ফেরার পালা। আজ রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরবে রিমিরা। আগামীকাল অনীকরা। দুপুরে খাওয়ার পর রিমি ভাবে আরতো মাত্র কয়েক ঘন্টা তারা পুরীতে আছে, তাই বিছানায় শুয়ে না থেকে আর একবার সমুদ্র দেখে আসবে। হোটেল থেকে একা বেরিয়ে পড়ে রিমি। একবার ভাবে অনীককে ডাকবে। আবার ভাবে এইতো ঘন্টা দুয়েক ধরে দুজনে সমুদ্রের হাওয়া খেলো। হয়তো খাওয়া সেরে অনীক এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। তাই অনীককে না ডেকে সে একাই চলে যায় সমুদ্রের ধারে।


      সমুদ্রের এক অন্য রূপ দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় রিমির। আগে সে কালচে ঘোলাটে বা হালকা নীল রঙের সমুদ্র দেখেছে। আজকে সমুদ্রের রঙ ঘন নীল। কখনো সেই রঙ বদলে ঘন সবুজে পরিনত হচ্ছে। সত্যিই কি সমুদ্রের রঙ পরিবর্তিত হচ্ছে? নাকি চোখ ভুল? আর অপেক্ষা করে না রিমি। তড়িঘড়ি ফোন করে অনীককে ডেকে নেয়।


      - "দেখো অনীক দেখো, চোখ ভরে দেখো সমুদ্রের এই অপরূপ সৌন্দর্যকে।"


      - "দেখছি রিমি দেখছি। সমুদ্রের এই রূপ, এই রঙ শুধু দেখছি না সাজিয়ে রাখছি মনের মনিকোঠায় চিরকালের স্মৃতি হিসেবে। কি অপূর্ব উপহার তুমি আমাকে দিলে! সমুদ্রের ঘন নীল, ঘন সবুজ রঙ দিয়ে তুমি আমাকে, আমার মনকে,আমার চিত্তকে চির রঙিন করে দিলে। বিনিময়ে তোমাকে আমি কি দেবো রিমি? সমুদ্রের এই শোভার অনুরূপ কিছুই যে নেই আমার কাছে! আমি যে নিঃস্ব।" কথা বলতে বলতে অনীক হাঁটু গেড়ে বালিতে বসে পড়ে বলতে থাকে, " না রিমি আছে। অন্তত একটা শব্দ আছে আমার কাছে। সেটা এই সমুদ্রের থেকে বড়, এই সমুদ্রের থেকে গভীর, এই সমুদ্রের থেকে মহোময়। কথা থামিয়ে সে বালিতে আঙুল দিয়ে লেখে - 'ভালোবাসি'।


      একটা ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায় সেই লেখা। আঁতকে ওঠে রিমি। সে বলে, "আমাদের ভালোবাসা এভাবে ধুয়ে মুছে যাবেনাতো অনীক?"


      - "বালিতে লেখা ধুয়ে মুছে যেতে পারে। কিন্তু আমিতো কেবল বালিতে লিখিনি। লিখেছি তোমার আমার মনের মাঝে। কোনো ঢেউয়ের ক্ষমতা নেই সেই লেখাকে মুছে দেবে।"



                              দুই 



      একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে কলকাতায় ফিরে রিমি ফোন করে সুদীপাকে, "কোথায় আছিস?"


      - "মেদিনীপুরের বাড়িতে। লক্ষ্মী পুজোর পরে ফিরবো।"


      - "তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। ফোনে বলা যাবে না।"


      - "ঠিক আছে। বাড়ি ফিরি। পড়তে গিয়ে কথা হবে।"


      - " প্রথম দিন তাড়াতাড়ি আসবি। অনেক কথা আছে। ইন্টারেস্টিং কথা।"


      পুজোর পর প্রাইভেট টিউশনের প্রথম দিন নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই স্যারের বাড়ি পৌছে যায় রিমি। কিছুক্ষণের মধ্যে সুদীপাও চলে আসে।


      - "বল, তোদের পুরী ট্যুর কেমন হলো? আর কি যেন বলছিলি ইন্টারেস্টিং কথা। বল কি বলবি?"


      - "পুরীতে গিয়ে একটা কান্ড করেছি।"


      - "কি কান্ড?"


      - "পুরীতে গিয়ে একটা মাল তুলেছি। দিশি মাল নয়। একেবারে দিল্লিকা লাড্ডু।"


      - "এই আগে মুখের ভাষা ঠিক কর, তারপর আমার সঙ্গে কথা বলবি।"


      - "আরে পুরো কথা শোন। পুরীর ট্রেনে মায়ের এক পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা। আগে দিল্লিতে থাকতো, এখন কলকাতায় থাকে। তার ছেলে অনীককে লটকেছি। দিশি মাল হলে চিন্তা ছিল না। দিল্লির মাল, তাই বুঝতে পারছি না সত্যিই দিবানা নাকি খেলোয়াড়। এব্যাপারে তোকে একটু হেল্প করতে হবে। মানে অনীককে বাজিয়ে দেখতে হবে।"


      - "না না, ওসব বাজাতে টাজাতে পারবো না।"


      - "না, বললেতো শুনবো না। একমাত্র তুই পারবি অনীককে বাজাতে। তুই আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী। কি সুন্দর ফর্সা রঙ, টানাটানা চোখ, গোলাপি ঠোঁট! আমারই মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে তোকে নিয়ে শুয়ে পড়ি। তাহলে তোকে দেখলে ছেলেদের কি অবস্থা হয় ভাবতো?"


      - "এই ফোটতো এখান থেকে। কত শখ, আমাকে নিয়ে শোবে! কি করবি আমাকে নিয়ে শুয়ে? পারবি আমাকে প্রেগনেন্ট করতে? তোর কাছে আছে সেইসব যন্ত্রপাতি?"


      - "প্রেগনেন্ট করতে না পারি, তোর ফর্সা গালে, গোলাপি ঠোঁটে কয়েকটা চুমুতো খেতে পারি।"


      - "আর চুমু খেতে হবে না। বল তোর জন্য কি করতে হবে?"


      - "যা বললাম, অনীককে বাজিয়ে দেখতে হবে।"


      - "বাজিয়ে দেখতে হবে! কেন অনীক কি তবলা?"


      - "তবলা নয়, অনীক হচ্ছে শ্রীখোল। দেখলেই বুঝতে পারবি ওর মধ্যে একটা কেষ্টো কেষ্টো ভাব আছে। তবে ওকি রাধিকা রমন কেষ্টো নাকি গোপিনী পরিবেষ্ঠিত কেষ্টো সেটা বুঝতে পারছি না!"  


      - "যদি গোপিনী পরিবেষ্টিত কেষ্টো হয়। মানে খেলোয়াড় হয় তখন কি করবি?"


      - "এখনো অতকিছু ভাবিনি। যা হবে দেখা যাবে।"


      কথামত কাজ শুরু করে দেয় সুদীপা। রিমি একদিন অনীকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় সুদীপার। অনীককে দেখে আপাত শান্ত, মৃদুভাষী সুদীপার মুখে যেন খই ফোটে। অনর্গল কথা বলে যেতে থাকে সে অনীকের সঙ্গে। কথাবার্তায় চৌখস অনীকও তাল মেলায়। মাঝে মাঝে সন্ধ্যার সময়ে সুদীপার ফোন আসে অনীকের কাছে। দেখা করার বা কোনো রেস্টুরেন্টে সময় কাটানোর আব্দার। এড়াতে পারে না। অনীক এড়াতে পারে না সুন্দরী সুদীপার আকর্ষণ। কাজের দিনগুলো সন্ধ্যার পর সামান্য সময়ের জন্য দেখা হলেও রবিবার প্রায় সারাদিন সুদীপাকে নিয়ে অনীক উড়ে বেড়ায়। সুদীপাকে সময় দিতে গিয়ে অনেক সময় অনীক রিমির ডাকে সাড়া দিতে পারে না। হয়তো অনিচ্ছাতেই সে অবহেলা করে রিমিকে। রিমি অনুযোগ করলে অনীক বলে, "তোমার বন্ধুর ডাকে সাড়া না দিলে তুমি যদি রাগ করো সেই ভয়ে সুদীপার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি না। তাছাড়া সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। সেই মুখ যদি নারীর হয়..."।


      ক্রমশ যেন সুদীপার সঙ্গে অনীকের ঘনিষ্ঠতা বাড়াবাড়িতে পরিনত হতে থাকে। রিমির কপালে ভাঁজ পড়ে। ব্যাপারটা কোন দিকে যাচ্ছে সে বুঝতে পারে না। একদিন সুদীপার কাছে সে প্রকৃত ব্যাপারটা জানতে চায়। উত্তরে সুদীপা বলে, "অনীক এতটাই কিউট, এতটাই রোমান্টিক যে ওর ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি না। কিছুতেই অনীককে এড়িয়ে যেতে পারি না। কি করবো বল? আমিওতো মানুষ। আমার মধ্যেওতো কামনা বাসনা আছে। তাছাড়া তুইতো আমাকে ওর সঙ্গে মিশতে দিয়েছিলি। এখন ব্যাপারটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অনীককে না দেখে আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারিনা। আমাকে ক্ষমা কর রিমি।"


      অনীক বলছে সুদীপা ডাকে, সুদীপা বলছে অনীক ডাকে! তাহলে কে কাকে ডাকে বুঝতে পারে না রিমি। তবে এটুকু বুঝতে পারছে যে দুজনের কাছেই সে ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। তবে কি সে অনীককে চিনতে পারেনি! এত হাসি, এত কথা, মন দেওয়া নেওয়া সবই কি অনীকের কাছে কেবল সময় কাটানোর একটা খেলা ছিল? খেলার ছলে মানুষ মানুষকে এতবড় আঘাত দিতে পারে? আর সুদীপা? রিমি ভাবতে থাকে বন্ধুবেশী এতবড় বেইমান বোধহয় এর আগে কেউ আসেনি এই পৃথিবীতে। সুদীপার মুখ দেখতেও আর ইচ্ছা করে না রিমির। কিন্তু কলেজে দেখা হয়ে যায়। রিমির দিকে তাকিয়ে নির্লজ্জের মত হাসে সুদীপা। অসহ্য লাগে রিমির। কলেজও প্রায় শেষের দিকে। আর কয়েক মাস পরে সিক্সথ সেমিস্টারের পরীক্ষা। তাই কলেজে না এসে পারে না রিমি। ভাবে এই কটা মাস যেন কিছুতেই কাটছে না! প্রেমিক এবং সহপাঠী তথা বন্ধুকে হারিয়ে ক্রমশ যেন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে রিমি। নিঃসঙ্গ রিমির জীবনকে গ্রাস করে শূণ্যতা। হারিয়ে ফেলা অনেক কিছুর স্মৃতিকে সঙ্গী করে দিন কাটতে থাকে রিমির। সে কলেজে যায়, পড়তে যায়। পড়াশোনায় ডুবে যেতে চায়। পড়াশোনার মাধ্যমে সে অনেক কিছুকে ভোলার চেষ্টা করে। এভাবেই একটা একটা করে দিন কাটতে থাকে।


      আর মাত্র কয়েকটা দিন কলেজে আসতে হবে। তারপর পরীক্ষা। পরীক্ষার পর আর সহপাঠীদের মুখ দেখতে হবে না। তারপর রিমি অন্যভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেবে। আস্তে আস্তে সে ভুলে যাবে অনীককে। অনীককে ভুলে যাবে! সত্যিই কি রিমি পারবে অনীককে ভুলে যেতে? সেটা কি সম্ভব? কি করে সে ভুলে যাবে বেলাভুমিতে কাটানো সেই মুহুর্তগুলো? সব সময়ে সে শুনতে পায় সমুদ্রের গর্জন। মানস চক্ষে দেখতে পায় উত্তাল জলরাশি। হাত ধরাধরি করে অনীকের সঙ্গে বেলাভুমিতে হেঁটে বেড়ানো। পায়ের তলা থেকে বালি সরে যাওয়াতে পড়ে যেতে যেতে অনীককে ধরে ফেলা। পড়ে যেতে যেতে অনীকের দৃঢ় বাহু বন্ধনে নিশ্চিত আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। সব স্মৃতি যেন রিমিকে ঘিরে রাখে। কিন্তু অনীকের বন্ধন যে এত পলকা, এত ভঙ্গুর সেটা ভাবতেও পারে না রিমি। কেন অনীক তার জীবনে এলো? আর কেনই বা হারিয়ে গেল? ভাবতে থাকে রিমি। ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়!


      - "দিদি ভাড়াটা দিন।"


      কন্ডাক্টরের ডাকে সম্বিত ফিরে আসে রিমির। একটা একশো টাকার নোট কন্ডাক্টরকে দিয়ে বলে, "একটা দশ।"


      - "খুচরো দিন দিদি। সবাই একশোর নোট দিলে অত খুচরো কোথায় পাবো?"


      - "রোজই দশ টাকার নোট দিই। আজ নেই কি করবো?"


      - "আমিই বা কি করবো? কোথা থেকে এত খুচরো আনবো?"


      ক্রমশ বচসা বাড়তে থাকে। রিমির হয়ে অনেকেই গলা ফাটাতে থাকে। বাস দাঁড়িয়ে যায়। এমন সময়ে এগিয়ে আসে সরোজ। সেও একজন ঐ বাসের সহযাত্রী। সে কন্ডাক্টরের দিকে একটা দশ টাকার নোট এগিয়ে দেয়। রিমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সরোজ টিকিটটা কাটে।


      একটু অপ্রস্তুত হয়ে রিমি বলে, "আপনি আমার হয়ে টিকিট কাটলেন!"


      - "এতে অসুবিধার কি আছে?"


      - "না, আমি ভাবছি...।"


      - "অত ভাবার কিছু নেই। আমি এই পথেই যাতায়াত করি। যখন আপনার কাছে খুচরো থাকবে ফেরত দিয়ে দেবেন।"


      - "কিন্তু আপনাকে পাবো কোথায়? ঠিক আছে আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন।"


      মোবাইল নম্বর দিয়ে সরোজ বলে, "মাত্র পঁচিশ টাকা দিয়ে মেট্রোর টিকিট কেটে আমার অফিসে এসে আমার দশ টাকা ফেরত দিয়ে আবার মাত্র পঁচিশ টাকা দিয়ে মেট্রোর টিকিট কেটে ফিরে যাবেন।" হেসে ওঠে রিমি।


      রিমি মাঝে মাঝে ফোন করে সরোজকে। বাসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বারে বারে ধন্যবাদ জানায়। কখনো কখনো দেখা করে দুজনে। ছুটির দিনে বিভিন্ন কাফে, রেস্টুরেন্টে সরোজের সঙ্গে রিমিকে দেখা যায়।


      পৃথিবীতে কোনো শূণ্যস্থান চিরকাল শূণ্য থাকে না। কালের নিয়মে সব শূণ্যই একদিন পুর্ণ হয়ে যায়। রিমির জীবনকে গ্রাস করা শূণ্যকে ধিরে ধিরে পুরণ করে দিতে থাকে সরোজ। সরোজের সারল্য, সরোজের অনাবিল হাসি যেন চুম্বকের মত আকর্ষণ করে রিমিকে। কেবল ছুটির দিনে নয়, প্রত্যেক দিন সন্ধ্যার পর দুজনকে এক সাথে দেখা যেতে থাকে। আর ছুটির দিনগুলোতে দুজনে যেন মুক্ত বিহঙ্গ। কোনোদিন গঙ্গার ধারের বিভিন্ন পার্কে, কোনোদিন কিছুটা দুরে বালিগঞ্জের লেকে বসে দুজনকে বাদামের খোসা ছাড়াতে দেখা যায়। দুজনেই মন খুলে কথা বলে দুজনের কাছে। হয় ভাব বিনিময়।


      - "রিমি আমাকে তুমি ঠিক কোন চোখে দেখো? মানে তোমার মনের ঠিক কোন জায়গাতে আমি আছি?"


      - "এই মুহূর্তে তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমার ওপর আমি অনেকখানি ডিপেন্ডেন্ট। তোমার সঙ্গ, তোমার সান্নিধ্য আমার বেঁচে থাকার রসদ।"


      - "শুধু এইটুকু! এর বেশি কি কিছু ভাবা যায় না?"


      - "না সরোজ, এর বেশি আমি ভাবতে পারি না। আমার পায়ে যে অদৃশ্য বেড়ি পরানো আছে। আমি যে অনীককে ভালোবেসেছিলাম। আমি যে অনীককে ভালোবাসি। অনীক যদিও আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি। আমাকে খেলার পুতুল ভেবেছিলো। কিন্তু আমি যে অনীককে সত্যিই ভালোবাসি। অন্তর দিয়ে ভালোবাসি। হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি। আর সত্যিকারের ভালোবাসাতো জীবনে একবারই আসে সরোজ। তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু। তোমার স্থান আমার মনের মনিকোঠায়। সেই জায়গাটা শুধুমাত্র তোমার জন্য। সেখানে তুমি একচ্ছত্র সম্রাট।"


      - "ঠিক আছে রিমি, তুমি আর আমি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসাবে আছি, থাকবো।"


      কাটতে থাকে দিন, কেটে যায় মাস। সরোজকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে যেন জীবনে পরিপূর্ণতা আসে রিমির। এমনই একদিন সরোজ রিমিকে বলে, " মা খুব চাপ দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য। পাত্রী ঠিক হয়েছে। আমার বন্ধুরা ধরেছে ব্যাচেলার্স পার্টি দিতে হবে। তুমি সেই পার্টিতে থাকবেতো?"


      - "আবার আমাকে কেন? আমাকে বাদ দাও?"


      - "তোমাকে বাদ দিলে পার্টিটাই বাদ দেবো।"


      - "না না পার্টি বাদ দেবে কেন? আমাকে বাদ দিতে বলছি তার কারণ পার্টি মানে রাতের ব্যাপার। বেশি রাত অবধি আমি বাড়ির বাইরে থাকি না।"


      - "ঠিক আছে রাতে নয় তোমার অনারে আমি দিনের বেলাতে পার্টি দেবো। তাহলে আপত্তি নেইতো?"


      রাজি হয় রিমি। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট জায়গাতে রিমি পৌছে যায়। রিমিকে আসতে দেখে কে যেন ঘরের ভেতর থেকে বলে ওঠে, "এসো, লায়লা এসো। তোমার মজনু যে তোমার জন্য সকাল থেকে হাপিত্যেস করে বসে আছে।"


      ভেতরে ঢুকে সুদীপাকে দেখে রিমি সরোজকে প্রশ্ন করে, "এই মেয়েটা এখানে কি করছে?"


      তোতলাতে তোতলাতে সরোজ বলে, "এখানে... মানে... সুদীপা... মানে... ওর সঙ্গেইতো আমার বিয়ে হবে।"


      - "টানা চার বছর লাইন মারার পর।" ফোড়ন কাটে সুদীপা।


      - "মানে? কি বলছিস? কটাকে লটকে রেখেছিস?"একরাশ বিরক্তির সঙ্গে প্রশ্ন করে রিমি।


      - "রিমি বেশি বড় বড় কথা বলিস না। তুই পারমিশন দিয়েছিলি তাই তোর মালের সঙ্গে লাইন মেরেছি। কিন্তু তুই কার পারমিশনে আমার মালকে নিয়ে টানাটানি করছিস? ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস। আবার বড় বড় কথা! ঠিক আছে এখন ওসব কথা ছাড়। পরিস্কার করে বল আমার মালের সব যন্ত্রপাতি ঠিক আছে? নাকি এই কমাসে সরোজের কলকব্জা ঢিলে করে দিয়েছিস?" 


      - "সুদীপা ভুল বলেনি। রিমির সঙ্গে ভাব জমাতে আমাকে কম মেহনত করতে হয়নি! দিনের পর দিন বাসে উঠেছি আর নেমেছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। তারপর একদিন বাস কন্ডাক্টর সুযোগ করে দিল রিমির সঙ্গে ভাব জমানোর। দৌড়দৌড়ি করতে করতে সত্যিই আমার সব কলকব্জা ঢিলে হয়ে গেছে।" বলে ওঠে সরোজ।


      সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে রিমির। কিছুই বুঝতে পারছে না সে।


      - "আসতে পারি।" দরজা থেকে উঁকি মারে অনীক। অনীককে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রিমি।


      ঘরে ঢুকে অনীক বলতে শুরু করে, "একজন আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ভালোই হয়েছে। মুখটা আমার দিক থেকে অন্য দিকে ঘুরে গেল মানে কানটা আমার দিকে এলো। সেই কান এখন আমার কথা স্পষ্ট শুনতে পাবে। আমি স্রেফ দুটো কথা বলবো। কলেজের প্রথম দিনগুলোতে রিমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করতো সুদীপা বাস থেকে নেমে কাকে যেন হাত নাড়তো। কলেজের ছুটির পর কে যেন ওদের দেখে লুকিয়ে পড়তো! সে আর কেউ নয়, সে হচ্ছে সুদীপার দিবানা এই সরোজ কুমার। তারপর রিমি যখন একজনকে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করলো আমার অ্যাসিড টেস্ট করবে বলে। সেই গুপ্তচর প্রথম দিনই হাসতে হাসতে আমাকে সব বলে দিলো। তারপর আমি আর সুদীপা মিলে পাল্টা ছক বাজি শুরু করলাম। ব্যস কয়েক দিনের মধ্যেই রিমি মেম সাহেব ক্লিন বোল্ড। কথা বলতে বলতে অনীক গান গেয়ে ওঠেন,


      "কফোঁটা চোখের জল

       ফেলেছো যে তুমি

       ভালোবাসবে ..."।    


      - "এই যাতো এখান থেকে। আমার বয়ে গেছে তোর জন্য চোখের জল ফেলতে।" অনীকের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রিমি।


      - "বলছো, চোখের জল ফেলোনি? কিন্তু চোখের কোলেতো কালি পড়ে গেছে! কি আর করবে মেম সাহেব, দিল্লির লাড্ডু খেয়েছো, একটুতো পস্তাতে হবে!"


      - "কেন? কেন পস্তাবো?"


      - "কেন পস্তাবে? সত্যিইতো, কেন পস্তাবে?"


      - "কারণ ভালোবাসে।" আবার ফোড়ন কাটে সুদীপা।"

আন্তরিক - তপন তরফদার || Antarik - Tapan Tarapdar || ছোট গল্প ||Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

আন্তরিক

 তপন তরফদার


আন্তরিকতার কোন সঙ্গা হয়না। আন্তরিকতা কখন কার সঙ্গে গড়ে ওঠে তার কোন ব্যাকরণ এখনো অজানা। তবে এটা সবাই জানে দুপক্ষের মধ্য এক অদৃশ্য সেতু আতন্তরের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনই আন্তরিকতার মূল শিকড়। এই শিকড়কে দেখা যায়না অথচ উপলব্ধি করা যায়। যেমন শেষ শ্রাবণের বৃষ্টি থামলে সোনালি রোদ এক অনাবিল আনন্দে সবার মনকে রাঙিয়ে এক আন্তরিকতার প্রলেপ অন্তরে গেঁথে দেয়। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ যেমন মনে অনুরণন তোলে - বৃষ্টির শব্দ থেমে গেলেও একটা নিঃশব্দের স্বর্গীয় পরিবেশ আন্তরিকভাবে মনে গেঁথে যায়।


বার বাঁধভাঙ্গা আনন্দ হয় আন্তরিকতার সাথে সেই সময় যদি বাড়িতে নতুন


অতিথি আসার আওয়াজ আঁতুরঘর থেকে ভেসে আসে।


              রতন লাফিয়ে কাদাখোঁচা উঠানে নেমে পড়ে আঁতুরঘরের বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে দাইমা রাধার উদ্দেশ্যে বলে কী হয়েছে? রাধা এক সোহাগ মেশানো আন্তরিক রসালো গলায় বলে - রতন রসগোল্লা আনা, আমার জন্য গরদের শাড়ী নিয়ে আয় - তোর ছেলে হয়েছে।


        মুহূর্তে রতনের বুকের ছাতি দীর্ঘ হয়ে যায়। মুখে লটারি পাওয়ার হাসি।


বসন্তপুরের পঞ্চায়েত অফিস, নলিনীবালা বিদ্যালয়ে যাওয়ার তেমাথা রাস্তার প্রথম বাড়িটা রতনদের। রতনের ভিটে দুটো রাস্তা পেয়েছে। রতনের পিছনে মদনের ভিটে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে এই


দুই তেলি পরিবার আন্তরিকতার সঙ্গে এক হয়েই থাকে। কয়েক বছর আগে রতন, মদনের বাবা এক সঙ্গে


গঙ্গাসাগরে নৌকাডুবিতে মারা গেছে। রতন, মদনের বিয়ে প্রায় একই সময় হলেও


মদনের দুই ছেলে এক মেয়ে হয়ে গেছে। রতনের কিছুই হয়নি - গ্রামে রটেছে রতনের


বউ পুষ্প বাঁজা। মদন-মদনের বউ হরিমতি মনে মনে খুব খুশি ছিল - ওদের কোন


বাচ্চাকাচ্চা না হলে - ওই ভিটেটার স্বত্ব মদনের ছেলেরাই ভোগ করবে। বড়


রাস্তার ধারে স্কুলে, পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার রাস্তা। রাস্তা ঢালাই হয়ে


গেলেই লোক চলাচল বেড়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে নলিনীবালা স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক


হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত অফিসের পাশে ব্যাঙ্ক খোলা হবে। ওই তেমাথায় রতনের


জমিতে যদি ‘ভ্যারাইটি স্টোর্স’ খোলা যায়, ভালই জমে যাবে। এ টু জেড সব


পাওয়া যাবে। সব আশায় ছাই ফেলে দিল নবজাতক! মদনের বউ হরিমতি বলে - কোন


বেটা টের পাবে না - আমি সব ঠিক করে দেবো।


 


        ছেলের নাম রাখলো মঙ্গল। অন্নপ্রাশনে হরিমতি কোমর বেঁধে রান্না করে দিল।


মঙ্গলের মুখে ঠুসে দিল পঞ্চব্যাঞ্জন। অন্নপ্রাশনে বাচ্চাকে পেট পুরে খাওয়াতে হয়। মঙ্গল বিকালেই কেমন নেতিয়ে পড়ল। ওরা গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শম্ভুর কাছে নিয়ে যায়। শম্ভু ডাক্তার মনে করে সমস্ত রোগের উৎস পেট। পেট যদি পরিস্কার থাকে - বিশেষ করে বাচ্চাদের স্ফূর্তি ভালই থাকবে। শম্ভু ডাক্তার মঙ্গলের পেট -সাফার ওষূধ দিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার বাহ্ন্যি করার পর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল মঙ্গল। মঙ্গলের হাসিশুনতে পেয়ে মদন হরিমতিকে বলল -কি গো, সবতো ঠিকই আছে। হরিমতি বলে – মনে হয় ধুতরোটা কম পরেছিল।


                মঙ্গল ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। স্কুলের পিওন ব্রজকিশোরের বউ সরমা, মেয়ে ময়না সময় পেলেই পুষ্পর সাথে আন্তরিকতার সঙ্গেই গল্প করতে আসে। ময়না-মঙ্গল খেলনাপাতি খেলে। মঙ্গল হয় বর, ময়না হয় বউ। ময়না পাকা গিন্নির মতো বলে - তুমি চান করে এসো, আমার ভাত রান্না হয়ে গেছে – তোমাকে খেতে দেবো।


          মঙ্গলের দশ বছরের জন্মদিন খুব আন্তরিকভাবে পালন করা হচ্ছে। হরিমতি পায়েস এনেছে মঙ্গলের জন্য। এখন মঙ্গলকে হাতে করে খাওয়াতে হয়না। লাউ-চিংড়ি খেয়ে উঃ আঃ করতে থাকে মঙ্গল। পুষ্প মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে - লঙ্কা খেয়ে ফেলেছিস, পায়েস মুখে দে। ঝাল কমে যাবে। মঙ্গল পায়েস মুখে দেয়। জিভে কেমন যেন ঠেকে। কিছু বলে না - হয়তঃ ঝালের জন্য পায়েসটার স্বাদ এমন তিতকুটে লাগছে।


             বিকাল থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা - বমি করতে যায় অথচ বমি হয় না। যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে থাকে।শম্ভু ডাক্তার এবারও আন্তরিকতার সঙ্গে পেট পরিষ্কারের ওষুধই দিল - কিন্তু কোন কাজ হল না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো ঘি রঙের থুথুর সঙ্গে নিলচে ছোপ। শম্ভু ডাক্তার আন্তরিকতার সঙ্গে দেখেই বলে, এখুনি একে বড় হা্সপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি ভাল বুঝছি না।


     যমে মানুষে টানাটানি। বেঁচে গেছে মঙ্গল কিন্তু বাঁদিকের হাত পা কেমন বেঁকে গেছে। বাঁদিকের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে লালা পরে।কথা বলতে গেলে চোখে মুখে অসহ্য যন্ত্রণার ছবি ফুটে ওঠে। হরিমতি আপশোষ করে বলে - কলকের বিষ মেরে ফেলতে পারল না। রতন একেবারে ভেঙে পড়ল। সুস্থ ছেলেটার এ কি হল?


     তাপ দেওয়া তাসার মত গুমগুম করে বেজে যায় রতনের মন। বেশ কিছু বছর পরেও রতন


মনে করে নিশ্চয় কোন পাপ করেছিল - তাই এই সাজা। সব কিছু ভুলে থাকার জন্য আদিবাসী পাড়ায় যাতায়াত শুরু করল। এখন আদিবাসীদের ডেরায় হাঁড়িয়ার সঙ্গে চোলাই ও চালু হয়ে গেছে। মদনও লুকিয়ে লুকিয়ে ধেনোমদের বোতল রতনকে এনে দেয়। সজনে ফুলের এক বিশেষ গন্ধ থাকে, যারা জানে তাদের নাকে ধাক্কা মারে। এই ধেনোর এক আন্তরিকতার বিশেষ মহিমা আছে যা ছড়িয়ে পরে দাবানলের মতো -সবাই জেনে যায় রতন “নেশা করে”। মদনের এনে দেওয়া ধেনো খেয়ে রতনের বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতেস থাকে। বুক চেপে শুয়ে পড়তেই পুষ্প তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে থাকে। এই হাওয়া কোন কাজে লাগেনা। রতন অকালেই উবে যায়।


           ওদিকে ব্রজকিশোর মারা গেল। শম্ভু ডাক্তার রোগটা যে ‘ডেঙ্গু’, ধরতেই পারেনি। ময়নার মা সরমা, স্কুল সীমানায় একপ্রান্তে নির্জন ডোবার ধারে বাঁশ বাগানের পাশে টিনের চালার মাটির ঘরে যেখানে থাকে, সেখানে রাতের অন্ধকারে দরজায় টোকা পড়তে লাগল। রাত হলেই মা-মেয়ে দুজনেই সিঁটিয়ে থাকে, বুঝতে পারে ওরা পঞ্চায়েতের লোক।


      ওদিকে মদন - হরিমতি নিজেদের আকাঙ্খা পূরণ করতে কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। পুষ্পকে পাখি পড়ানোর মতো সব সময় বলতে তাকে ছেলের চিকিৎসার জন্য, তোমাদের সংসার চালানোর জন্য ভিটেটা বিক্রি করে দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাও। মামার বাড়িতে ন্যালাখ্যাপা ছেলে অনেক সাহায্য পাবে।


      পুষ্প নিজের শ্বশুর বাড়ির ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি নয়। মদনরা বুঝতে পারে


চালটা ঠিক ধোপে টিকল না। হাল ছাড়ার পাত্র নয় মদনরা। কিছুদিন বাদে আন্তরিকতার সঙ্গেই বলে - বউদি তোমরা তো মাত্র দুজন, এতবড় জায়গা নিয়ে কি করবে। তোমার ছেলেকে দিয়ে তো কিছু হবেনা। আমি তোমাকে ভিটের এক দিকে ঘর করে দেবো। জমির জন্য টাকাও দেব। পুষ্প বুঝতে পারে বাঘের থাবার সামনে পড়েছে। দুর্বলের সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনা। এখন রাজনীতির ঝান্ডা না ধরলে বাঁচা যাবে না। মদন পঞ্চায়েতের দলের লোক হয়ে গেছে। পুষ্প কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে অসহায়, ফুলের মতো ফুটে আছে। সবাই তাকে দখল করতে তৎপর। মুখ নীচু করে বলে - ঠাকুরপো তুমি যা ভাল বোঝো, করো।


       ব্রজকিশোর নিজে ভাল লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিল। মেয়েরা নতুন কিছু সাহসী কাজ, প্রতিভা ও আন্তরিকতার জোরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি মেয়েকে দিত। উৎসাহ দিয়ে বলতো - জানিসতো মা, এক মেয়ে এভারেষ্ট জয় করেছে। ময়না বলে, জানি অনেক মেয়েই পাহাড়ে উঠেছে। ব্রজকিশোর বলে, এ মেয়ে অরুণিমা সিনহা একপায়ে ভর করে উঠেছে। ময়না বলে, আন্তরিকতার সঙ্গে মনের জোরই আসল জোর।


      ছিপছিপে শ্যামাঙ্গী প্রতিমার মতো মুখ ও চুল ময়নার। তার শরীরে ক্লান্তি নেই, চনমনে চিতল হরিণী। গাঁইয়া মুখ হলেও মুখে বালি সরানো ফল্গু নদীর মতো ঝকঝকে লাবন্য। বুদ্ধিতে খনার থেকে কিছু কম নয়। ময়না আন্তরিকতার সঙ্গেই প্রথমেই চায় স্কুলের জায়গাটা ছাড়তে। ঝুপসি গাব, মহানীম গাছের মাঝে ফাঁকা জমিতে রাতের অন্ধকারে ভুতের নাচের আসর বসে - তারাই রাত্রে দরজায় আওয়াজ তোলে। রুখে দাঁড়ালে বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে পালায়। এইভাবে আর কতদিন চলবে।


      মঙ্গলের বাড়িতে যায় সরমা, ময়নার খোঁজখবর নিতে। সুখ-দুঃখের গল্প করতে। পুষ্পকে আশ্বাস দেয় - চিন্তা করবেন না আন্তরিকতার সঙ্গেই বলে মাসিমা, মঙ্গল ভাল হয়ে যাবে। পুষ্পর মুখে শুকনো হাসি। সে দিনের সূর্য মঙ্গলদের বকুল গাছের পাতায় শেষ আলোর চুম্বন দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। এই সময়েই মদন এসে বলে - বৌদি তোমাদের দলিলটা দাও। কালই রেজিস্ট্রি করব, তোমাকে নিয়ে যাব - ওখানেই সব টাকা দিয়ে দেবো। ময়না বলে ওঠে - না “মা”- আপনি দলিল দেবেন না। আমার শ্বশুর বাড়ির ভিটে আমরাই আন্তরিকতার সঙ্গে রক্ষা করব। মদন রেগে গিয়ে বলে - সেদিনের ছুঁড়ি, আমার সাথে রসিকতা হচ্ছে। ময়নার পাথরে খোদাই করা চোখ মুখ আরো দৃঢ় করে বলে - আমরা অসহায়রা এক হয়েই নিজেদেরই আন্তরিকভাবে সহায় হব। আমার বাবা মারা গেছে – ওই শকুনরা আমাদের ছিঁড়ে খাবে। অসহায় বিধবার ভিটে হায়নারা খাবে, তা হবেনা। আমি মঙ্গলকে বিয়ে করে সব সামলে নেব। মঙ্গলকে নিয়ে সিধে ময়না কালীতলায় চলে আসে। পূজারির কাছ থেকে সিঁদুর চেয়ে নিয়ে মঙ্গলকে বলে পড়িয়ে দিতে। মঙ্গলের চোখে মুখে যুদ্ধ জয়ের ছবি। একটুও হাত কাঁপে না। বুদ্ধপূর্ণিমার আলো, সমগ্র জগতকে মোহময়ী করে তুলেছে। ময়না মঙ্গলকে নিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিয়ে গাইতে থাকে - ও রজনীগন্ধা তোমার ..........। বেচারা মদন, হরিমতিরা


ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। দুই বিধবা পরস্পরের হাত ধরে আন্তরিকতার সঙ্গে শরীরের ইশারায়


বুঝিয়ে দেয় আমরাও পারি জয়ী হতে পারি।

ভীমরতি - অমিত কুমার রায় || Bhimrati - Amit Kumar ray || অনুগল্প || Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

 ভীমরতি 

অমিত কুমার রায়


সত্যেনকে প্রায়ই অনেকে এসে মুখর জিজ্ঞেসু স্বরে বলে -- সত্যেন তোমার লেখা রেডিওতে শুনলাম। বেশ ভালই লেখ, তো নজরানা পাও?

সত্যেন সংক্ষেপে না বলে আবার খবরের কাগজ পড়তে থাকে। সেই ব্যক্তি বলেই চলে -- তবে লিখে লাভ কী? সত্যেন হাসতে হাসতে বলে -- সেই কথাই এবার আমার অণুগল্পে লিখবো, বাঁদর করে কলার আদর, মুক্তা চেনে ঝিনুক বৌ!

ওপাড়ার মণি কা একদিন সত্যেনকে বলল -- সত্যেন, তোমার লেখা উদ্বোধন এ পেয়ে পড়লাম, বেশ ভাল লেখা ! তো কিছু নোট টোট পেলে?...... সত্যেন শান্ত ভাবেই বলল-- না। ভীমরতি ধরেছে লিখেটিখে ফেলি ওই আর কি!

পাশদিয়ে নয়না কলেজ যাচ্ছিল সে থমকে দাঁড়ালো, মণি কা চলে যেতে সত্যেনের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল-- সতুদা, এক রতি. দেড় রতি, দুরতি..... পাঁচ রতি দশ রতি শুনেছি ভীমরতি কতো রতিতে হয় গো ! সত্যেন এবার একটা অণুগল্প লেখার চেষ্টা করছিল সে বিরক্ত হয়েই বলল -- লেখার ক্ষতি যে করে তার মধ্যে হয়। 

নয়না চোখ বড়ো করে বললো, রাগছো কেন সতুদা রতি মানে তো মিলন, তাহলে ভীমরতি মানে ভীমের ওজন যতো ভরি তাই না সতুদা! সত্যেন বললে-- থামবি? নয়না বললে, থামবো কেন সতুদা, তুমিই তো আমার অগতির গতি, দশরতি হাজার রতি রত্ন গো! 

সত্যেন বলল দেখাচ্ছি, আমি ক'রতি, আজই তোর বাবা মায়ের কাছে যাব।

নয়নার বাবা সত্যেনকে বললেন, তোমার লেখা যদি ভীমরতি হয় তো আমার মেয়ে নয়না আ-রতি, কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে নিয়েছো তো আগেই।

রতনের প্রেমের স্বর্গাভা - রানা জামান || Rataner premer sargova - Rana Zaman || ছোট গল্প ||Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

 রতনের প্রেমের স্বর্গাভা

রানা জামান


 

 


রতন কাঁদছে। মাঝে মাঝে বিলাপের মতো শোনা যাচ্ছে; তবে বিলাপে কী বলছে বুঝা যাচ্ছে না।


পাশে ধবধবে শাদা শশ্রুমণ্ডিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্বিকার বসে থেকে গিটারের তার টাইট দিচ্ছেন।


হেচকি টানার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথকে আড়চোখে বারবার দেখছে রতন।


রতনের কান্না আর কবিগুরুর নির্বিকারভাব আমার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছিলো। রতনের প্রতি সহানুভূতি শতভাগ; বয়োবৃদ্ধ কবির প্রতি রাগতে গিয়েও পারছি না। এতো প্রিয় কবি; নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নিজ হাতে গীতাঞ্জলী ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য।


আর রতনটাও যেনো কী! সেই কিশোর অবস্থায় কোন এক পোস্টাপিসে চাকরি কালে যুবক রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়েছিলো। যুবক রবীন্দ্রনাথ রতনের প্রেমে পড়েনি। যুবক রবীবাবু অনুগ্রহ করে রতনকে কিছু অ আ শেখাতে চেষ্টা করেছেন মাত্র। এতেই মেয়েরা প্রেমে পড়ে যায়! সেকারণে ঠকেও খুব তাড়াতাড়ি। 'বড় প্রেম শুধু কাছেও টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।'


এসব ভেবে রতনের প্রতি রাগ হলো আমার। রতনের কাঁধে হাত রেখে বললাম, সেই কিশোর কালে এই লোকটাকে দেখেছিলে। এখন উনি বৃদ্ধ, থুরথুরে বুড়া। উনার প্রতি তোমার প্রেম আজও অটুট আছে! এই বৃদ্ধ এখন তোমাকে কী দিতে পারবে রতন?


একবার হেচকি টেনে রতন বললো, তুমি কী বুঝবে প্রেমের মর্ম? তোমাদের আজকের প্রেম শরীর নির্ভর হয়ে গেছে। আমারটা সেরকম না। উনি যেমনি যে অবস্থায় থাকুন, উনাকে ভালোবাসি। উনি আমার আরাধ্য। আমৃত্যু উনাকে ভালোবেসে যাবো।


গিটারের তারটানা ঠিক হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গিটারে একবার টুং শব্দ করে স্বগতোক্তি করলেন, এইবার ঠিক হইয়াছে।


রতন ফের ডুকরে কাঁদতে শুরু করলে রবীবাবু নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কে কাঁদে ওখানে? কান্নার স্বরটা কেমন যেনো চেনা মনে হচ্ছে।


আমি বললাম, ও রতন।


কোন রতন? দাঁড়াও দাঁড়াও! সেই পোস্টাপিসের রতন! পোস্টাপিসের নামটা মনে করতে পারছি না।


রতন এগিয়ে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে একবার হেচকি টেনে বললো, আমি সেই রতন বাবু। এখন বেশ বড় হয়েছি। সব বুঝতে পারি।


রবীন্দ্রনাথ প্রলম্বিত কন্ঠে বললেন, আমি যাকে ভালোবাসি সে তুমি নও রতন। তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।


রতন মুখে ওড়নার আঁচল চেপে ডুকরে কাঁদতে লাগলো।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গিটার বাজানোয় মগ্ন হয়ে গেলেন।

কারণ ব্যক্তিগত - প্রদীপ সেনগুপ্ত || Karon Baktigoto - Pradip Sengupta || ছোট গল্প || Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

কারণ ব্যক্তিগত

প্রদীপ সেনগুপ্ত




এষার কদিন ধরেই মনে হচ্ছিল শ্রেয়া বোধহয় ভালো নেই। বেশ কয়েকবার উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসাও করেছে মেয়েকে, কিন্তু শ্রেয়া সরাসরি জানিয়েছে মাকে - উৎকণ্ঠার কিছু নেই।


এষা একদিন দৃঢ় ভাবে প্রশ্ন করল মেয়েকে,

আমার কিন্তু ভয় করছে শ্রেয়া তোকে দেখে, কি হয়েছে বলত?


শ্রেয়া খুব স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিল, -

আমি বোধ হয় কনসিভ করেছি মা।

কথাটা এতটাই নির্লিপ্তভাবে শ্রেয়া তার মাকে জানাল যে ব্যাপারটা যেন এমন কিছু অস্বাভাবিক নয়, তবে একটু অসময়ে ঘটে গেছে। এষা কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকল শ্রেয়ার দিকে, কি যেন একটা বলতেও গেল - কিন্তু গলা দিয়ে শুধু একটা ঘড়ঘড় আওয়াজের মত হল।

শ্রেয়া পরিবারে একরকম একাকিনী। বাবা প্রিয়তোষ চিরকালই স্বল্পভাষী, তার উপর, সংসারে এষার নিয়ন্ত্রন বেশী থাকায় ওর দায়িত্বও কমে আসছিল ক্রমে ক্রমে। শ্রেয়ার কাকা মনতোষ বেশ দৃঢ় স্বভাবের মানুষ। সংসারে তার অভিমত বা শাসন যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। এষার মনের মধ্যে তখন ঝড়, ও সিদ্ধান্ত নিল ব্যাপারটা আর গোপন রাখা উচিত নয় - পরিবারের মানসম্মান যেমন জড়িত, তেমন শ্রেয়ারও একটা কিছু করা দরকার।


মনতোষ অফিস থেকে ফিরলে এষা ওর মুখোমুখি হল। মনতোষ বিপত্নীক, বইপত্রই ওর সবসময়ের সঙ্গী। অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যেবেলায় মনতোষ একটা বই মুখে করে ইজিচেয়ারে বসেছিল। এষা ধীর পায়ে ঘরে ঢুকল।

- কিছু বলবে বৌদি? মনতোষ জিজ্ঞাসা করল।

এষার গলার ভিতর একটা মাংসপিণ্ড কয়েকবার ওঠানামা করল। মনতোষ সহজেই বুঝে নিল একটা মারাত্মক কিছু ঘটেছে, কিন্তু সেটা যে শ্রেয়ার এই ব্যাপার সেটা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।


মনতোষ দু' হাত এক করে মাথা নিচু করে বসে থাকল অনেকক্ষণ। এষার মনটাও অনেকটা হালকা হল মনতোষকে সব জানাতে পেরে। 

-- ছি, ছি, আমি ত ভাবতেই পারছি না বৌদি!

-- আমি কি ভাবতে পারছি ঠাকুর পো, কি যে করব।

-- শ্রেয়া কি বলছে? ছেলেটাই বা কে?

-- আমি জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাই নি, তুমি একটা কিছু কর।

মনতোষ ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে লাগল।

-- দাদা জানে?

-কিছু বলিনি এখনো, ও জেনেই বা করবেটা কি শুনি? যা করার আমাদের দুজনকেই করতে হবে।

এষা রূঢ়ভাবে কথাগুলো উচ্চারণ করল। 


শ্রেয়া ঘরের মধ্যে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল। মনতোষ আর এষা ওর ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিল।

মনতোষ চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করল শ্রেয়াকে,

-- স্কাউন্ডেলটা কে?

নামটা না জানালে কি আমার মুক্তি নেই?


রাত্রিবেলা এষা শেষমেষ প্রিয়তোষকে জানাল কথাটা। প্রিয়তোষ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞাসা করল, তা, তোমরা কি করবে ঠিক করেছ?'

এষা অসহায় ভাবে মাথা নাড়ল,

- কিচ্ছু বুঝতে পারছি না কি করব।

প্রিয়তোষ উঠে দাঁড়াল, এষা জিজ্ঞাসা করল,

-- কোথায় যাচ্ছ?

প্রিয়তোষ কোন কথা না বলে শ্রেয়ার ঘরের দিকে চলল।


শ্রেয়া জেগেই ছিল। প্রিয়তোষ দরজায় টোকা মারতেই ও জিজ্ঞাসা করল,

-- কে?

-- আমি, বাবা।

-- এস, দরজা খোলাই আছে।


প্রিয়তোষ শ্রেয়ার পাশে এসে বসল, আলতো ভাবে মাখায় হাত রেখে বলল,

-- এটা কি করলি তুই? আমরা এখন কি করি বলত ? 

শ্রেয়া চুপ করে বসে রইল। প্রিয়তোষ আরো কিছুক্ষণ বসে উঠে দাঁড়াল, শ্রেয়ার মাথায় হাত রেখে বলল,

-- দ্যাখ, মা কি বলে।


শ্রেয়া জানে মা কি বলতে পারে, এবং শ্রেয়ার ধারণাই সত্যি হয়ে ছিল, শ্রেয়াও আপত্তি করে নি অতঃপর। এরপর সংসারে নিজের মানুষ বলতে বাবা ছাড়া আর কেউ রইল না ওর। কাকা ত' ওর মুখ দেখাই বন্ধ করেছে প্রায়। এষাও বাক্যালাপ বন্ধ রেখেছে ওর সাথে। শুধু প্রিয়তোষের সাথেই যা একটু কথাবার্তা।


এক আশ্চর্য সাবলীলতায় শ্রেয়ার দিন চলতে লাগল। এর মধ্যে পড়াশুনোটাও শেষ করেছে শ্রেয়া। তবে আরও কিছু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সাথে সাথে। প্রিয়তোষ সংসারে তার নিস্পৃহ ভাবটা একই ভাবে বহন করে চলেছে। এষা ইদানীং একটু পাল্টেছে। শ্রেয়ার সাথে কথাবার্তা আগের মতই চলছে,

তবে কোথায় যেন একটু দ্বিধা কাজ করছে। একমাত্র শ্রেয়াই নির্বিকার।


প্রিয়তোষ বাড়ি ফিরতেই শ্রেয়া একরকম বাবার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পরল। প্রিয়তোষ হেসে বলল,

-- কোন ভাল খবর আছে বুঝি?

শ্রেয়া ঘাড় নাড়ল,

-- চাকরী পেয়েছি, কোথায় জানো?

প্রিয়তোষ হেসে বলল,

-- সেটা তুই না বললে কি করে বলি।

-- আর বি আই তে। 

-- বাব্বা, এত দারুণ খবর! মা নিশ্চই খুশি হয়েছে?

-- মা কে এখনো বলিনি। 

-- এটা ঠিক করিস নি। যা, মা কে বলে আয়।


সেদিন রাত্রে অনেকদিন পর শ্রেয়া সবার সাথে এক টেবিলে খেল। যদিও মনতোষ কোন কথা বলে। রাতে প্রিয়তোষ শ্রেয়ার ঘরে এল। শ্রেয়া একটা বই পড়ছিল। বাবাকে এত রাতে দেখে শ্রেয়া বেশ অবাক হল,

- কিছু হয়েছে বাবা?

-- আমি ভাবছিলাম, এবার তোর বিয়েটা দিয়ে দেব।

খুব সহজভাবেই প্রিয়তোষ কথাটা বলল। 

- না বাবা, এখনই না। তুমি কি মনে কর আমি বুড়িয়ে গেছি?

-- ঠিক তা নয় রে মা, আমার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না তাই.....

- কিচ্ছু হবেনা তোমার। মেয়ের রোজগারে একটু আনন্দ করতে ইচ্ছে হয়না? আমার ত' অনেক প্ল্যান.... প্রিয়তোষ বুঝল এই ব্যাপারে এখন যে কোন আলোচনাই অর্থহীন।


শ্রেয়া সেদিন বাড়িতে ঢুকল বেশ হালকা মনে। হাতে কিছু খাবারের প্যাকেট, প্রথম মাইনে পেয়েছে সো আজ। এষাই দরজা খুলে দিয়েছিল। শ্রেয়া খাবারের প্যাকেটটা মায়ের হাতে তুলে দিল। এষা জিজ্ঞাসা করল,

-- কি আছে এতে?

-- চিকেনের কিছু প্রিপারেশন, খেও কিন্তু।


প্রিয়তোষ ঘরেই ছিল। শ্রেয়া সোজা ওর বাবার সামনে এসে দাঁড়াল, একটা খাম বাবার হাতে দিয়ে বলল

-- ধরো, আমার প্রথম আয়।

প্রিয়তোষ খামটা মাথায় ঠেকিয়ে আবার শ্রেয়ার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বলল,

- এটা মা কে দিয়ে আয়।


রাতে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসল। খেতে খেতে মনতোষ বলল,

-- একটা কথা বলা হয় নি, বিটু আসছে, অবশ্য একদিনের জন্য। কাল সকালে এসে পরশু মর্ণিং ফ্লাইটেই চলে যাবে। মনুদি ফোন করেছিলেন।

মনুদি, অর্থাৎ মণিদীপা মনতোষের বড়শালী। মনতোষের শ্বশুর বাড়ির সাথে এ বাড়ির সম্পর্ক এখনো আগের মতই। বিটু হল মণিদীপার ছেলে। কৃতি ছেলে, চাকরীটাও বেশ ভালোই করে মুম্বাইতে আছে। বছর তিনেক আগে একবার এসেছিল বিটু, চারপাঁচ দিন ছিল বেশ হৈ হৈ করে।


শ্রেয়ার থেকে বয়সে একটু বড় হলেও শ্রেয়া ওর বন্ধুর মত। প্রিয়তোষ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, - তোর ত নতুন চাকরী, না হলে বলতাম একদিন ছুটি নিতে।

মনতোষ মুখ না তুলে বলল,

– বিটু ত আর সারা দিন বাড়ি থাকছেনা, সন্ধ্যের সময়টা যা একটু থাকবে তখন ত সবাই আছি। ওর শুধু শুধু ছুটির নেবার দরকার কি! ঘরের আবহাওয়াটা বেশ সহজ হয়ে আসছে দেখে প্রিয়তোষের ভালো লাগছিল। শ্রেয়া খাওয়া হয়ে গেলে উঠে পড়ল, প্রিয়তোষের দিকে তাকিয়ে বলল,

- আমি উঠছি।

প্রিয়তোষ ঘাড় নেড়ে অনুমতি দিল।


শ্রেয়ার একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমানো অভ্যেস, সকালে ঘুমটা যখন পাতলা হয়ে এসেছে তখন কানে এল অনেক জনের কথাবার্তার আওয়াজ, কেউ এসেছে বোধহয়। কেউ মানে নিশ্চয়ই বিটু। শ্রেয়া উঠে পরে দরজা খুলে বাইরে এল, ডাইনিং হলে বিটু চায়ের কাপ নিয়ে বসে সবার সাথে কথা বলছিল- শ্রেয়াকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল,

- সব শুনেছি, আজ ফিরে এসে যা খুশি তাই খাব এবং সেটা তোমার খরচায়।

শ্রেয়া হেসে ফেলল, বলল,

- ঠিক আছে, কি কি খাবে একটা লিস্ট করে রেখো, সবাই মিলে খাব।


শ্রেয়া অফিস চলে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে। বিটু তখন তৈরী হচ্ছিল বেরোবে বলে। এষা বিটুর দিকে তাকিয়ে বলল,

-- এই বেলাটা কষ্ট করে যা আছে খাও, রাত্রে ত শ্রেয়ার দায়িত্ব।

বিটু হেসে বলল,

- এ ব্যাপারটা আমিই দেখব, এত ভালো একটা খবর অল্পে ও ছাড়া পাবে না কি?


শ্রেয়ার ইচ্ছে ছিল সবাইকে নিয়ে কোন ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়াবার। কিন্তু এষার আপত্তিতে হল না। এষা বলল, 

-- জানিস ত তোর কাকা বা বাবা কেউই বাইরে খাওয়া পছন্দ করে না, আর আমারও ঠিক ধাতে সয় না। বরং খাবারটা কিনে এনেও ত আমরা এখানে বসে খেতে পারি।

শ্রেয়া চুপ করে রইল। বিটু বলল,

-- সেই ভালো, বাড়িতে বেশ হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে খাওয়া যাবে।


সন্ধ্যেবেলায় শ্রেয়া বাড়ি ফিরে দেখল বিটু তখনো ফেরেনি। এষাকে ডেকে ও জিজ্ঞাসা করল,

- কি খাবে বল, আজকে তোমার পছন্দ মত খাবার আনব।

এষা অনেকদিন পর শ্রেয়ার কাঁধে হাত রাখল, হেসে বলল,

--আমার আবার পছন্দ অপছন্দ কি, তোর যেটা ভালো মনে হয় তাই আন।

শ্রেয়া বলল,

-- ঠিক আছে, তাই আনব - এটা খাই না, ওটা খাই না বলতে পারবে না কিন্তু। যা আনব লক্ষী মেয়ের মত খেতে হবে।

বিটু অফিস থেকে এসেই চিৎকার করে শ্রেয়াকে ডাকতে লাগল। এষা বলল,

- অফিস থেকে এসেছ, চা জলখাবার খেয়ে নাও। বিটু গম্ভীর মুখে বলল,

- উঁহু, খিদে নষ্ট করতে রাজী নই আমি। এখনি বেরোতে হবে, নো দেরি। শ্রেয়া রেডিই ছিল। বিটুর সামনে এসে বলল,

- তোমার খাবার পালিয়ে যাবে না, একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। আমারও একটু চা খেতে ইচ্ছে করছে।


দুজনে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ঠিক করল পার্কস্ট্রীটেই যাবে। শ্রেয়া আপত্তি করল না। একটু হেঁটে একটা ট্যাক্সিও পেয়ে গেল।

খাবারের অর্ডার দিয়ে ওরা দুটো চেয়ারে মুখোমুখি বসল। খাবার তৈরী হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। বিটু ওদের অফিসের নানা রকম গল্প করছিল। তারপর হঠাৎ খুব নীচু গলায় বলল,

-- আমি একটা যন্ত্রনার মধ্যে আছি শ্রেয়া। একটা অপরাধ বোধ আমাকে গত তিন বছর ধরে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না।

শ্রেয়ার বুকের মধ্যে একদল অশ্বারোহী দৌড়তে আরম্ভ করেছে। একটা অজ্ঞাত সংশয়ে ওর মুখটা আবৃত হয়ে যাচ্ছিল। বিটু শ্রেয়ার দুটো হাত ধরে বলল,

-- তুমি যতক্ষণ না বলছ যে তুমি ক্ষমা করেছ... 

শ্রেয়া মনের মধ্যে দৃঢ়তা আনল, একটা সহজ আলো সারা মুখে ছড়িয়ে দিয়ে বলল, 

-- কথাটাত' শুনি।

বিটু মাথা নিচু করে অনেক দূর থেকে যেন বলল, 

--সেদিনের ঘটনাটা কেন যে ঘটল.. একটা এত বড় অন্যায়, মানে আমি বলতে চাইছি কেন যে সেদিন নিজেকে একটু ধরে রাখতে পারলাম না তাহলে এত বড় অন্যায়টা হত না, তোমাকে যে আমি নষ্ট করেছি শ্রেয়া সেটা আমি......

শ্রেয়া নিষ্পলক তাকিয়ে রইল বিটুর দিকে, তারপর শান্ত স্বরে বলল,

-- আমি ক্ষমা করলেই হবেত?

-- শুধু একবার বলে দাও, ব্যাপারটা তোমাকে হার্ট করে নি...

শ্রেয়া বিটুর বুকে ওর তর্জনী ছোঁয়াল, বলল,

--আমি কিছু মনে করছি না বিটু, ঠিক আছে?

বিটু হঠাৎ শিশুর মত সহজ হয়ে উঠল, উফ, বুকের থেকে একটা পাথর নেমে গেল।


সেদিন রতে সবাই মিলে অনেক রাত পর্যন্ত হৈ হৈ করে কাটিয়ে দিল। অনেক দিন পর মনতোষ শ্রেয়ার সাথে টুকরো টুকরো কথা বলল। পরদিনই বিটুর যাওয়া। এষা বিটুকে বলল,

-- এবার শুয়ে পর বিটু, কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।


বিটুর ফ্লাইট সকাল সাড়ে নটায়, সকাল সাতটার মধ্যেই বিটু তৈরী হয়ে গেল যাবার জন্য। যাবার সময় দেখল শ্রেয়া ওঠে নি। এষা শ্রেয়াকে ডাকতে যাচ্ছিল, প্রিয়তোষ বলল,

-- থাক্ না, ওকে ডাকতে হবে না।

বিটু বলল,

-- বাঙালীর কাঁচা ঘুম ভাঙাতে হবে না, ও ঘুমাক। আবার বোধহয় নেক্সট মান্থেই আবার আসতে হবে, তখন একটু বেশী দিনের জন্য আসব।


শ্রেয়া আটটার মধ্যেই রোজ উঠে পড়ে। কিন্তু মাড়ে আটটাতেও যখন ওর ঘুম ভাঙল না তখন এষার বেশ চিন্তা হল। শ্রেয়ার ঘরের দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দিল এষা, কিন্তু কোন সাড়া পেল না। তারপর বেশ জোরে কয়েকবার ধাক্কা দেবার পরেও যখন সাড়া পেল না তখন ওর বুকটা কেঁপে উঠল, কিছু হয়নি ত শ্রেয়ার?


প্রিয়তোষ অফিস যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিল। এষা ওর সামনে এসে অসহায়ের মত দাঁড়াল, প্রিয়তোষ জিজ্ঞাসা করল,

-- কি হয়েছে? কিছু বলবে?

-- শ্রেয়া ঘরের দরজা খুলছে না।


প্রিয়তোষ এক দৌড়ে শ্রেয়ার ঘরের সামনে চলে এল। মনতোষও ততক্ষণে চলে এসেছে। এষা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ওদের পাশে।


কিছুক্ষণের মধ্যেই সত্যটা প্রকাশ পেল, শ্রেয়া নেই। শ্রেয়ার ঘরের ভেঙে ফেলা দরজা দিয়ে ওর নিথর শরীরটা দেখা যাচ্ছিল খাটের উপর।


ওর এই নির্লিপ্ত পরে থাকাটাও যেন তেমন কোন ঘটনা নয়, ব্যক্তিগত কারণে একটু অসময়ে ঘটে গেছে।



ভুল - জিনিয়া কর || অনুগল্প || Onugolpo || Bhul - Jiniya Kar || Shorts story || Story || Bengali story || Bengali Short story

 ভুল

জিনিয়া কর



 মেখলা! আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। যথেষ্ট হয়েছে। আমার ও তো আত্মসন্মান বোধ আছে তো নাকি ! আমি আর এই বিয়েটা টানতে পারবো না। আগামী মাসেই আমি ডিভোর্সের আবেদন করছি। চায়ের কাপ হাতে প্রিয় বান্ধবীর কাছে অভিযোগ করে নদী।

মেখলা উত্তর না দিয়ে চায়ের কাপ হাতে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে নদীর দিকে।

নদী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবারো বলে , বেশ কয়েক মাস ধরেই দেখছি, মাস না ফুরোতেই অভির হাত টান, এমাসে তো ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সেও হাত পড়েছে। একটা এফ.ডি ম্যাচিওর না হতেই ভেঙ্গে ফেলেছে আমাকে জানায় নি পর্যন্ত। সবচেয়ে বড় কথা, টাকাগুলো কি করলো?

ওর জীবনে অন্য কেউ যে এসেছে সেটা ওর লুকোচুরির বহর দেখেই আমার সন্দেহ হচ্ছিল । সেদিন অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে যেতে দেখি ও বারান্দায় । হাতে মোবাইল। আমি গিয়ে দাঁড়াতে থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি এসে শুয়ে পড়লো।কিছু প্রশ্ন করলে সোজা মুখে উত্তর ও দেয় না আজকাল ।বাড়ি ফেরার অনিয়মিততা তো ছিলই, আজকাল নটা , কোনো কোনো দিন দশটাও বাজে।সেদিন একটা জরুরী কাজের কথা বলবো বলে দুপুরে কল করেছি ওর মোবাইলে, সুইচ অফ।ওর অফিসের এইচ ও ডি পারমিতাকে ফোন করে জানতে পারলাম ও নাকি সেদিন অফিসেই যায়নি....! ভাব!

আজকেও গেছে মুম্বাই। আমাকে বলে গেছে অফিসের কাজ। খোঁজ নিয়ে জেনেছি.....

এই মেখলা কি হলো রে? তুই কেন কাঁদছিস? ভাবছিস আমি দুর্বল ! কিভাবে এতগুলো বছরের সম্পর্ক..... শেষ টায় গলা কেঁপে যায় নদীর ও!

হঠাৎ হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে নদীকে জড়িয়ে ধরে মেখলা ।অভি কি তোকে কিছুই জানায়নি নদী? কিছুই না?

ক্কি কি জানানোর কথা? আমি কি জানি না?

 নদীকে ছেড়ে ওর হাত দুটো চেপে ধরে মেঘলা। মন শক্ত কর নদী। বড়ো কঠিন দিন আসছে হয়তো।অভিকে ভুল বুঝে আঘাত দিয়ে ফেলিস না যেন। সত্যিই কি তুই জানিস না?যে....

মেখলার কথাবার্তা হাবভাব দেখে নদী বিচলিত হয়? এভাবে বলছিস কেন রে? কি হয়েছে? 

নদী!অভির তো লিভার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আজ ওরা মুম্বাইয়ে , টাটা ক্যান্সার হাসপাতালেই গেছে....... । ওরা মানে অভি আর শমীক।তোকে জানাতে না করেছিল ।পারলাম না রে!




             


The Dream - Samir Kumar Dutta || English poem || poem || Poetry

 The Dream

          Samir Kumar Dutta

              


Walking along the way

I came across a dream

Which sees me

And I see him (personified),

It is coming again

In my rebirth

Perhaps to dream a dream.


There was such a dream

A tightly knitted dream

For which my time passed away

Leaving all of my tasks undone.


So many individuals become

So many different professionals 

But I remained unlike any of them

Being satisfied by touching my dreams,

Oh, Dream ! a thousand of salutes to you .

I was on this earth,as you were with me

Otherwise where had I, like a pauper

had the means of my livelihood

Without you,the Dream ?

Oh, Dream! a thousand of my salutes to you.

On the sky - Anjali Denandee || English poem || poem || Poetry

 On the sky

Anjali Denandee



On the sky,

There is a bit of moon.

Two bats fly...

From my balcony

I enjoy the beauty at night.

In my right hand,

Here is a silver spoon.

In my left hand,

Here is a bowl.

In it, pop corns with honey.

I am in joy of taste.

On the sky,

The stars light,

Wow, so beautiful!

In my soul,

I feel that my look is the creation-nest.

The sky,

It is too cool.

At night,

The moon, stars pull me, pull and pull.

My imagination reaches to the sky.

There it creates the imaginary poetry.

Which is just like the nectar-tree.

From which, nectar-fruits,

Come down on the earth,

On imaginary routes.

And here take birth,

Countless immortal lives,

From those fruits,

When these touch th

e Earth.

For ever they are alives.