উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -11


 


হোটেল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি করে একটা মোড়ে এসে নামলাম। মোড়ের চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম। স্থানে স্থানে লোক জামায়েত রয়েছে। কতকগুলো মেয়ে পুরুষদের সাথে নানা ঢঙে কথা বলছে। হঠাৎ কানে একটা অশালীন কথা ভেসে এলো। কে যেন বলে উঠলো, কি লো রজনী বেশ তো সেজেগোছে রাতের নাগরদের জন্য দাঁড়িয়ে। আছিস, বলি নাগরকে কাছে পেয়েছিলি? 


আবার কে যেন বলে উঠলো, মাইরি বলছি, তোমাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারি না। কি যাদু জানো বলতো প্রিয়া?

 এরা যেন নারীকে বিলাসের উপকরণ ও ভোগ্য পণ্য রূপে ব্যবহার করেই কৃতার্থ। রন্টুদাকে জিজ্ঞাসা করবার আগে রন্টুদা বলে উঠলো, এ জায়গাটা ভালো নয়। কেদারদার বাড়ীর প্রবেশ পথ বড়ো নোংরা পরিবেশ। তাড়াতাড়ি পা ফেলে এগিয়ে চলো। রন্টুদা একটা গলির মধ্যে নিয়ে এলেন। কোন আলোর ব্যবস্থা নেই বলে একটা টর্চ বের করে এগিয়ে চললেন। আমি অনুসরণ করে চলেছি ওর পিছনে। ঐ অন্ধকারে মিনিট পাঁচের মধ্যে একটা বাড়ীতে প্রবেশ করলাম। বেশ বড় বাড়ীখানা। 

রন্টুদা বললেন, এটা টাইপ মাস্টার মশায়ের বাড়ী। আর স্কুল হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমার বাড়ী হতে বিশেষ দূর হবে না। তুমি এখানে একটু বোস, আমি ভেতরে গিয়ে খবর নিয়ে আসছি মাষ্টার মশাই আছেন কি না। রন্টুদা প্রস্থান করলো।

 একটা বেঞ্চে বসে ঘরের চারিপাশটা দেখছি। দেওয়ালে টাঙানো বুদ্ধদেব মূৰ্ত্তি। মূর্ত্তির নীচে কালো রঙের লেখা রয়েছে, “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি”। ভাবলাম মাষ্টার মশাই বুদ্ধদেবকে প্রচণ্ড ভক্তি করেন। হঠাৎ উদয় হলো বাবার কথা। এখন তিনি কি করছেন তা কে জানে? মনে হয় ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছেন আমাদের যাত্রা সফল হোক। বাবর জন্য চোখ দুটো ছল্‌ছল্ করে উঠলো। কোন প্রকারে নিজেকে সামলে নিলাম।

 এমন সময় কানে ভেসে এলো নারীর কণ্ঠস্বর। কি সুন্দর গান করছে মেয়েটা। মনে হয় মাষ্টার মশায়ের বৌ কিম্বা মেয়ে হতে পারে। খুব ভালো লাগছিলো। গানের অর্থ তো আমার অজানা তবুও সুরটা আমার কাছে মায়াচ্ছন্ন ছিলো। গান ভালো লাগার জন্য ক্ষণিকের জন্য সব কিছু ভুলে কান দুটোকে ওদিকে সজাগ করে রেখেছিলাম।

 হঠাৎ কপাট খোলার শব্দ পেয়ে চমকে উঠলাম। একজন মধ্য বয়সী সুঠাম পুরুষ প্রবেশ করতেই আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। তিনি বসতে বললেন। বসলাম।

 তিনি একটু দূরে চেয়ারে বসে আমাকে বললেন, তোমার কথা রন্টুর মারফৎ শুনে বড় দুঃখ পেলাম। সে বড় উপকারী যুবক। তোমাদের উপকারের নিশ্চয় সে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।

 সলজ্জে আনত মুখে বললাম, রন্টুদা কোথায়?

 তিনি বললেন, রন্টু ওর বৌদির সাথে গল্প করছে। দু - দিন সে আমাদের বাড়ীতে আসতে পারেনি বলে তার কত আফশোষ। ঐ কথা শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো তাহলে বাবার সান্নিধ্যে এড়িয়ে আমিই বা কি করে এখানো থাকবো। বাবার নিয়ে চিন্তা করছি এমন সময় মাষ্টার মশায়ের জিজ্ঞাসায় আমার চিন্তা হলো। 

কতদূর পড়াশুনো করেছো? 

বললাম, মাধ্যমিক পাশ করেছি। 

তাহলে কোন চিন্তা নেই। 

আমাদের কথা চলাকালীন একজন বর্ষীয়সী গৌরবর্ণা মহিলা তাম্বুল চর্বন করতে করতে আমাদের কাছে উপস্থিত হলেন। কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মাষ্টার মশায়কে বললেন , যাবার সময় দেখা করবে বাপু। আমি চললাম।

 মাষ্টার মশায় ঘাড় নাড়লেন। তিনি বললেন, তোমার নাম কি রমা? 

হ্যাঁ।

 টাইটেল খাসনবিশ না কি বলল যেন রন্টু... 

না আমার পুরো নাম রমা সিন্হা। 

বেশ, বেশ, তুমি কি কাল হতেই ক্লাস আরম্ভ করবে?

 রন্টুদাকে জিজ্ঞাসা করল ভালো হতো না?

 ঠিক আছে পরে জিজ্ঞাসা করে নেব। চলো আমার সাথে ফরম ফিলাম করতে হবে।

 এবার প্রতিবাদ করে বললাম, আর রন্টুদা? 

কোন ভয় নেই পাশের রুমে আমরা যাচ্ছি ওখানে রন্টু আছে। এসো আমার সাথে।

 পিছু নিলাম, একটা রুম পেরিয়ে ওর পিছনে গিয়ে একটা রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম। কোথায় রন্টুদা! আমি প্রবেশ করতেই মাষ্টার মশাই কপাটের খিলটা তুলে দিলেন।

 বললাম, কপাট বন্ধ করলেন কেন?

 কোন কথা নেই ওর মুখে। শুধু হিংস্ৰ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরনের জামাটা খুলে ফেললেন। লোকটার আচরণে দেখে আমি সন্দিগ্ধ হলাম। ভয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর মতো কাঁপতে থাকলাম। তবুও জোর করে কিছু বলার চেষ্টা করবার আগেই আমাকে। তার লৌহ কঠিন বাহু দিয়ে চেপে ধরে তক্তোপশোষে শুইয়ে পরনের পোষাক গুলো ছিন্ন ভিন্ন করার চেষ্টা করলো। লম্পটের লৌহ কঠিন বাহু জাল ছিন্ন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। অপমানে ও ক্ষোভে আমি নিজের নারী জীবনকেই ধিক্কার দিলাম। এই ধিককৃত জীবনের গ্লানি কি করে সারা জীবন বয়ে বেড়াবো!

 ধীরে ধীরে তক্তপোষ হতে উঠবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারছিলাম না। মনে হলো কেউ যেন লোহার শিকল দিয়ে আমার পা দুটোকে বেঁধে রেখেছে তক্তপোষের সাথে। বহু কষ্টে উঠে ছড়িয়ে থাকা শাড়ীটা দেহে জড়িয়ে টলতে টলতে বাইরে এসে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকলাম। একি করলে ঠাকুর! আমাকে অপবিত্র করলে? না - না এর জন্য কেউ দায়ী নয়। এই দৈহিক অপবিত্রতার জন্য আমার ভাগ্য দায়ী। কিন্তু আমি যে কিছু বুঝতে পারিনি। তবে রন্টুদার সব জালিয়াতি? হ্যাঁ, হ্যাঁ, রন্টুদা ঠক প্রতারক, ওর প্রবঞ্চনা বুঝতে পারছি।



                                   ক্রমশ...

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024