Sunday, November 5, 2023

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

 




সম্পাদকীয়:-

শারদ প্রাতে নরম তুলার মেঘ, কাশে কাশে ঘন দাবদাহ, কোথাও ফ্যাকাসে আলো, কোথাও মুষলধারার অগ্নি স্নান। এমতাবস্তায় মায়ের দর্শন, মায়ের আশিষ লাভ ভাগ্যের ব্যাপার। যদি ঘরে ফিরে আসি, খাঁচার পাখি সোনার খাচায় কিংবা রুপার খাজায় বন্দী হই সেখানে শুধু দুদন্ড শান্তি দেয় সাহিত্য চর্চা। বিশেষত শারদ শুভেচ্ছার শারদ সংখ্যা গুলি। কল্পনা পিয়াসী কবি হৃদয়, আশায় ডুবে থাকা মধ্যবিত্ত পাঠক শুধু মুক্তির পথ খোঁজে যন্ত্র চালিত জীবনে থেকে পালিয়ে বাঁচার একটা নতুন আবেগ নিয়ে। এ শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ সার্বজনীন। বাঙালির আবেগ দুর্গাপূজা। দেশ দেশান্তরের আকুল আকাঙ্ক্ষা হলো শারদ উৎসব‌। মা সবার। মায়ের আশিষ সবার প্রাপ্য। সাহিত্য চর্চার অমোঘ টান নিয়ে কেটে উঠুক দুর্গা পূজার আনন্দ। ভরে উঠুক বাঙালি তথা সমগ্র ভারতবাসীর হৃদয়।


পরপর দুটি বছরের সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে ২০২৩ এর শারদ শুভেচ্ছা নিয়ে হাজির হচ্ছে আমরা- আপনাদের সকলের কাছে। তাই সকলেই এর স্বাদ নিন। সাধ মিটিয়ে আত্মসাৎ করুন প্রতিটি গল্প, প্রতিটি কবিতা। পুরাতন গ্লানিকে ছুটি দিন। সাহিত্য চর্চায় মজে উঠুন। ওয়াল সাহিত্য আড্ডা আপনাদের কাছে এক আনন্দময় মালাট। এক নতুন ভাবনার চিত্রপট। তাই একে উপলব্ধি করুন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সাহিত্যে থাকুন। ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা সাইট সকলের জন্য এই প্রার্থনা করে আসছে আর করে যাবে। ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলুন পাতায় পাতায়, পাঠক বর্গ মশগুল হোক আমাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডাতে। সকলকে শারদীয়া ১৪৩০ এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা।



                                ধন্যবাদান্তে

          ওয়ার্ল্ড সাহিত্য আড্ডা সম্পাদকীয় 

_________________________________________________


বিজ্ঞাপন:-




_________________________________________________

বিজ্ঞাপন:-


___________________________________________________


সূচিপত্র:-



কবিতা -

অঞ্জনা ভট্টাচার্য, নিখিল মিত্র ঠাকুর, অন্তরা মন্ডল, সব্যসাচী মন্ডল, পরাগ চৌধুরী, ভুবনেশ্বর মন্ডল, অঞ্জন বল, সুশান্ত সেন, তুষার ভট্টাচার্য, প্রদীপ ভট্টাচার্য, অসীম কুমার সমাদ্দার, লালন চাঁদ, অভিজিৎ দত্ত, আনন্দ গোপাল গড়াই, মিলি দাস, বদরুদ্দোজা শেখু, গৌড় দাস, সিক্তা পাল, রুপায়ন হালদার, পাভেল রহমান, জয়ন্ত সাহা, সতু মালাকার, সোমা রায়, আব্দুস সালাম, পরাগ চৌধুরী, শুভজিৎ ব্যানার্জি, কাজল মৈত্র, পলাশ পোড়েল, রথীন পার্থ মন্ডল, দিবাকর মন্ডল, রঞ্জিত বিশ্বাস, তুষার ভট্টাচার্য, দীপঙ্কর বেরা, বীরেন্দ্রনাথ মহাপাত্র, বিজন বেপারী, দীপক বসু, বিদিশা চক্রবর্তী, রবীন প্রামানিক, জয়ন্ত কুন্ডু, উৎপলেন্দু দাস, নিখিল মিত্র ঠাকুর, আঁখি রায়, ঝুমা করাতি, সুমিত কুমার রানা, সৌহার্দ্য মুখার্জী, চিরঞ্জিত ভান্ডারী, রিঙ্কু পাল, সাদ্দাম প্রমিথিউস



প্রবন্ধ -

শংকর ব্রহ্ম, অভিজিৎ দত্ত, তন্ময় কবিরাজ




গল্প -

শাশ্বত বোস, সিদ্ধার্থ সিংহ, দেবদাস কুন্ডু, কাশফিয়া নাহিয়ান, কাজল মন্ডল, ইলা সূত্রধর, প্রীতম সরকার, তনিমা সাহা, ঝুমা দত্ত, অর্পিতা বিশ্বাস, চৈতালি ভট্টাচার্য, তপন তরফদার, সামিমা ইয়াসমিন, দেবযানী দত্ত প্রামানিক, কাহার মল্লিক, অসিত কুমার পাল, লিসা মাঝি, সাইয়িদ রফিকুল হক, আব্দুস সালাম, মনোরঞ্জন ঘোষাল, শ্রাবণী আচার্য্য, মনোজ মন্ডল, পাপিয়া চট্টোপাধ্যায়



English Poem -

Mousumi Pramanik



অনুগল্প -

অনিন্দ্য পাল, কাজল মন্ডল, পার্থপ্রতিম দাস, সুদাম কৃষ্ণ মন্ডল, সুনির্মল বসু, কাহার মল্লিক, অমিত কুমার রায়, সুপ্রিয় ঘোষ, দিলীপ পন্ডা, মধুরিমা ব্যানার্জি



মুক্ত গদ্য ও রম্যরচনা -

অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবানী বাগচী, দেবাংশু সরকার ঝুমা দত্ত, তিলোত্তমা চ্যাটার্জী



অঙ্কন ও চিত্রশিল্পী -

মৈত্রেয়ী মুখার্জি



English Story -

Bhaskar Sinha



English Article -

Saikat das

অঙ্কন শিল্প - মৈত্রেয়ী মুখার্জী || চিত্র শিল্পী - মৈত্রেয়ী মুখার্জী || Photography

 




Saturday, November 4, 2023

মাতৃরূপেণ - তিলোত্তমা চ্যাটার্জি || Matrirupeno - Tilottama Chatterjee || মুক্ত গদ্য || রম্যরচনা || Rommo rochona

মাতৃরূপেণ 

তিলোত্তমা চ্যাটার্জি



দূরে ঢাকের শব্দ ভেসে আসছে ,বাইরের মাঠে দুলতে থাকা কাশগুলোর দিকে জানলা দিয়ে তাকিয়ে ছিল দেবদত্তা ।এমনিতে সব গুরু চেলাদের মধ্যে সে মানিয়ে নিয়েছিল একপ্রকার, আগে ভয় পেত বালিশে মুখ চেপে কাঁদতো কয়েক রাত ...কিন্তু এখন সে সব হয় না। হয়তো জীবনের এত ওঠা পডাতে নার্ভগুলো ওর স্ট্রং হয়ে গেছে। পুজো এসে গেছে নিঃসন্দেহে, চারিদিক আলোর রোশনাইতে সেজে উঠেছে এটাও ঠিক, কিন্তু ওর জীবনে আলো আসেনি এখনো বলা ভাল ওদের জীবনে..। হঠাৎ করে দমকা হওয়ার মত পুরনো স্মৃতিগুলো ভিড় করে দাঁড়ায় চোখের সামনে। ওর জন্মটা কিন্তু আমার আপনার মতই স্বাভাবিকভাবে হয়েছিল, এমনকি দুর্গাপূজা ওর খুব ভালোই কাটতো একসময় ,ব্রাহ্মণ বাড়ির প্রথম ছেলে সন্তান হলে যা হয় অবস্থা ।ওর স্মৃতিরা কথা বলতে চায় তারা মনে করিয়ে দেয় ওদের পরিবারে মা দূর্গার আশীর্বাদে এই প্রথম পুরুষ সন্তান এসেছিল ঘর আলো করে ঠাকুরমা তাই নাম রেখেছিলেন 'দেবদত্ত'। কিন্তু জীবন তো আর ওয়াই ইজ ইকুয়াল টু এম এক্স ফলো করা সরলরেখা নয় ,সমস্যাটা ধরা পরল আদরের দেবদত্ত যখন বড় হল ।প্রকৃতির আলো বাতাসে এই মায়ার সংসারে বেড়ে ওঠা দেবদত্ত পরিষ্কার বুঝতে পারছিল পুরুষ নয় তার ভেতর থেকে ডানা মেলছে একজন নারী। ছোটবেলা থেকে তার ইনস্পিরেশন ছিল তার মা মাকে সব দিক সামলে সংসার করতে দেখে সে খুব আকৃষ্ট হতো। ঠিক যেন দশ হাতের জ্যান্ত দুর্গা ছোটবেলায় প্রায় সবাই জিজ্ঞেস করত 'তুই বড় হয়ে কি হতে চাস রে?' বহু বার ই সে নিঃসংকচে বলেছে 'মা হতে চাই মায়ের মত সব কাজ সামলাতে চাই একা।' ছোট বলে ব্যাপারটা কেউ আমল না দিলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে তার ইচ্ছেটা বদলে যায়নি বরং তার ভিত আরো মজবুত হয়েছে ।দিদিরা , ওকে নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করেছে, দেবদত্তার মনে পড়ে সেজো দিদি বলেছিল 'ছেলে হয়ে মা হবে পাগল একটা!' ও তখন প্রতিবাদ করে বলেছিল" কেন তোমরা সবাই মা হতে পারো আর আমি পারিনা?" ছোট দিদি টিপপনি কেটে বলেছিল," সাবধান ভাই আমাদের বলেছিস ঠিক আছে আর কাউকে বলিস না গালাগাল খাবি কিন্তু।"হ্যাঁ তারপর সে গালাগালি খেয়েছিল যথেষ্টই ইভেন এখনো খেয়েই যাচ্ছে.... সমাজের কাছ থেকে। কিন্তু সেদিনের দেবদত্ত ভালোই বুঝতে পেরেছিল শরীর আর মনটা তার কিছুতেই এক নয় ;ক্রিকেট ব্যাট সে কখনো ছুঁয়েও দেখেনি এমন নয় তবে মায়ের মত করে কডাই খুন্তি ধরে রান্না করার মধ্যে সে এক অদ্ভুত টান খুঁজে পায়। দেবদত্ত বুঝতে পারে চুল ক্রমশ ঘাড় বেয়ে কাঁধের উপর ঝুঁকে পড়ছে। চামড়ায় অদ্ভুত এক লালিত ও মসৃণতা শরীরের কিছু অংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে যদিও ওর কখনোই এই কোন কিছুকে অস্বাভাবিক মনে হয়নি অস্বস্তিও হয়নি এক ফোটা বরং এই সবকিছুকে তার বড্ড আপন মনে হয়েছে বারংবার ,কারণ সেই একমাত্র জানে, আদতে সে একজন 'মেয়ে 'এবং তার এই নারী সত্তা গুপ্ত রাখতে চাযনি সে সমাজের কাছেও দিব্যি মনে পড়ছে জীবনের প্রথম আদর্শ মা কেই জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতিটা সে প্রথম জানিয়েছিল হতভম্ব মা বলেছিলেন "নানা তুই ভুল বুঝছিস,বাবু অনেক ছেলেদের এরকম বড় বড় চুল থাকে, আচ্ছা বেশ আমি তোকে গিয়ে চুল কাটিয়ে আনবো কেমন তুই আমার ছেলে আমার একমাত্র ছেলে।" "কিন্তু মা আমার মন ..... "তার মা মুখ কঠিন করে বলেছিলেন "একটা কথাও না, বাড়ির এই মেয়েলি পরিবেশে থাকতে থাকতে তোমার এই অবস্থা। বাবাকে বলে আমি তোমায় হোস্টেলে পাঠানোর বন্দোবস্ত করছি আর যেন দ্বিতীয়বার তোমার মুখে আমি একথা না শুনি।" চোখ রাঙিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান মা। দেবদত্তের চোখের জলের সাক্ষী রইল চারটি দেওয়াল... জীবনে প্রথমবার তার নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল নির্ভেজাল 'ওর' স্থান কারোর মনে নেই কিন্তু নারী হওয়া থেকে ওকে স্বয়ং ও প্রচুর শাসন করেও আটকাতে পারেনি। সবার অলক্ষে মায়ের শাড়ি -টিপ -গয়নাই হয়ে উঠতো তার আত্মার সাজ পোশাক, এর থেকে বেশি শান্তি ও যেন পৃথিবীতে পাবে না। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না মায়ের চোখে একদিন ধরা পরল ঠিকই ও চোখে আগুন ছিল ঝড়ো হাওয়ার মতো ঘরে ঢুকে মা সপাটে একটা চড় কষিয়ে দেন তাকে,সবটা গুলিয়ে যায় তার শুধু এইটুকু মনে আছে মা চিৎকার করে বলেছিল "তোদের মত মানুষদের কি বলে জানিস? হিজরা থার্ড জেন্ডার "সেদিনের দেবদত্ত বা আজকের দেবদত্তার র মনে একটাই প্রশ্ন এই জেন্ডারের ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড ভাগ করার মালিক টা কে আর ভিত্তি টাই বা কি!" যদি উত্তরটা এখনো অজানা।ছেলের এই কুকীর্তি মার হাত হয়ে বাবার কাছে যায় সব কিছু পরিষ্কার মনে না পড়লেও ওর এটা বেশ মনে পড়ে ও বলেছিল "আমি আসলে মেয়ে তোমরা বুঝতে পারছ না" থাক এরপরের ঘটনাটা আর না বললেও হবে। সবার জানা ।চোখের কোলটা ভরে আসে জলে চোখের পাতাগুলো ভিজে যায় ।বুকে পেটে হাতে বাবার বেল্টের কালশিটে পড়ে যাওয়া দাগ গুলোর দিকে এক পলক তাকায় দেবদত্তা। জীবনের এক বীভৎসরাতের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে এরা এখনো ।১৮ বছর বয়সে দেবদত্ত বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে তবে শুধু বাড়ি নয় স্কুল, খেলার মাঠ, রান্নাঘর ,ঠাকুর দালান- তার চেনা জগৎটা থেকে সে বেরিয়ে আসে; স্কুলেও তাকে কম টোন টিটকারী সহ্য করতে হয়নি। তবু কাউকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেনি, কারন সে জানতো যে বাড়িতে সে জন্মগ্রহণ করেছে খোদ সেই বাড়ির লোকেদের কাছে যখন সে অবাঞ্ছিত নিশ্চয় সমাজের কাছে সে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না ।শুরু হয় এক নতুন লড়াই একদা অভাব শব্দের অর্থ না বোঝা দেবদত্তের বেশিরভাগ দিনগুলো কেটেছিল অ-ভাবেই। এই প্রথম ও বুঝেছিল শুধুমাত্র টাকা দিয়ে হয়তো পৃথিবী চলে না নইলে টাকা দেওয়া সত্ত্বেও ও হোটেলে রুম পায়নি ,খাওয়ার পাযনি ,বৃষ্টির দিনের ছাতা আর শীতের দিনে গায়ের কম্বল কোনটাই পাযনি। দেবদত্তার খুব মনে পড়ে এক হোটেল ওয়ালা বলেছিল "মাসি টাকা নাও আশীর্বাদ দাও খাবার দিতে পারবো না।" কঠোর শাসন করে বেঁধে রাখা চোখের জল গুলোকে আটকাতে পারল না দেবদত্তা বুঝতে পারল গাল দুটো ভিজে যাচ্ছে ক্রমশ ।ঠিক আর পাঁচজন ট্রান্সজেন্ডার এর মত ওর ও ঠিকানা হল আজকের এই দোতলার ঘরটায় যেখানে ও তার নিজের গুরু ভাইদের সাথে গুরুর সাথে আছে একরকম। এরপরের জার্নিটা আমাদের সমাজের ভীষণ প্রিয়। বাকিদের মতো দেবদত্তের শুরুটা হয় ভিক্ষাবৃত্তি দিয়ে শয় শয় অসুস্থ দেবদত্তারা ভিড় জমায় তথাকথিত সুস্থ সমাজের আনন্দ অনুষ্ঠানগুলোতে তারা তালি বাজায়, ভিক্ষা চায় আর এই স্বাভাবিক আমরা নিঃসন্দেহে ওদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিই ওরা কতটা অস্বাভাবিক। দেবদত্তারা এরকম চলছিল দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার জুটে যাচ্ছিল ঠিকই কিন্তু বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছিল সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে দেবদত্তার একদিন মনে হল এরকমটা বেশিদিন চলতে পারে না এরকমটা হয় না সে বা তারা তো ভগবানেরই সৃষ্টি সেই সৃষ্টিতে এতটা খাদ মিশে নেই যে তার ভয়াবহতা টা এইরকম। শুধু তাদের প্রকৃত আত্মাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এত নোংরা পথ তারা বেছে নিতে পারেনা ট্রাফিকে হাত বের করে টাকা চাওয়া ,বাচ্চা নাচানো ,অস্ত্রাব্য গালিগালাজ কখনো জীবন হতে পারে না তাই একদা স্কুল পালানো দেবদত্ত বুকে সাহস এনে সমস্ত প্রতিকূলতাকে সঙ্গি করে আজকের দেবদত্তা হয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করে ,কারণ দেবদত্ত জানে হয়তো ওর অনেক কিছু খারাপ কিন্তু মাথাটা খারাপ নয়। জীবনে আরও একটা সংগ্রামের অধ্যায় শুরু হয়। নাহ,এই সংগ্রামটা বিফলে যায়নি। স্কুল লেভেলের পর পিজি লেভেলের পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে সেএকজন শিক্ষিকা। খুব মনে পডে চাকরির প্রথম দিনটা। শাড়ি পরিহিত দেবদত্তাকে দেখে গোটা স্কুলের বাকিদের ভাবখানা এমন ছিল যেন পৃথিবীতে এলিয়েন দেখে ফেলেছে! অদ্ভুত সুন্দর ভাবে ওরা দেবদত্তার থেকে সোশ্যাল এবং মেন্টাল ডিসটেন্স মেন্টেন করেছিল। স্কুলে যোগদানের পর হেডমাস্টার মশায়ের ঘরে ইন্টারভিউ দিতে হতো তাতে পাস হলে তবেই সেই স্কুলে সে চাকরি করতে পারবে। পাসও করেছিল কিন্তু তার কিছু মুহূর্ত আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ছিল চিরস্মরণীয়। যথাসময়ে এইচ এমের ঘরে অপেক্ষারত ছিল সে অ্যাসিস্ট্যান্ট এইচ এম কে তার এপয়েন্টমেন্ট লেটার টাও দেখায। উনি হতভম্ব হলেও কিছু বলেন না ।এরপর এইচ এম এলেন এবং তার উল্টো দিকে বসে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন পনেরো মিনিট পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট বললেন" স্যার ইন্টারভিউয়ের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে" এইচ এম মহাশয় অবলীলা ক্রমে উত্তর দেন" হ্যাঁ, নতুন টিচার আসুক তারপর তো প্রশ্ন করব!" এইচএম এর উত্তর শুনে অবাক বিস্ময় প্রশ্ন করে দেবদত্তা "সো হু এম আই স্যার ?"অ্যাসিস্ট্যান্ট এইচএম বাধা দিয়ে বলেন "স্যার ..... "বিরক্তি ভরা কন্ঠে এইচএম বলে ওঠেন "কি স্যার ?রতন তুমি দেখে নাও এদের কি দাবি দাওয়া আছে মিটিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় কর সকাল সকাল যত রাজ্যের ঝামেলা ।"চোখমুখ লাল হয়ে উঠে দেবদত্তার। নাক থেকে গরম নিঃশ্বাস বেরতে থাকে। অ্যাসিস্ট্যান্ট এইচএম মুখ নিচু করে বলেন "স্যার ইনি আমাদের নতুন টিচার ।"নিজেকে কোনোভাবে সামলে নিজের কোয়ালিফিকেশন ও এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা এগিয়ে দেয় ও,এইচ এম এর সামনে। উনি খুঁজে পান না তার কি করা উচিত উনি দেবদত্তার ডিটেল্স গুলো বারবার করে পড়েন একবার চশমা পরে,ও একবার চশমা খুলে। একজোড়া চোখেরও যেন বিশ্বাস হতে চায় না এইরকম অলৌকিক ঘটনা। তিনি বার কয়েক তুতলিয়ে বলেন "ইয়ে ...ম্যাডাম মানে আমি ঠিক মানে আমি আর কি ভাবতেই পারিনি যে আপনারা...." দেবদত্তা বুঝতে পারে সামনের মানুষটার কথাবার্তা অসংলগ্ন হয়ে পড়ছে ক্রমশ বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি দেবদত্তা ছোট্ট করে বলে "ঠিক আছে।" কিন্তু দেবদত্তাদের লড়াইটা কখনো এইটুকু নয় সারা জীবন শিক্ষক থেকে ছাত্র সমাজে তার প্রতি যে একটা নয় একটা গালাগালি বরাদ্দ তা সে ভালো মতই জানে। শুধু জানে না এই অসম ব্যবহারের কারণ যে মানুষ মেধায় আর পাঁচজনের সমান ,বুদ্ধিতে আর পাঁচ জনের সমান ,জ্ঞান এ আর পাঁচজনের সমান, শুধু একটি দেবদত্ত ত্রুটির কারণে সে সবার কাছে অস্পৃশ্য?! সত্যি কি নিজের ভাগ্যের জন্য কেউ নিজে দায়ী হয়! জানেনা দেবদত্তা এমনকি জানতে চাযে ও না কারণ সে জানে সে তার নিজের কাছে পরিণিতা ।যেমন হাসপাতালে ,পুলিশ স্টেশনে, সমাজে দেবদত্তাদের জন্য কোন স্থান নেই ঠিক তেমনি নেই স্কুলের কমন টিচার্স রুমে কেউ রাজি হয়নি তার সাথে রুম শেয়ার করতে ।একটা বন্ধ ঘরে ভাঙা আসবাবপত্রের মাঝেই দেওয়া হয়েছে তার চেয়ার টেবিল। নাহ এখন আর কষ্ট হয় না দেবদত্তার আগে হতো খুব হতো। এখন বলা চলে সয়ে গেছে কিন্তু দেবদত্তার স্বপ্নটা আজও বাস্তবে মাটি ছুঁতে পারেনি। 'মা' সে আজ হয়ে উঠতে পারেনি। হ্যাঁ ওদের সংস্থার একটা এনজিও আছে তার খুব একটিভ সদস্য দেবদত্তা সেই এনজিওর উদ্যোগে ওরা নিজেদের সাধ্যমত একটা অনাথ আশ্রম চালায়। পৃথিবীতে যেমন অভিশপ্ত ওরা তেমনি আরো কিছু অভিশপ্ত প্রাণীর বিকাশে যাতে কোন ত্রুটি না থাকে সেই কর্মে ব্রতী ওরা। যে সকল শিশুরা তথাকথিত সভ্য সমাজে অবাঞ্ছিত, যে সকল কন্যা সন্তানদের কপালে সকাল বিকাল কিছু অবহেলায় জোটে, তাদের আপন করে নিয়েছে দেবদত্তারা ।এছাড়া শহরজোড়া রেড লাইট এরিয়া গুলোতে সভ্য সমাজের কলঙ্ক হয়ে বেড়ে ওঠা, সন্তানদের শিক্ষা থেকে খাওয়া পড়ার ভার নিয়েছে একমাত্র ওরাই আর যেসব নারী সন্তানেরা পরিবারের বোঝা হওয়ার আগে সদ্যোজাত অবস্থায় হাসপাতালে পরিতক্ত হয়ে ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকে তাদের দায় তথাকথিত সভ্য সমাজ ঝেরে ফেলতে পারলেও পারেনা একমাত্র দেবদত্তারা। নিজেদের যথাসাধ্য সামর্থ্য দিয়ে ওই বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলোর মুখে যে হাসিটুকু তারা ফোটাতে পারে সেই হাসিটা অমূল্য নিঃসন্দেহে !বাচ্চা গুলো কেউবা ওকে মাসি বলে ডাকে কেউবা মামনি এতশত লড়েও 'মা' ডাক শোনা হলো কই !আর শুনবেই বা কি করে পোড়া কপাল নিয়ে কি আর মা হওয়া যায় !কিন্তু মাতৃত্ব টা সেটা তো মিথ্যে নয় না খোদার উপর খোদকারী করতে বিশ্বাসী নয় দেবদত্তা ভগবান তাকে যেমন সৃষ্টি করেছে সেই প্রকৃত 'সে' ই মান্যতা লাভ করেছে অন্ততপক্ষে তার নিজের কাছে !জগৎ জননীর কাছে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে সত্যিই কি শুধু মাতৃসত্ত্বা নিয়ে শারীরিক অঙ্গ নিজের মা হওয়া যায় না?!

                          (2)

"শুভ ষষ্ঠী অম্বিকা মা কেমন আছো তোমরা?" ফোনের ওপার থেকে কাকিমার গলা শুনতে পেয়ে খুশি হল অম্বিকা বলল "শুভ ষষ্ঠী কাকিমা। আমরা ভালোই আছি, আপনি কেমন আছেন?" "এইতো চলে যাচ্ছে মা বুঝতেই পারছ বয়স হচ্ছে" কাকিমাকে কথা বাড়াতে না দিয়ে অম্বিকা প্রশ্ন করে "কাকিমা, আপনার আর কাকাবাবুর পূজোর জামা কাপড় পছন্দ হয়েছে তো?"-"খুব হয়েছে মা,তোমার আর বাবুর কেনাকাটা শেষ তো ?"অম্বিকা মৃদুস্বরে বলে "হ্যাঁ এই শেষ হল।" খানিক বিরতি দেন কাকিমা তারপরেই শুরু করেন "পূজো মানেই তো বোঝো মা বাড়ি ভর্তি লোকজন নাতি-নাতনিদের ভিড় হই হই রই রই... তোমার কাকু তো প্রায়ই বলে বাবুর একটা কিছু দেখে যেতে পারলে..." অম্বিকা বুঝতে পারে প্রসঙ্গ পাল্টে যাচ্ছে ফোনের ওপার থেকে কাকিমার গলার স্বর ভেসেআসে "কিছু মনে করো না মা দেখতে দেখতে ছয বছর তো হয়ে গেল আমাদের ছোটু বাবুর থেকে কত ছোট্ট বল ওরও দুটো ছেলে মেয়ে হয়ে গেল তোমরা কিন্তু ভাবো মা" অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয় অম্বিকা,"মানে, আপনি কি বলতে চাইছেন কাকিমা?" কাকিমা অনেকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন "বাছা, এবার ঠাকুর ঠাকুর করে তোমরা নিয়ে নাও ।"অম্বিকা জিজ্ঞেস করে" কি বলছেন কাকিমা ?শোনা যাচ্ছে না" ফোনের এ প্রান্ত থেকে কাকিমা বলে" বাচ্চা নেওয়ার কথা বলছি মা" পুনরায় অম্বিকা বলে "কিছু শোনা যাচ্ছে না কি নিতে বলছেন ?"কাকিমার তীব্র চিৎকার অম্বিকার কানের পর্দা বিদীর্ণ করে দেয় "বাচ্চার কথা বলছি শুনতে পারছো বাচ্চা... "অম্বিকা বলে, "না কাকিমা নট ভেরি ক্লিয়ার নেটওয়ার্কের খুব সমস্যা এখন আমি রাখি কেমন!" কথাটা বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে ফোনটা কেটে দেয় অম্বিকা। কথাগুলো অম্বিকা শুনতে পেয়েছিল ভালোভাবেই কিন্তু 6বছর ধরে যেখানে হোক দেখা হলেই এরকম হাজার জন কাকিমাকে নিত্যনতুন কৈফিয়ত দিতে দিতে একপ্রকার ক্লান্ত সে আর ওগলি দিয়ে হাঁটতে ইচ্ছে করে না তার। ষষ্ঠীর বিকেলটা কেন কে জানে মেঘলা গুমোট,ঠিক অম্বিকার মনের মতই। সাকসেসের মোড়া জীবনে এই এক অপূর্ণতা। পর্দার আলোর ঝলকানি লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের মাঝে নিজের নারীত্বকে যেন কেমন হারিয়ে ফেলেছেও ।এই গোটা 6 বছরের দাম্পত্যে একবারও ও এই বিষয়টা নিয়ে ভাবেনি এমনটা নয়। প্রথমদিকে প্রায়ই এই ভাবনাটা আসত কিন্তু কাজের আড়ালে এই অপ্রয়োজনীয় ভাবনা চিন্তাগুলো চাপা পড়ে গিয়েছিল একবার রনজিতকে আবেগের বশে বলেও ফেলেছিল কিন্তু ওর খালি এই কাজ আর ও কাজ নয় সে কাজ। পুরোদস্তুর একটা কাজের মানুষ রনজিত। এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের এক অ প্রিয় স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে অম্বিকা চিন্তার ভাঁজ পরে কপালে নিমিষে সমগ্র মুখটা জুড়ে যেন এক গভীর অন্ধকার ছেয়ে যায় তার। অভিনেত্রী অম্বিকা সেনের জাঁকজমকের আড়ালে এই অবসাদগ্রস্ত নারীকে চেনে না বাকি পৃথিবীটা ,কষ্টটাকে বাড়তে দেয় না অম্বিকা। চোখ পরে দেয়ালে বাঁধানো দম্পতির ছবিগুলোর দিকে, ওদের বিয়ের ফটো। রনজিত কে বিয়ে করে একপ্রকার খুশি অম্বিকা। রনজিত আর ও কলেজ ফ্রেন্ড দুজনেরই একসাথে পড়াশোনা প্রায় একই পথে হেঁটে আজ সাকসেসফুল ডিরেক্টর এবং অম্বিকা তারই গ্ল্যামারাস হিরোইন দুজনেই পছন্দ করে বিয়ে করলেও দু বাড়ি থেকে বাধা দেয়নি কেউ, মিচকি হাসে অম্বিকা। এমনিতে তারা সুখী পরিবারই... একটা খুঁত ছাড়া ।এই এতদিনের অনেক রংবেরঙের মুহূর্তরা ভিড় জমায় অম্বিকার মনের ক্যানভাসে হঠাৎই ডোর বেল শুনে প্রথমটা চমকে গিয়ে পরে বুঝতে পারে রন টেক্সট করেছিল আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে দরজা খুলে অফিস ব্যাগ আর বিয়ারের বোতলটা হাতে নিয়ে ঢুকলো রনজিত ।কম বয়সে সুন্দর সুন্দর ফিল্ম বানিয়ে তার নামটা যথেষ্টই পরিচিত। ওকে চেঞ্জ করতে বলে কিচেনে ডিনার সার্ভ করতে গেল অম্বিকা ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে নটা ,হঠাৎই পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে রন, কানের কাছে মুখ এনে বলে "কি ব্যাপার ম্যাডাম মুড অফ নাকি?" যদিও স্পর্শটা চেনা তবুও অস্বস্তি হচ্ছিল অম্বিকার। রণকে আলতো করে সরিয়ে বলল "না তো "ডাইনিং টেবিলের খাওয়ার সাজিয়ে দেয় অম্বিকা। রনজিত যেন শান্তি পেল না ফের এক দফা জিজ্ঞেস করল "না সব ঠিক মোটেই নেই বলোই না আমাকে ।"এই হচ্ছে রণর এক স্বভাব খুঁচিয়ে ঘা না করা অব্দি শান্তি নেই, খেতে খেতে হেসে ফেলল অম্বিকা। মনে মনে ঠিক করল আজ একবার বলতেই হবে মনের কথাটা। খানিকটাই ইতস্তত করে বলল "রন কাকিমা ফোন করেছিলেন ।"রন খেতে খেতে বলল "কোন কাকিমা ?"অম্বিকা মনে করানোর চেষ্টা করল "ওই যে যাদের সোনার দোকান আছে।" রণ মুখ তুলে বলল "ও রুনু কাকিমা তো কি বলছে? সব খবরা খবর ঠিকঠাক তো?" অম্বিকা মুখ নিচু করে বলে চলে" হ্যাঁ, এইসবই ভালো মন্দ কথা হচ্ছিল আর... ।"থমকে গেল অম্বিকা। রনজিত মাথা নেড়ে বলল "আর কি?" অম্বিকা মুখ নিচু করে উত্তর দিল আমাদের প্যারেন্ট হুডের ব্যাপারে বলছিলেন" রনজিত তোয়াক্কা না করে বলল" এ আর নতুন কি ছয বছর ধরেই চলছে। এসব লোকের কথা গুলি মারো। কাজ কম্ম নেই" বিড়বিড় করে রন চোখ তুলে অম্বিকা বলে "আমি বুঝি রন বাট উই শুড কনসারন আবাউট আওয়ার ফার্স্ট ইস্যু। সিরিয়াসলি ...." অম্বিকার সিরিয়াস কথাটা শুনে মুখ গম্ভীর হয়ে যায় রনজিতের ।ডিনারের বাকি পর্ব টা চলেছিল নিঃশব্দে ডিনার শেষে বাসনপত্র গোছাতে ব্যস্ত হয়ে যায় অম্বিকা। ও এক প্রকার জানত এরকমই করবে রণ নতুন কিছু নয় তাও কেন জানিনা অম্বিকার হাল ছাড়তে ইচ্ছে করলো না । বিযার ভরা একটা গ্লাস বাড়িয়ে দেয় রন ওর দিকে ওর থেকে গ্লাসটা নেয় অম্বিকা কথা না বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে "কিছু ভাবলে?" দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে রন "তুমি সিরিয়াসলি এসব ভাবছো ?তোমার সময় নষ্ট করা ঠিক হবে? কাজের ক্ষতি করা ঠিক হবে? আর ব্যাপারটা তো একদিনের নয় সারা জীবনের শুধু বাচ্চা জন্ম দিলেই তো হবে না তাকে বড়ও করতে হবে এত সময় কার আছে! অনেক কষ্টের পর আজ তুমি এত সুন্দর একটা ফিগার পেয়েছো নষ্ট করে দিতে চাও নাকি? অম্বিকা মাথা নেড়ে বলে" তুমি ওভাবে কেন দেখছো ব্যাপারটা আবার ওয়ার্কআউট করে ফিগার পেয়ে যাওয়া যাবে বাট..." বাধা দিয়ে বলে রনজিত "তুমি যদি আমায় জিজ্ঞেস করো দেন মাই আনসার ইজ নো। আমি এই মুহূর্তে এত বড় ক্ষতি করতে পারবো না আমার ক্যারিয়ারের ।"অম্বিকা বিরক্ত হয়ে বলে "ক্ষতি কেন বলছ তুমি এটাকে? পৃথিবীতে সবাই কি ভুল করে যাচ্ছে ?"রনজিত ধমকে ওঠে" রিয়েলি আমি ভাবতে পারছি না তুমি এটা বলছো। without any family support এই লাইনে সাকসেস পেতে অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয় আর জীবন তো পালিয়ে যাচ্ছে না প্লিজ এসব সিলি কথাবার্তা আমায় বলতে এসো না।" অম্বিকা তাও বলে "কিন্তু..." বাধা দিয়ে গর্জে ওঠে রণজিৎ"কোন কিন্তু না আমার স্ক্রিপ্ট রেডি হয়ে গেছে পুজোর শেষে তোমার শুটিং শুরু that's it ।Figureএর প্রতি খেয়াল রাখো আর এসব নিয়ে কোনো কথা বলোনা, গুড নাইট ।"বলেই বেডরুমে চলে গেল রনজিত অম্বিকার বড় হতাশ লাগে বুকেরভিতরটা শূন্য হয়ে ওঠে, ঘোরের বসে কিছুক্ষণ পর অম্বিকা ও বেডরুমে এসে পৌঁছল ।এতক্ষণে রনজিত ঘুমিয়ে পড়েছে উল্টো দিকে ফিরে চোখ বোজেও চোখের পর্দা জুড়ে বুবাইয়ের হাসিটা ফুটে ওঠে। বুবাই ?বুবাই ওর ছোট বোন আরতির একমাত্র ছেলে কি প্রাণবন্ত ও! চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিন বছরের ছেলেটা কেমন মার দিকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে আরতিকে কোলটা ভরে ওঠে ওর আর অম্বিকার কোলজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয় শূন্যতা... চোখের কোনটা ভরে ওঠে অম্বিকার কষ্ট হয় ওর ফুপিয়ে কেঁদে উঠতে চায় কিন্তু পারেনা দম বন্ধ হয়ে আসে ;লাইট ক্যামেরা একশন অটোগ্রাফের মাঝে এই মাতৃ সত্তা কোথায় চাপা পড়েছিল কে জানে!

                          

অষ্টমীর সকালবেলাটা ভারী সুন্দর কাটলো অম্বিকার। একটা মিঠে বাতাস এত দিনের সমস্ত গ্লানি কে মুছে দেয় বেলা গড়াতেই স্নান করে দারুন সাজ দিয়ে রনর হাত ধরে আবাসনের পূজোয় হাসি হাসি মুখ করে অঞ্জলিও দিতে গেল ফিরে একই সাথে লুচি তরকারি খায় ও আর রন। অম্বিকা ভালই বুঝতে পেরেছে আজ পতি দেবতা খুব রোমান্টিক মুডে আছে কাছাকাছি এসে ঘাড দুলিয়ে প্রশ্ন করল "এই যে অঞ্জলি দিলে মন্ত্র গুলোর মানে জানো?" লুচি মুখে পুরতে পুরতে বলল রনজিত "ওই সামথিং সামথিং ।"অম্বিকা পুনরায় বলে উঠছে" এই যে বললে ধনং দেহি পুত্রাং দেহি তুমি ইন্টারেস্টটেড নও ?"রনজিত বেপরোয়া ভাবে বলল "নো ওয়ে ।"অম্বিকা বলল "বাট আই এম সো ইন্টারেস্টেড। "রনজিত বলে "অম্বিকা আবার "বাধা দিয়ে অম্বিকা বলে "আই হ্যাভ এ সারপ্রাইজ ফর ইউ "কৌতুহলী হয় রনজিত অম্বিকা রনজিতের ঘাড় জড়িয়ে বলে ওঠে "উই আর গোয়িং টু বি প্যারেন্টস ।"কাল সকাল থেকে ধরতে পেরেছিল অম্বিকা ব্রেকফাস্টের পর থেকেই মাথাটা ঘোরাচ্ছিল বারবার ,তারপর ঘনঘন বমি শরীরটাকে বেশ দুর্বল করে দেয় যে কারণে বিকেলে ঠাকুর দেখতে পারেনি বন্ধুদের সাথে। সিউরিটিটা পেল আজ সকালে নেপথ্যের কারণটা সে ,নিজেই ইচ্ছে করে ওসিপিটা ইনটেক করেনিও। ব্যাপারটা বুঝতে বেশ খানিকটা সময় নেয় রনজিত স্পাইনাল কর্ড দিয়ে একটা ঠান্ডা কিছু বয়ে যায় তার। দ্রুত নিজেকে সামলে উঠে রনজিৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে অম্বিকার দুটো গাল ধরে বলে "নো প্রবলেম পুজোটা গেলে ডক্টরের কাছে গিয়ে এবরশন করিয়ে নিও। এ আর নতুন কি !আগেও তো হয়েছে "বাধা দিয়ে ওঠে অম্বিকা "রন" হঠাৎই কঠিন হয়ে রনজিত বলে "এইবারের আমাদের প্রজেক্টটা কোটির কিন্তু। ঠিক আছে mind it আগের বারের ঘটনা মনে আছে তো?" কথা শুনিযে বেডরুমের দিকে হেঁটে যায় রনজিত। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে, প্রায় পাথরের মূর্তি হয়ে যায় অম্বিকার শরীরটা চোখ দিয়ে নেমে আসে অবিশ্রান্ত জল ধারা হ্যাঁ মনে তার সবই আছে চার বছর আগের একটা ভয়ংকর ঘটনা শুধু সে এখন আর মনে করতে চায় না....

                                 (3)

ডক্টর অয়ন্তিকা বোসের ওয়েটিং রুমে ক্রমে ঘামতে শুরু করে অম্বিকা বিগত কিছুদিনের স্মৃতি হাতরে ।পূজোর বাকি দিনগুলো কেটেছিল চোখের জল আর মানসিক ঘাত প্রত্যাখাতে আরেকবার মানসিক ঝড় সহ্য করার পর অভিনেত্রী অম্বিকা সেন ভালোভাবেই বুঝে গেছে নিজের glamour আর ট্যালেন্ট দিয়ে পৃথিবী এদিক ওদিক করে ফেললেও 'মা' সে হতে পারবে না। বলা ভালো মা হওয়া তাকে মানায় না। সময় নেই তার হাতে নষ্ট করার মত ,এজন্য সে প্রস্তুত। লোকসান হতে পারে এমন কোন বস্তুকে তাদের পৃথিবীতে আসতে দেওয়ার সব সব পথ বন্ধ করতে তাদের মত লাভ লোভী বড়লোকেরা সিদ্ধ হস্ত। কিছুক্ষণ পরে তার ডাক এলো, ডক্টর অয়ন্তিকার সামনে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে সমস্ত কথা গুছিয়ে নিল ও।ডক্টর বললেন "বলুন ম্যাডাম" অম্বিকা বলল "উই নিড টার্মিনেশন ডক্টর। "ডক্টর অবাক হয়ে বললেন "ওয়ান্স মোর ?"মাথা নেডে শায় দেয় ও।ডক্টর মাথা নিচু করে বলেন I dont know why are you want this once more? It is equally injurious to urself। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড টেল মি ফ্র্যাঙ্কলি হোয়াট ইজ দা প্রবলেম?"একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মাথা নাডে অম্বিকা বলে, "নো উই হ্যাভ নট সাফিসিয়েন্ট টাইম।" হতাশ সুরে ডক্টর বলেন,"প্লিজইট ইজ নট এনাফ রিজন ফর দিস গ্রেট লস ।"বেঁধে রাখা কান্না গুলো বেরিয়ে আসতে চায় উত্তেজিত হয়ে অম্বিকা বলে "নো নেভার আমি মা হতে চাই না পারব না কোনদিনও। পারবোনা" কিছু সেকেন্ডের মধ্যে ডক্টর অয়ন্তিকা আর অভিনেত্রী অম্বিকা সেন কে চমকে দিয়ে তৃতীয় একটি কণ্ঠস্বর বলে ওঠে" কেন পারবে না !"চমকে উঠল অম্বিকা। সামনে তাকিয়ে আরো অবাক হল ডক্টর এর মুখে একটা স্নান হাসি। অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলে অম্বিকা,"আই এম সরি হু ইজ দিস?" তৃতীয় মানুষটি কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিল ডক্টর বাধা দিয়ে বললেন "ও দেবদত্তা টিচার আর আমাদের এনজিওর ফরমার মেম্বার ।"অম্বিকা জিজ্ঞাসা করে জানতে চায় "ওকে বাট উনি আমাদের কথার মাঝে ইন্টারফেয়ার করছেন কেন?" ডক্টর অয়ন্তিকা বললেন "বিকজ আই কলড অনলি ফর ইউ ইউনিড হার নট মি ।আপনি লাস্ট যখন অ্যাপোয়েন্টমেন্ট কলটা করলেন তখনই বুঝেছিলাম সামথিং ইজ রং দেয়ার আপনারা কথা বলুন ও বলা হলো না উনি একজন খুব ভালো কাউন্সিলার আসলে এত গুণ কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি!" হাসতে হাসতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ডঃ অয়ন্তিকা খানিকটা হতভম্ব হয়ে যায় অম্বিকা। ঘরের গুমোট নিস্তব্ধতা ভেঙে প্রথমে কথা বলেন অপর মানুষ টা "হাই আমি দেবদত্তা আপনি আমায় না চিনলেও আমি বা আমরা আপনাকে ভালোভাবেই চিনি ।" এটা অস্বাভাবিক কিছু না তাই চুপ করে রইলো অম্বিকা পুনরায় দেবদত্তা বলে উঠল "আই নো দিস ইজ নট ইওর first issue i know everything ,কথা বলুন কোনো ক্ষতি হবে না ।আপনার জীবনের আল্টিমাম টা আপনি ঠিক করবেন আমরা কেউ করব না কিন্তু।" অবাক হয় অম্বিকা। সবার আড়ালে থাকা সত্যিটা এই মানুষটা জেনে ফেলেছে তাও ভাবনাটাকে উড়িয়ে দেয় ও ;বরং একা ঘরে একজন ট্রান্সজেন্ডার এর সাথে বসে থাকতে বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে ওর ।উনি পুনরায় বলেন "জীবনটা না খানিকটা দৌড় প্রতিযোগিতার মত যাত্রাপথ বাড়তে বাড়তেই এক একটা হার্ডেলস এসে যায় আর আমরা বাইরে থেকে খালি চিযার আপ করি যাতে লড়াইটা লড়তে সহজ লাগে। এবার আপনি বলতে পারেন তাহলে আমরা যারা জ্ঞান দিচ্ছি তারা কি দৌড়াচ্ছে না?অবশ্যই দৌড়াছি। যখন কমিউনিকেশন হচ্ছে আমাদের মধ্যে আমরা তখন একটু রেস্ট করে নিচ্ছি ,সো প্লিজ কথা বলুন।" অম্বিকা বেপরোয়া ভাবে উত্তর দেয় "ইট ইজ মাই চয়েস।" প্রশ্ন করে দেবদত্তা" only yours?" অম্বিকা আমতা আমতা করে বলে,"আই মিন আওয়ার চয়েস ।"দেব দত্তা প্রশ্ন করে," যদি জিজ্ঞেস করি কেন খুব ভুল করব না হয়তো ।"অম্বিকা উত্তর দেয়,"আমাদের অত সময় নেই একটা ভুল হয়ে গেছে তো তার সংশোধনটাই তো চেয়েছি শুধু" দেবদত্তা ঘাড় নেড়ে বলে" বেশ, তা বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি কেন ?আদৌ ভুল নাকি..."ওকে থামিয়ে দেয় অম্বিকা," না আর কিছু নয় মানুষ তো, ভুল তো হতেই পারে ।"একটা অজানা ব্যথা হাতছানি দেয় অম্বিকার ,তবুও সত্যিটা এড়িয়ে যায়। দেবদত্তা বাঁকা হাসি হেসে বলে "মা দূর্গা কে দশভূজা কেন বলা হয় জানো? হ্যাঁ।তুমি করেই বলছি। বয়সে তুমি আমার থেকে ছোটই হবে। মা দুর্গা ঘর আর বাইর সমানভাবে সামলাতে পারেন। তিনি একাধারে যেমন অন্নপূর্ণা তেমনি দানব দলনি তিনি যেমন যোগীনি তেমনি জগপ্রসবিণী। আর তুমি তো সেই মায়ের জাত তুমি পারবে না কেন ?দেখো আমায় তো তুমি দিদি ভাবতে পারবে না জানি ।যদি জীবনের একটা অদ্ভুত মানুষ মনে কর তবে বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখতে দাও যদি লালন পালন করতে পারবে না তবে আমাদের এনজিওর সাথে যোগাযোগ করো। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব তাকে বড় করার ফ্রি অফ কষ্ট ,তোমাদের পরিচয় ই সে বড় হবে ।বড় হলে তোমাদের কাছে ফিরে যাবে আমাদের এনজিওয়ে এরকম অনেক বাচ্চারা রয়েছে ।"কান লাল হয়ে যায় অম্বিকার ও বিরক্ত হয়ে বলে "আই থিংক আই নিড নো মোর কাউন্সিলিং আওয়ার ডিসিশন হ্যাজ মেড অলরেডি।"

বিগত চার পাঁচ দিন ধরে খালি দেবদত্তার কথাগুলোই কানে বেজেছে কাজের ফাঁকে, ভদ্রমহিলার কথাগুলোএ সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। দ্রুত ভাবনা টা ভেবে থমকালো ও হ্যাঁ,'ভদ্রমহিলাই' তো উনি। অন্ততপক্ষে অম্বিকার চোখে। ওনার কথায় চার্জড হয়ে রণকে একবার বলার চেষ্টা করেছে যে বাচ্চাটাকে পালন করার ব্যবস্থা যদি ও করতে পারে কাজের ক্ষতি না করে তাহলেও কি সমস্যা হবে ?নিঃসন্দেহে উত্তর দিয়েছে" হ্যাঁ হবে" এবং ধমকে গেছে এই 11 দিনের ট্যুর থেকে ফিরে এসে যেন শুনতে পায় কাজটা হয়ে গেছে। তবে গত চার পাঁচ দিনে অম্বিকা কিছুই করতে পারেনি বাড়িতে মেডিসিন গুলো কেনাই আছে ;কিন্তু কিছু যেন ওকে বারবার টেনে আনছে কিন্তু এটা যে কিসের টান ও জানে না। নাহ, অত সাত পাঁচ ভেবে কাজ নেই হাতে আর মাত্র ৭ দিন। এর মধ্যে তাকে পারতেই হবে নইলে অনেক বড় লস হয়ে যাবে।খোলা চুল কাঁধের উপর গুটিয়ে নিয়ে মেডিসিন টা খুলে হাতে নেয়ও। জলের গ্লাসে চুমুক দিতে যাবে এমন সময় ডোর বেল বাজলো যেটা বাজার কথা ছিল না । আই হোলে চোখ না রেখেই দরজা খুলে বলল "কে?" আগন্তুক উত্তর দিল "আমি ।সমাজের থার্ড জেন্ডার রিপ্রেজেন্টেটিভ চিনতে পারছ না?" চিনতে পেরেই সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় ওর। আরে ওই মহিলা ওর ঠিকানা পেল কিভাবে? দেবদত্তা বলে উঠলো" ভিতরে ডাকবে না?" অম্বিকা বুঝতে পারলো না ওর কি করা উচিত। দেবদত্তা অযাচিতভাবেই ওর ঘরে ঢুকে আসে। কিংকর্ত্য বিমুরের মতো দরজা বন্ধ করে দেয় অম্বিকা। মনে মনে শক্তি সঞ্চয় করে কঠিন হয় ও বলে "আপনি আবার চলে এসেছেন আপনাদের এনজিও-র অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করতে?" হাসে দেবদত্তা বলে "সে তুমি যাই বলো না কেন আমি কিন্তু সবটা বুঝে ফেলেছি ।"থতমতো খেয়ে অম্বিকা বলে "ক কি কি বুঝেছেন আপনি?" দেবদত্তা ব্যাখ্যা করে বলে "এই যে তুমি এবরশন করার অভিনয় করছো ।" "অভিনয় করছি মানে?" অম্বিকার চোখে মুখে অবিশ্বাস তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে "হুম, আসলে তুমি ভীষণভাবে মা হতে চাইছো কিন্তু পরিস্থিতির কাছে হেরে যাচ্ছ। না, এখনো তো হারনি ।"চিৎকার করে ওঠে অম্বিকা," কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনি ?আমি মোটেই মা হতে চাই না ।আমার জীবনে আমার কাজের থেকে দামি আর কিছুই নেই। আমি তো আগেও বলেছি এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।" কথাটা থামা মাত্রই দেবদত্তা বলে "তাই বুঝি যে এত মা হতে না চায় সে চার দিন সময় নষ্ট করবে কেন ?(খানিক থেমে) ভগবান তো সবাইকে সব দেয় না তোমায় বারবার সুযোগ দিচ্ছেন ।কিন্তু তুমি অলরেডি অনেক পাপ করে ফেলেছ আর পাপের বোঝা বাড়িও না। অন্তরের ডাকে সাড়া দাও ,দেখবে সব প্রতিকূলতা দূরে চলে গেছে।" অম্বিকা স্তব্ধ হয়ে যায়। সে ভালোই বুঝতে পারছে সে সম্পূর্ণরূপে হেরে যাচ্ছে, শাসন করে রাখা চোখের জল গুলো বাঁধ ভেঙে দৌড়ে বেরিয়ে পড়ছে, নিঃশ্বাস এর গতিবেগ বাড়ছে ক্রমশ, কণ্ঠস্বরকে গ্রাস করেছে দলা পাকানো কষ্টেরা। দুহাতে মুখ ঢেকে ফ্লোরেই বসে পড়ে ও। কতক্ষণ এই অবস্থায় ছিল জানিনা কিছুক্ষণ পরেই একটা অচেনা অজানা স্পর্শ ওর চোখের জল মোছার চেষ্টা করে। চোখ খুলে দেখতে পায় দেবদত্তা। হাসছেও বলছে "এখন ভাবতে পারো জ্যোতিষ বিদ্যাটাও শুরু করলাম নাকি? না আসলে সার্বিকভাবে সুস্থ মানুষদের নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বুঝতে পারি অসুস্থতা টা কোথায়! চোখ মোছো।" দেবদত্তার দুটো হাত সরিয়ে কান্না ভেজা গলায় অম্বিকা বলে" প্লিজ চলে যান একা থাকতে দিন আমায় ,আমার কষ্টটা আপনারা কেউ বুঝতে পারবেন না আমি মা হওয়ার যোগ্য নই। যে মা নিজে হাতে তার সন্তানের গলা টিপে মেরে ফেলে শুধু নিজের স্বার্থে সে কি আর মা হতে পারে!" শেষের কথাগুলো যেন নিভে আসে ওর।ফোপাতে শুরু করেছে মেয়েটা, ও কিছু বোঝার আগে ওকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে দেবদত্তা বলে "মানছি তোমার বুকে অনেক কষ্ট আছে কিন্তু চোখ মেলে দেখো ভগবান তোমার থেকেও অভাগী হিসেবে আমাকে পাঠিয়েছেন তোমার জীবনে। তোমার হারানোর যন্ত্রণা আছে আর আমার আছে না পাওয়ার বেদনা... সাথে আরো অনেক কিছু তোমার তো মানুষ হিসেবে একটা আইডেন্টিটি আছে তুমি সুস্থ তোমার জেন্ডার স্পেসিফাইড আমার কি আছে বলো তো ?"তারও গলায় কান্নার আভাস প্রথমে খানিকটা অস্বস্তি হলেও খানিক পরে অম্বিকা বুঝতে পারে এ স্পর্শের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাতৃত্ব আছে অন্য কোন অনুভূতি এখানে ভাবনারও অতীত। মনে হলো এই প্রথম একটা খুব নিরাপদ আশ্রয় খুজে পেয়েছে সে। অভিনেত্রীর হাসির আড়ালে থাকা মানুষ অম্বিকার খুব উগরে দিতে ইচ্ছে করে এতদিনের চাপা রাখা সমস্ত কষ্টগুলো ।নাহ ,আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না অম্বিকা বহতা নদীর মতো কল কল করে বলে ফেলে জীবনের যতটুকু সত্যি সবটা এক মনে শোনার পর দেবদত্তা অবাক হয়ে বলল "শুধু মেটেরিয়ালিস্টিক সুখের জন্য তোমরা এরকম ইন্টারনাল সুখের বলিদান দিয়ে দিতে পারো এত অনায়াসে?" দেবদত্তার হাত দুটো ধরে বলে অম্বিকা," বিশ্বাস করুন এবারটা আমি চাইনা কিন্তু রনজিত কিছুতেই শুনতে রাজি হচ্ছে না ।ওর খালি এ প্রজেক্ট আর ওই প্রজেক্ট।" দেবদত্তা পাল্টা বলে," প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড এটা আমার কথা বলার স্পেস নয় বাট আই মাস্ট সে, একজন পুরুষের ইচ্ছার জন্য নিজের নারীত্বকে শেষ করে দিতে কষ্ট হয় না ?আর যে শরীরের ডিফর্মিটির কথা বলছ সেই নারী শরীরের কৃতিত্বটা কোথায় বলতো !সব শরীরের একমাত্র ঠিকানা তো আমাদের সবার জানা। পুড়ে গেলে সবই এক মুঠো ছাই ছাড়া আর কি !এ পৃথিবীতে সব কিছু রিভারসিবল সমস্যার সমাধান সম্ভব কিন্তু ইররিভারসিবল সমস্যাগুলো সমাধান শত টাকা খরচ করলেও পাবে না ।(খানিকটা সময় নিয়ে) অনেক তো হলো অন্যের জন্য বাঁচা। এবার একটু নিজের জন্য বাঁচো না, শুধু নিজেকে খুশি করতে বাচো। ভগবানের ইচ্ছায় যে আসছে তাকে জীবনের সবথেকে বড় গর্ব করে বাঁচো জানবে কোটি টাকা খরচ করলেও এই রত্ন পাবে না।" অম্বিকার মুখ থেকে গোঙ্গানি বেরিয়ে আসে" না যোগ্য নই আমি। কিছুতেই যোগ্য নই আমি আমার সন্তানকে ..... "কান্নারা ঢেকে দেয় বাকি সমস্ত না বলা কথা ।অম্বিকার হাত দুটো শক্ত করে ধরে দেবদত্তা বলে "মানুষ তো ভুল তো হতেই পারে। কিন্তু একবার পাপ করেছো বলে বারবার কেন পাপ করবে ?যখন ভগবান তোমায় নিজে থেকে প্রায়শ্চিত্তির সুযোগ করে দিচ্ছেন তুমি ঠিক পারবে তোমার এই অন্যায় বোধটাই তোমাকে শক্তি দেবে। হ্যাঁ তুমি হয়তো অনেকটা সময়ের জন্য শরীরটাকে হারিয়ে ফেলবে কিন্তু ভগবান প্রদত্ত ক্ষমতাকে অনুভব করতে পারবে, হ্যাঁ হয়তো সৌন্দর্য কিছুটা ফিকে হবে কিন্তু তোমার চোখ মুখ জুড়ে ফুটে উঠবে মাতৃত্বের আভা ।এখন বল কেজিখানেক চর্বি একগাদা স্টিচ বা আর সমাজের ট্রোলিঙএরকম আরো হাজারটা প্রতিকূলতাকে মেনে নিতে তুমি প্রস্তুত তো?" কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরটা নিস্তব্ধতায় ঢেকে যায় .....    

                                (4)

"নাহ," প্রায় চিৎকার করে আঁতকে ওঠে অম্বিকা ধরফিয়ে উঠে বুঝতে পারে স্বপ্নই দেখছিল সে।হৃদ স্পন্দনের গতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। চার বছর আগের এক বীভৎস স্মৃতি হানাদায় ওর ভোরের স্বপ্নে আপাতত সে কলকাতার একটা বেসরকারি হাসপাতালে এডমিটেড। হ্যাঁ দেখতে দেখতে নয় মাস কেটে গিয়েছে যেহেতু প্ল্যানড ডেলিভারি তাই আগে থেকেই অ্যাডমিটেড হয়েছে ও। এর মধ্যে এত পরিবর্তন ঘটে গেছে অম্বিকার জীবনে যে শরীরের পরিবর্তন তার কাছে নস্যি । চোখ বুজলো ও দেখতে পেল চার বছর আগেও ভগবান ওকে এমনই সৌভাগ্য দিয়েছিল কিন্তু সেই সময় অম্বিকার কেরিয়ার তুঙ্গে জীবনে প্রথমবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতার সাথে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগটা এসেছিল তখনই ।সারা জীবন লাভের অংক গুনে সেবার রণজিৎ দেরি করেনি এত বড় লাভ লুফে নিতে ।হ্যাঁ ওদের জীবনের প্রথম একটা বিগ বাজেটের সুপারহিট সিনেমা তারা বানিয়েছিল ঠিকই; রনজিতের কথা অনুযায়ী ছোট্ট একটা সেক্রিফাইসের বদলে। এমনকি অম্বিকা আপত্তি জানায়নি একবারও পরিষ্কার মনে পড়ে দিনটা অম্বিকা। ওদের জীবনের প্রথম দেবদত্ত উপহারকে,ওদের দু মাসের ভ্রুণটাকে ..... কান্নায় চোখটা ভরে আসে অম্বিকার, রক্তে ভরে গিয়েছিল সেদিন সবকিছু এত রক্ত সে এ জীবনে কখনো দেখেনি। কষ্ট হয়েছিল তখন ও ,কিন্তু পরবর্তীকালের লাইট ক্যামেরা একশন আর হাততালির শব্দে কোথাও যেন চাপা পড়ে গিয়েছিল তারা ,আর সহ্য করতে পারে না অম্বিকা। ভয় লাগে ওর কিন্তু একটা ব্যাপারে সে নিশ্চিত মা হওয়ার যোগ্য সে নয় কিন্তু তা সত্ত্বেও এই লড়াইটা লড়তে চেয়েছিল ও। দেখতে চেয়েছিল মুখোশের আড়ালে থাকা আসল চেহারা গুলো। হ্যাঁ চার গুণ বেড়ে যাওয়া ওজনের সাথে সাথে অনেকগুণ মানসিক আঘাত পেয়েছে অম্বিকা তার অর্ধেকটা যদি সমাজের কাছ থেকে হয় ,তবে বাকি ৫০ শতাংশ শুধু রনজিতের কাছ থেকে। ১১ দিনের ট্যুর সেরে এসেও যখন ও জানতে পেরেছিল কাজ হয়নি, প্রচুর ধমক দিয়েছিল চোখ রাঙিয়েছিল কোন কিছুতে কাজ না হলে শেষে তো মারতেও এসেছিল। কিন্তু পারেনি অম্বিকা strong থেকেছে ও স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে মা হিসেবে সে সবকিছু করতে পারে যদি ওদের সো কলড সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বের হতে হয় ,তাতেও ও রাজি।শেষমেশ অনেক যুদ্ধ ঝগড়ার পর ওই পথটাই খোলা ছিল তার কাছে আর সত্যি বলতে এত শক্তি ও পেয়েছে শুধু দেবদত্তার কাছ থেকে। হ্যাঁ এই লড়াইটাতে একমাত্র দেবদত্তাই ছিল তার একমাত্র সঙ্গিনী ও পুরো যাত্রাপথে ওকে বারবার চিযার আপ করে গেছে ।তবে বাকিরাও ছিল বটে, অম্বিকার জন্য পৃথিবীর সব থেকে খারাপ বিশেষণ বেছে দেওয়ার দায়িত্বই নিয়েছিল বাকি চেনা পৃথিবীটা ।তবে ওসব অম্বিকা আর ধরে না, দেবদত্তার কাছ থেকে শিখেছে সে অনেক কিছু। সব নেগেটিভিটি কে মুহূর্তে পজিটিভিটিতে পরিণত করে দেওয়ার অদ্ভুত একটা ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা আছে ওর। সত্যি নেহাত কম ঝড় একা সামলে যাচ্ছে না ওই মানুষটা! জীবনের নানান জানা-অজানা গল্প শুনেছে ও দেবদত্তার মুখে। একবার জিজ্ঞেস করেছিল "তুমি তো এখন প্রতিষ্ঠিত সমাজ তবুও সম্মান দেয় না তোমায়?" দেব দত্তা বলেছিল" দেয তো শুধু আমার পদটাকে ,কিন্তু হাজার মানুষের ভিড়ে যখন হাটি আমরা বড় একা জানো কেউ আমাদের পাশে ঘেষতে চায় না..." সেইদিন একমাত্র সেই দিন দেবদত্তার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠেছিল ।অম্বিকা হয়তো একটু হলেও বুঝতে পেরেছিল দেবদত্তার অসহায়তাটা, সংগ্রাম থেকে সাফল্যটা মনে করে মনটা হালকা হয়ে যায় অম্বিকার, নিজের জন্য আর কষ্ট হয় না। অম্বিকা যে দেবদত্তার জন্য কিছু টি ভাবেনি তা নয় যে মানুষটা সমাজে এতটা অগৃহীত কোনদিনও তার মত স্টার এর জীবনে এতটা গৃহীত হয়ে যাবে কোনদিনও কল্পনাও করেনি সে। ঋণ তো নেহাত কম হলো না এ জীবনে দেবদত্তার কাছে শোধ করার কথাও ভাবছিলই হঠাৎ পেটে যন্ত্রণা হতে শুরু করে সহ্য করতে পারে না চোখ বুজে ফেলে ও।

                                  (5)

রাস্তাটা ক্রস করতে করতে মনে মনে দু'চারটে গালি দেয় নিজেকে দেবদত্তা ।আজকের দিনটাতেই অন্য সব কাজ করতে গিয়ে বড্ড দেরি করে ফেলেছে ও। ডক্টর অয়ন্তিকার হসপিটাল থেকে ঘন্টাখানেক আগে ফোন এসেছিল অম্বিকার লেবার পেইন শুরু হয়েছে জানতে পেরেই বেরিয়ে পড়েছিল সে কিন্তু আর কাজটা এতটা দূরে পড়ে গিয়েছিল যে আসতে দেরি হয়ে গেল ।ও হাসপাতালের গেট খুলে ঢুকতেই কিছু মানুষ নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করা শুরু করে দিল এসবে অভ্যস্ত ও। কোন এক নার্স বিড়বিড় করে বলে উঠলো "আর পারা যায় না বাবা। বাচ্চা হওয়ার আগে এসে পৌঁছে যায় কাজ নেই যত্তসব" এই হসপিটালটা নতুন, ডক্টর অয়ন্তিকা বোস এর পুরনো হসপিটালে প্রায় সবাই চেনে দেবদত্তা কে এরা চেনেনা কি আর করা যাবে !কাউন্টারে গিয়ে ডাক্তার অয়ন্তিকার খোঁজ নেয় দেবদত্তা। ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্ট দেবদত্তার নাম শুনে তাকে নির্দিষ্ট রুমে পাঠানোর নির্দেশ দেন। লিফটে উঠেই দেবদত্তা বুঝতে পারে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের গতি ওঠানামা করছে গায়ের রোম গুলো খাড়া হয়ে গেল কিনা বুঝা গেল না! পুরো atmosphere ta এমন যেন বহুদিন ধরে প্রিপেয়ার করা এক্সাম এর রেজাল্ট আজকে। লিফট থেকে নেমেই ন নম্বর ঘরটায় প্রায় দৌড়ে ঢুকে ডাক্তার অয়ন্তিকার দেখা পেলো দেবদত্তা। ডাক্তারের গাল ভর্তি হাসি তিনি দেবদত্তাকে দেখে বললেন "এবরশন টু ডেলিভারি ইট ইস এ ম্যাজিকাল মেকানিজম যার ক্যাটালিস্টটা হলেন ইউ মিস দেবদত্তা ব্যানার্জি ।"জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় দেবদত্তা, ডাক্তার অয়ন্তিকা তার কাঁধ দুটো ঝাঁকিয়ে বলে "মেয়ে হয়েছে দেবদত্তা কংগ্রাচুলেশন।"আনন্দ টাকে আর ধরে রাখতে পারে না দেবদত্তা আবেগের বসে কথা জড়িয়ে যায় "কই আর অম্বিকা কেমন আছে ?"সম্মতি জানিয়ে ডাক্তার বলে "মাদার এন্ড চাইল্ড বোথ আর সেফ এন্ড নরমাল। তোমরা কথা বলো কেমন আমি আসি "বাইরে থেকে দরজাটা ভিজিয়ে চলে যান ডাক্তার অয়ন্তিকা। ঘরের ভিতরে ও খানিকটা এগোতেই দেখতে পেল সদ্য মা হওয়া অম্বিকা তার সদ্যোজাতকে আগলে রেখেছে সস্নেহে। দুচোখ ভরে গেল দেবদত্তার ।না পূজো চলে গেছে ন দশ মাস হলেও কোথা থেকে যেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠ করা মহিষাসুর মর্দিনী ভেসে আসছে। এই হসপিটালের লাগোয়া একটা এসাইলাম আছে জানে দেবদত্তা। নিশ্চয়ই সেখানকার ই কোন এক বাসিন্দা অসময় মহিষাসুর মর্দিনী শুনছে এই সময় ভেসে আসা মন্ত্র মেশানো গানের সুর ছাড়া ঘর জুড়ে আছে শুধুই নিস্তব্ধতা ।কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে দেবদত্তা ,অম্বিকা আর ও নারী সন্তানের দিকে। অম্বিকা আর তার কন্যা সন্তান যে কোন অকালবোধনের শুভ সূচনা করছে তা জানেনা দেবদত্তা। অম্বিকা হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে ,বেডের পাশে থাকা টুল টায বসে জিজ্ঞেস করে দেবদত্তা "কেমন আছো?" অম্বিকা মৃদু হেসে বলে "বেশ ভালো আছি।" খানিকটা উঠে বসার চেষ্টা করে অম্বিকা তাকে বাধা দেয় দেবদত্তা কিন্তু অম্বিকা শোনে না বলে "আমি ঠিক আছি পারব ।"একটা গভীর শ্বাস নেয় ও ।দেবদত্তা মাথানেডে বলে ,"আর বোলো না আমি এমন একটা কাজে আটকে গেছিলাম .... " অম্বিকা বাধা দিয়ে বলে" চুপ একদম চুপ, এতদিন অনেক জ্ঞান দিয়েছো। এবার আমি বলব তুমি শুনবে।" হতভম্ব হযে বসে থাকে দেবদত্তা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অম্বিকা বলে "তো এট লাস্ট আমরাই জিতলাম তাহলে ,এই এত বড় সোসাইটির বস্তা বস্তা প্রতিকূলতাকে পেরনো গেল তাহলে !এবার কিন্তু আমার একটা আবদার আছে।" অবাক হয়ে দেবদত্তা বলে "আমার কাছে? আমি তোমায় কি বা দিতে পারি আচ্ছা বলো সাধ্যমত চেষ্টা করব "মাথা নেড়ে অম্বিকা বলে "দেবে না অনেক দিয়েছো এবার নেবে।" জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকায় দেবদত্তা,ওকে আশ্বস্ত করে অম্বিকা বলে "হ্যাঁ নেবে এই যে আমার কোলের এই সদ্যজাত সদস্যটিকে মানুষ করার দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। আজ থেকে তুমি হবে ওর মা ।নাও ওকে কোলে নাও "যেন আকাশ ভেঙে পড়ে দেবদত্তার মাথার উপর আকস্মিক কথার চোটে সদ্যোজাতকে কোলে নিতে ও ভুলে গেল সে। মস্তিষ্ক হাতরে কয়েকটা এলোপাথাড়ি কথা বলে ফেলে "আমি আমি মা কি করে হতে পারি ?হ্যাঁ আমি নিজেকে মেয়ে বলে মনে করি ঠিকই কিন্তু আমি মা কি করে হব ?সম্পূর্ণ মেয়ে তো আমি নই। "অম্বিকা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে "কে বলল তোমায় uterus আর ওভারি ছাড়া মা হওয়া যায় না !মাদারহুড ইজ এন ইমোশন। দিস ইজ নট কানেক্টেড উইথ দিস আরথি বডি। এনি ওয়ান ক্যান মাদার বি দে আর মেল অর ফিমেল.... আর জন্ম দিলেই কি খালি মা হওয়া যায় নাকি! অনুভূতি টাই আসল সত্যি ।"বেশি কিছু বলা হলো না দেবদত্তার, আজ এই মাতৃমূর্তির সামনে ওর সমস্ত জ্ঞান মূহমান। খানিক থেমে অম্বিকা আবার বলে " আমি চাই এই নতুন প্রাণটি মানুষের মত মানুষ হোক আর সেই দায়িত্ব তোমার থেকে ভালো কে পালন করবে বলো? আমি কিন্তু না শুনবো না।" কান্না পায়ে দেবদত্তার। কিন্তু কাঁদতে পারেনা বলে তাহলে "তোমার এত সেক্রিফাইস এর কি হবে ?তুমি যে সবকিছু হারিয়ে ফেলেছ এত কষ্টের ফল তুমি আমায় দিও না।" মাথা নেড়ে হেসে বলে অম্বিকা,"ওই যে তুমি বলেছিলে না শুধু নিজের জন্য বাঁচতে শেখা প্রয়োজন তাই এত বড় লড়াইটা লড়লাম ।আর যা হারিয়েছি তা কোনদিনও আমার ছিলই না অনেক কিছুই আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে, গেছে আমি ভীষণ স্বার্থপর জানো শুধু নিজের জন্যই করলাম একমাত্র নিজের জন্য। আর সত্যি বলতে আমাদের এত ব্যস্ত সিডিউলে নিজের জন্যই সময় হয় না অন্যের জন্য কি করে হবে !এর থেকে বরং ও তোমার কাছে মানুষ হলে আমি চোখ বুজে নিশ্চিন্ত হব।" খানিক থেমে আবার বলে অম্বিকা "যেদিন না ওর বোঝার ক্ষমতা হবে আমরা সেদিন ওকে সবটা বলব আমি চাইনা কেউ অন্ধকারে থাকুক। মনের এই অন্ধকার গুলো ব্ল্যাক হোল হয়ে সমস্ত আলোকে গ্রাস করে নেয় ।ওকে মানুষের মতো মানুষ কোর কেমন! ও যেন এই দুই মায়ের সেক্রিফাইসটা বুঝতে পারে ।"কাপড়ে মোড়া সদ্যোজাতকে দেবদত্তার দিকে এগিয়ে দেয় অম্বিকা। মন্ত্র চালিতের মত সদ্যোজাতকে দুহাতে তুলে নেয় দেবদত্তা দুই মায়ের চোখের কোল জলে ভরে যায় ,গাল প্লাবিত হয় আর হাসি ফুটে ওঠে সদ্যজাত উমার ঠোঁটে। এখনো মহিষাসুরমর্দিনী টা ভেসে আসছে শোনা যাচ্ছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মন্ত্র পাঠ" যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থতা নমস্তাস্যই নমস্তাস্যই নমস্তাস্যই নমো: নমো:....."

                      


                                                     

দিদিমণি - দেবাংশু সরকার || DidiMoni - Debangsu Sarkar || মুক্ত গদ্য || রম্যরচনা || Rommo rochona

       দিদিমণি

              দেবাংশু সরকার





     কয়েক বছর হলো শ্যামা সুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে বেশ ভাল ফল করেছে স্কুলের ছাত্রীরা। বড় দিদিমণি কমলিকা রায়ের কঠোর পরিশ্রমের জন্যই এই সাফল্য এসেছে। কমলিকা রায়ের বড় দিদিমণি হওয়ার আগে স্কুলটা যথেষ্ট এলোমেলো ছিল। পড়াশোনা একেবারেই হত না। বিভিন্ন পরীক্ষার ফল হত বেশ খারাপ। দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছিল স্কুলটার। অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের এই স্কুলে পাঠাতে চাইতেন না। ক্রমশ ছাত্রী সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল।


      ঠিক এই সময় এক সঙ্গে কয়েকজন দিদিমণি অবসর গ্রহণ করলেন। তাদের জায়গা নিলেন কয়েকজন কমবয়সী দিদিমণি। প্রমোশন পেয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলেন বড় দিদিমণি কমলিকা রায়।


      প্রথম জীবনটা কমলিকার বেশ কষ্টে কেটেছিল। বিধবা মায়ের সামান্য পেনশনের টাকায় সংসার চলতো না। পিতৃহীনা কমলিকা ছাত্রাবস্থাতেই প্রচুর টিউশনি করে নিজের এবং তার ভাইয়ের পড়ার খরচ চালাতেন। সেই সঙ্গে সংসার খরচের অনেকটা সামাল দিতেন। এইভাবে লড়াই করতে করতে কলেজ, ইউনিভার্সিটির গন্ডি টপকানোর কিছুদিন পরে স্কুলের চাকরি পেতে হাল ফেরে তাদের সংসারের। তার একমাত্র ভাইকে বি টেক পড়ার জন্য পাঠান বেঙ্গালুরুতে। বি টেক পড়ার পর তার ভাই বেঙ্গালুরুতে একটা চাকরি জোগাড় করে নিয়ে সেখানেই থেকে যায়। বিয়েও করে বেঙ্গালুরুতে। কমলিকা কলকাতায় থেকে যান তার মাকে নিয়ে। এরমধ্যে তার ভাইয়ের বউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায়, তাকে দেখাশোনার জন্য তার মা বেঙ্গালুরুতে যেতে বাধ্য হলেন। এবার কমলিকা পুরোপুরি একা হয়ে পড়েন।


      এরপর বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। সাধারণ শিক্ষিকা থেকে প্রধান শিক্ষিকা পদে উন্নীত হয়েছেন কমলিকা। বেড়েছে দায়িত্ব। আরো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্কুলের দায়িত্বভারের প্রভাবে হাসিখুশি কমলিকা দিদিমণি ক্রমশ গুরু গম্ভীর বড়দিতে পরিনত হন। স্কুলের পাহাড় প্রমাণ দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে সম্ভবত নিজের কথা, নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভুলে গিয়েছিলেন। সময় এগিয়ে চলে, বয়স বেড়ে চলে। এবার তিনি কর্মজীবন থেকে অবসরের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন।


      প্রায় ত্রিশ বছরের কর্মজীবন শেষে আজ অবসর নিতে চলেছেন বড়দি। ছেদ পড়তে চলেছে তার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের। আজ স্কুলের হল ঘরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার ফেয়ার ওয়েল অনুষ্ঠান। নিজের ফেয়ার ওয়েল অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন বড়দি। মাউথ পিস হাতে নিয়েছেন কথা বলার জন্য। কিন্ত কথা বলতে পারছেন না। গলা ধরে আসছে। চোখের কোন চিকচিক করছে। একটু থমকালেন, পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলেন। যেন নিজেকে বোঝালেন - আজ চোখের জলের দিন নয়। আজ মন খারাপ করার দিন নয়। আজ হাসির দিন। আজ মজা করার দিন। ক্ষনিকের জড়তা কাটিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, "আজ আমি কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে অন্য জীবনে প্রবেশ করতে চলেছি। দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে চলেছি। অর্থাৎ বিয়ে করতে চলেছি। গতকাল উকিলকে নোটিশ দিয়েছি। আজ সন্ধ্যায় সই করবো। যাকে বিয়ে করছি, তার সঙ্গে আমার পঁচিশ বছর বয়সের তফাৎ।"


      ইংরাজির দিদিমণি পারমিতা অবাক হয়ে বললেন, "তার মানে আমাদের জামাই বাবুর বয়স এখন ষাট প্লাস পঁচিশ মানে পঁচাশি বছর!"


      - "দুর বোকা, আমি কি বলেছি আমার থেকে পঁচিশ বছরের বড়? আমি বলেছি বয়সের তফাৎ। এখন তার বয়স পঁয়ত্রিশ বছর। এবার দেখবি আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে। আর আগের সেই খিটখিটে, বদমেজাজি বড়দিকে তোরা খুঁজে পাবি না। এবার থেকে দেখবি আমি অলওয়েজ দাঁত ক্যালাচ্ছি।"


      বড়দির মুখের ভাষা শুনে হকচকিয়ে যান অন্যান্য দিদিনণিরা।


      একটু থেমে আবার বলতে থাকেন বড়দি, "এক্ষুনি তোদের আলাপ করাচ্ছি ত্যানার সঙ্গে।" কথা থামিয়ে, ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কারো সাথে কথা বললেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এক অতি শীর্ণকায় অবয়ব স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকে, পুর্ব নির্দেশিত হল ঘরে এসে বড়দির পাশে দাঁড়িয়ে পড়লেন।


      বড়দি অন্যান্য দিদিমণিদের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দিলেন, "এই হলো আমার পাঁচু ডার্লিং। এর অবশ্য একটা ভাল নাম আছে, পঙ্কজ। তবে আমি ভালোবেসে পাঁচু বলেই ডাকি। পাঁচুও একজন টিচার। তবে পড়াশোনার নয়। ও একজন গানের মাস্টার। জীবনের অর্ধেকটা গান গেয়ে আর আমার সঙ্গে লাইন মেরে কাটিয়ে দিয়েছে। এখন বিয়ে করার শখ জেগেছে।"


      পাঁচুকে দেখে অবাক হয়ে যান পারমিতা, বলেন, "একেতো আগেও দেখেছি স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে। আমাকে দেখতো। আমি ভাবতাম হয়তো আমাকে...।"


      পারমিতাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হিন্দির দিদিমণি গায়ত্রী বলেন, "হাঁ, হাঁ, হামিভি দেখেছে ইনকো স্কুলের গেটের বগলমে। লেড়কা থোড়া দুবলা হ্যায়। লেকিন চিকনা ভি হ্যায়। হামি শোচতাম হামাকে লাইক করছে। একদিন জরুর হামাকে প্রপোজ করেঙ্গে। লেকিন দিন গায়ে, মাহিনা গায়ে, বরষো গায়ে, ও লেড়কা বিলকুল পাত্থরকে ত্বরা খামোস থা। ইসকে বাদ হামার শাদী হলো, হানিমুন হলো, বাচ্চা ভি পয়দা হলো। উসকে বাদ ভি হামি দেখলাম ও লেড়কা স্কুলের বাহার ইন্তেজার কর রাহাথা! হামি বিলকুল পরিশান হোগায়িথি। সমজমে নেহি আরাহিথি ও লেড়কা আখের কেয়া চাহেতেথে! আভ সামঝি ও হররোজ কিসকে লিয়ে স্কুলকে বাহার ইন্তেজার কর রাহাথা।"


      পারমিতা বলেন, "আমিও তাই ভেবেছিলাম। এই ছেলেটা মনে হয় আমাকে দেখছে। প্রথম প্রথম অনেক কিছু ভাবতাম। পরে আর গুরুত্ব দিতাম না। এখন বুঝতে পারছি উনি বড় গাছে আঁকশি দিয়েছেন।"


      - "থাম থাম। এবার থাম তোরা। বেশ বুঝতে পারছি তোরা বিলকুল ঘাবড়ে গেছিস।" আবার বলতে থাকেন বড়দি, "তোদের নাকের ডগায় আমি দশ বছর ধরে লাইন মারছি, তোরা টের পেলি না। এইজন্য আমি বড়দি, আর তোরা ছোটো। মা বেঙ্গালুরুতে চলে যাওয়ার পর একদম একা হয়ে গেলাম। স্কুল ছুটির পর আর সময় কাটতো না। এভাবে দিনের পর দিন থাকা যায় না। নিঃসঙ্গ জীবন যে কি কষ্টের তোদের বোঝাতে পারবো না। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। একদিন স্কুলে আসার পথে পাঁচুর সঙ্গে চোখাচুখি হয়ে গেল। পাঁচু তখন পঁচিশ বছরের কাঁচা আম হলে কি হবে, আমি তখন পঞ্চাশের পাকা ঢ্যাঁড়শ। বেশ বুঝতে পারলাম আমার চাঁদ পানা মুখটা দেখে ওর শরীরের কোনো কোনো অর্গান অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে দিয়েছে। বুঝতে পেরেই দিলাম আগুনে ঘি ঢেলে, চটাস পটাস করে...।"


      - "সেকি বড়দি তুমিতো তোমার ছাত্রীদেরও মারধর করো না। আর একজন স্রেফ তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল বলে তুমি তাকে পিটিয়ে দিলে!" পারমিতা বলতে থাকেন, "এটা একদম ঠিক হয়নি।"


      - "দুর বোকা পেটাবো কেন? প্রেম ভালোবাসাতে আবার পেটাপেটি, মারামারি চলে?" হাসতে হাসতে বড়দি বলতে থাকেন, "তোরা কি তোদের লক্কা পায়রাগুলোকে কথায় কথায় পেটাস?"


      পারমিতা মৃদু প্রতিবাদ করে বলেন, "না বড়দি, আমাদের ওরকম কেউ নেই। আমরা সব ভালো মেয়ে।"


      - "এই চপ।" ধমকে ওঠেন বড়দি, "আর যদি মিথ্যে কথা বলিস আবার আগের মত রাগী হয়ে যাবো। জানি জানি সব জানি। স্কুল ছুটির পর তোরা কে কোন পার্কে, কোন গাছের তলায়, কোন ঝোপের আড়ালে বসে কার সঙ্গে প্রেম গ্রন্থ পাঠ করিস সব জানি আমি। সব খবর আছে আমার কাছে। এবার শোন চটাস পটাসের রহস্য। যখন দেখলাম পাঁচু আমাকে দেখে বেসামাল হয়ে গেছে। শূণ্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর পায়ে পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে, দিলাম চটাস পটাস করে কয়েকবার চোখ মেরে। ব্যস কেল্লা ফলে, পাঁচু আমার হাতে। তারপর মজাই মজা। স্কুলের ছুটির পর উড়ে বেড়াতে লাগলাম পাঁচুর সঙ্গে। সারা সন্ধ্যা আমার সঙ্গে কাটিয়েও মন ভরতো না পাঁচু বাবুর। আমাকে দেখার জন্য সকাল বেলাতেই হাজির হত স্কুলের গেটে।"


      বড়দির প্রেম কাহিনী শুনে সাহিত্যের দিদিমণি কবিরাণী ছন্দ মিলিয়ে বলে ওঠেন,


      "এই বয়সে প্রেম!

       নিন্দুকে কয় সেম।"


      আমাদের বড়দি কোনো অংশে কম নন কারো থেকে। তিনিও দিলেন ছন্দ মিলিয়ে,


      "তুইও নে অ্যাটেম,

       দেখ কি মজার গেম।"


      অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর পাঁচু বললেন, "আপনাদের বড়দির সঙ্গে আমি দশ বছর ধরে কেবল প্রেম করিনি। আপনাদের বড়দি আমাকে জীবন যুদ্ধের অনেক পাঠ পড়িয়েছেন। সেই সব পাঠ পড়ে আমি পিজন হার্টেড পাঁচু থেকে লায়ন হার্টেড পঙ্কজে পরিনত হয়ে এই ভয়ঙ্কর ভিসিশন নিয়েছি। বিয়ে করার ডিসিশন।"


      পারমিতা পাঁচুর উদ্দেশ্যে বললেন, "আমি যদি ছেলে হতাম, কবে আমাদের সুন্দরী বড়দিকে বিয়ে করে নার্সিংহোমের ভাত খাইয়ে দিতাম। আপনি বলে এতদিন ধরে বসে ছিলেন।"


     বিস্মিত পাঁচুর পাল্টা প্রশ্ন, "ধরে বসেছিলাম! কি ধরে বসেছিলাম?"


      একটু বিরক্ত হন পারমিতা, "কি আবার ধৈর্য।"


     - "আমার পাঁচু ডার্লিং" বড়দি প্রায় জড়িয়ে ধরেছেন পাঁচুকে। বলছেন, "গত দশ বছর ধরে বেচারা পাঁচু ফিল্ডিং করে গেছে। আজ থেকে ব্যাট করার সুযোগ পাবে। দেখা যাক কত রান করতে পারে!"


      অকপটে নিজের মনের কথা বলে চলেছেন বড়দি। বড়দির বলা কথাগুলো যে যার মত করে ভেবে চলেছেন, অন্যান্য দিদিমণিরা। ভাবতে ভাবতে দিদিমণিদের ফর্সা মুখগুলো ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে।


      কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বড়দি বলে চলেছেন, "সারারাত ধরে ব্যাট করবে পাঁচু। সেকি কম ধকলের কাজ! ব্যাট করতে করতে কখনো ডানদিকে হেলবে, কখনো বাঁয়ে হেলবে, কখনো চিৎ হয়ে যাবে, কখনো কাৎ হয়ে যাবে, কখনো উপুড় হয়ে যাবে। সারারাত ধরে কসরত করবে। খাট জুড়ে লাফালাফি, দাপাদাপি করবে। এসব এক রাতের ব্যাপার নয়। রাতের পর রাত এসব করতে হবে। ধকল নিতে হবে। ধকল নেওয়ার জন্য দরকার শক্তপোক্ত শরীর। সেইজন্য পাঁচু সকালে বিকালে শরীর চর্চা শুরু করেছে। রোজ সকালে ত্রিশ কিলোমিটার দৌড়চ্ছে। বিকালে জিমে গিয়ে তিনশো পাউন্ডের বারবেল তুলছে। তারপর জিম থেকে বাড়ি ফিরে তিন হাজার করে ডন বৈঠক দিচ্ছে। আমি পাঁচুর ডায়েট চার্ট পাল্টে দিয়েছি। আজ সকালে পাঁচু কি খেয়েছে জানিস? ব্রেকফাস্ট করেছে ছটা কলা, ছটা ডিম, আর ছয় গ্লাস দুধ দিয়ে। দশটার সময়ে খেয়েছে ছয় গ্লাস হেল্থ ড্রিঙ্ক। লাঞ্চে খেয়েছে...।" 


      বড়দির কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যান দিদিমণিরা। কবিরাণী কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিলাপ করতে থাকেন, "বড়দিগো, কোন ছারপোকাতে তোমাকে কামড়ালোগো? তুমি কি করে এই বয়সে এতটা বিগড়ে গেলেগো? তোমার ছাত্রীরাও এতটা ত্যাঁদড়ামো করেনাগো, যা তুমি এখন শুরু করছোগো।..."


      কারো কথায় কান না দিয়ে বড়দি বলে চলেছেন, "বিয়েতো কেবল আমার একার হচ্ছে না, পাঁচুরও হচ্ছে। তাই পাঁচুর জন্য একটা গিফ্ট কিনেছি। কয়েক দিন আগেই কিনেছিলাম, কিন্ত বিয়ের আগেতো কাজে লাগবে না তাই দিইনি। অবশ্য এসব পার্সোনাল কথা কেউ কাউকে বলে না। বিয়ের পর পাঁচু রাত জেগে বিছানায় কি করবে সে সব কথা অন্য কাউকে বলা যায় না। কিন্ত তোদের ব্যাপারটা আলাদা, তোদের কাছে কোনোদিন কোনো কিছু গোপন করিনি, আজও করবো না।" একটু থামলেন, বেশ বড় একটা গিফ্ট প্যাক বের করে মিষ্টি সুরে, আদুরে গলায় অনুমতি নেওয়ার ভঙ্গিতে পাঁচুকে বললেন, "ওদের দেখাই?"


      হতভম্ব পাঁচুর মুখ থেকে অস্ফুটে 'হুঁ' বা 'উঁ' জাতীয় একটা শব্দ নির্গত হলো। গিফ্ট প্যাক দেখে দিদিমণিরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন, 


      - "কি আছে বলতো?"


      - "বলছেতো বিয়ের পর কাজে লাগবে। তারমানে ঐসব...। দেখিস না টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়।"


      - "কিন্ত সেতো ছোটো প্যাকেট হয়।"


      - "মনে হয় সস্তায় পেয়ে অনেকগুলো কিনেছে। মনে হয় এক বছরের জন্য কিনেছে।"


      - "বড়দি এটা পারলো! এই বয়সে দোকানে গিয়ে প্রকাশ্যে এসব কিনতে পারলো! একটুও লজ্জা করলো না!"


      - "না রে ওসব লজ্জা ঘেন্না আর বড়দির মধ্যে নেই। আমাদের বড়দি আর এই জগতের প্রাণী নয়। মনে হচ্ছে কোনো ভিন গ্রহের এলিয়েন হয়ে গেছে।"


      - "আমারতো প্রেতাত্মা মনে হচ্ছে। যখন হিঁ হিঁ করে হাসছে, মনে হচ্ছে একটা শাঁকচুন্নি। ওসব আমি দেখতে পারবো না। আমি চোখ বন্ধ করলাম।"


      - "আমিও চোখ বন্ধ করলাম।"


      আবার বড়দির গলা শোনা গেল, "এই দ্যাখ, চোখ খুলে দ্যাখ সবাই।" আস্তে আস্তে চোখ খুললেন দিদিমণিরা। দেখলেন একমুখ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বড়দি। মা কালীর খাঁড়ার মত উঁচু করে ধরে আছেন একটা মসকুইটো ব্যাট। বলছেন, "দ্যাখ দ্যাখ, ভাল করে দ্যাখ, এই ব্যাট দিয়ে পাঁচু বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের রেকর্ড ভাঙবে। আসলে হয়েছে কি আমাদের এলাকায় ভীষণ মশার উৎপাত। রাতে ঘুমোতে দেয় না। আজ থেকে সারারাত পাঁচু ব্যাট হাতে মশা মারবে, আর আমি নাক ডাকিয়ে ঘুমোবো।"


      কথা বলতে বলতে বড়দি খেয়াল করলেন আশেপাশে পাঁচু নেই। এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে পাঁচুকে আবিষ্কার করলেন একটা টেবিলের নিচে। সম্ভবত কোনো আপত্তিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য পাঁচু আত্মগোপন করেছেন টেবিলের নিচে। পাঁচুর শীর্ণ কোমর এবং কোমর বন্ধনী এক সঙ্গে ধরে টেবিলের তলা থেকে তাকে টেনে বের করে আনলেন বড়দি। দাঁড় করিয়ে দিলেন নিজের পাশে। আহা কি সুন্দর লাগছে দুজনকে , ঠিক যেন স্বর্ণবর্ণা রাধারাণীর পাশে নব দুর্বাদলশ্যাম। 


      আচমকাই কেঁদে উঠলেন কবিরাণী, "বড়দি তুমি যতই ইয়ার্কি কর, আমার একদম ভালো লাগছে না। কাল থেকে তোমাকে দেখতে পাবো না!"


     বড়দি বললেন, "দুর পাগলি, দেখতে পাবি না মানে? খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের একটা বড় রিসেপশন হবে। সব দায়িত্ব তোদের। তারপর হানিমুন। একবার হানিমুনে যেতে দে, তারপর দেখবি তোদের বড়দি কি করতে পারে! তারপরতো পরপর অনুষ্ঠান। সাদ ভোক্ষন, ষষ্ঠী পুজো, অন্নপ্রাশন। ছেলে হলে উপনয়ন, আর মেয়ে হলেতো কথাই নেই, তোদের হাতে তুলে দেবো। মানুষ করার পুরো দায়িত্ব তোদের। আর তুই ভাবছিস আর দেখা হবে না!"


      - "ইস উমর মে ভি বাচ্চা পয়দা করনেকি উম্মীদ! বহুৎ জান হ্যায়। বহুল জোসীলে হ্যায় হামারি বড়দি।" বলে ওঠেন গায়ত্রী। 


      - "লেকিন জোস অউর জবানীমে থোড়ি ফারাক হ্যায় এতো খ্যাল কর মেরি নানী।" বলেন পারমিতা।


      - "ফিরভি বহুৎ জোস হ্যায়।" কথা বলতে বলতে গুনগুনিয়ে ওঠেন গায়ত্রী,


      "ইতনি শক্তি হামে দেনা দাতা,

       মনকা বিশওয়াশ কমজোর হোনা।"


      "ওরে গায়ত্রী, তুই জানিস না তোদের বড়দি কত বড় খেলোয়াড়! অপেক্ষা কর একদিন দেখতে পাবি তোদের বড়দি পুরানো হয়ে যাওয়া স্পিনের পিচেও ব্যাট করতে পারে। সেঞ্চুরি করতে পারে।" বললেন বড়দি।


      আনপ্রেডিক্টেবেল বড়দির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সম্ভাব্য কোনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য পাঁচু বলে ওঠেন, "অনেক কথা হলো। বলার মত আর কোনো কথা অবশিষ্ট নেই। এবার যদি বলতে হয় গানে গানে বলতে হবে।"


      সঙ্গে সঙ্গে গান শোনানোর জন্য সমবেত অনুরোধ এবং দাবি ওঠে। সেই দাবি মেনে গান ধরলেন পাঁচু,


      "সুনীল সাগরের, শ্যামল কিনারে,

      দেখেছি পথে যেতে, তুলনাহীনারে..."


     চমৎকার গানের গলা পাঁচু মাস্টারের। মন্ত্র মুগ্ধের মত গান শুনছেন দিদিমণিরা। উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে চলেছেন গানের মাস্টার পাঁচু,


      "...চকিতে ক্ষণে ক্ষণে পাবো যে তাহাকে,

           ইবনে কেদারায় বেহাগে বাহারে..."


      হবু বরের গান শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বড়দি। আবেগের স্রোতে ভাসতে ভাসতে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। দু হাত শূন্যে তুলে গেয়ে ওঠেন,


      "ভালো লেগেছিল তাই, মেরেছে ঝাড়ি তারে

       সুনীল সাগরের, শ্যামল কিনারে..."


      দিদিমণিরা ভাবছেন বড়দিকে কি আর গান গাইতে দেওয়া ঠিক হবে? নাকি জোরে হাততালি দিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হবে?


      তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়লো হল ঘর। গান বাজনা থামলো। এবার ফেরার পালা। হল ঘর থেকে বের হতে হতে বড়দি ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, "আমি তোদের থেকে অনেক পাকা প্লেয়ার। তাই পুরানো হয়ে যাওয়া স্পিনের পিচেও ব্যাট করতে পারবো। কিন্ত তোরাতো কাঁচা প্লেয়ার, তাই বলছি, পিচ ভালো থাকতে থাকতে যতটা পারবি রান করে নিবি। অকারণে দেরি করবি না। অকারণে দেরি করলে ভুল হয়ে যায় রে, খুব ভুল হয়ে যায়!" কথা শেষ করেই বড়দি পাঁচু মাস্টারের হাত ধরে হনহন করে হাঁটতে লাগলেন।


      বড়দি কি সত্যিই পাল্টে গেলেন? গুরু গম্ভীর বড়দি কি কর্মজীবনের শেষ দিনটা নিছক মজা করে কাটালেন? নাকি জীবনে অনেক কিছু না পাওয়ার অব্যক্ত যন্ত্রণাটাকে হাসি, মজা, বেসুরো গান দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করলেন? ঠিক বোঝা গেল না!


                         

চোখের জল - শিবানী বাগচী || Chokher Jol - Shibani Bagchi || Muktogoddo || মুক্ত গদ্য || রম্যরচনা || Rommo rochona

 চোখের জল

      শিবানী বাগচী



এক ফোঁটা চোখের জলের দাম বুঝতে, বড়ো দেরী হয়ে গেলো ! অভিমানে গুমড়ানো চোখের জলে পেলাম যেন সাগরের নোনা স্বাদ ! কখনও তা চিকচিক করে চোখের কোনে, কখনওবা ঝরে পড়ে অনাদরে ; নয়তো বিরহে উদ্বায়ী হয়ে গুমড়ে মরে বুকের মাঝে ; আবার বাঁধ ভাঙা উল্লাসে সাঁতার কাটে ছলাৎ ছলাৎ চোখের আড়ে !

        একদিন ঢেউয়ের কাছে জানতে চেয়ে ছিলাম ভালো থাকার মানে। সে তো অপেক্ষাতেই দোল খেতে থাকলো, অসংলগ্ন ঢেউ হয়ে চোখের জলে ? যদি কোনদিন তোর কাছে মেঘ চাই আমায় দিবি ; বৃষ্টি জমাবো ওতে ! দুফোঁটা চোখের জল আর স্নান ঘরে উপচানো বাষ্পীয় শোক, যেখানে চশমার কাঁচ মন খারাপের কুয়াশা মাখবে রোজ ! আর আমি নির্জনে জল ছপছপ চোখে লিখবো আমার যাপন ছোঁয়া কবিতা !

       গোধুলি হলেই নতুন করে কিছু হারিয়ে ফেলার বড়ো ভয় হয় রে ? যদিও হারাতে হারাতে, হারানোর আজ আর কিছু নেই । তবু খোলা চোখের জমা জলে দেখি কিছু অপ্রত‍্যাশিত ইচ্ছে, যা ঝাপসা কাঁচের আবছা আলোয় মেঘ হয়ে জমে, আর ঝরে পরে অঝোরে চোখের জল হয়ে !

       সর্বনাশ জেনেও প্রাক্তনের হাত ধরে সেদিন ছেড়েছি ঘর, আগুনে সঁপেছি দেহ, হয়েছি লুট ! মান অভিমান আর চোখের জল মিশিয়ে পাষান হৃদয় গলিয়েছি ; ভিজিয়েছি আশ্বীনের চাঁদ ! বহু যুগের তেষ্টা মেটাতে অমৃতের আস্বাদনে ঠোঁটে ঠোঁট বেসেছি ভালো । দুর্ভেদ‍্য পাহাড় লঙ্ঘন করার আনন্দে যখন সফেন ফ‍্যানা হয়ে আছড়ে পড়ি ভালোবাসার বুক জমিনে, তখন বিশ্বাসই হয়না যে এই মায়াময় চোখের এতো আবেগ ! মনে হয় ঠিক যেনো "মেঘের কোলে রোদ হেসেছে"! জলে ভরা চোখ কখনও আনন্দের আবার কখনও বা বিরহের প্রতিরূপ ! কখনও বন্ধ চোখ খোয়াব দেখে, আর বিস্ফারিত চোখে জাগে অবাক বিস্ময়, রা কাড়েনা ! কেবল নোনা জল ভরা অথৈ সাগর হয়ে টলমল করে।

        অনেকটা পথ চলার পড়ে বুঝি কেউ কারো নয়, একটা একটা করে জমাট বাঁধা পাথর গড়িয়ে পড়ে বুকের মাঝে, দলা বাঁধে শোক হয়ে। সঙ্গের সাথী হয় শুধুই চোখের জল ! পুরুষের আবার হাজারো দুঃখেও চোখের জল ফেলা বারণ । শুকনো পাতার মর্মরিত দীর্ঘশ্বাসের মতো শুধু তারা গোমরাবে, উদ্বায়ী অথবা ছাই চাপা আগুনের মধ‍্যে মুখ থুবড়ে থাকবে, তবু ঝরবে না ।

       আজ যেটুকু পথ পেরিয়ে এসেছি, তা ভরে আছে শূন‍্যতায়। অসম্পৃক্ত শিশিরের গায়ে জমে আছে শুধুই বোবা কান্নারা, টলমলে চোখের জলের জলছবি হয়ে জল ছোঁয়া চোখে ক্লান্ত আতশ কাঁচে!

         একদিন ভালোবেসে ছিলাম বৃষ্টিকে । সে কখনও কখনও আনমনে ভিজিয়ে দিয়েছিলো আমার মন, আবার কখনও বা চোখের জল হয়ে মুখ লুকিয়ে ছিলো আঁচলের ভাঁজে ! বৃষ্টি আর চোখের জল, হয়তোবা একে অন‍্যের পরিপূরক ; বলোতো আমরা তা কজনইবা

 বুঝি !

পুরীর উল্টো রথ - অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় || Purir ulto roth - Ashok Bandopadhyay || Muktogoddo || মুক্ত গদ্য || রম্যরচনা || Rommo rochona

 পুরীর উল্টো রথ

           অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়



পুরীর রথ দেখার শখ ছিল যুবক বয়স থেকেই। কিন্তু এতো ভীড়ের মধ্যে রথ দেখার মতো কঠিন কাজ আর হয় না। তাই আগে কখনো সাহসে কুলায়নি। শেষ পর্যন্ত একদিন সেই পুরীর জগন্নাথদেবের রথ দেখলাম, তবে উল্টো রথে।

      গত ২০১৯ সালে দুই ছেলের সঙ্গে সস্ত্রীক বাঁকুড়া স্টেশনে চেপে বসলাম বৈদ্যনাথ ধাম পুরী এক্সপ্রেস ট্রেনে। ট্রেনটা খুব যে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন তা নয়। কিন্তু বাঁকুড়া থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ছাড়ায় সুবিধা হয়েছিলো। ঘটনা চক্রে ঐ ট্রেনের কামরায় এমন একদল মহিলা যাত্রীর সঙ্গ ( সঙ্গে ওদের দুয়েক জন পুরুষ সহযাত্রীও ছিলো ) জুটলো যারা আসানসোলে চেপেছেন। ওনারা কেউ আসলে কলকাতার, কেউ আসানসোলের কেউ বা দুর্গাপুরের। প্রায় জনা পাঁচেক ঐ মহিলারা প্রত্যেকে পরস্পরের ভীষন বন্ধু। এবং ওরা এমন একটা ট্যুরিস্ট টিম যারা এই ভাবে একসাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান ছুটি ছাটা বা সুযোগ পেলেই। ওদের কেউ প্রোফেসর, কেউ শিক্ষিকা, কেউ বা সরকারি কর্মচারী। তবে সবচেয়ে অবাক হলাম জেনে যে ওরা প্রতি বছর এই সময়ে পুরী যান শুধুমাত্র উল্টো রথ দেখতেই। প্রায় এক সপ্তাহ সেখানে থাকেন। ওদের অবশ্য প্রধান আকর্ষণ উল্টো রথের পরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা কে যখন আবার মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঠিক তার আগে যে অসাধারণ ও অজস্র মূল্যবান মণি রত্ন আভূষণে রাজবেশে সজ্জিত করা হয় তিন মূর্তিকে সেইটি দুচোখ ভরে দেখে নয়ন সার্থক করা। এবং ওরা এই কাজে ভীষন রকম সফল। 

      শুধু মাত্র এই জন্যই ওরা সব ভুলে ঠিক এই রকম সময়ে পুরী যান পাঁচ হরিহর আত্মা বন্ধু মিলে এবং পুরীর শ্রী জগন্নাথ দেবকে বা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে নয়ণ মনোহর রূপে দেখে আনন্দে আবেগে আপ্লুত হয়ে এক অদ্ভুত অলৌকিক অনুভূতি ও উপলব্ধির আবেশে মন প্রাণ পরিপূর্ণ করে নূতন প্রাণ শক্তি ও দিব্য পরমানন্দে নিজের নিজের গৃহে ফিরে আসেন। কিন্তু উল্টো রথ এলেই ওরা আবার জগন্নাথ প্রভুর অলৌকিক আকর্ষণে বারে বারে এই ভাবে ছুটে যান। বলা বাহুল্য যে এরা প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হয়েও সংসার জীবনে প্রবেশ করেননি।

      আমাদের মতো একটা ছিমছাম ফ্যামিলিকে সহযাত্রী হিসেবে পেয়ে ওরা যে ভীষন খুশী সেকথা মুখ ফুটে বলেই স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করলেন। বললেন, "ভালোই হলো। আপনাদের মতো সহযাত্রী পেলাম এটা সত্যিই সৌভাগ্যের।" ক্রমশঃ আলাপ আলোচনা চলতে চলতে যখন জানতে পারলেন যে আমার দুই পুত্রের একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্য জন এইমসের ডাক্তার যার নীট ও এইমসের এন্ট্রান্সের অসাধারণ সাফল্য সারা রাজ্যের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল সে কথা শুনে ওরা তো আরো অভিভূত। রাত আটটার সময় আমরা নিজেদের বার্থে শোবার ব্যবস্থা করে সোয়া আটটায় ঘরের খাবার নিয়ে ডিনার করবার তোড়জোড় করতেই ওরাও আমাদের অনুসরণ করলেন। স্বীকার করলেন যে ট্রেনে রাতের খাবার তাড়াতাড়ি সেরে নেওয়াই ভালো। তারপর প্যাকেটের চিকেন, ফ্রায়েড রাইস বের করে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেতে শুরু করলেন। সঙ্গী দুই তিন জন পুরুষ সহযাত্রী আত্মীয়কেও খেতে দিলেন ফাইবার প্লেটে। ওদের খাওয়া দেখে মনে হলো যেন ট্রেনের মধ্যে ভোজ খাচ্ছে। তবে চলন্ত ট্রেনে বা বাসে আমার নিরামিষ, খুব বেশি হলে ডিমকারি খেতেই বেশি পছন্দ। মাছ বা মাংস কোন মতেই নয়। ঐ সব খেলে অন্য সহযাত্রীর অন্য রকম অসুবিধা হয়। তাছাড়া এই সব খাবার বড্ডো নোংরাও করে পরিপার্শ্ব।

      যাই হোক, যথারীতি সময় মতো শুয়ে পড়ে পরদিন ভোরে পুরী স্টেশনে নেমে বড়ো ছেলের বুক করে রাখা একটা ভালো হোটেলে গিয়ে উঠলাম। সেদিন হোটেলে পেট ভরে টিফিন করে সমুদ্র স্নান করে এলাম। দুপুরে লাঞ্চ করে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় কিছুটা টোটো করে রাজবাড়ী পেরিয়ে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড পর্যন্ত যেয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম গুন্ডিচা মন্দিরের দরজার সামনে যেখানে কি সুন্দর ভাবে পাশাপাশি জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার রথ দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তায় তুমুল ভীড়। মন্দিরের ও রথের দেবতাদের প্রণাম করে রথের মোটা দড়িও স্পর্শ করে খুব আনন্দ পেলাম। তারপর চারিদিকে রথের মেলা, নানান পসরা দেখে, বড়ো ছেলের কেনা দারুন একটা আইসক্রিম খেয়ে ভীড়ের মধ্যে হেঁটে হেঁটে কোথাও রাস্তায় বাঁধা মঞ্চে গানের জলসা, কোথাও জগন্নাথ দেবের দৈবী ক্রিয়া কান্ড নিয়ে নাটক ইত্যাদি দেখতে দেখতে আবার টোটো করে হোটেলে ফিরে এলাম। এটা ছিল উল্টো রথের দিন।


      উল্টো রথের পরের দিনে বিকেলে রাস্তায় নেমে শুনলাম যে রথ গুলো জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে যাবার জন্য সোজা রাস্তায় যাওয়া যাবে না, রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই কোন টোটো ঐ পথে নিয়ে যেতে চাইলো না। অগত্যা পিছন দিকের এক গলিপথ ধরে টোটো করে কিছুটা এগিয়ে ভীড়ের মধ্যে নেমে যেতে হলো। আর যাবে না বললো টোটো ওয়ালা। সুতরাং সেই গলি রাস্তায় অনেকটা হেঁটে জানা গেল যে আর ওদিক দিয়ে যাওয়া যাবে না। পুলিশ রাস্তা আটকে রেখেছে। সুতরাং প্রচন্ড ভীড়ের জনতার পিছনে পিছনে প্রায় ঢেউয়ের ঠেলায় শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম ঠিক সেই খানে--একেবারে মূল মন্দিরের সিংহ দুয়ারের কাছে। আর ভীড়ের মধ্যে একটু মাথা উঁচু করে দেখতেই ভীষন ভাবে চমকে উঠলাম দেখে যে আমাদের থেকে মাত্র হাত তিরিশ দূরেই দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দেবের রথ। তার কিছুটা দূরেই সুভদ্রা ও বলরামের রথ। তিন রথের তিন রকম উচ্চতা, তিন রকম রঙ্গ, সজ্জা ও পতাকা। রথের উপর থেকে যেন স্বয়ং শ্রী জগন্নাথ আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সেই অপূর্ব নয়ন মনোহর মূর্তি প্রতিমা দেখে এবং অসাধারণ ও চমৎকার সাজে সজ্জিত তিন দেব দেবীর রথ দেখে যুগপৎ মোহিত ও বিস্ময় বিমুঢ় হলাম। জীবনে এই প্রথম বার রথ দেখছি পুরীতে। ভাবতেই অবাক লাগছে। 

      এ ভাবে যে কতো ক্ষণ চিত্রার্পিতের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম সব ক্লান্তি, কষ্ট ভুলে মনে নেই। শুধু প্রভু জগন্নাথের এমন রাজবেশ দেখে দিব্য আনন্দে বিভোর হয়ে গেছলাম। আমার একটু আগেই ছ ফুটি দীর্ঘ বড়ো পুত্র হাতে তার নিকন ক্যামেরায় ফটাফট ফটো তুলে চলেছে। ছোট ছেলেও যথেষ্ট লম্বা। ওদের দুই ভাই তো মনের মতো সব দেখতে পেয়েছে। আমার অর্ধাঙ্গিনীকে একটু ঠেলে সামনে এগিয়ে মাথা উঁচিয়ে এমন অসাধারণ দিব্য ত্রয়ী রথের দৃশ্য দেখতে সাহায্য করলাম।  

      প্রায় আধ ঘন্টা ঐভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে উল্টো রথ দেখে চক্ষু সার্থক করে আবার পিছন ফিরে গলি দিয়ে হেঁটে রাস্তার পাশের দোকানে এখানকার বিখ্যাত রাবড়ি, মালপোয়া খেয়ে ফাঁকা জায়গায় এসে টোটো ধরে আমাদের হোটেলে ফিরে নৈশাহার সেরে বিশ্রাম নিলাম।

 মনে পড়লো আসার পথে ট্রেনের মহিলা সহযাত্রীদের কথা। কেন ওরা বারবার এমন সুন্দর অজাগতিক দৃশ্য দেখে আধ্যাত্মিক অনুভূতির দিব্য ভাবে আবিষ্ট হতে আসেন সেটা এবার সত্যিই বুঝতে পারলাম।



লাইমলাইট - মধুরিমা ব্যানার্জ্জী || limelight - Madhurima Banerjee || অনুগল্প || Short story || Prose

    লাইমলাইট

              মধুরিমা ব্যানার্জ্জী




            কালিকাচরনের আজ একদম শেষ অবস্থা। এককালের ডাকসাইটে ব্যান্ডের লিড সিঙ্গার কালিকাচরন। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন নয়নাজুলিতে। গাড়ি উল্টে গিয়ে ব্যান্ডের অনেকেই মারা যায়। নিজেকেই দোষ দিয়ে নেশার মৌতাতে ডুবে থাকেন তিনি। আজকাল জ্ঞান গলা দিয়ে সেরকম একটা আসেনা, তিনি চেষ্টাও করেননা। বুকে ব্যাথাটা মাঝে মধ্যে শোয়ের মাঝেই জানান দেয়। আগে কালিকাচরনের সাথে সেলফি তোলার ভিড়, নাহলে সই চাওয়ার। সেই ভিড় ক্রমশ পাতলা। আসলে লাইমলাইট থেকে সরে এলে মানুষ তো ক্রমশ ভুলতে থাকে। এখন শো অনেক কমে গেছে। তবে দলে গোপাল বলে নতুন ছেলেটি আসার পর একটু যা বায়না হয়। আজ এই শোয়ে নিজে গাইতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কালিকাচরন। জাত শিল্পীর লাইমলাইট চলে গেলে যা হয়।



অন্নের চেয়ে বড় যা - দিলীপ পণ্ডা || Onner cheye boro Jaa - Dilip Ponda || অনুগল্প || Short story || Prose

 অন্নের চেয়ে বড় যা

         দিলীপ পণ্ডা



     সব্জী কুটতে কুটতে বটিটা একদিকে ঠেলে ফেলে দিয়ে হেঁশেল থেকে একটা দা হাতে নিয়ে ছুটল নমিতা।হুট করে কিছু করে বসবে, তা হয়না।মাঠের আলপথে দৌড়াতে দৌড়াতে সে দেখল একটা গরু ঢুকে পড়েছে বেড়া ভেঙে।কী অবাক করা কাণ্ড! লাল ডাটাগুলো পরপর মুড়িয়ে দিল? ভাগ্যিস তো ডাটা নিতে এসেছিল,নইলে কত্তার এত সাধের চাষ সব তছনছ করে দিত।জন্তুটাকে তাড়িয়ে বেড়াটা তুলে সোজা করে দিল নমিতা।


   রান্নাঘরে ঢুকে একটা পোড়া গন্ধ নাকে আসতে একঘটি জল ঢেলে দিল হাড়িটায়।ভাতটা হয়ত রক্ষা পেল কিন্তু ওর রক্ষা হবে কি?একটা বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়।নিজের গোয়ালঘরের একটা গাই এনে সে বাঁধল রান্নাঘরের কাছে পেঁপে গাছটায়।


   কত্তা জমি পরিদর্শন করে একেবারে স্নান করে ফিরেছেন।রান্নাটা ভারী সুন্দর হয়েছে আজ,যেন মহোৎসবের খাবার---বলে অফিসে যাওয়ার সাইকেলের স্ট্যাণ্ডটা তুললেন।নমিতা হাঁ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।চোখজুড়ে নতুন প্রেমের উন্মাদনা কিছুটা ঠিকরে পড়েছিল কত্তার পাঁজরের গভীরে।

ভালোবাসা ডট কম - সুপ্রিয় ঘোষ || Valobasa Dot com - Supriyo ghosh || অনুগল্প || Short story || Prose

 ভালোবাসা ডট কম

              সুপ্রিয় ঘোষ 



ভালোবাসা যেকোন কিছুই মেনে চলে না তা আমরা জানি," মন চায় মিলতে মিশে হয় খুশি মন গাছের সাথে গাছ হয় নদীর সাথে নদী"। ঠিক এই লাইনটা আমাদের হৃদয়ের প্রতিরূপ ঠিক তেমনই ঘটনা রূপম ইসলাম ও দেবপ্রিয়ারমধ‍্যে। রূপম সেন্ট্রাল পাবশিকেশন স্কুলে টিচার আর দেবপ্রিয়া এগ্রিজকালচারের ছাএী লাস্ট ইয়ার। তাদের মধ‍্যে প্রেম হয় এক বাসে যাতায়াত থেকে একদিন বাসে ওঠৈ দেবপ্রিয়া দেখে তার কাছে টাকা নেই তখন পাশের সিটে বসা রূপমকে বলে আপনি টাকাটা দেবেন আর আপনার ফোন নং দেবেন বাড়ি ফিরে অনলাইন টাকা পাঠিয়ে দেব। তারপর রূপম বলে নাহ নাহ ঠিক আছে বলে তার ভাড়া দিয়ে দেয়। তারপর বাড়ি ফিরে দেবপ্রিয়া টাকা পাঠিয়ে দেয় এবং ওয়াটস অ‍্যাপে এসএমএস করে। এরপর তাদের প্রতিদিন কথা হতে থাকে এবং বাসে মাঝে মাঝে দেখা হয় এইভাবে চলতে চলতে কখন যে দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে তা তাদের অজানা। একদিন রূপম মনের কথা দেবপ্রিয়াকে বলে সে তাকে ভালোবাসে ও বিয়ে করতে চায়।দেবপ্রিয়া বলে আপনি আমার চেয়ে অনেক বড়ো তাছাড়া আমাদের বিয়ে কি কেও মানবে? রূপম বলে ভালোবাসা ধর্মহীণ বর্ণহীণ তা কখনই ধর্মকেন্দ্রিক হতে পারেনা আর কেও না মানলে আমরা বাইরে থাকবো। কিছুদিন পর দেবপ্রিয়া প্রথমে বাড়িতে জানায় কিন্তু সবাই নারাজ বলে এ হতে পারেনা সমাজ বলে ব‍্যাপার আছে এটা হলে আমরা সমাজে থাকতে পারবোনা আমাদের একঘরে করে দেবে।এই সব দেবপ্রিয়া মুখে শুনে রূপম নিজে গিয়ে বলে দেখুন আমাদের ভালোবাসা আমাদের বিবাহ সমাজ কি ভাবলো তাতে কি আসে। দুটি মানুষের হৃদয় মিলনই তো সব তাহলেই তো বিয়ে হয়ে যাওয়া। এই সব শুনে দেবপ্রিয়া বাড়িতে মেনে নেয় এবং বিয়ে ঠিক হয়।

একদিন হঠাৎ দেবপ্রিয়া বলে ওঠে আমাদের ভালোবাসার কিছু নাম দেওেয়া উচিত আর পাঁচটা ভালোবাসা থেকে আমাদের ভালোবাসা আলাদা। তখন রূপম বলে যেহুতু আমাদের ভালোবাসা ধর্মহীণ তাই নাম হবে "ভালোবাসা ডট কম"। এইভাবে তাদের একদিন বিয়ে হয়ে যায় সুখে সংসার করতে শুরু করে।

ফকির দাদু - অমিত কুমার রায় || Fakir Dadu - Amit Kumar Ray || অনুগল্প || Short story || Prose

 ফকির দাদু 

অমিত কুমার রায়



ভোর সাড়ে চারটেয় বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে রওনা দিয়েছিল সুদেষ্ণা তার স্বামীর সঙ্গে। সম্বিতের বাইক নদীর দুপারের কুয়াশা ঠেলে বাড়ির গন্তব্যে পৌছালো যখন তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। সুদেষ্ণা বাইকে করে যখন শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিল তখন তার মধ্যে সামান্য কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেছিল সম্বিত। বাড়ির উঠোনে এসে সম্বিত সুদেষ্ণাকে জিজ্ঞেস করল--- অমন করে পিছনদিক থেকে কাঁকড়ার মতো জড়িয়ে ছিলে কেন, ব‍্যাপারটা কি বলবে।

সুদেষ্ণা ব‍্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে ঢকঢক করে হিমেল আবহে জল খাচ্ছিল!তারপর সম্বিতকে বললে, জামাকাপড় বাইরে ছেড়ে হাতমুখ পা ধুয়ে তবেই ঘরে ঢুকবে বুঝলে তারপর কথা বলব।

সম্বিত হাসতে হাসতে বলল ---আরে কবে আবার শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে ড্রেস চেঞ্জ করেছি। সুদেষ্ণা হাফ ঝাঁঝে বলল ---- যা বলছি তাই করো। আমি বাইরের কলতলায় ড্রেস ছেড়ে এলেই তুমিও যাবে, একদম ঘরে ঢুকবে না। সম্বিত দ্বিরুক্তিমাত্র করল না। যথারীতি সম্বিত আর সুদেষ্ণা পোশাক বদল করে ঘরের ভেতরে গেল।

এবার তো বলো কি হয়েছিল তোমার সম্বিত বললে। সুদেষ্ণা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললে ---রথতলার স্নান পুকুর ঘাটে ফকির দাদুকে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। সম্বিত অবাক হয়ে বলল--- তাতে হল কি!!

থাম, এই বলে সুদেষ্ণা বোন শুভমিতাকে ফোন লাগালো, মনে হয় এখনো ঘুমোচ্ছে। তিন বার পরে শুভমিতা ঘুম জড়ানো গলায় বললে ---পৌঁছেগেছিস তো? সুদেষ্ণা "হ‍‍্যাঁ" বলেই জিজ্ঞেস করল ফকির দাদু কেমন আছে রে?? ফোন স্পিকারে দেওয়াই ছিল, শুভমিতা বললে, আজতো ফকির দাদুর ঘাট! সম্বিত শুনতে পেয়ে বললে--- মারা গেছেন অথচ তুমি......

সুদেষ্ণা কথা কেড়ে বললে হ‍্যাঁ, আমি ভুল দেখিনি; স্পষ্ট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি লাঠি হাতে। চোখ দুটো যেন লাল নাইট বাল্ব! সন্দেহ ঠিক তখনই হয়েছিল। শুভমিতাকে ফোন রাখতে বললে সুদেষ্ণা। তাই তো তোমাকে তখন থেকেই কাঁকড়ার মতো আঁকড়ে ধরে ছিলাম!!

সম্বিত সব ঝেড়ে ফেলে বললে ---ধুত! তুমি কাকে দেখতে কাকে দেখেছো। ভূত আবার দেখা যায়?????

সুদেষ্ণা উষ্ণা হয়ে বললে-- যায় কিনা জানা নেই তবে আমি কোনো ভুল দেখিনি। 

হরেন দাস - কাহার মল্লিক || Haren Das - Kahar Mallik || অনুগল্প || Short story || Prose

      হরেন দাস

           কাহার মল্লিক



হরেন দাস একজন ডাহা মাতাল। মাতাল হলেও অত্যন্ত সরল মনের মানুষ। সে অন্ধকারকে খুব ভয় পায়। অন্ধকারে পড়লেই সে বিকট কান্না শুরু করে দেয়। সে নেশাবস্থায় থাকুক বা সাধারণ অবস্থায় থাকুক, অন্ধকারে তার খুব ভয় হয়। সে অন্ধকারে পড়ে অনেকবারই মূর্ছা গিয়েছে। তার একট বিশেষত হল, রাস্তায় চলাকালীন কোনও গাড়ির হর্ন বাজলে তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠে। হরেন হর্ন বাজানোকে ড্রাইভারদের চরম ঔদ্ধত্য ভাবে। তখন সে গাড়ির সম্মুখেই থাকে, মধ্য রাস্তা থেকে একটুও সরে দাঁড়ায় না। গাড়ি থামলে হরেন দাস বুক চাপড়ে বলে- “আমার নাম হরেন, আর কে রে আমার সামনে হরেন বাজাস। তোর সাহস তো কম নয়।” এই উদ্ভট কীর্তিকলাপের জন্য ড্রাইভারদের হাতে কত যে প্রহার খেয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। এই নিয়ে তার সহকর্মিরাও অনেকবার অনেক ঝামেলায় জড়িয়েছে, এমনকি দু-একদিনের জন্য জেল ভোগও করেছে।

                     হরেন দাস ছত্রিশগড়ে হরেক মালের ব্যবসা করে। সাইকেলে হরেক মাল ফেরি করে বেড়ায়। প্রতিবছরই হরেন দাসরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে রোজগারের উদ্দেশ্যে সুদূর ছত্রিশগড়ে পাড়ি দেয়। একদিন হরেন দাস মদ পান করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সাইকেল নিয়ে বের হয়। সাইকেল ভর্তি হরেক মাল তার। রাস্তার মাঝখানে সাইকেল চালাতে থাকে। গাড়ির হর্ন কানে গেলেও নিজ সাইডে যায় না। একটা পুলিশের গাড়ি হরেনের সাইকেলকে ওভার টেক করে এবং গাড়ি থামায়। পুলিশ জানতে পারে, সাইকেল চালক মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে। ছত্রিশগড়ী পুলিশ তাকে ধরে আর বলে, “দারু পিকার সড়কপে কিউ চল রহা হে?” তখন হরেন ভয়ডর না করে বলে, “মেরা নাম হরেন, মেরে সামনে কিউ হরেন দেতা হে?” তাদের বচসা চলাকালীন আরও দুটো সাইকেল হাজির হয়, তারাও ফেরিওয়ালা হরেনের সহকর্মী। তারা হরেনের জন্য পুলিশের কাছে কাকুতি-মিনতি করে, কিন্তু পুলিশ তাদের কথা না শুনে হরেনকে ধরে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে জেলবন্দি হরেনে বিকট শব্দে কান্না শুরু করে দেয়। গোটা থানার পুলিশ বিরক্ত হয় এবং তাদের ঘুম হারাম হয়। পরের দিন তার দুজন সঙ্গীকে ডাকা হয় এবং তাদেরও জেলে রাখা হয়। জেলে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। হরেন মোট তিনদিন জেল ভোগ করার পর ও পাছায় কয়েক ঘা খাওয়ার পর ছাড়া পায়।

Friday, November 3, 2023

বাবা বেঁচে আছেন - সুনির্মল বসু || Baba Beche achen - Sunirmol basu || অনুগল্প || Short story || Prose

 বাবা বেঁচে আছেন

      সুনির্মল বসু



কথাটা প্রথম কোথায় কার কাছে শুনেছিলেন, আজ আর মনে করতে পারেন না, অথচ, কথাটা মনে ধরেছিল তাঁর, সেই থেকে লেখালেখির শুরু। কথাটা ছিল, প্রকাশ কি ঔর।

মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কবিতা লিখতো লোকটা। তাঁর ডাইরি খাতা ভরে যেত অজস্র লেখায়। আকাশের রঙ, নদীর ঢেউয়ের জল তরঙ্গ, অরণ্য পাখির গান, বন শিরীষের মর্মর ধ্বনি , সমুদ্রের দূরাগত ধবনি, লোকটার লেখায় উঠে আসতো। সংসারের প্রতি ক্ষেত্রে পরাজিত লোকটা পাতার পর পাতা অজস্র লিখে যেত। সবাই বলতো, লিখে কি হয়। কেউ কেউ বলতো, আপনার লেখায় বাস্তবতার ছোঁয়া নেই।

একসময় লোকটার নিজের মনে হয়েছিল, সত্যি সত্যি লেখার জন্য তাঁর এই আত্মত্যাগের হয়তো কোনো মূল্য নেই। শুধু শুধু কালি কলমের অপব্যবহার। তবুও না লিখে উপায় ছিল না তাঁর, রক্তের মধ্যে সৃষ্টির নেশা জেগে থাকলে, বারবার লেখার টেবিলে ফিরে আসতে হয়, সেভাবেই প্রতিদিন সৃষ্টির নেশায় মগ্ন চৈতন্যে জেগে থেকেছেন তিনি।

সংসারে অভাব ছিল, দারিদ্র প্রতিদিন সকালে দরোজায় এসে দাঁড়াতো, টালমাটাল সংসার, প্রতিদিনের জীবনধারণের গ্লানি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতো, এসব আপনার জন্য নয়।

তাহলে লিখে লাভ কি, থেমে যাওয়াই ভালো।

গগনদা বলেছিলেন, লিখে যা, কে কি বলল, তাকাস না, মহাকালের জন্য রেখে যা, কাল একদিন বিচার করবে।

রাত জেগে তিনি লিখতেন, ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে তিনি লিখতেন। তাঁর মেয়ে লিপি তখন ছোট।

সে প্রায়ই অনেকের মুখে শুনতে পেত, সংসারের প্রতিক্ষেত্রে তাঁর বাবার ব্যর্থতার কথা।

আমাদের উনি তিনখান বাড়ি করেছেন, আপনি তো কিছুই করতে পারলেন না।

বাবার এই ব্যর্থতা ছোটবেলায় লিপিকে কষ্ট দিত। বাবা আজ নেই। তাঁর কবিতার বইগুলো রয়েছে।


 লিপি এখন কলেজে পড়ে। আজ তাঁর বাবার জন্মদিন। আজ নানা জায়গায় তাঁর বাবার স্মরণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। লিপি আলমারি থেকে বাবার কবিতার বই বের করে পরম মমতায় কবিতা পড়ছে।

চিরকাল শুনে এসেছে, বাবা একজন সংসারের ক্ষেত্রে ব্যর্থ মানুষ। আজ বড় হয়েছে লিপি। কে বলেছে, তাঁর বাবা পরাজিত মানুষ।

কবিতার ছত্রে ছত্রে কত অনুভবের ঢেউ বয়ে গেছে,

কী আশ্চর্য মায়া জগতের সন্ধান রয়ে গেছে এই সব কবিতায়। কম কথা বলা তাঁর বাবাটা কী এক আশ্চর্য মায়া জগতের সন্ধান পেয়েছিলেন সেদিন, কেউ তা জানতো না।

লিপির চোখের জল ঝরে পড়ল বাবার কবিতা বইয়ের উপর। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছে, সারা জীবন তাঁর বাবা কিছু করতে পারেনি। আজ লিপি স্পষ্টতই অনুভব করতে পারছে, বাবা নেই বটে, অজস্র লেখার মধ্যে ,অনুভূতির আলোড়নের মধ্যে

তাঁর বাবা সেদিনের মতো আজও বড় বেশি করে বেঁচে আছেন।

লিপি বাবার লেখার টেবিলের উপরে রাখা বাবার প্রতিকৃতির দিকে চাইলো।

সেদিনের মতো বাবা যেন হেসে বললেন, মাগো, আমি কোথাও হারিয়ে যাই নি, হালকা উদাস হাওয়ার মতো আমি বারে বারে আসি, বারে বারে চলে যাই। আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকবো।

দশ টাকার নোট - পার্থ প্রতিম দাস || Dash takar Note - Partha protim Das || অনুগল্প || Short story || Prose

 দশ টাকার নোট

     পার্থ প্রতিম দাস



 একটা সময় ছিলো যখন মোবাইল ফোন ভারতে আসেনি। টেলিভিশনে কেবল ডিডি বাংলা দেখাতো। সেই সময় বিভিন্ন জেলা থেকে কোলকাতায় পড়তে যাওয়া ছেলেমেয়েরা সবাই কফি হাউসে আড্ডা দিতো। 

        মেদিনীপুর থেকে পড়তে যাওয়া মৃদুল আর তার তিন বন্ধু মিলে বিকেলে কফি হাউসে এসে আড্ডা দিচ্ছে। গরম কফির ধোঁয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে প্রেম, সব বিষয়ে গসিপ করছে তারা। তাদের মধ্যে থেকে একজন, নাম তার বিধু, সে হঠাৎ করে জিগ্যেস করে, "কি রে চিন্ময়, তোর প্রেম কতদূর? "

        চিন্ময় ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "ব্রেকাপ হয়ে গেছে। বাদ দে। যে যাওয়ার সে আসে না। "

      মৃদুল তখন বলল, "যে আসার সে ঠিক আসবে। "

     চিন্ময় বলল, "কেমন করে সম্ভব? "

মৃদুল বলল, "এখন একটা ট্রেন্ড চলছে, টাকার নোটে নিজের নাম লিখে বাজারে ছেড়ে দিলে সেই নোট ফিরে আসছে। তাই বললাম।"

     বিধু কথাটা শুনে অবাক হলো। সে উৎসাহিত হয়ে মৃদুলকে বলল, "ঠিক আছে তুই কফির টাকাটা পেমেন্ট করার সময় একটা দশ টাকার নোটের উপর আমাদের চার বন্ধুর নাম লিখে ওয়েটারকে টিপস দিয়ে দে। "

        সেই মতন মৃদুল দশ টাকার নোটের উপর চার বন্ধুর নাম লিখে ওয়েটারকে দিলো। 

     তারপর চারজন ভালো রেজাল্ট করে কোলকাতা ছেড়ে সবাই আলাদা আলাদা জায়গায় চাকরি নিয়ে চলে গেল। চিন্ময় এখন হাওড়া রেলওয়েজের টিটি। সবাই বেমালুম দশ টাকার নোটের কথা ভুলে গেছে। 

      মহালয়ার দিন থেকে কোলকাতায় ঠাকুর দেখার জন্য রেলে ভীড় করে যাত্রীরা আসছে। চিন্ময় ও তার টিম দিন রাত যাত্রীদের টিকিট চেক করছে। যাদের টিকিট নাই তাদের কাছ থেকে ফাইন নিচ্ছে। চিন্ময় ফাইনের টাকা গুনতে গুনতে হঠাৎ চোখে পড়ল একটা দশ টাকার নোটের উপর। এই তো সেই দশ টাকার নোট। চিন্ময়ের চোখে ভেসে উঠল সেই কফি হাউস, সেই দুরন্ত ছাত্র জীবন। 

      "স্যার আমার টিকিটটা দেখুন "কথাটা শুনে চিন্ময়ের সম্বিত এলো। তার এখন চিন্তার সময় নাই। তাই সে দশ টাকার নোটটা জামার বাম পাশের পকেটে স্বযতনে রেখে দিলো। 

সিগারেট - কাজল মণ্ডল || cigarate - কাজল মন্ডল || অনুগল্প || Short story || Prose

         সিগারেট

                  কাজল মণ্ডল

     


       আজ অফিসে অনেক কাজ জমে ছিল।সেই সব সেরে সুরে বেড়াতে বেড়াতে রাত ন'টা বেজে গেল।পাহাড়ী অঞ্চলে এটা বেশ রাতই।আশেপাশের দোকানের সব ঝাঁপ পড়ে গেছে।বন্ধ হয়ে গেছে সব বাড়ীর দরজা জানলাও।রাস্তা একদম শুনশান।কুয়াশার চাদরে মুড়ে গেছে সব।সঙ্গের সেলফোনটার টর্চ এদিক ওদিক মেরে দেখলাম।যদি কোনো গাড়ী টারী পাই আর কী।না-কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না।ঘন কুয়াশার কারণে ভালো দেখাও যাচ্ছে না।তাই গাড়ী-গাড়ী-বলে কয়েকবার হাঁকলাম।না কাউরির কোনো সাড়া টাড়া নেই।একেই পাহাড়ী মফঃসল অঞ্চল।তার ওপর শীতের রাত। গাড়ী না পাবারই কথা।

তাই আর দেরি না করে হাঁটতে শুরু করে দিলাম।এখান থেকে আমার কোয়াটার্স তাও কিমি দুই হবে।এমনিতে আমি হেঁটেই ফিরি।কিন্তু আজ এত রাতে এই নির্জন রাস্তায় একা একা হাঁটা।একটু কেমন কেমন লাগে আর কী।মেন রোডটা শেষ করে বাঁদিকের পায়ে চলা পথটা ধরতেই গন্ধটা নাকে এলো।সেই পোড়া সিগারেটের গন্ধটা।বিদেশি নামি ব্যান্ডের দামি সিগারেট।যেটা কেবল আমি রাণাদাকেই স্মার্টলি টানতে দেখছি।যখন রাণাদা লণ্ডন থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ী আসতো।তো সেই রাণাদা বছর দু'য়েক থেকে নিঃখোঁজ।পুলিশ দিয়ে,গোয়েন্দা দিয়ে কত তদন্ত করিয়েছেন জ্যাঠামণি।মানে রাণাদার বাবা ।কিন্তু এত দিন হয়ে গেল কিচ্ছুটি জানা যায় নি।

আরে!কে যাচ্ছে ও!মাথায় যেন একটা বড় হ্যাট।ঘন কুয়াশায় অস্পষ্ট।বুকটা ছ্যাত করে উঠলো ঐরকম হ্যাট তো রাণাদাও মাথায় দিত।তাহলে কী-----

এত শীতেও আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে দিয়েছে।আমি আরো জোরে জোরে হাঁটছি।

কে ও!আমাকে জানতেই হবে যে।ঐতো ও!আমার থেকে এখন হাত দশেক দুরে হবে।আর একটু জোরে যেতে পারলেই ধরে নেব ।আমি দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছি।যাঃ!ও বাম দিকে বাঁক নেওয়ায় সামনের পাহাড়টায় আড়াল হয়ে গেল।আমিও দৌড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাঁক নিলাম।কিন্তু একি!সামনে যে গভীর খাত।টর্চের আলোয় দেখছি।রাস্তাটা এখানেই শেষ।টর্চের আলো এপাশে ওপাশে ফেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি।কোনো জনপ্রাণী নেই।পোড়া সিগারেটের সেই বিশেষ গন্ধটা এখানে তীব্র।পায়ের কাছে লালচে-কী ওটা! টর্চের আলো ফেলে ভালো করে দেখি একটা পোড়া সিগারেট।পাথরের খাঁজে আটকিয়ে।যেটা থেকে এখনও একটু একটু ধোঁয়া উঠছে।

ছাতা - অনিন্দ্য পাল || Chata - Anindapal || অনুগল্প || Short story || Prose

 ছাতা 

অনিন্দ্য পাল 



তপন অটোটাতে উঠে বসলো। মিনিট দশেক আছে হাতে। সাত মিনিট লাগে এখান থেকে স্টেশন। হঠাৎ হাতটা খালি খালি লাগে তপনের। কী ছিল হাতে? ওহ্ ছাতাটা! এই জন্যই নেয় না, বুড়ি মা কে মনে মনে কুকথা বলে নেমে এল অটো থেকে। ওষুধের দোকানে ফেলে এসেছে নিশ্চয়ই। সেদিকে পা চালালো দ্রুত। ছাতাটা পেয়ে গেল, দোকানদার হেসে বলল, মিষ্টি পাওনা রইলো! তপন অটোর দিকে কয়েক পা বাড়িয়েছে মাত্র, হঠাৎ বিকট আওয়াজ! দ্যাখে, একটা ফুল পাঞ্জাব লরি আছড়ে পড়েছে অটোটার উপর। পিষে গেছে চালক আর এক সহযাত্রী। 

   কেমন একটা অস্বস্তি হয় তপনের। বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসতে চায়। মা, মাগো-- দ্বিতীয় বার জন্ম দিলে মা! কালো রঙের ছাতাটা বুকে জড়িয়ে ফুটপাতের উপরেই বসে পড়ল তপন।  

Algal Biofuel : a Viable Option or NOT - Saikat Das || Scientific Article || Article ||

  Algal Biofuel : a Viable Option or NOT

                  Saikat Das





  The awareness that fossil fuels are rapidly exhausting, may be accelerated the need for an alternative energy source that is renewable, cost effective, and eco-friendly . The condition has been impaired by global warming which has brought it home to all that there is an urge to reduce man’s carbon foot print and conservation of energy on the other hand. The unsteadiness in the regions from which the fossil fuels are obtained is the reason for worry. High prices may reject it in some economically weak countries so better alternative is required. In addition to algal biofuel , other option for alternative and renewable source of energy do exist and they include wind and solar energy. But, there is no exact replacement of current fossil fuels but in future there may be some better alternative like algal biofuels which may be an exact replacement for the purpose. The planktons and microalgae are preferred generally for production of lipids ,although macro algae or seaweeds are commercially valuable due to food ingredients making omega 3 fatty acids , bio-plastic , pharmaceuticals, chemical feedstock ,fertilizer but not for lipids .Biofuel is not at all new in the market there are some available plant bio resources from which biofuel has been extracted earlier such as palm-oil ,corn , soybeans , but Jatropha is biofuel yielding as well as feedstock plant so there comes the question whether we must use the edible plant or not for biofuel extraction.

Algae particularly the species for the production of lipid, is not opposing as a food stock. Biodiesel can be extracted from the biological sources which are renewable

Like animal fats and vegetable oils .The pure form of biodiesel is B100 and this can be used singly or in combination with petrodiesel at appropriate concentrations .The most appropriate answer for the question why microscopic algae is suitable for biofuel production is that microscopic alga like Botryococcus braunii ,Chlorella sp. and many other species which are utilized because of their high energy and growth rate and hence high oil yield . The algae can double the biomass and in some circumstances it may contain huge amount of triglycerides ,which is common in vegetable oil . The DOE (Department of Energy, US) has reported that algae can yield 30 times more energy per acre than land crops such as soybeans. In addition, to keep the environment clean and free from pollution, these algae feed on CO2 ,a waste product from fossil fuel combustion and a donor to global warming, to produce lipids for biodiesel fuels .This study is interesting and important for extracting and growing algal biomass for biodiesel recovery from it. The application of microscopic algae for biofuels production can also serve other drives. Some choices presently being considered are elimination of CO2, may reduce GHG emissions by fuel gases from industries by algal bio-fixation, reducing the carbon emission of a company or process while producing biodiesel .Treatment of wastewater by removal of Ammonium ion ,Nitrate ion ,and Phosphate ion , the growth of algal biomass is eased by making algae to grow by utilizing these contaminants of water as the nutrients for developing more algal biomass. After the extraction of oil, the biomass of algae can serve as a substrate for processing methane,ethanol,livestock feed, organic fertilizer due to a good value of nitrogen and phosphorus ratio or it can be burned for the energy generation too. According to the less requirements of nutrients and the continued development in tough environment the microalgae can be grown in the locations which are not appropriate for agriculture and it can be grown on wastewater instead of fresh water.

Algae fuel is among main candidate for renewable energy sources that are estimated to substitute the rapidly depleting sources of fossil fuel. The seaweeds or macroscopic alga, appropriate for other marketable values but not for making lipids .By consuming carbon dioxide, an useless product of fossil fuel burning and a source to global warming. Along with biodiesel fuel and lipid production algae keeps the environment clean and does not give out any toxic waste. For luxurious growth and plenty harvest the light, temperature range, depth of water and nutrient composition must be appropriate to support the exact algal species for being cultivated. The open pond and closed system are methods of algal culture .The open pond method is of low price than closed system photo bioreactor. For the best results in production, utilizing photo bioreactor as the interim to exchange one volume of liquid must be equal to the time to double the bulk of the algae. When algae matures, the harvesting is done using micro-screens, flocculation, centrifugation and froth flotation methods. Along with mechanical process certain chemical solvents can also be used for the extraction of oil from algal biomass. Algae is the best candidate among other biological resources for the extraction of oil due to high oil yield and that will be best in implementing it as biofuel after required technological modifications.




*Informations collected from:*


• A Report on Commercial Usage and Production of Algal Oil

• A Sober Look at Biofuels from Algae (Biodiesel Magazine)

• US National Renewable Energy Laboratory Publications

• Current Status and Potential for Algal Biofuels Production

• “Biodiesel from Algae”, Oilgae, [Online] 2013. Available: http://www.oilgae.com/algae/oil/biod/biod.html (Accessed: 31 October, 2013)