পর্ব - 2
দিনটা ঠিক মনে নেই, তবে অপরাহ্ন বেলা। নিভারানী এক বাসস্টান্ডে কোন এক শহরে কর্মের সন্ধানে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন ধরে সংসারে যে অশান্তি চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। অভাব তো লেগেই আছে। যে দিকে চক্ষু যাচ্ছে অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখতে পচ্ছে না। চিন্তায় ঘুম নেই। সেই দিন বিষ্টা মোড়ল বলে বসলো - বৌমা কেউ তোমাকে সাথ দেবেন না। চারটি ছেলে মেয়ের মা হয়েছো কিন্তু যৌবনের ভাঁটা কমেনি। তুমি আমার দলে যোগ দাও মোটা রোজগার হবে প্রতিদিন। তবে কথা দিলাম আমি কারো কাছে মুখ খুলবো না। কাজটা তেমন শক্ত নয়, প্রতিরাত্রে বিভিন্ন মাকড়ার কাছে শোবে, এই আর কি। নিভারানীর কানে ঐ কথা যেতে তার মনে হয়েছিলো বিষ্টার দুগালে চপ্পল মারবে, কিন্তু পাড়ার প্রতিবেশী বলে কিছু না বলে সরে পড়েছিলো। সরে গেলেও বেশ কয়েকটা অশ্লীল খিস্তি নিভারানীর কর্নে প্রবেশ করেছিল। এই সব নানান কথা জটলা করে নিভারানীর মাথা যেন চরকীর মত ঘুরছিলো। হঠাৎ কার ডাকে যেন সম্বিত ফিরে পেলো। ভদ্রলোেক বললেন- আমি ডাকছি? আমায় চিনতে পারবে না। আমি নবীন দা, তোমার দাদা কিশোরের বন্ধু। তোমার নাম নিভা নয়? আমি তোমার গ্রামের আচার্য্য পাড়ার ছেলে। নিভারানী আমতা আমতা করতে থাকে। খুব নম্র কণ্ঠে বললো- আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। তা পারবে কেন? তোমার বিয়ের দিনে এবং ওর আগে কয়েকবার দেখেছি। হয়তো তুমি আমাকে দেখনি। কিশোর আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তোমার বিয়েতে তোমার দাদা কিশোর আমাকে আমন্ত্রন করেছিলো। আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু ছিলাম। একই সাথে স্কুল,ও কলেজের গন্ডী পেরিয়েছি। কিন্তু তোমাকে এই বেশে দেখবো আমি ভাবিনি। বিয়ের তের/চোদ্দ বৎসরের মধ্যে এই বেশ! কিরনের কি এমন অসুখ করেছিল? নিভারানীর চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। গোপনে চোখের জল মুছে বলে উঠলো- সবই ভাগ্যের পরিহাস নবীন দা। মনে হয় এই মরুময় জীবনে শীতল, বারির সন্ধান আর পাওায়া বে না। চার চারটি সন্তান/সন্ততিকে রেখে আমাকে অর্থেই জলে ভাসিয়ে দিল কিরন। কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো নিভারানী- আমার এখন এমন অবস্থা যে পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই। ছেলে মেয়েদের মুখ পানে তাকাতে পারিনা। এবার টাল সামলাতে না পেরে ভুঁকরে টুকরে কেঁদে উঠলো। গভীর চাপ দিয়ে যেন ভেতর থেকে কান্না বেরিয়ে এলো। নবীন বাবু তার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি অনুভব করলেন ভেতরে একটা কাল বৈশাখী ঝড় হু হু করে বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কেউ ঠিক থাকতে পারবে না। নবীন বাবু ওর বাপের বাড়ীর অবস্থা ভালো ভাবেই জানেন। ঐ জন্য বাপের বাড়ীর দিকে এগোতে পারেনি নিভারানী। শান্ত হবার পরে বললেন নবীন বাবু, তোমার শাশুড়ী কেমন আছেন। নিভারানী শান্ত স্বরে বললো কোন প্রকারে বেঁচে আছেন। কমলাদেবী পুত্র দ্বারা বেদনা সহ্য করতে পারেননি। পুত্রের মৃত্যুতে মেরুদন্ডটা ধনুকের মত বেঁকে গেছে। পুত্র শোকের যন্ত্রনা ও অভাবের তাড়নায় অন্ধ হতে চলেছেন। নিভারানী বেশ বড়ো সড়ো এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একটুখানি জিরিয়ে নিলো। সবই কপালের ফের নবীনদা। নবীনবাবু অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বললো- কেন পাটীর লোকেরা তোমাদের মদত করে না! তোমরা দুঃস্থ, তোমরা উর্পাজনহীন, বিধবা ভাতা, বার্দ্ধক্য ভাতা এগুলোতো পেতে পারো? নিভারানী ঢোক গিলে বললো- সে পাটীতে দরদী লোকনেই নবীনদা। তাদের বানী শুনলে পিও ঝলসে যায়। আমাদের পরিবারের মধ্যে নেতা রয়েছে, তিনি সিদ্ধপিঠ মহাপুরুষের বানী আওড়ান। বারংবার বলা সত্ত্বেও আমাদের কথা কর্ণপাত করেন না। আমরা ভিক্ষে করি, দশজনের কাছে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দিই এটাই চায় তারা। নবীন বাবু বুঝতে পারলেন নিভারানীর ভাষায় কিসের ইঙ্গিত রয়েছে। হঠাৎ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলে,- তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো? নিভারানী বললো,- দিয়াপুর চললাম অন্নের সন্ধানে। একজন প্রতিবেশী সন্ধান দিয়েছেন একজন ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা গিয়েছে দুটো বাচ্চাকে কে রেখে, তাদের দেখা শুনা বা পরিচর্চার ভার নিতে হবে। বিনিময়ে মাসিক বেতনদেবে, কতদেবে তা ঠিক হয় নি। নবীন বাবু বললেন- তুমি বাড়ী ফিরবে কবে?
তোমাদের মদত করে না! তোমরা দুঃস্থ, তোমরা উর্পাজনহীন, বিধবা ভাতা, বার্দ্ধক্য ভাতা এগুলোতো পেতে পারো? নিভারানী ঢোক গিলে বললো- সে পাটীতে দরদী লোকনেই নবীনদা। তাদের বানী শুনলে পিও ঝলসে যায়। আমাদের পরিবারের মধ্যে নেতা রয়েছে, তিনি সিদ্ধপিঠ মহাপুরুষের বানী আওড়ান। বারংবার বলা সত্ত্বেও আমাদের কথা কর্ণপাত করেন না। আমরা ভিক্ষে করি, দশজনের কাছে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দিই এটাই চায় তারা। নবীন বাবু বুঝতে পারলেন নিভারানীর ভাষায় কিসের ইঙ্গিত রয়েছে। হঠাৎ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলে,- তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো? নিভারানী বললো,- দিয়াপুর চললাম অন্নের সন্ধানে। একজন প্রতিবেশী সন্ধান দিয়েছেন একজন ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা গিয়েছে দুটো বাচ্চাকে কে রেখে, তাদের দেখা শুনা বা পরিচর্চার ভার নিতে হবে। বিনিময়ে মাসিক বেতনদেবে, কতদেবে তা ঠিক হয় নি। নবীন বাবু বললেন- তুমি বাড়ী ফিরবে কবে?
- মনে হয় সাত দিন পর। কিন্তু আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন কেন? নবীন বাবুর উত্তর, তোমাদের বি.ডি.ও তে সাত মাস হলো জয়েন করেছি। বাড়ীতে এসেই আমার অফিসে যাবে, আমার নামে খোঁজ করলে যে কেউ আমার অফিস রুম দেখিয়ে দেবে। তবে তোমার শাশুড়ীর ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড জেরক্স করে সঙ্গে রাখবে। তোমার শাশুড়ীর হয় বিধবা ভাতা নতুবা বার্দ্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করবই। নিভারানী কাতর কণ্ঠে বললো- তাহলে খুবই উপকার হয় নবীনদা। - তুমি চিন্তা করোনা যে কোন ব্যবস্থা হবেই। আর অপেক্ষা করা যাবে না, বাস এসে গেছে। তুমি অফিসে এসো কিন্তু। নবীনবাবু বাসে উঠলেন। নিভারানী ওর গমন পানে তাকিয়ে রইলো। আপন মনে বলতে থাকলো ঈশ্বর আছেন।
_______________________________________
🔴 পর্ব - ১ || Part - 1
🔴পর্ব - ৩ || part - 3
Comments