ছোট গল্প - চোরের ভয়ে || লেখক - কল্যাণ সেনগুপ্ত || Short story - Chorer Bhoie || Written by Kalyan sengupta


 

চোরের ভয়ে


কল্যাণ সেনগুপ্ত 




আলো দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দরজা খুলে দাড়ালে।উত্তেজনায় মুখ লাল।গলা নামিয়ে বললে " দাদা আজ  বিকেলে ডিভোস হবে"।

মাথার মধ্যে তখনও গোলটা কেন খেলাম সেটাই ঘুরছে ।তারমধ্যে আলো র এরকম বদখত খেলার নমুনা শুনে পিলে চমকে গেল "সেটা কি?"

"তুই জানিস না? ঐ যে রে টিভি তে দেখায় সেই ডিভোস হবে"। আলো বললে " আমি দেখব দাদা ।কি মজা ।টিভির মত হবে, দেখব। আমি ডিভোস দেখিনি"।

কী বলে ? ঠিক বুঝতে পারছিনা ব্যাপারটা।  কার সাথে কার হবে? আলো বললে"  দুর!তুই কিসসু জানিস না"।

আমার মাথায় সেই গোল টা। বললাম "তা জানিনা, এখন সর আমি বাথরুমে যাবো হাত পা ধুতে"।আলো ছাড়বার পাত্রী নয়। বলেই চলে

"শোন , বড় কাকা একদিকে আর  কাকিমার দুই ভাই হারু কাকা, নাড়ু কাকা মনেহয় আরেক দিকে । খুব সম্ভব ওরাই ডিভোস করবে"। বিকেলে আবার মাঠে কদমতলায় সঙ্গে ম্যাচ ওখানে তো না গেলেই নয়। প্রেস্টিজের  ব্যাপার। এরমধ্যে বাড়িতে যদি ডিভোস হয় তবে কি হবে যে জানে। সিঙ্গারা, মিষ্টি তো আমাকেই আনতে হবে। মা কে বললাম " কি ডিভোস না কি হবে তার জন্যে মিষ্টি আনতে হলে আগেই বল এনে রেখে যাব"।

মা কথা বাড়ালে না । বললে" যা , যা, তোর কোথায় বনে বাদাড়ে ম্যাচ আছে ।পারলে আলোকেও নিয়ে যা। মায়ের মুখ বেশ গম্ভীর। জ্যাঠামশাই কে বাবা ডাকিয়ে এনেছে। তার মানে একটা জোর যুদ্ধ হবে নিশ্চই।

বাবা আটকে দিলে  । ওনারা আসবেন ।যদি ট্যাক্সি ডেকে দিতে হয়। আজ বাবারা চার ভাই বাড়িতে। দুদিন আগে বড় কাকিমা আমাদের ঘুম থেকে ওঠার আগেই নিজের বাড়ি চলে গেছে। বড় কাকা এত কথা বলে, কিন্তু দুদিন যাবদ মুখে কুলুপ এঁটেছে।

বাবা বলেছে  "সেজ একটা খারাপ কিছু করেছে নিশ্চই। কিরে,  ভুল করে গলার হার টার ছিনতাই করেছিলি নাকি?"

ছোটকা  বললে" মেজদা তুমি যে কি বল। মোশন এ না থাকলে ছিনতাই বলে না। আর সেজদা কেন ছিনতাই করবে? দিব্যি সুস্থ লোক। রোজ কলেজ যাচ্ছে,পড়াচ্ছে। শুনেছি নেশাটেশা করলে ছিনতাই টা করতেই হয়। ওটা আপনাআপনি এসে যায়"।

বাবা বললে "নীচে চল, একবার দাদার সাথে বসে কথা বলা দরকার। কী বিশ্রী ব্যাপার সেজ করল।"

ছোটকা বলেই চলে "কিছু না ,মনে হয় সেজ বৌদি মোহনবাগান নিয়ে কিছু বলেছে"।

জ্যাঠা মশাই বললে " অনিমা তো আবার কট্টর ইস্ট বেঙ্গল"।

বাবা বললে ছোটকাকে " এটা আবার নতুন  দিক খুলে দিচ্ছিস দেখছি।এই দিক টা তো ভাবিনি।"

জ্যাঠামশাই  বাবা ,কাকাদের ডেকেছেন নীচের ঘরে। বেশ জমজমাট কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে দেখে আমি আর আলো পর্দার পিছনে জায়গা নিয়েছি। রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মনেহয় যুদ্ধের পরিকল্পনা হবে।মাঠে নামার আগে যেমন গোল হয়ে পরস্পরকে কাঁধে হাত রেখে মাথা নীচু করে শপথ নেয় অনেকটা সেই রকম।  মা কে বলা হয়েছে সকালের লুচি, আর কালো জিরা ছড়ানো সাদা আলুর দম টা নীচে ই সব ভাই কে দিতে। সঙ্গে চা। ওফ! লুচি খেতে খেতে পরিকল্পনা হবে।

জ্যাঠা মশাই সবাইকে গম্ভীর দেখে উজ্জীবিত করতে বললেন" ব্রাদার্স , এটা যেন তেন লড়াই নয়। এটা হচ্ছে আমাদের প্রেস্টিজ কা"।বলে ছোট কার দিকে চাইলেন। ছোটকা ধরিয়ে দিলে " সওয়াল".। আবার শুরু করলেন "অনিমা কে যে করেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে। দরকার হলে ছিনিয়ে আনতে হবে"। এরপর স্বভাব সিদ্ধ ভাবে গলা নামিয়ে বললে " সেজ তুই ঘোড়া চড়তে পারিস?" বলে মিচকি মিচকি হাসলে।ছোট কা উচ্চ স্বরে হেসে বললে " দারুন বলেছ। ঘোড়ায় করে গিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে আসবে?

বড় কাকা যথারীতি চুপ। মাথা নিচু। কাগজ ওলটাচ্ছে। বাবা বললে "  দাদা  তুমি কি জান কেন  অনিমা চলে গেছে ?  আমাদের আগে কারণটা জানা দরকার। অনিমা সেজ কাকিমার নাম।

জ্যাঠা মশাই বললেন " সেজ, ছোট বেলা থেকেই ঠাণ্ডা মাথার ছেলে। দোষের মধ্যে সময় পেলেই আমার একটু পা টানে।কী ঠিক বলেছি তো  সেজ?"

বড় কাকা তেমন সাড়া দিলে না।

ছোট কা বললে " পা টানে মানে? হাত টান শুনেছি কিন্তু পা টান টা কি?

বাবা হেসে বললে " লেগ পুলিং"।

বড়কাকা ম্লান হাসলে।

আলো ফিসফিস করে বললে " দাদা এটা কি নতুন খেলা? তুই খেলেছিস?

আলো বড্ড কথা বলে ।বললাম " চুপ কর"।

ছোটকা বললে " সেজ বৌদি  নিশ্চই দেশ তুলে কথা বলেছে।তাই মাথা গরম হয়ে গেছিল"।

জ্যাঠা মশাই বললেন" সেজ কিছু বল। তোর কথা তো আগে শোনা দরকার। আমি তো ভাবতেই পারছিনা আমার বিপ্লবী ভাই মালিক পক্ষ কে না ঠেঙ্গিয়ে, বাড়িতে বউ ঠেঙ্গাচ্ছে। ছি, ছি। লজ্জায় মাথা হেঁট। তোর ওপর আমার অনেক আশা ছিল।"

মা আর ছোট কাকী মা লুচি নিয়ে এল।টেবিলে রেখে মা বললে " বড় ঠাকুর পো, তুমি না বললে আমরা তো কোন দিশা পাচ্ছিনা। কিছু তো বল।  দোষে গুনে মানুষ আমরা" ।

বাবা হাত তুলে থামিয়ে দেয় মা কে। আহা!" এমন করছ কেন? আগেই কত কিছু ধরে নিচ্ছ তোমরা" । তারপর উঠে বড় কাকা কে লুচির প্লেট টা এগিয়ে বলে " বলে ফ্যাল। আমরা আছি তোকে জান দিতে বাঁচাবো। সেই ছোট বেলায় দিপুদের বাড়ি থেকে আম চুরি করে আনার পর যেমন বাঁচিয়ে ছিলাম"।

বড় কাকা  এবার মুখ খুললে ।বাবা কে বললে "  বলছি, আগে ফুলকো গুলো খেয়ে নেই।  জ্যাঠামশাই ভয় দেখিয়ে বললেন " ঠিক আছে চলবে। কিন্তু এর পর ও যদি না বলিস তাহলে কিন্তু আমি আবার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসব। তখন কিন্তু শুনতে হবে"।

বাবা ছোট কা হেসে উঠলে। বড় কাকা সেই কুঁথে কুঁথে কাষ্ঠ হাসি দিলে।

লুচি শেষ হবার পর বড় কাকা বললে " দাদা তুমি তো এখন প্রায়ই থাকনা। অ্যাক্সিডেন্টের পর পায়ে র সেই যে অপারেশন করে প্লেট বসালো তারপর থেকে আমি নীচেই শুচ্ছি  কারণ তোমার অনিমার ঘুমের মধ্যে বড় এপাশ ওপাশ করে ,যদি  ঘুমের মধ্যে পা চালায় আর লেগে যায় তখন খুব কষ্ট হবে।

জ্যাঠামশাই বললেন " হ্যা , তো কি? ।তাহলে তো এরকম হবার কথা নয়"।

বড় কাকা বললে " ইদানিং খুব এলার্জি তে নিশ্বাসের কষ্টে ভুগছি। দিনের বেলা সব ঠিক আছে রাত্রে শুলেই দম নিতে কষ্ট। কোন খাবারের থেকে হচ্ছে।ডাক্তার এলার্জি টেস্ট করতে বলেছে" ।

বাবা বললে " তুই তো ট্রাকের বাইরে চলে যাচ্ছিস। কী হয়েছিল বল সেদিন রাত্রে? চোর বা ভূতের কোনো উপদ্রব নয় তো?"

জ্যাঠা মশাই হেসে উঠলেন ।বললেন"নিশ্চই ভুত দেখেছিল ছোট বেলার মত। সেজ র বরাবর ভুত আর চোর দের ফাজলামি পছন্দ নয়। ওদের কোনো ক্লাস ও নেই। মোস্ট সুবিধা বাদী। সাহসী লোকেদের ধরে না। যতসব হাবাগোবা, আগে থেকেই ভয় পেয়েই আছে তাদের কাছে যায়"।

ছোটকা  অবাক "এরকম ত কোনদিন শুনিনি।চোর আর ভূতের ক্লাস?"

"সেজ তাই এদের একেবারেই পছন্দ করে না।"

বড় কাকা বললে " তোমার মনে আছে গ্রামের বাড়িতে ছোট বেলায় যখন বাইরের বাথরুমে যেতে হত রাত্রে তখন তোমায় ডাকতাম ?

জ্যাঠা মশাই বললে " সেতো স্পষ্টই মনে আছে। আমি ভুত তাড়াতাম আর তুই বাথরুম কর তিস। তোর সেই থেকেই চোর আর ভূতের প্রতি অসন্তোষ।" বড় কাকা এবার মুখ খুললে " তখন  আসলে দু একবার দেখেছিলাম।"

"বলিস কি ? আগেতো বলিস নি? "

"একবার বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম পাশের আম গাছের নীচে একটা সাদা শাড়ি পড়া কে দাড়িয়ে আছে"।

"দ্যাখ , আমি ছিলাম না তখন তাই দেখতে পেয়েছিলি"।

"আর সেবার যখন নবরুপা অপেরা এসেছিল সেবার  তোরা গেলি যাত্রা দেখতে। জ্বরের জন্যে আমি আর মা ছিলাম বাড়িতে ।সেদিন জানিস আমার জামা জানলা দিয়ে আকসি দিয়ে টানছিল জানলা দিয়ে"।

"কে?"

"চোর।"

ছোট কা  অধৈর্য্য হয়ে বললে " বৌদির সাথে কি করেছিলি? সময় তো চলে যাচ্ছে। ওরা চলে আসবে মনে আছে? ওরা কিন্তু তোকে জেলের ঘানি টানিয়ে দিতে পারে"।

বড় কাকা বললে " ইদানিং  মাঝে মাঝেই নিশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে। রাত্রে ঘুম টাও কম হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে । আর ঘুম ভেঙে গেলেই খালি মনে হয়  নিচে আমি একা আজ ঠিক চোর আসবে"।

জ্যাঠা মশাই বললেন " কেন তোর এরকম মনে হয়? এসেছে নাকি?"

"না, ঘুম ভাঙলেই পাশের জানলার বাইরে ফিসফিস করে কথা শুনতে পাই। কেউ যেন প্ল্যান করছে । ঘুম না ভাঙলে কোন অসুবিধা নেই। নো চোর, নো ভুত। এই জন্যেই এই দেখো" বলে খাটের তলা থেকে বার করে একটা এক ফুটের একটা কাপড়ে জড়ানো লাঠি।

"এটা কি? এক ফুটিয়া দিয়ে কি হবে? কী করিস এটা দিয়ে? "

বড় কাকা বললে" খাটের পাশে এটা নিয়ে শুলে  ঘুম টা গভীর হয়"।

"এ্যা? এটা কি ঘুমের ওষুধ? জ্যাঠা মশাই বলেনন " তোর তো মাথা টা দেখানো দরকার। যাইহোক তাড়া আছে  বলে যা"।

ছোট কা বললে " তাহলে কাপড় জড়িয়েছিস কেন? কুশন ইফেক্ট? না ওর শীত করে মাটিতে শুলে?"

বড় কাকা  এবার হেসে ফেললে  বললে " আমি কোন প্রমাণ রাখতে রাজি নই।"

জ্যাঠামশাই হুঙ্কার দিলেন " প্রমাণ? কিসের প্রমাণ? এটাকি কোনো খুনের গল্প হচ্ছে নাকি? তবে প্রমাণ যদি বলিস তাহলে আমার সেই জাম্বিয়ার সেই খুনের ঘটনা বলতে হয়।"

ব্যস। ছোটকা  শঙ্কিত হয়ে বলে উঠলে " ওরা কিন্তু এসে পড়বে দাদা। আগে ব্যাপারটা জানা দরকার না?"

জ্যাঠা মশাই ঈষৎ মনক্ষুন্ন হয়ে বললেন  " হ্যা, সেতো বটেই। বল তারপর কি হল? লাঠি অবধি এসেছিলি।

"নিশ্বাসের কষ্টের জন্যে আজকাল ঘুম আসতে দেরি হচ্ছে ।রাতবিরেতে ঘুম ভেঙে গেলে ব্যস, এরপর অসস্তি, এপাশ ওপাশ তারপর আবার নিশ্বাসের অসুবিধায় উঠে বালিস কাত করে শোয়া।"

"সেতো বুঝলাম , তারপর?"

"এখন মুশকিল হচ্ছে রাত্রে ঘুম ভেঙে গেলে ই মাঝে মাঝে ফিসফাস কথা শুনি জানলার পাশে"।

ছোট কা বললে" আরে পাশে তো মাটির রাস্তা পুনুদের বাড়ি যাওয়ার জন্যে। ওদের কেউ হবে, ওদের কেউ কথা বললে বাইরে তো শোনা যাবেই"।

"না না, তাহলে ফিসফিস কেন হবে।ওরা ঠিক চোর, বাইরে দাড়িয়ে প্ল্যান করছে। দুদিন এরকম আমি তোর কাকিমা কে শুনিয়েছি"।

"সেকি? কাকিমা তো ওপরের তলায়"।

বড় কাকা মাথা নাড়ল, "ওই তো কাকিমা মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় আমি ঘুমাচ্ছি কিনা। নিশ্বাসের অসুবিধা বাড়ল কিনা"।

"তারপর?"

"আমার মাথার সামনে বাইরে যাবার দরজা।রোজ দরজা ,সামনের গ্রিলের দরজা দেখে শুই, খাটের তলা ও দেখে নেই। কিন্তু জানো, শুয়ে আছি, শুয়ে আছি , ঘুম প্রায় চলে এসেছে এমন সময় মনেহল দরজা টা বন্ধ করতে ভুলে যায়নি তো? আবার উঠে দেখি, তারপর শুই। কিন্তু সেদিন এক কান্ড হল"।

জ্যাঠা মশাই এর আর তোর সইছে না ।বললে " আসল ঘটনায় আয়, কুইক।"

হঠাৎ রাত্রে ঘুম টা ভেঙে গেল অস্বস্তি তে। মশারির বাইরে দরজার কাছে দেখি একটা ছায়া মূর্তি"।

"কেন সেদিন দরজা বন্ধ হয়নি?"

"কী জানি মনে নেই।কিন্তু জানো তো আমি ভয় পাই নি। ঠাণ্ডা মাথায় একটু সরে গিয়ে মশারীর পাশ দিয়ে হাত নামিয়ে রড টা খুঁজছি। এদিক ওদিক করে পেয়ে আসতে আসতে তুলে ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে আছি। চোখ অর্ধেক বুজে। এরপর দেখি ছায়া মূর্তি একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। যেই পায়ের কাছে এসে গেছে ব্যস হুস করে মশারী সরিয়ে রড নিয়ে দাড়িয়ে পড়েছি"।

"তারপর?"

"জানি একবারই সুযোগ পাবো।কোনো সুযোগ দেইনি তাকে। সোজা রডটা দিয়ে পিঠে প্রাণপণ এক ঘা।

জ্যাঠা মশাই ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন " দুর বাবা, কি আলতু ফালতু চোরের গল্প বলছিস। সেজ বৌমার সাথে কি হল সেটা বল।"

বড় কাকার মুখটা কেমন ঝুলে গেল। এত করুন  অপরাধী মুখ কখনও  দেখিনি। বললে" মারতেই   তুমুল চিৎকার তোমার সেজ বৌমার।

"এ্যাঁ, কি বলছিস? অনিমা কোথা থেকে এল?" "ঠিক বলছিস? কেন এসেছিল সেজ বৌমা ওখানে?"

আফসোসের শেষ নেই ।বড় কাকা মিউ মিউ করে বললে " ও রাত্রে উঠে বাথরুমে গেছিল আর তখন মনে হয়েছিল আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা সেটা দেখে যাবে।"

ছোট কা মুখ গম্ভীর করে বললে" তুমি ওই লোহার রড দিয়ে বৌদি কে মেরেছ? চোর আর বৌদি এক হয়ে গেল? হায়, হায়। ভগবান। তুমি এটা পারলে করতে?"

কাঁচুমাচু হয়ে বড় কাকা বললে" কি করব বল? চোখে চশমা নেই, ঘর অন্ধকার, তার ওপর চোর এই আসে এই আসে অবস্থা ।আমার তখন কি তাল জ্ঞান আছে? বড্ড ভুল হয়ে  "

একদম সরল স্বীকারোক্তি।

বাবা এই অবস্থায় ও আর গম্ভীর থাকতে পারলে না। মুচকি হেসে বললে " অনিমা যদি বউ পেটানোর কেস দেয়।তাহলে কিন্তু তোকে জেলের হাত থেকে বাঁচানো মুশকিল হবে। তুই আলো জ্বেলে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেছিলি?"

"বলব কখন ? ওরে বাবারে, মেরে ফেলল রে, ।সে এমন কান্না জুড়ে দিল যে আমি ভ্যবাচাকা খেয়ে গেলাম। এমন উথাল পাতাল  ব্যথা হচ্ছে যে কিছু বলতেই পারলাম না । ওর চোখ মুখ দেখে মনে হল আমি বোধ হয় খুন করতেই গেছি ওকে।"

জ্যাঠা মশাই বেশ গম্ভীর হয়ে বাবা কে বললেন " মেজ,ছোট কে নিয়ে এখুনি চল সেজ  বৌমার বাড়ি। এটা যে ইচ্ছাকৃত ফাউল নয় সেটা তো বুঝিয়ে বলতে হবে। ওতো চোর ভেবে ব্যাপারটা করে ফেলেছে । বাবা আমতা  আমতা করে বললে " বউ কে চোর ভাবা ব্যাপারটাও কি ঠিক হল? জ্যাঠা মশাই যথা সম্ভব হাসি চেপে  বললেন " তোরা কিছু বলিস না ,আমিই কথা বলব ।তাড়াতাড়ি জামা প্যান্ট পড়"।

তিনজনে হন্তদন্ত করে বেড়িয়ে গেল।  দেখলাম আপাতত খেলা শেষ। এখন বেড়িয়ে গেলেই হয়। দুপুর হয়ে গেল  বড় কাকা খালি ঘর আর বার করছে।কেউ ফিরছে না দেখে মা বাবা কে ফোন করলে। দেখলাম কথা বলতে বলতে মার মুখ নির্মল হাসিতে ভরে গেছে। শুধু শোনা গেল " আমরা তাহলে খেয়ে নিচ্ছি"

ফোন রাখার পর বড় কাকা উদ্বিগ্ন হয়ে মা কে জিজ্ঞাসা করলে "  মেজবৌদি কি হল? ওরা কি পুলিশে যাবে?

মা প্রথমটা না শুনে  উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছিল। বড় কাকা  উদ্বিগ্ন মুখেভআবার বললে " কি হল বৌদি? ওরা যে আসছে না । কী হবে? পুলিশ আসবে বাড়িতে ?

মা  হাসতে হাসতে  বললে " তুমি, ছোট ঠাকুর পো, পিকু, আলো খেয়ে নাও।ওরা সবাই খেয়েদেয়ে আসবে।অনিমার বাবা ছাড়ছে না। আসবে তোমার বউ কে নিয়ে"। 

মুখে আলো উদ্ভাসিত হয় বড় কাকার " যাক, তাহলে জেলে যেতে হচ্ছে এইবার , কি বল?মা বললে " দাদা তার সেজ ভাইয়ের চোরের আর ভূতের ভয়টা খুলে বলেছেন।কাকিমার বাবা খুব হেসেছেন ।ওনারা বুঝেছেন। খুব জোর হাসাহাসি হয়েছে ওখানে"।

স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বড় কাকা বললে " অনিমা কি বলল?"

"অনিমা বলেছে নীচে শুলেই তোমাদের চোর আসছে,আসছে হচ্ছে তাই আর নীচে শুতে হবে না।"


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024