শেষ বিচার - চন্দন মিত্র || ses Bichar - Chandan Mitra || Story || Short Story || Bengali Story || Bengali Short Story || গল্প || ছোট গল্প || অনুগল্প
শেষ বিচার
চন্দন মিত্র
সালিশিসভা বসেছে হরিণপাড়া প্রাইমারি স্কুলে। বিচারক জয়ন্তবাবু, ওই স্কুলেরই হেডমাস্টার। সালিশিসভা এবং রাজনীতি করে করে চুল পাকিয়ে ফেলেছেন তিনি। যখন যে পার্টি ক্ষমতায় আসে তখন তিনি সেই পার্টির অবিসংবাদী গ্রামীণ নেতা। লালু, কালু, ভোলা, ঝুনো, হেপো নামের মারকুটে কয়েকজন চ্যালা তাঁর নিত্য সহচর। এরা আবার সালিশি সভারও অপরিহার্য অঙ্গ। পাড়ার জনছয়েক ছেলে মানিক মণ্ডলের পোড়ো বাঁশঝাড় থেকে খানকতক বাঁশ কেটে ভাস্করদের পুকুর পাড়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য কুঁড়ে বাঁধছিল। সে খবর জানাজানি হওয়ার সুবাদেই রোববার সকালের এই সালিশি সভার আয়োজন।
ছেলেদের অভয় দিয়ে এগিয়ে যায় দলের পাণ্ডা মিন্টু। ছেলেরা বসে থাকে স্কুল লাগোয়া বটতলায়। তারা জানত জরিমানা তো হবেই, সঙ্গে জুটবে নাকে খত দেওয়ার মতো বিশ্রী সাজা। আর শেষপাতে লাথি-কিল-চড় তো থাকবেই। কিন্তু মিন্টু জানত অন্য কথা। সে সটান সভায় ঢুকে সপ্রতিভভাবে জানতে চায়, ‘আচ্ছা ! এই সভার বিচারক কে ?’
খেঁকিয়ে ওঠে যমদূতচেহারার ভোলা হালদার, ‘কেন রে নবাববাচ্ছা ! জয়ন্তবাবুকে চিনিস না বুঝি ?’ মিন্টু ঘাবড়ায় না। সে বেশ সরস ও উচ্চকণ্ঠে তারিয়ে তারিয়ে বলে, ‘ও জয়ন্তবাবু বিচারক! তা উনি যে নিজের বউছেলে ছেড়ে মিনুখুড়ির বাড়িতে রাতের পর রাত পড়ে থাকেন তার বিচার কে করবে ?’
সালিশি দেখতে আসা ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-মদ্দ হাসিতে ফেটে পড়ে। যে সত্যটা এতদিন কেউই উচ্চারণ করার সাহস পায়নি, সেই সত্যের ধাক্কায় ত্রাসের সভা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। মিন্টু হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসছে দেখে ছেলেরা যথেষ্ট অবাক হয়।
Comments