গল্প || রক্ত || প্রদীপ সেনগুপ্ত || Rokto - Prodip sengupta || Bengali story || Short story

 রক্ত

প্রদীপ সেনগুপ্ত 



হারু মন্ডলের আদি বাড়ি কোথায় ছিল কেউ জানে না, তবে হারু মন্ডলের বাপ গোসাবায় অনেকটা জমি কিনে বাড়ি, পুকুর সবই করেছিল। সেই বাড়িতে এখন শুধু হারু মন্ডলই থাকে, সাথে গোলক দাস - হারু মন্ডলের খাস লোক। গোলকের বয়স আশি পার করলে কি হবে, গায়ে এখনো বেশ শক্তি ধরে। কত্তা হারু মন্ডলও একশ' ছুঁই ছুঁই। 

হারু মন্ডলের তিন ছেলের একজনও বেঁচে নেই। সবাই কেমন ষাট পার করার আগেই চলে গেল। অথচ এই বংশে হারু মন্ডল পর্যন্ত সবাই তো একশ ছুঁয়ে গেছে। হারু মন্ডলের বাপ না কি একশ' পাঁচ বছর বেঁচে ছিল। ওর দুই ভাই পঁচা নব্বই পার করে গেছে। শুধু ছোট ভাইটার খবর জানা নেই। ওকে বাপে ত্যজ্য পুত্তুর করেছিল। আসল কথাটাই তো বলাহয় নি, মন্ডলদের ব্যবসা ছিল চুরি করা। হারু মন্ডলের ছোট ভাই বেঁকে বসেছিল চুরি করবে না বলে। তার বাপ তাকে জুতো পেটা করে তাড়িয়েছিল। তারপর সেই ছেলের কোন হদিস পাওয়া যায় নি। শোনা যায়, কলকাতায় গিয়ে নাকি স্বদেশীদের দলে নাম লিখিয়েছিল। 

ছেলেটার নাম ছিল পরী। মেয়েদের মত না কি দেখতে ছিল ছোট বেলায়! 

সেই ছেলেই ' চুরি করতে পারব না ' - বলে বেঁকে বসেছিল বলে বাড়িতে জায়গা হয় নি। 

হারু মন্ডল তার খাস লোক গোলককে নিয়ে ভালোই আছে। তার বংশধরেরা আর কেউ জাত ব্যবসায় থাকে নি। এদিক ওদিক মিলিয়ে সাত নাতি আর একটি নাতনি, সবার কোলকাতাতেই বাস , তবে তারা কিন্তু গোসাবার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই বেড়াতে আসে। গোলক একদিন বলেছিল, 

' কত্তা, আপনার নাতি নাতনি কিন্তু আপনার খোঁজ খবর নেয়। '

হারু মন্ডল হাসে, বলে -

' আমার খোঁজ নিতে থোড়াই আসে, ওরা জানে আমার কাছে এমন একখান বস্তু আছে - যা' সাত রাজার ধনের মত।'

গোলক হাসে, 

' সেটা ওদের দিয়ে দিলেই হয়, সবাই সমান ভাগ করে নি তো। '

হারু মন্ডল শুকনো হাসে, 

' সেই অধম্ম আমি করতে পারব না রে। আমি খবর পেয়েছি, আমার ভাই পরীর ছেলে আছে - নাতি আছে। ওদেরও তো দাবি আছে জিনিষটায়। এরা হাতে পেলে - তাদের ভাগ্যে কিচ্ছুটি জুটবে না। তবে, এ' বাড়ি,জমি জমা আমি রাখব না। বেঁচে দিলে অনেক টাকা পাব। তারপর সেই টাকায় কোলকাতায় একটা ছোট বাড়ি কিনে বাকি টাকার সুদে চলে যাবে আমার। তারপর মরলে পরে সেই টাকা ওরা ভাগ করে নেবে। শুধু দুই ভাগ তোর কাছে থাকবে। পরীর ছেলে বা নাতি - কেউ এলে দিয়ে দিবি। 

সে'দিন রাতে বেশ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হঠাৎ সদর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। গোলক দৌঁড়ে দরজা খুলতেই দেখে, একজন অল্প বয়সী ছেলে - ভদ্রলোকের ছেলে বলেই মনে হল। ছেলেটা কাচুমাচু হয়ে বলল, 

' ওষুধ ফেরি করি। বাজারের কাছে ডাক্তারবাবু কাছে এসেছিলাম, দেখি ডাক্তারখানা বন্ধ - আর বৃষ্টিটাও নেমে এল... '

গোলক বলল, 

' ঠিক আছে, ভিতরে বস। বৃষ্টি ধরলে যেও খন। '

হারু মন্ডল গোলককে জিজ্ঞাসা করল, 

' কে এল এই বৃষ্টি বাদলায়? '

গোলক বলল, 

' কোন ভদ্রলোকের ছেলে মনে হল কত্তা, চাঁদপনা মুখ - ওষুধের কারবারি। বাদলায় আটকে গেছে। '

হারু মন্ডল বলল, 

' এই রাতে কোথায় যাবে আর, খাবারের ব্যবস্থা কর। '

একই সাথে খেতে বসল হারু মন্ডল ছেলেটার সাথে। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে কত্তা একটু উন্নাসিক। রুচিমত খাবার না হলে তার চলে না। গরম খিঁচুরি আর নানাবিধ ভাজা সহযোগে রাতের খাওয়া শেষ হল। হারু মন্ডল ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করল, 

' বাছার নামটি তো জানা হল না! '

ছেলেটি বলল, 

' আজ্ঞে, আমার নাম পরীক্ষিত নস্কর। '

হারু মন্ডল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছিল ছেলেটিকে। এবার বলল, 

' এবার শুতে যাও, সকালে জল খাবার খেয়ে যেও। '

রাত গভীর হতেই পরীক্ষিত বুড়ো বট গাছটার তলে একটু খুঁড়তেই বেরিয়ে এল সেই ছোট্ট বাক্স। সাবধানে ধরে উঠে দাঁড়াতেই বুঝতে পারল পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে। হারু মন্ডলের কন্ঠস্বর শুনতে পেল, 

' যাক, এতদিনের অপেক্ষা সার্থক হল। '

পরীক্ষিত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। 

' কি করে বুঝলে বাক্সটা ওখানেই আছে? '

পরীক্ষিত মাথা নিচু করেই উত্তর দিল। 

' ঠাকুর্দা বলেছিলেন, আপনি আপনার গোপন যা কিছু বটগাছের তলাতেই লুকিয়ে রাখতেন, তাই.... '

হা হা করে হেসে উঠল হারু মন্ডল, ' 'তোকে আমি কাল রাতেই চিনেছি, একদম আমাদের পরীর মুখ বসানো। শোন, কাল সকাল হলেই কাকপক্ষী ওঠার আগেই চলে যাবি। আর যেটা পেলি - সেটা তোর। পরীর খবর কি রে?' 

' ঠাকুর্দাদা তো দু' বছর আগেই মারা গেছেন আর বাবাও গত বছর চলে গেলেন। '

হারু মন্ডল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, 

' বে' থা করেছিস? '

পরীক্ষিত মাথা নিচু করে বলল,

'আজ্ঞে না। '

পরদিন সকালে হারু মন্ডল যখন ঘুমিয়ে তখন পরীক্ষিত বড় ঠাকুর্দার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতেই হারু মন্ডল বলল, 

' জেগেই 

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024