উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -30
দাঁড়াও মুকুল, তুমি আমাকে তোমার মন থেকে দূরে সরিয়ে দিলেও আমি তোমাকে সরাতে পারব না। তবে ঐ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও তোমার কাছে কিভাবে প্রতারক হলাম।
ঐ উত্তরটা বাচ্চু গুন্ডার কাছে জানতে পারবে। কিভাবে মিথ্যার অভিনয় করে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলে, তবুও তোমার আমার প্রেমের অঙ্কুর বৃক্ষে রূপ ধারণ করেছিল, কিন্তু সেই প্রেমের বৃক্ষকে অচিরে বিনাশ করলাম। কোনদিন আমার সাথে মিট্ করার চেষ্টা করবে না। আর আমিও চেষ্টা করবো যাতে তোমার মুখচ্ছবি। যেন আমার সম্মুখে না উদ্ভাসিত হয়। চলি গুড বাই
মুকুল হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। দেবী ছাড়বার পাত্র নয়। সে মুকুলের ভুলকে সংশোধন করবেই। দেবীর মাথার কোষে কোষে চিন্তার বাসা বাঁধলো।
দিন কয়েক পর একদিন বিকালে মুকুলদের বাড়ীতে হাজির হলো। মুকুসের সাথে সুমন্ত গল্পে মসগুল সে সময়। তাদের নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। মুকুলকে, সুমন্ত পড়াশুনা ব্যাপারে সাহায্য করত। মুকুল জানতো সুমন্ত অতি বুদ্ধিমান ছেলে ও পড়াশুনাতেও ভালছিল সুমন্তর কাছে জেনেছিল।
হঠাৎ আলোচনা চলাকালীন কোথা হতে একটা বিষাক্ত পোকা মুকুলের চোখের ভেতরে প্রবেশ করাতে মুকুল চিৎকার করে উঠল, সুমন্ত বুঝতে পারল মুকুলের চোখে কোন বিষাক্ত পোকা প্রবেশ করেছে। সুমন্ত বিলম্ব না করে মুকুলের চোখের পাতায় হাত দিয়ে চোখটাকে ফাঁক করে ফুঁ দিতে থাকল।
সেই সময় দেবী মুকুলদের বাড়ীতে প্রবেশ করে ঐ দৃশ্য দেখবে ভাবতে পারেনি। তাহলে ওরা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। সুমন্তকে খুব ভালো ছেলে মনে করত, কিন্তু দেবী ওখানে দাঁড়ালো না। মনের মধ্যে তার দাবানলের সৃষ্টি হল ও সুমন্তর প্রতিহিংসার অঙ্কুর গজালো। সে কোন দিন কাকেও সুখী হতে দেবে না। তারা যদি উভয়েই প্রেমে আবদ্ধ হয় তাও টিকতে দেবে না। এর প্রতিশোধ নেবেই। বুকের মধ্যে যে যন্ত্রণার জন্ম নিলো, এর প্রতিকার কি করে করবে, কিভাবে মুকুলকে ভোলার চেষ্টা করবে।
হঠাৎ রন্টুর ডাকে সে দাঁড়িয়ে পড়ল, হ্যালো ব্রাদার, তোর খোঁজে তোদের বাড়ী গিয়েছিলাম। ওখানে জানলাম তুই বাড়ীতে নেই। ভাবলাম মুকুলদের বাড়ীতে তোকে পাবো। তাই এখানে এলাম। তা হ্যাঁরে, মুকুলদের বাড়ীতে সুমন্ত কি করছে। মুকুলের সাথে প্রেম করছে নাতো? তা যাক আজকে তোকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাবো।
দেবীদাসকে দেখে মনে হলো সে যেন অন্য রাজ্যে চলে গেছে। রন্টু দেবীদাসকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে চল্ দাঁড়িয়ে রইলি কেন? আমি বুঝতে পারছি মুকুল তেকে
বিট্রে করেছে। তোর পেটে লাল জল পড়লেই তোর মনটা চেঞ্জ হয়ে যাবে। রন্ট ট্যাক্সি বলে হাঁকাতে একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে পড়ল। জলা গলি যাবো, যাবে?
ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল, উঠে পড়ুন। দেবীদাসকে এক রকম জোর করে ট্যাক্সির ভেতরে বসালো।
পুনরায় সেই অভিসার। তবে এখানকার রূপটা একটু আলাদা। রন্টু একটা মেয়ের কাছে গিয়ে কি যেন বলল। দেবী শুনতে পেলো না।
মেয়েটা তৎক্ষণাৎ দেবীদাসের কাছে হাত দুটোকে ধরে বলল, আজকে সারা রাতের অতিথি আপনি। আমার অ্যাপায়ণে আপনার অন্তর পুলকিত হয়ে উঠবে।
আমাদের এখানে যতগুলো নারী আছে সকলেই ভদ্র হয়তো পেটের দায়ে - না থাক আসুন আমার সাথে, আমি পতিতা হলেও আমার নারীত্ব লোপ পায়নি। আসুন আমার সাথে।
মেয়েটি এক রকম জোর করেই ওর সাজানো রুমের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে একটা সুসজ্জিত পালঙ্কের উপর দেবীকে বসালো। এবার বলুন কি খাবেন ? কাজুর সরবত, না মালাই এর সরবত ?
দেবীর মুখে কথা ফুটল না। মুকুলকে নিয়ে তার স্বপ্ন। মেয়েটি বুঝতে পারে, তাছাড়া রন্টুর কাছে হালকা শুনেছে কোন মেয়ে ওকে আঘাত দিয়েছে, অর্থাৎ এই সময় ওকে কোন দাওয়াই দিলে ওর মনটা চাঙ্গা থাকবে তার জানা আছে।
মেয়েটি কাবেরী বলে ডাক দিতেই একটি আঠারো বৎসরের অপরূপ সুন্দরী মেয়ে অর্থাৎ পানপাতার মতো মুখখানি পটল চেরা চোখ, বাঁশীর মত নাক, কোঁকড়ানো চুল বিশেষ করে ঠোটের নীচে একটা কালো তিল। ওটাতেই মেয়েটাকে আরো সুন্দরী দেখাচ্ছে।
হাতে একটা ট্রে, ওতে দুটো গেলাস ও একটা নক্সা করা বোতল। সামনের ছোট্ট টেবিলে নামিয়ে সরবতের গ্লাসে পঁচিশ এম. এল. লালচে রংএর দামী মদ দিয়ে দেবীদাসকে উৎসর্গ করল এবং মৃদু কণ্ঠে বলল, এটা চুমু দিয়ে খেয়ে নিন। মনটা একেবারে হালকা হয়ে যাবে। তাছাড়া একটু পরে দেখবেন যে যন্ত্রণা আপনার ভেতরটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে, তা একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার ছোঁয়া, আমার ভালোবাসা পেলে আপনার মন মোহিত হয়ে যাবে। আপনি সুখের সাগরে ভাসবেন। এই সরবতটুকু খেয়ে নিন। পুনরায় বলল।
দেবীদাস গ্লাসখানি হাতে নিয়ে ওর মুখ পানে তাকিয়ে রইল।
কি হলো খান। তাকিয়ে আছেন কেন? সারারাত দেখবেন।
মেয়েটা দেবীর পাশে বসে বলল, রাত্রের পদ্ম আপনার অর্থাৎ নিশিপদ্ম। এই কাবেরী আমার ছোট বোন। যেন গোলাপের কুঁড়ি। একটু পরেই আপনার মন ভরিয়ে তুলবে কুঁড়ি থেকে ফুটন্ত পদ্ম হয়ে। কাবেরীকে বলল, কাবেরী তুমিতো জানো, আমি অসুস্থ, ইনি আমাদের নতুন অতিথি, ও সজ্জন ব্যক্তি। তোমার মধুতে ভ্রমর যেন আটকে যায় তার ব্যবস্থা করবে। আমি চললাম ।
মেয়েটি প্রস্থান করতেই কাবেরী বলল, আমাকে পছন্দ নেই বুঝি?
দেবীদাস কোন কথা বলল না।
কখন থেকে দেখছি আমার মুখপানে তাকিয়ে আছেন, যাকে খুঁজছেন আমার মধ্যে তাকে দেখতে পাচ্ছেন মনে হয়। নিন আরেক গ্লাস সরবত খান। দেখবেন এবার মেজাজটা পাল্টে যাবে।
দেবীদাস ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে গোগ্লাসে খেয়ে ফেলল। এরপর তৃতীয় গ্লাস পান করার পর সে আর ঠিক থাকতে পারল না। মনে হল চোখের সামনে কুয়াসায় আচ্ছন্ন হলো। ধীরে ধীরে বেহুস হয়ে পড়ল। কিন্তু অন্তরালে যে ষড়যন্ত্র ছিল তা দেবীদাস জানতো না। এমন প্রায়ই ঐ পতিতালয়ে যেতে শুরু করল এবং কখনো রাতও কাটাতো।
Comments