উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -20




সাত 


শ্যামলীদি ও আমি ময়নাকে দেখাশুনা করে বাড়ী ফিরছি । শ্যামলীদি গুম হয়ে বসে আছে । আমিও ট্যাক্সির জানালা পথে তাকিয়ে শ্যামলীদির ময়নার প্রতি স্নেহ ভালোবাসার কথা ভাবছি । দেখেছি ময়নাকে কাছে পেয়ে শ্যামলীদি গভীর ভালোবসায় তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে , যেন তারও মধ্যে মাতৃত্ব উদ্বেল হয়ে উঠেছে । সেই সময় আমার মনে হয়েছিল শ্যামলীদি যেন তার নিরুদিষ্টা মেয়েকে ফিরে পেয়েছে । মনে মনে কি যেন বিড় বিড় করে বলার সময় এই ফুটফুটে মেয়েটির মা হবার অধিকার চেয়েছিলো । এই রূপ কথা চিন্তা করার পর যেন বাহ্যজ্ঞান লোপ পেয়েছিলো ।

 ওর অবস্থা প্রত্যক্ষ করে এক সময় শ্যামলীদিকে বলে উঠলাম , এই শ্বাসরূদ্ধকর বিষাক্ত পরিবেশের মধ্যে থেকে কি কোন দিন মুক্তি পাবো না শ্যামলীদি ?

 না । গম্ভীর গলায় বলল শ্যামলীদি । যদিও কদাচিৎ পেয়ে থাকিস , এই মেকানিক্যাল রং করা সভ্য সমাজ আমাদের মতো পতিতাদের নারীত্বের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবে না , নোনা ধরা দেওয়ালের মতো আমাদের জীবন ধীরে ধীরে এইভাবে ধসে যাবে । এই ড্রাইভার ট্যাক্সি রূকো ?

 ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে যেতে শ্যামলীদি বলল , পদ্মা দেখতো , তোর রন্টুদাকে মনে হচ্ছে না? 

রন্টু নামটা শুনতেই শরীর যেন ছ্যাঁক করে উঠল । বিস্ময় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ও তো রন্টুদা । 

শোন্ পদ্মা , তুই বাড়ী যা , আমি একটু পরে যাচ্ছি । আমার হিতৈষী বন্ধুকে যখন অনেকদিন পর দেখা পেয়েছি , কোথায় থাকে কি করে একটু খোঁজ নেওয়া দরকার । শ্যামলীদিকে একা যেতে বাধা দিলাম । সে আমার বাধা না শুনে রন্টুকে অনুসরণ করে চলল । আমি নিরুপায় হয়ে বাড়ি মুখে রওনা হলাম । 

শ্যামলীদি যখন বাড়ী ফিরলো , অনেক বেলা গড়িয়ে গেছে । সূৰ্য্য তখন মাথার উপরে । তার শিমূল ফুলের মতো রাঙ্গা মুখ দেখে বুঝতে পারলাম নিশ্চয় কোন কাণ্ড ঘটেছে নইলে মুখটা এতোখানি রাঙা হয়ে উঠবে কেন ।

 শ্যামলীদি একরকম শক্ত বাহু দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল , এবার আমি মরীয়া হলাম পদ্মা । আমার উপকারী বন্ধুর ঠিকানা দেখে এলাম । আর তার রেহাই নেই । আজ কালের মধ্যে শিবজীদাকে খবর দিতে হবে । বিলম্ব করা চলবে না নইলে শিকার হাত ছাড়া হবে । ওর কথা শুনে কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর ঘাড় নাড়লাম । শ্যামলীদি আমার মত পেয়ে হাসি খুশি মনে ভেতরে প্রবেশ করল ।  

সেদিন সন্ধ্যায় শিবাজীদার আড্ডায় পৌঁছলাম । চারদিকে জমাট অন্ধকার ঘনীভূত হয়েছে । তারই বুক চিরে এগিয় চললাম শিবাজীদার আড্ডা বের করতে । বেগ পেতে হল না আড্ডায় পৌঁছতে । দুজন ষণ্ডা মার্কা লোক আমাদের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল , আমরা কাকে চাইছি ?

 শ্যামলীদি বলল , শিবাজীদার কথা । ওরা শিবাজীদার কথা শুনে আমাদেরকে তার নিকট হাজির করল । বেশ সুন্দর ঘরখানি । মনে হল ঘরটা যেন একটা ছোট্ট সিনেমা হল । সারি সারি চেয়ার পাতা । নানা রকম আলোতে এনে দিয়ছে ঘরের সৌন্দর্যকে । আমরা উভয়েই তাকিয়ে দেখছিলাম । শিবাজীদার কথায় ফিরে পেলাম পূর্বের অবস্থাকে । 

তিনি বলললেন , বোল কি জরুরতে আ গয়ে ?

 শ্যামলীদি সংক্ষেপে রন্টুর নিয়ে কথা বলল । কোথায় গেলে পাওয়া যাবে তার ঠিকানা দিলো ।

শিবাজীদা শ্যামলীদির কথা শুনে চোখ দুটোকে বড় করে বসলেন - চিন্তা মত্ কর বহিন , কব তোদের পাশ হাজির করতে হোবে ? 

আমাদের কাছে হাজির করতে হবে না দাদা । তোমাদের আড্ডাতে ওকে এনে রাখবে ।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024