Posts

Showing posts from October, 2023

পরিমলের পরিণয় বন্ধনের পরিণতি - তপন তরফদার || Porimoler porinoy Bondhoner porinoti - Tapan Tarapdar || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

  পরিমলের পরিণয় বন্ধনের পরিণতি               তপন তরফদার           পরিণয়বন্ধনে পা না গলালেই মানুষ সুখে থাকে। এই বিষয়টি পরিমল কে বোঝানো গেলোনা। বিয়ে না করলে মানুষ সুখে থাকে কথায় কথায়, এক দিন একটু অন্যভাবে কথাটা পরিমলের কাছে পারলাম। পরিমল আমাকে সেই গানের কথা বলে দিল, ‘দাদা মেলা থেকে বউ এনে দে।‘ আমরা গণেশ ত্রিপল সাপ্লাইয়ের কর্মচারী। আমার আর প্রদীপের অনেকদিন আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। আমি তখন পরিমলকে কিছুই বলতে পারলাম না। ওর ঘটক এসে বলল, ভালো খবর আছে বাগনান থেকে একটা ভালো মেয়ের ছবি এনেছি, যাতায়াত বাবদে দুই শত টাকা দেবেন। কিছুক্ষণ আগেই খদ্দেরের সঙ্গে তর্কাতর্কি করেছে পরিমল মেজাজটা এখনো খিঁচড়ে আছে। একটু উঁচু গলাতেই বলে ওঠে ছবি পছন্দ হলে টাকা নয়তো লবডঙ্কা। আমার সঙ্গে চালাকি চলবে না। আমরা ওর দিকে তাকাতে লজ্জা পেয়ে গিয়ে আস্তে করে বলে, ছবিটা বার করুন। পরিমলকে বলতে পারলাম না পরিমল দুর্গতি আছে তোমার কপালে।             আজ সোমবার পরিমল ডুব মেরেছে, কাজে আসেনি। মঙ্গলবার কাজে এসে প্রথম কথা দাদা সব ঠিক করে এসেছি এই শ্রাবণ মাসের শেষ লগ্নে বিয়ে। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে বরানুগমনকারী হবেন। আমাদের জীবনয

চৈতালী ভট্টাচার্য্য - উমার বিদায় || Chaitali Bhattacharya - Umar Biday || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

  চৈতালী ভট্টাচার্য্য         উমার বিদায়     " শোনো নীল, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমি আমার ছোটবেলার বন্ধুকে কথা দিয়ে দিয়েছি। যতই তুমি বিদেশের মাটিতে অর্থাৎ আমেরিকায় গিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে চাকরি করো , কিন্তু ভারতের মাটিতেই রয়েছে তোমার শেকড়ের টান। ভুলে যেওনা এই দেশের মাটিতে এখনও তোমার বাবা মা দুজনেই জীবিত আছেন। এবং মুখার্জি পরিবারের তুমি আমাদের একমাত্র বংশধর। আর আমি আমার বন্ধু সুশোভন চ্যাটার্জীর একমাত্র কন্যা পিয়ালীকে আমার পুত্রবধু রূপে নির্বাচন করেছি। পিয়ালী রূপসী ,শিক্ষিতা, রুচিশীলা এবং বংশমর্যাদায় একেবারে আমাদের পাল্টি ঘর। তাছাড়া ছোটবেলা থেকে তুমি তাকে বহুবার দেখেছো এবং তোমার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। তাই এই বিবাহে তোমার অমত হবে বলে আমার মনে হয় না। আশা করি তুমি শীঘ্রই এদেশে এসে আমার এই কথার সফলতা প্রদান করবে। ভালো থেকো"।      অকস্মাৎ বাবার এই এমারজেন্সি চিঠি পেয়ে ব্রজাঘাতের মতো বসে পড়লো নীল ওরফে জোরেনীলাঞ্জন। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে চেনে সে। অসম্ভব রাসভারী একজন মানুষ। কলেজের অধ্যাপক উচ্চশিক্ষিত তার বাবা নীলোৎপল মুখার্জীর সঙ্গে কোনোদিন পিতাপুত্রের স

যেওনা উৎসব - অর্পিতা বিশ্বাস || Jeuna Utsab - Arpita biswas || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

যেওনা উৎসব অর্পিতা বিশ্বাস          টবের গাছগুলোর পরিচর্যা করছিলেন সোমেশ্বর । বয়স সত্তরের কাছাকাছি হলেও নিজস্ব কাজ আর লেখালেখি নিয়ে বেশ ভালো আছেন । অবশ্য জীবনভর এই ভালো থাকার চেষ্টাটাই করে গেছেন । আর এটা শিখেছিলেন মনিদার কাছ থেকে । মনিময় সেনগুপ্ত । পাড়ার সবার মনিদা । তা মনিদাকে কেউ কুশল জিজ্ঞেস করলেই একগাল হেসে বলতেন---বেশ ভালো আছি । সেবার নীরু জ্যাঠাকে একই কথা বলতেই রেগে গিয়েছিলেন সোমেশ্বর । তারপর প্রশ্ন করেছিলেন --আচ্ছা মনিদা, নীরু জ্যাঠাকে তুমি মিথ্যে বললে কেন ?        মনিদা উত্তর না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন--পুজো এসে গেছে, তাই না রে ?               সোমেশ্বরও একবার নীলাভ আকাশটা দেখে নিলেন । তারপর বললেন -----কথা ঘোরাবে না মনিদা । মাস আধা না পেরোলে জ্যাঠা যে টাকা হাতছাড়া করতে চায় না সেটা তুমি যেমন জানো, আমিও জানি । সময় মতো টাকা না দিলে জ্যাঠার ছেলে মেয়ে দুটোকে পড়াতে যাও কেন ? একটু হেসে মনিদা বললেন --- তোর কি মনে হয়, আমি ভালো নেই বললে নীরু জ্যাঠা পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে দিত ? আসলে ওটা একটা কথার কথা । যারা জিজ্ঞেস করে, তারা মোটেই 'তুই কেমন আছিস' সেটা জানতে চা

বোধন - ঝুমা দত্ত || Bodhan - Jhuma Dutta || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

  বোধন     ঝুমা দত্ত  রামচন্দ্র চ্যাটার্জী, মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁকে এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অভিভাবকহীন যন্ত্রণার মোকাবিলা করতে হয়। তবে ভাগ্যক্রমে অভিভাবকহীনতা সঙ্গ দেয় নি বেশিদিন। সে গ্রামের এক নিঃসন্তান কৃষক পরিবার তাকে বুকে টেনে নেয় এবং বড় স্নেহে তাকে লালন পালন করে।  রামচন্দ্র তাঁর বাবার থেকে যেটুকু পুজোর কাজ শিখেছিল তা দিয়ে অল্প বিস্তর এখনো পূজো করে। তবে সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁ হাতের একটি আঙ্গুলে খুঁত থাকার কারণে সারা বছর পুজোর কাজ খুব একটা জোটে না, তাই কৃষি কাজটাই এখন তার প্রধান জীবিকা।  বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পর যে স্নেহের বৃক্ষটুকু আঁকড়ে বড় হয়, সে গাছের ছায়াও গত বছর সরে যায়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া স্মৃতিচিহ্ন স্বরুপ একটি আশীর্বাদী কাস্তে বড়ই যত্নে রেখেছিল। সেই কাস্তেটা আজ রামচন্দ্র ধান ক্ষেতে হারিয়ে ফেলেছে। তাই তাঁর মনটা আজ খুব খারাপ। গালে হাত দিয়ে এক মনে তার কথাই শুধু ভেবে চলেছে। এমন সময় পাশের বাড়ির সুদক্ষের পাঁচ সন্তানের কনিষ্ঠা কন্যা দুর্গা এসে হাজির।  বছর দশের দুর্গা, যেমন সাহসী, দস্যি তেমনি মনে অগাধ দয়া মায়া। রামচন্দ্র তাকে খুব স্নেহ করে, তার হাত

প্রথা - তনিমা সাহা || Protha - Tonima Saha || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

প্রথা তনিমা সাহা সময়টা নব্বইয়ের দশক। কমলেশ মল্লিক আজ বহুবছর পর বাড়ি যাচ্ছে। এমন নয় যে বাড়ির সাথে তার কোন টান নেই। বাড়ির সাথে টান তার ষোল আনা। বাড়িতে তার বাবা, মা, ছোট বোন, ছোট ভাই, জ্যেঠু, জ্যেঠিমনি, জ্যাঠতুতো দুই যমজ দাদা এক দিদি সব মিলিয়ে জমজমাটি ব্যাপার! কিন্তু কিছু কিছু সময় ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না। ফি মাসে বাড়ি থেকে চিঠি যায় তার কাজের জায়গায়। সে চিঠির উত্তরটাও কমলেশ পাঠায়। এবার কমলেশের মা খুব করে বলেছে যে মল্লিক বাড়িতে প্রথমবার দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হবে। এবার যেন অবশ্যই বাড়ি আসে। কমলেশ যেদিন বাড়ি পৌঁছায় সেদিন ষষ্ঠীর সন্ধ্যা। একচালা ঠাকুর হয়েছে এবার। কুমোর পাড়ার চন্দ্রকাকা মায়ের চক্ষু দান করছেন। চক্ষুদানের পর চন্দ্রকাকা মায়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কমলেশ চন্দ্রকাকার দিকে এগিয়ে যেতেই জ্যেঠু বাধা দিয়ে বলেন, 'কাঁদতে দে তাকে। মনের ভারটা একটু হালকা করে নিক।' কমলেশ বাড়ির বাইরে আজ প্রায় চারবছর। ভিনরাজ্যে কাজের সুবাদে বিভিন্ন লোকের সাথে মেলামেশার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। কিন্তু তার এইধরনের অভিজ্ঞতা নতুন। ছোট থাকতেই দেখেছে পাড়ার বা পাশের প

আকবরের এঁটো পান - প্রীতম সরকার || Aakborer Eto pan - Pritam Sarkar || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

আকবরের এঁটো পান       প্রীতম সরকার বিষয়টা যে এই জায়গাতে পৌঁছে যাবে সেটা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি ভারত সম্রাট আকবর। আগ্রার কেল্লাতে রোজ যেমন খাবার তিনি খেয়ে অভ্যস্ত, আজও তেমনই খেয়েছিলেন। খাবার পরে অভ্যাস মতো সুগন্ধী মশলা দিয়ে সাজানো তাম্বুলি চিবোতে চিবোতে কেল্লার ভিতরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দুপুরে আজ যেন গরমটা বেশ ভালোই পড়েছে। বারান্দা থেকে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন সামনেই বয়ে চলেছে যমুনা নদী। কিন্তু অন্যদিনের মতো আজ যমুনার দিক থেকে যে হাওয়া আসছে, তাতে বেশ গরমের ভাব। এই গরম হাওয়ায় অস্বস্তি লাগছে সম্রাটের। মশলা যুক্ত পান এখনও মুখে রয়েছে তাঁর। মুখের ভিতরে তম্বুলির সঙ্গে মেশানো হরিনের নাভি কস্তুরির গন্ধে বেশ আরাম হচ্ছিল সম্রাটের। তম্বুলির ভিতরে অন্যান্য মশলার সঙ্গে কস্তুরি মিশিয়ে কিছুদিন থেকে রোজ খাচ্ছেন তিনি। তাঁর যে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল, রাজবৈদ্যের পরামর্শে সেটা নিয়ম করে পালন করায় অনেকটাই কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখন দুপুরের এই গরম আবহাওয়ায় থাকার চেয়ে বিশ্রাম কক্ষে চলে যাওয়া ভালো বলে মনে হলো আকবরের। আগ্রার কেল্লার প্রাসাদের ভিতরে যে ঘরে আকবর দুপুরে বিশ্রাম করেন, সেই ঘর প্রাকৃতিক ভাবে ঠ

একটি বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা - ইলা সূত্রধর || Ekti Bristi veja Sondhaya - Ila Sutradhar || গল্প || ছোট গল্প || Story || Short Story || Prose || বড় গল্প

একটি বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা ইলা সূত্রধর আজ সারাটা সন্ধ্যা বৃষ্টিতে ভিজেছে রূপসা। নিজের মনের দ্বন্দ্বে বুকের ভেতর উথাল-পাথাল ঝড় বয়ে যাচ্ছে ‌। ক্লান্ত শরীর মন বিছানায় গা লাগাতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ মোবাইল ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে ঘুম ভেঙ্গে যায় রূপসার। ঘুম জড়ানো চোখে ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই চেনা সেই কন্ঠস্বর যা গত দুই দিন থেকে ফোনটা আবার আসছে। এ যেন মনের ডাইরির পাতাগুলো উল্টে যাচ্ছে, এক এক করে মনে পরছে পুরোনো সব স্মৃতি। আজ প্রায় পাঁচ বছর রূপসা মেয়েকে নিয়ে আলাদা রয়েছে কোলকাতায়। প্রানের চেও প্রিয় মা-বাবা,ভাই বোন প্রিয় শহর সবকিছু ছেড়ে এই নির্জন বাস সে কি শুধুমাত্র মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে।  রূপসা খুব সুন্দরী ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভীষণ জেদি ও অভিমানী বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। ভালোবাসার কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে কিন্তু অবজ্ঞা সহ্য করতে পারে না‌। রূপসা বিয়ের আগে থেকেই লেখালেখি করত কিন্তু রক্তিমের সেটা পছন্দ ছিল না। তাই ভালোবাসার কাছে নতজানু হয়ে একদিন তার প্রিয় কলম বাক্স বন্দী করে রেখেছিল ,  অবজ্ঞার আগুনে দগ্ধ হয়ে ব