এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ১ || part - 1 || Era Kara part 1 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা

 



                        ।। এক।।

"স্তব্ধ হও গদাধর, স্তব্ধ হও, কাদের সাথে কথা বলছো যে মানুষ গুলো নিজের চরিত্র নস্ট করেছে, যে মানুষ গুলো নরকের কীট, যে মানুষগুলো নিজের মনুষ্যত্ব হারিয়ে, নিজেদের অন্তরকে কালিমা করে সমাজের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে, তাদের মলাটের নীচে কত যে নোংরা জমা আছে তা জানা সত্ত্বেও আমি প্রতিবাদ করার কোন ক্ষমতা রাখিনা, কেন জানো? ভয়ে, পিছনটান সংসার, বাবা মা ভাই বোনের মুখচ্ছবি ভেসে উঠলেই আমি থমকে যাচ্ছি। এগোবার কোন ক্ষমতা রাখছি না বা রাখতে পারছি না গোপনে রোদন করা ছাড়া আমার কোন গত্যন্তর নেই। সত্যতা প্রমান থাকা স্বত্তেও আমি প্রতিবাদ করার জন্য আমার ভেতরটা ফুটন্ত দুধের ন্যায় টম্বগ করে ফুটতে থাকে। কোন মানুষকে দেখলাম না কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। তারাও নীরব, কেনজানো, আমার মত তারাও। হে ভারতমাতা, হে ভাগ্যবিধাতা সংসারে এই জানোয়ারদের উচ্চশিখিরে প্রতিষ্ঠিত করে অন্ধ সেজে আছো। তুমিও নির্বাক, অন্ধ, বোবা ও নীরব। কিন্তু কেন? তবে কি ভয়ে? সুন্দর এই শস্য শ্যামলার ভুমিতে কত রকম অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে এই জন্যই আমার কলম ধরা। অট্টহাসি হেসে আমায় বলতে ইচ্ছে করছে "এরা কারা" মানুষের সামনে এদের আসল স্বরুপ প্রকাশ করতে চাইছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন আমার পাশে দাঁড়ান।

প্রথমেই পরিচয় দিই তখনকার দিনে বিশাল হামমরদের যুগের কথা। তখন ছিল হামমরদের চরিত্রবানদের কথা। কি দিনটাই না ছিলো তার। ঐ এলাকার ভগবান তিনি। দল সভাপতি অবশ্য হার্মাদ ও বললে ভুল হবে না। রাজনীতির নামী নেতা ও দলপরিচালক। সুন্দর নামখানি' তার নাম হলো "হিড়িম্ব হাজরা"। অনেকে আদর করে বলেন ড়িম্ব দা, আবার অনেককে উচ্চারন ভুল করে ডিম্বদাও বলে থাকেন। তবে মাকড়া এতো বদমায়েস যে আমার মানস পটে ভেসে উঠে ওর শয়তানী মুখখানি।

সেদিন কথায় কথায় পাড়ার এক বৌদি নিভারানী ঐ রাজনীতি দলের কয়েক জন কার্ত্তিমানের কথা বলতে গিয়ে চোখের জলে ভাসতে থাকলেন। চার সন্তান/সন্ততি এবং অভাগী নিভারানী কে রেখে কিরন বাবু সবার মায়া ত্যাগ করে স্বর্গ যাত্রা করলেন। নিভারানী কখনো ভাবতে পারেনি তার প্রিয়মানুষ কিরন বাবু মারা যাবার পর তারা সকলে অথৈই জলে ভাসতে থাকবে। ভাগ্য যখন অনির্বচনীয় হয় তখন সমুদ্রের জল শুকিয়ে যায়। বেঁচে থাকাই প্রশ্ন হয়ে উঠে। কারণ নিভারানী অত্যন্ত গরীব স্বামীর বউ। কিরন বাবু কোন প্রকারে দিনমুজুরির কাজ করে সংসারকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। শত অভাবের মাঝে নিভারানী দুমুঠো অন্ন সবার মুখে তুলে দিতেন। সর্বদায় ভাবতেন দারিদ্রতায় তাদের সকলের দৈনন্দিন জীবনের সাথী। নিভারানীর বড়মেয়ে সোনালী তখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী। মার অভাব বুঝতে পারলো। গোপনে চোখের জলে ভাসতো, মাঝে মাঝে ঈশ্বর এর কাছে প্রার্থনা করতো, হে ঈশ্বর এই পৃথিবীর বুকে জন্ম দিয়ে কেন আমাদের ধরাশায়ী করলেন।

বাড়ীর যা অবস্থা পড়া বা স্কুলে যাওয়া এখানেই ইতি টানতে হবে। হলো তাই, স্কুল বন্ধ করে পরের বাড়ীতে ঝি এর কাজ করতে বাধ্য হলো। তার শত যন্ত্রনা, বেদনাকে আকড়ে ধরে তাকে ঝি এর কাজ করতে হতো। কিছুদিন কাজ করার পর তার জীবনে এক চরম পরিনতি এসে উপস্থিত হয়েছিলো। নারীলোভী আবীর বাবু লেলিহান কুকুরের মতো তাকিয়ে থাকাকে বরদাস্ত করতে পারতো না। তার চোখে যেন কামনার নেশা, তাকে অপমান করা চেষ্টা সে বুঝতে পারে। সে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবে। তার নারীত্ব কি খোলাম কুচি, যখন তখন নাড়াচাড়া করবে? সোনালী প্রায়ই লক্ষ্য করতো, লোকটার দৃষ্টি ভালো নয়। লেলিহান দৃষ্টিতে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতো। সর্বদা ওর কাছে কাছে থাকতে চেষ্টা করতো। সুযোগ চাইতো ওকে কাছে টানতে। ঈশ্বরের কেমন খেলা, একদিন সুযোগ এসে গেলো। গিন্নীমা মায়ের পূজোর জন্য মন্দিরে উপস্থিত হতে কুকুরটা নিজের লালসা মেটাবার জন্য ছপট্ করতে থাকলো। সোনালী রীতিমত কাজ করছে, গিন্নীমা অনুপস্থিত তা জানে। তথাপি বাড়ীতে ফিরে যাবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় পায় না। আবীর বাবুর লোলুপ দৃষ্টির কি সংকেত বুঝতে পারে। তৎক্ষনাৎ কাজ ছেড়ে কৌশলে বেরুবার চেষ্টা করতেই সোনালীর হাতটা চেপে ধরে তার কোলে চাপিয়ে বললেন- কি মিষ্টিরে তুই। চেহারা তোর দেখার মত। তোর বুকের গড়ন খুব ভালো। ফুটন্ত কলি তুই। দুবেলা পেটপুরে খেতে পাস্ না, তবুও তোর গড়নটা এতেতা ভালো যে এই ভালো মানুষ টা থাকতে পারে না। তাছাড়া টাটকা, সজীব ফল খুব প্রিয়। আমার খুবই ভালো লাগছে তোকে কাছে পেয়ে। সোনালীকে এমন আষ্টে পৃষ্টে ধরে আছে যে তাঁর কবল হতে রক্ষা পাওয়া কঠিন। আবীর বাবু ওর বুক পকেট হতে কড়কড়ে একটা এক হাজার টাকার নোট বের করে বললেন, নে এটা ধর, তোর অনেক কাজে লাগবে। আর ভেতর ঘরে চল্ দুজনে একটা খেলা খেলব। সোনালীর বুকে হাত দিতেই ওকে এমন কামড়ালো যে ছাড়তে বাধ্য হলেন, এবং ঠিক সে সময়ে আবীর বাবুর বুকে সজোরে লাথি মারতেই চিৎকার করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন। আবীর বাবুর ছয় মাস পূর্বে হার্টের ওপেন সার্জারি হয়েছিল। আঘাতটা সজোরে হতেই বুকটা মোচড়ে দিয়ে উঠলো। কুপোকাত তো হলে নিই ও কাতলা মাছের মত ছট্‌ পট্ করতে থাকলেন। সেই সুযোগেই দে চম্পট।

মা, নিভারানী প্রচণ্ড হতাশ হলেন। মানুষ দূর্বল হয়ে পড়লে তার উপর হামলা করতে দ্বিধা বোধ করে না। কলঙ্কের ছাপ দিয়ে গোপনে, অন্তরালে মুচকি হাসতে থাকে। হায়রে দুনিয়া এরাই সমাজের শিরোমনি। নিভারানীর সংসারে আঁধার নেমে এলো। পল্লী অঞ্চলে নারীদের কোন কাজ নেই। হাজার লোককে বলেও কোন কাজ হয়নি। কোথায় বা কাজের সন্ধানে যাবে! মাথায় অনেক চিন্তা। যদি ওর শাশুড়ী কমলাদেবীর বিধবা ভাতা পাবার জন্য সাধ্য মত চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ওদের পরিবারের এক জন নামী নেতা কমলাদেবীকে কোন রূপ সহযোগিতা করে নি। সেই নেতাটির নাম অভিরাম। কিরন বাবুর ছোট দাদুর ছেলে। অভিরামের মধুক্ষরা বানী, আমাদের ভারত বর্ষে লাখো লাখো মানুষ এদের চেয়ে আরো দুঃসহ যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছে বা দিনপাত করছে। সপ্তাহে মাত্র তিন দিন খাবার সুযোগ পায়, ওতে কি ওরা মারা গেছে? এরা হলো দেশ দরদী, মানুষ দরদী নেতা। ধিক্ এদের। একদিন অভিরাম বাবু জ্বলে উঠলেন, অভাব কার নেই বলতে পারো বৌমা? আমাদের চোখের সামনে হাজার মানুষ কে মরতে দেখছি অনাহারে মারা যাচ্ছে। ঐ দিকে তাকালে চলবে না। পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমাদের হৃদয়ে বিবেকের জায়গা রাখলে চলবে না। বিবেকের শাখা প্রশাখাকে দুমড়ে মুচড়ে নষ্ট করতে হয়েছে। বিবেক শব্দটি আমাদের অন্তরে রাখা চলবে না। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি যেন এক জন স্বাধীন চেতনার বিপ্লবী। ওদের মধুর বানী শুনলে পিও ঝলসে যায়। অভিরাম হলো মূর্খ নেতা। নেতা কাকে বলে তার মানে জানে না। নিভারানী শিক্ষিতা মেয়ে। সে অভিরাম বাবুর চরিত্র বেশ ভালো ভাবেই অনুভব করেছে। এই জন্যই নিভারানী এই শয়তানটার কাছে কোন সহযোগিতা পাবে না আর প্রত্যাশা করে না। এরা এটা চিন্তা করে না জগৎ পরিবর্তনশীল। তবে এই শয়তান গুলো উপকারে নেই, কোন মানুষ যদি দুর্বল এর পাশে জড়িয়ে তাকে সাহায্য করে তাহলে সেই মহানুভব মানুষটিকে সন্মান দিয়ে থাকে, একটু পরেই জানতে পারবেন। তবে কয়েক মিনিট ওয়েট করতে হবে।


______________________________________

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024