পুনঃ মূষিক ভবঃ - পার্থ প্রতিম দাস || Puno musiko vobho - Partho protima das || অনুগল্প || short story
পুনঃ মূষিক ভবঃ
পার্থ প্রতিম দাস
এস এস সি পরীক্ষার মাধ্যমে সন্দীপ ক্লার্কের চাকরী পায় আসানসোলে। খবরটা পেতেই সন্দীপের মা বাবা ভীষন খুশি হয়। গ্রামের বাড়ি বাড়ি মিস্টি দিয়ে আসে। সন্দীপের মা বাবা পরিকল্পনা করতে থাকে, কি ভাবে ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিবে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে।
গ্রীষ্মের এক ভোরে সন্দীপের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য সন্দীপের মা বাবা তৈরী হচ্ছে। এমন সময় ফোন আসে। সন্দীপের বন্ধু কল করেছে। সন্দীপের বাবা কলটা রিসিভ করলো। সন্দীপের বন্ধু বলল, "হ্যালো কাকাবাবু, সন্দীপ এই মাত্র মন্দিরে বিয়ে করেছে।"
কথাটা শুনে সন্দীপের বাবা তাড়াতাড়ি সন্দীপের মাকে ফোনটা দিয়ে বলল, "দেখো দেখো, খোকার কান্ড দেখো।"
সন্দীপের মা ফোনটা ধরে আর সন্দীপের বাবা লোক লজ্জার কথা মনে করে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। সন্দীপের মা বলল, "হ্যালো, সন্দীপকে ফোনটা দে।"সন্দীপ ফোনটা ধরে মায়ের কথা না শুনে, অনেক কথা বলে গেল, "তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমরা তোমাদের ঘাড়ে বসে খেতে যাচ্ছি না। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে মন না চাইলে যোগাযোগ রাখতে হবে না।"
সন্দীপ তৎক্ষণাৎ ফোনটা কেটে দেয়। সন্দীপের মা হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠলো। জলভরা কন্ঠে বলতে থাকে, "ছেলেকে এত কষ্ট করে মানুষ করে যদি এই প্রতিফল পেতে হয়, তাহলে এমন ছেলেকে আমি কখনো পেটে ধরতাম না।"সন্দীপের বাবা নীরব হয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।
তারপর থেকে সন্দীপ তার মা বাবার খোঁজ নিতে আসে না। এক কানাকড়ি টাকাও দেয় না। করোনায় সন্দীপের বাবা ভীষন অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়। তখনো সন্দীপ খবর পেয়ে ও একবারের জন্য তার বাবাকে দেখতে আসেনি।
হঠাৎ SSC পরীক্ষার পুরো প্যানেল বাতিল করলো কোলকাতা হাইকোর্ট। তাতে সবার সাথে সন্দীপের চাকরী চলে গেল।
রাতে ভীষন গরমে সন্দীপের বাবা ঘুমাতে পারেনি। তাই ভোর ভোর দর্জা খুলে রাস্তার দিকে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে। দেখে গেটের সামনে সন্দীপ আর তার বউ। সন্দীপের কোলে সন্দীপের একটা পুঁচকে ছেলে। আর পাশে দুটো বড় বড় সুটকেস।
Comments