উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -31


 

এইভাবে মাস, বছর অন্ধকারের অভিসার সুশীল বাবুর কর্ণগোচর হলো সুশীল বাবু হেমন্তবাবুর বিশ্বস্ত কর্মচারী ও বিশিষ্ট বন্ধু। দেবীদাসের অধঃপতিত জীবনকে বাঁচাতে হলে এমন কোন পথ অবলম্বন করতে হবে যাতে হেমন্তবাবুর মান মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয়। একমাত্র পথ দেবীদাসের বিয়ের ব্যবস্থা করা। দেবীদাস যদি এই অসৎ পথের পথিক না হতো তাহলে কোন প্রশ্নই উঠতো না ।


হেমন্তবাবু সুশীল বাবুর সাথে একমত। হেমন্তবাবু টেবিলে রাখা এক টুকরো কাগজ নিয়ে পত্র লিখে সুশীল বাবুর হাতে দিয়ে বললেন, এই পত্রটি নিয়ে উল্লেখিত ঠিকানায় গিয়ে ভদ্রলোককে খোঁজ করবেন। উনি পত্রটা পড়ার পর কি মতামত করছেন, সেই অনুযায়ী আপনি কাজ করবেন। মতামত হলে তৎক্ষণাৎ তাকে ও তার মেয়েকে কলকাতায় নিয়ে আসবেন।

সুশীলবাবু রওনা হয়েছিলেন, এবং তাদের সন্ধান না পাওয়ার জন্য হতাশ হয়ে ফিরে এলেন। তিনি হেমন্তবাবুকে বিস্তারিত জানালেন, বর্তমানে ঐ নামে কেউ নেই। যদিও ছিলেন তারা কোথায় আছে তা জানেন না ।

হেমন্তবাবু ওদের পলাতকের কথা শুনে গভীর ভাবে দুঃখ পেলেন। সুশীলবাবু এও বললেন ওদের সন্ধান পাওয়া সহজ সাধ্য নয়। অন্যত্র ব্যবস্থা করতে হবে।

হেমন্তবাবু কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর উনি সুশীল বাবুর উপর ভার দিলেন যত শীঘ্র পারেন দেবীদাসের বিয়ের ব্যবস্থা করতে।

দেবীদাসের বিয়ের এক বছর কেটে যাবার পর দেবীদাস জনক হলো ঠিক, কিন্তু পতিতালয়ের অঙ্গন ভুলতে পারল না। দেবীদাসের এই অধঃপতন কোন মতেই জানতে পারলেন না। তিনি স্থির করলেন, সমস্ত ব্যবসার ভার সুশীলবাবুকে দিয়ে তীর্থে যাবেন। কদাচিৎ যদি দেবীদাস ঐ নোংরা পথ ত্যাগ করে ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করে তাহলে তিনি পুনরায় বাড়ীতে পা রাখবেন নচেৎ নয়।

দেবীদাসের তথাপি কোন পরিবর্তন হলো না। ঐ সব কথা ভাবতে ভাবতে মনে হলো সে অতল জলে তলিয়ে গেছে।

হঠাৎ ড্রাইভারের ডাকে তার তন্দ্রা কাটলো। ড্রাইভার বলল, কি ভাবছেন দেবীবাবু? দেবীদাস মুখখানি মুছে বলল, ও কিছু না। ড্রাইভার ফের বলল, দেবী বাবু দেখুন তো এই মেয়েটিকে চিনতে পারেন কি না।

দেবীদাসকে একটা ফটো দিল। ফটো হাতে নিয়ে দেবী দাস বলল, চেনা মনে হচ্ছে, তবে এর সাথে আমার সম্পর্ক কি?

 সম্পর্ক নিশ্চয় আছে দেবীদাস বাবু। জলাগলি পতিতালয়ে এই মেয়েটিকে নিয়ে সারারাত কাটিয়ে ছিলেন এবং বারংবার পাশবিক অত্যাচারের জন্য মেয়েটি হার্টফেল করে।

 দেবীদাস চিৎকার করে বলল, নেভার। এহতে পারে না, এটা ষড়যন্ত্র। আমাকে বিপদে ফেলার কৌশল।

 মনে করুন আপনাকে আমার বস বিপদে ফেলছেন।

 তাহলে এই বিপদ হতে কি করে উদ্ধার পাবেন তার ব্যবস্থা করুন। নতুবা আপনার বার বৎসর জেল নয় ফাঁসি।

 দেবীদাস এক রকম চমকে উঠল। কি বলছেন আপনি? আমি বলছি না। আদালত বলবে। এই দেখুন মেয়েটির ডেথ সার্টিফিকেট। এই তার মর্গের রিপোর্ট। আপনি একজন মেডিক্যাল ছাত্র ছিলেন, আশাকরি এই রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারবেন এ সত্য না মিথ্যে। আপনার টর্চারের জন্য মেয়েটি মারা গেছে, রিপোর্টে তাই বলছে।

 একথা শুনে দেবীদাস চমকে উঠলল। তার দেহের সমস্ত শিরা উপশিরা যেন কাজ করতে চাইছে না। মনে হল ওর মাথায় যেন বাজ পড়ল। এই ভদ্রলোক কি চাইছেন? দেবীদাস এও বুঝতে পারল, সে মারাত্মক ফাঁদে পা দিয়েছে। এই জাল হতে মুক্তি পাওয়া সহজ সাধ্য নয়। সে বুঝতে পারল এদের গ্রুপ অত্যন্ত শক্তিশালী। ওকে ফাঁসিয়ে ভালো টাকা উপার্জন করতে চাইছে।

 দেবীদাস নম্র কণ্ঠে বলল, আপনি ও আপনারা কি চাইছেন? কত টাকা আপনি ও আপনাদের প্রয়োজন?

 ড্রাইভার বললেন, আপনি অতি বুদ্ধিমান, যাক এবার আপনি সহজ পথ অবলম্বন করতে চলেছেন। খুব খুশী হলাম। তবে আপনি স্বীকার করছেন মেয়েটি অর্থাৎ কাবেরী আপনার অত্যাচারের জন্য মারা গেছে।

 দেবীদাস, কাবেরীকে মাত্র এক ঘন্টার জন্য দেখেছিল। তবে হ্যাঁ, সেই দিন রাত্রের কথা, কাবেরী ওকে মদ ও কাজু সরবত খাইয়ে মাতাল বা বেহুস করেছিল ঠিকই, তবে ওকে পাশবিক অত্যাচার - না হতে পারে না। ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছে। কিন্তু চামেলী অর্থাৎ কাবেরীর দিদি ভোরের দিকে আমার তন্দ্রা কাটিয়ে বলেছিল,

 আপনি চলে যান নইলে বড় বিপদে পড়বেন। চামেলী ট্যাক্সি ডেকে ওতে উঠিয়েছিলো।

 ড্রাইভার বলল, এই ছবিটা দেখলে আপনার সন্দেহ স্বচ্ছ কাঁচের মতো ক্লিন হয়ে যাবে। দেবীদাসকে একটা ছবি দিলেন। ও বলল, ভালো করে দেখুন মেয়েটা প্রায় বিবস্ত্র হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনি তাকে বারবার আপনার বাসনা চরিতার্থ করে, নিজেকে পরিশ্রান্ত করে ওর বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমুচ্ছেন। কখন যে মেয়েটি। মারা গেছে আপনি জানতে পারেন নি।

দেবীদাস এবার রাখান্বিত হয়ে বলল, এই ব্যাপারে আপনার অভিপ্রায় কি? ড্রাইভার বলল, আমি কিছু জানি না। আমার কাজ আপনাকে আমাদের বস মিঃ

জ্যাকির কাছে আপনাকে পৌঁছে দেওয়া। উনি আপনাকে কি উপহার দেবেন আমি

বলতে পারবো না। তাহলে আর বিলম্ব না করে আমাদের আড্ডায় গিয়ে হাজির হই কেমন? দেবীদাস বাকরুদ্ধ। আড্ডাতে গিয়ে হাজির হলো। এ আড্ডা যেন আসামীদের কারাকক্ষ।

ওদের বস মিঃ জ্যাকি আধা বাংলা, আধা হিন্দি মিশ্রিত ভাষায় বললেন, আইয়ে মিষ্টার দেবীবাবু। হাপনাকে বার বার নমস্কার জানাচ্ছি। আপনি হামার আড্ডায় এসে আপনি আমার দিল খুস করে দিলেন। হামি বহুত দিনোসে হাপনাকে হামি টার্গেট করেছিলাম। কব হাপনাকে হামি হামার ছোটা ঘরমে আনতে পারবো। আজভী সে আশা পূরণ হলো।

দেবীদাস প্রায় রুক্ষ কণ্ঠে বললেন, ভণিতা ছেড়ে বলুন কেন আমাকে এখানে আনা হয়েছে।

• মিঃ জ্যাকি বলল, আলবাত বোলবে। লেকিন কি খাবেন বলিয়ে। হুইস্কি, থ্রি এক্স

রাম, বিয়ার। কোনটা হাপনার পসন্দ আছে। দেবীদাস মেজাজে বলল, কোনটাই আমার পছন্দ নেই বা প্রয়োজন নেই। কাজের

কথায় আসুন।

জ্যাকি হাসি মাখা মুখে বলল, আরে ভাই এতো ছটপট করছেন কেনো? কামভী জরুর আছে, লেকিন থোড়া ঠর জাইয়ে। হাপনি হামাকে চিনবেন, হামি হাপনাকে চিনবো। তব কামের কথা হোবে। এক সময় জ্যাকি চিৎকার করে হাঁক দিলো - আরে, ও রাতনা, দেবীবাবুকে লিয়ে সরবত লিয়ে আয়।

তৎক্ষণাৎ একটা বেঁটে লোক একটা ট্রে করে দুটো গ্লাস এনে দেবীদাসকে দিল। দেবী দাস না করতেই জ্যাকি বলল, সোচিয়ে মত দেবীবাবু, এ শরাব না আছে, কাজু কা সরবত আছে, পিজিয়ে।

দেবী চুমু দিয়ে সটান স্টমাকে চালান করল। এবার হাপনাকে হামার কামকা বাত বলছি। হামি এক মতলব করেছি দেবীবাবু। এই মতলবে হামাকে সাহায্য করতে হোবে।

কি মতলব কিসের মতলব জরুর হাপনাকে বাতাবে। লেকিন হাপনি হামাকে মদত না করলে হামার কাম হোবে না।

দেবীদাস বলল, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে হবে?

ও বাত বাদমে বলছি। ইসকো পহেলে হাপনি বলেন তো দেবীবাবু, একটা বিউটিফুল লেড়কী কো যানসে মেরে দিলেন?

দেবীদাস রাগত স্বরে বলল, এ মিথ্যা। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। বিলকুল সবাত বোলেছেন দেবীদাসবাবু। লেকিন হাপনি জানলেন কি করে হাপনাকে বিনা মতলবে ফাঁসানো হয়েছে?

তবে এখন আমি তর্কে যেতে চাইছি না বলুন আমায় কি করতে হবে। মিঃ জ্যাকি বলল, ঠিক হ্যায় তব শুনিয়ে, হামার মতলব হলো হাপনি মেডিকেল কলেজ মে পড়াশুনা করতেন, ইসলিয়ে হাপনাকে হামি চয়েস করেছি, আপনাকে হামার একটা ছোটা কাম করতে হোবে। কলেজ কা ল্যাবরেটারিমে যে EGC মেসিন ভী আছে ও ভী হামার হাতে তুলে দিতে হবে।

অসম্ভব, এ কাজ আমি করতে পারবো না। দেবীদাস বলল। পারবেন দেবীবাবু পারবেন।

যদি আমি ঐ মেসিনের মূল্য দিই তাহলে ঐ মেসিনকে চুরি করার কি প্রয়োজন ? ও হাপনি বুঝবেন না দেবীবাবু। ও মেসিন হামার লাইফকে বদলে দেবে। ও মেসিন ভী কি চিজ আছে হাপনি জানবেন না। হাপনি যদি রাজী ভী না থাকেন, তব হাপনাকে কারাবাস করতে হোবে। হাপনাকে কোইভি বাঁচাতে পারবে না দেবীবাবু। হামি হাপনাকে তি রোজ টাইম দিলাম, কামভী কোরবেন কিনা হামাকে বাতায়ে দেবেন, লেকিন হামার সাথে বেইমানী করলে হাপনার বাবা হেমন্ত বাবু হামাদের হাতমে মারা পড়বেন। এই বাত দেমাক মে রাখ লিজিয়ে। হামার লোক হাপনাকে বাড়ী পৌঁছে দেবে, হামি এখন আসছি।

মিষ্টার জ্যাকি না দাঁড়িয়ে বিদায় নিলেন। জ্যাকির লোক দেবীদাসকে বাড়ীতে পৌঁছে দিল।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024