অসহায় মা
প্রহ্লাদ কুমার প্রভাস
রাহুলের মা সকালে খেতে বসলে তার বৌ দৌড়ে এসে খাবারের থালাটা কেড়ে নিয়ে বলে " এই যে তোমার মাকে কতবার বলেছি যে প্রতিদিন সকালে ছোটনের জামা কাপড় না ধুয়ে, ঘর বাড়ি না মুছে,ঝাট না দিয়ে খেতে না বসতে? বুড়ির কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই নাকি? কতবার ভাত ফেলেও দিয়েছি তবু লজ্জা নাই?"
মা বলে " বৌমা শীতের দিন তো উঠতে দেরি হয়ে গেছে।ওষুধ খেতে হবে, তাই।"
রাহুলের বো বলে"ওতকিছু বুঝি না রাতেও তোমার খাওয়া বন্ধ। আর রাতে তুমি বারান্দায় শোবে। ঢাকা থেকে আমার ভাই আসবে"
রাহুল ও রাহুলের বৌ দুজনেই সরকারি চাকুরীজীবি।
বৃদ্ধ মা বারান্দার এক কোণে বসে অঝোরে কানছে। একদিকে পেটে ক্ষুধা তার উপর চোখে ভালো দেখে না, পায়ে ঠিকমতো বল নাই। ঔষধ ও ঠিকঠাক কিনে দেয় না। স্বামী বেঁচে থাকলে হয়ত কষ্ট কিছুটা কমত। দুপুরেও খাওয়া হলো না। ঔষধ ও ফুরিয়ে গেছে। রাতে ছেলে অফিস থেকে ফিরলে "মা" দরজায় গিয়ে দাড়ায় এবং বলে" মাগো দুটো খেতে দিবি আর যে পারছি না সইতে। ঔষধ ও নাই বাবা আজ তিনদিন হলো। একটাই ছিল যেটা সপ্তাহে একটা খেতে হতো। ওটাই সকালে খেয়ে নিয়েছি ভাত না খেয়ে। দে না মা একমুঠো ভাত আমিও তো তোর মায়েরই মতো" । নির্দয়ী বৌ ঠাঁই দাড়িয়ে রইল পাষাণের মতো। ছেলেও কিছু বলছে না দেখে মা দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ তারপর চলে গেল।
রাতে বৌ এর ভাই এলো এবং মা খোলা বারান্দায়। ছেঁড়া হালকা একখান কাঁথার ভিতর মা কাঁপছে আর দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে।
" হায়রে ছেলে বৌ নিয়ে এলি, মাকে ভুলে গেলি এই কি সন্তান?
মরে গেলে লোক খাওয়াবি ডাকবি ভগবান?"
বৃদ্ধ ৬৫ বছরের এই অসহায় জননী কানতে কানতে ঘুমিয়ে গেল কিন্তু সকালের রঙিন সূর্য আর দেখিনি। হারিয়ে গেল সমস্ত আলো তার জীবন থেকে। মুছে গেল সকল কান্না ঘুচে গেল সকল দুঃখ। আর কখনও কেউ তাকে খাওয়ার খোটা দিবে না। ঔষধ কেনার নামে কার ও কাছে হাত পাততে হবে না। ছেলে বৌ এবার তাদের নিজের রাজ্যে শান্তিতে রাজ্যত্ব করতে পারবে। কখনও আর কেউ ডাকবে না বাবা বলে কেউ বলবে না আর "মা আমায় একমুঠো ভাত দিবি?"
No comments:
Post a Comment