গল্প || রীনা কে বলে দিও উৎপল দা || উৎপল মুখার্জী || Rina ke bole dio utpal da- Utpal Mukherjee || Bengali story || Short story

রীনা কে বলে দিও উৎপল দা

               উৎপল মুখার্জী


"হেরে গেছি আমি, জিতলে তুমি, হলো তো তর্কের বিনাশ" - রাগে গজরাতে গজরাতে বলতে থাকে রীনা, হারধন কে। 

সুন্দর সংসার তাদের, একটি মাত্র ছেলে, অত্যাধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনায় ক্লাস দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। 

পাড়ায় সব চাষীভূষা, আধুনিকতা ছাপ বড়োই কম, রীনা যা হোক করে টেনে টুনে মাধ্যমিকের দোরগোড়ায় পৌঁছেছিল বটে কিন্তু শিক্ষার অশিক্ষায় প্রতিশ্রুতির বন্যায় হতাশার কিশোরী, যৌবনের মাধূরী বেলা হঠাৎ এসে উপস্থিত। তারপর ই ঢাক ঢোল পিটিয়ে ,গ্ৰামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, হারাধনের বিয়ে, -কোতুলপুরে রায় বংশের তখনকার দিনে বি. এ পাশ করা চাকরি করা সাতাশ বছরের ছেলের সাথে আঠারো বছরের রুইদাস পরিবারে মদন মুচির মেয়ে রীনার সাথে বিয়ে হয়ে গেলো। 

বেশ কিছু মাস সংসার জীবন কাটতে না কাটতে শুচিবাই শাউরীর সাথে মনোমালিন্য ঘটলে, হারাধন অন্য জায়গায় বসবাসের ব্যবস্থা করে। জাতের ধর্ম অনুযায়ী সমাজের আটপৌরে আধুনিকতার চাক চিক্কন রীনার চোখে ধরা পড়ে, স্বামীর বেতনের পয়সা জমিয়ে, সোনার একটা ২ভরির হার, দুটো বাউঠি , দুটো সোনার চুরি , দুজনের দুটো পুরুষ্ঠ আংটি গড়িয়ে, বর্তমানে ছেলের একটা রূপার তক্তি বানিয়ে তবেই হয়েছে ক্ষান্ত। 

পিছনের বৎসরের গাজনে, ইটভাটার মালিকের ঘরে কাজ করতে গিয়ে শুনেছিল, ফর্সা কাকীমা, ইট ভাটা মালিকের বৌ, রত্না দাস, তাঁর ছোট ছেলেটার মুখে ইংরেজি কথার বন্যা বাংলার ভূমে পাখ পাখালি নিঝুম হয়ে শুনছে, অপরদিকে কাকের কর্কশ স্বর ইমারতি বিল্ডিং এ, বিদ্রুপ করে জানান দিচ্ছে , এ কি হলো রে, বাংলা যাদের মাতৃভাষা, তা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে পরের দেশের ভাষার তর্জনির চাপে, ফর্ সাকাকীমাকে স্তব্দ করে দিয়েছে, যার মানে বোঝায় যা ....তা... ! 

কাকীমা গর্বের সঙ্গে বলে," দেখ, ইংরেজি শিক্ষার দাম কত? 

সেই থেকে শখ করেই বাবা বাংলা মাধ্যমে শিক্ষক হলেও খোকন কে বা রীনার ছেলেকে, কলকাতার দামী ইংরেজি স্কুলে নার্সারিতে আবাসিকে ভর্তি করে এসেছে, তাই আজ তাঁর আনন্দের সীমা নেই, ছোট শিশু স্বপ্নের কলকাতা দেখবে, দেখবে ভারী যানবাহন, দেখবে মাটির তলায় রেল, আকাশে উড়োজাহাজ, বড়ো নদী, গঙ্গায় স্ট্রীমারের যাতায়াত ইত্যাদি...ইত্যাদি! 

হারাধন, আমার ই বন্ধু, এক ই স্কুলের মাস্টার। সে আমাকে সব কিছু বলে, কোন সুখ দুঃখের কথা চেপে রাখে নি, তাঁর বিয়ের কথায় বলেছিল, যে রীনা, হারাধনের ঘরের কাজের লোক , সেই রীনার উত্তেজনা র সুড়সুড়ি তে পা মেলাতে গিয়ে ই হারাধন কুপোকাত, তখনই জীবন যৌবনে জড়িয়ে পড়ে কোন এক ফাঁকা ঘরের আওয়াজ,- পেটে রীনা র আসে অপত্য। রীনা মুচিদের মেয়ে। পাড়া জানাজানি হওয়ার আগেই হারাধনের বাবা, মদনকে বলে বিয়ে দিয়ে দেয় তাঁর ছেলের সাথে, এতে পাড়ার পার্টি দাদারা কমিশন না পেয়ে গোটা গ্ৰাম কেই জানাজানি করে, বিশেষ ভাবে রীনার প্রথম ছেলে, খোকনের জন্মের ইতিহাস প্রচারের আলোকে , কোন এক অবৈধ সময়ের। খোকন কে -" বেধো "- ছেলে বলতে ও দ্বিধা রাখে নি, তাই তাড়াতাড়ি ছেলে পুর্নাঙ্গ রূপে পরিনত হওয়ার আগেই কলকাতায় স্থানান্তর। চিন্তার আধারে ই ছেলে কে গতকালই দিয়ে এসেছে টালিগঞ্জের জর্জ মেরিমাস স্কুলে। 

বাপ- মা কে ছেড়ে থাকতে হবে জেনে খুবই দুঃখে ছিল খোকন। 

দুর্গা পূজার ছুটি তে আবার তারা নিয়ে আসবে জানায়, কিন্তু তাঁর মনের অন্দরের কষ্ট সে ছাড়া কে জানবে? 

প্রায় একমাস হয়ে গেল, প্রতি পনের দিন অন্তর হারাধন কলকাতা যাই, মিশনে দেখে বেশ তাঁর ছেলে সবার সাথে মানিয়ে নিয়েছে, শুধুমাত্র তাঁরাই, রীনা- হারাধন তাদের ঘরে দুশ্চিন্তা ভোগ করে। একদিকে সংসারে উপদেষ্টা র অভাব, হারাধনের বাবা -মা কাছে থাকতেও ভ্রুনাক্ষরে খবর নেয় না, অপর দিকে রীনার বাক্যবাণে কেউ তাদের কাছে আসতে পারে না! গোটা গ্ৰামের মানুষ হারাধন কে স্বার্থন্বেষী ছেলে বলে। 

সেদিন সোমবার, হারাধন স্কুলে, হঠাৎ কলকাতা থেকে ফোন আসে, "আপনার ছেলের রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে", - তাড়াতাড়ি আসবার চেষ্টা করুন, ভালো আছে চিন্তা করবেন না "! 

হারাধন শুনেই চমকে উঠে, বাড়ি যাবার সময় না হলে ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে টালিগঞ্জের সেই বিশেষ ঠিকানা জর্জ মেরিমাস বিদ্যালয়ের দিকে প্রস্থান করে, পরে সে আমাকে জানায়, "খোকন গাড়ি চাপায় মারা গেছে, পোস্টমর্টেমে চলে গেছে, রীনা কে বলে দিও, উৎপল দা....।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024