উপন্যাস - তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন || সুদীপ ঘোষাল || Tantrik Pisemosay oo Amra by Sudip Ghoshal || Fiction - Tantrik Pisemosay oo Amra Dujon Part -6


 



।১১

পিসেমশাই বলছেন, মনোজের আত্মার মনে পড়ছে  মাষ্টারমশাই দীনেশবাবু সাদাসিধা মনের মানুষ। একটা সাধারণ প্যান্ট জামা পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ট্রেনে তার নিত্য যাওয়া আসা। ট্রেনে যাওয়ার সময় অনেক বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ হয়। তারা হাসি মস্করায় ব্যস্ত থাকে। দীনেশবাবু নিজে জানালার এক কোণে বই নিয়ে বসে পড়েন। তিনি নিজেও অনেক বই লিখেছেন। কলকাতার নামীদামী প্রকাশনা থেকে তাঁর লেখা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাতে তার কোনো অহংকার নেই। ছাত্র ছাত্রীদের কি করে ভালভাবে প্রকৃত মানুষের মত মানুষ করা যায়, এই নিয়ে তাঁর চিন্তা। শিক্ষকতা শুধু পেশা নয় তার সঙ্গে মিশে থাকে বাড়তি দায়ীত্ববোধ। তিনি এইকথা ভাবেন মনে মনে। কি করে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করা যায়, এই নিয়েই দিনরাত চিন্তাভাবনা করেন।  স্কুলে পৌঁছান। ঘন্টা পড়ে প্রার্থনা সভার। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পরে শুরু হয় ক্লাস। ক্লাসে গিয়ে তিনি কোনোদিন চেয়ারে বসেন না। ছাত্রদের কাছে গিয়ে সমস্যার সমাধান করেন। পড়াশোনার কাজে সাহায্য করেন। স্টাফরুমে বসেন। তারপর কুশল বিনিময়ের পরে তিনি চলে যান ক্লাসে। কোন ক্লাস ফাঁকা আছে রুটিন দেখলেই জানতে পারেন। কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলেই তাঁর ক্লাসে চলে যান নিয়মিত। টিফিনে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটান। সদাহাস্যময় দীনেশবাবু নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন সারাদিন। স্কুল থেকে ফেরার পরে নিজের লেখা নিয়ে বসেন। কোনোদিন ভাষাসদনে যান। সেখানে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটান। তারপর বাজার সেরে বাড়িতে ঢোকেন।আমার মা বলেন, ভাল লোকের কোন পারফিউম লাগে না। তাদের গা থেকে আপনা আপনি চন্দনের সুগন্ধ পাওয়া যায়। মা আরও বলেন, ভরা কলসি টগবগ করে না।জ্ঞানী লোক কথা কম বলেন। তাঁরা প্রচারবিমুখ হন। দীনেশবাবু এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কথা কম বলেন কিন্তু কর্মি লোক। লোকের ভাল ছাড়া মন্দ ভাবেন না কোনোদিন। তাঁর স্বভাব দেখলেই সকলের ভাল লেগে যায়। দীনুবাবুও এই ধরণের লোক। দীনেশবাবুকে মা আদর করে দীনুবাবু বলেন। তিনি সকালে নিমকাঠির দাঁতন ব্যবহার করেন। জনশ্রুতি আছে, বারোবছর নিমকাঠির ব্যবহারে মুখে চন্দনকাঠের সুবাস হয়। কথা বললেই নাকি চন্দনের সুবাস বেরোয়। শুনে অনেকে নিমকাঠির ব্যবহার করেন। কিন্তু মা বলতেন, শুধু নিমকাঠির ব্যবহার নয়, তার সঙ্গে মানুষকে ভালবাসতে হয়। কারও অমঙ্গল কামনা করতে নেই। মিথ্যা কথা বলতে নেই। তাহলেই মানুষের মুখে সুগন্ধ হয়। এমনকি দেহের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। মানুষ তো দেবতার আর এক রূপ। দীনেশবাবু ছুটির দিনগুলোতে ফুটপাতের অসহায় লোকগুলোর জন্য হোটেল থেক ভাত তরকারি কিনে, প্যাকেটে ভরে তাদের হাতে  দেন। তাঁর ইচ্ছে আছে গরীব লোকগুলোকে প্রত্যেকদিন একমুঠো করে  মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার।তিনি সংসারী লোক। তাই এগোতে হবে ধীরে ধীরে।তিনি জানেন,  এসব কাজে সবদিক চিন্তাভাবনা করে এগোতে হয়। তিনি ভাবেন, সামাজিক, আর্থিক, আইনগত সমস্ত  দিক দেখে তবেই কাজে নামা প্রয়োজন। আজ সকাল সকাল দীনেশবাবু ছেলেকে ডেকে তুললেন ঘুম থেকে। ছেলেকে বললেন, পড়তে বোসো বাবু। সকালে পড়া মুখস্থ হয় ভাল। ছেলে বলে, বাবা তোমার মুখ থেকে চন্দনের সুন্দর গন্ধ পাচ্ছি । দীনেশবাবু বলেন, ও তাই নাকি?  তোমার মুখেও তে সুন্দর গন্ধ।রাস্তায়, স্কুলে যেখানেই দীনেশবাবু যাচ্ছেন সকলের মুখেই এক কথা,দীনুবাবু আর একটু কথা বলুন। আপনার মুখে চন্দনের সুবাস। বসুন বসুন। সকলের আদরে তিনি  নিজেও যেন চন্দনের সুবাস অনুভব করছেন। আদরের আতিশয্যে তিনি খুশি। একটি শিশু দৌড়ে তাঁর কাছে এল চন্দনের সুবাস নিয়ে। দীনুবাবু শিশুটির  কপালে একটা চন্দন সুবাসের চুমু এঁকে দিলেন সস্নেহে.... বাসস্টপেজেই  অতনুর বাড়ি। রাত বাড়লে বাসস্টপেজ একটা আমোদের জায়গা হয়ে যায়। অন্ধকারে শুয়ে থাকা কিশোরী থেকে বুড়ি ভিখারির পাশে শুয়ে পড়ে মাতালের দল। তারা তো জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খায় না। শুধু একগ্রাস ভাত জোগাড় করতেই তাদের দিন কেটে যায়। তারপর রাতচড়াদের বাজার। কেউ ওদের মালিক নয়। বাজারি মাল দরিয়া মে ঢাল। ঠিক এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর  আলো দেখেছিল অতনু। কে তার বাপ সে জানে না। আর জন্মদাত্রী ফেলে দিয়েছিল বাসের ছাদে। সেখানে শকুনের মত ওৎ পেতে থাকে হায়েনার মত ভয়ংকর  অমানুষের দল। তারা অনাথ ছেলেমেয়েদের নিয়ে বড় করে। বড় হলে চুরি বা ভিক্ষা করে তারা যে টাকা আয় করে তার বৃহৎ অংশ নিয়ে নেয় হায়েনার দল। না খেতে পাওয়ার প্রবাহ চলতেই থাকে। এর থেকে মুক্তি পায় না অনাথ শিশুরা।অতনু এখন বেশ স্মার্ট, বুদ্ধিমান। সে নিজের চেষ্টায় মেকানিকের কাজ শিখে নিয়েছে। মাথা উঁচু করে চলা ছেলেদের সকলেই সমীহ করে। অতনু চুরি করে না, ভিক্ষাও করে না। সে বলে, হাত পা আছে। খেটে খাব। আর তোদের যা পাওনা মিটিয়ে দেব। সে বলে হায়েনার দলকে, বেশি ঘাঁটালে আমাকে, দেব শালা খালাস করে। আমার বাঁধন শক্ত বে। ওসব মাস্তানী তোর পকেটে রেখে দে।যতই হোক শয়তানদের সাহস কিন্তু বেশি হয় না। অতনু একটা দল করেছে ছেলে মেয়েদের। সে বলে, শালা, কোন শালা রাতে খারাপ কাজ করতে এলে একসঙ্গে আ্যটাক করব। ওদের দৌড় বেশিদূর নয়। অতনু থাকতে আর অনাথের দল বাড়াতে দেব না বাসস্টপে। এই এলাকা এখন নতুন প্রজন্মের। ওরা আমাদের বড় করেছে তাই ওদের পাওনাটুকু দেব।হায়েনার দল সাবধান হয়ে গেছে। এখন আর অনাথ বাচ্চা কম পায় এইস্থানে। অতনুর বিরুদ্ধে কাজ করে ওরা অনেকবার ঠকেছে।অতনুর দলবল দেখে ওরা অন্য জায়গায় ডেরা বাঁধে। অতনু সকলকে নিজের পরিবারের সদস্যের মত দেখে। এই পরিবারের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সুনীতা। সে পাশের পাড়ায় থাকে। চিনু তার আদর্শ। কিন্তু চিনুর বংশ ভালো।   সে সমাজসেবী। চিনু দেখেছে মারামারি বা লড়াই করে জেতার থেকে ভালবাসার জোর বেশি। ভালোবেসে কথা বললে শয়তানও বশ হয়ে যায়। এখন সে একদম আনন্দে থাকে। এলাকার লোকজন তাকে ভালবাসে।সুনীতা ভাবে, চিনুদা এত বড় মন  পেল কোথা থেকে।সকলের উপকারে ছুটে যায় চিনু। হাসপাতাল,শ্মশান যেখানে যার প্রয়োজন  প্রথমেই ডাকে তাকে। সুনীতা ভাবে, সে কি চিনুর প্রেমে পড়েছে। সবসময় চিনুকে দেখতে পায় খাতায়, জলে, দেওয়ালে, আয়নায়। তবু চিনুকে বলতে সাহস হয় না। যদি রেগে যায়। যা ব্যক্তিত্ব ছেলেটার, শ্রদ্ধা হয়। সুনীতা সবসময় এখন এইসব ভাবে।চিনু বলে তার বন্ধুকে, আমি তো বোকা। ভদ্র সমাজে আমার স্থান হবে না। আমি কি চিরদিন বোকা থেকে যাব।  নীতা  গ্রামের বাড়ি যাবে। সে পরিবারের সঙ্গে বাসস্টপে এসেছে ব্যাগপত্তর নিয়ে। সুনীতাকে দেখে চিনু কাছে এল। মা বললেন, সুনীতার মুখে তোমার কথা শুনেছি। আজকে তোমাকে ছাড়ছি না। আমাদের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি পুজো দেখতে চল। চিনু বলল,আমি পুজোবাড়িতে আমার স্থান হবে?  সুনীতার মা বললেন, কে বললো তুমি বোকা। তুমি আমাদের পরিবারের একজন হলে। আমরা আছি, চল। অতনু তার সঙ্গিদের বললো, আমি পুজোয় গ্রামে যাচ্ছি। তোরা সাবধানে থাকিস।গ্রামের পুজোবাড়িতে আরতির বাজনা বাজছে। ধুনোর গন্ধে পুজোবাড়ি মাতোয়ারা। আর একটু পরেই ধুনুচি নাচ শুরু হবে।সুনীতা ধুনুচি নাচ নাচছে। ধুনোর গন্ধে চিনু খুশি। একটা শিহরণ তার শিরায় শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। সুনীতার চোখ তার দিকে। সুনীতার মা চিনুকে হাত নেড়ে হাসিমুখে ডাকছেন। সুনীতার মায়ের মুখটা ঠিক দুর্গা প্রতিমার মত। তার চোখের দিকে তাকিয়ে অতনু এই প্রথম বলে উঠলো, মা, মা গো...।চিনুু বুুুড়ো হল। 

১২


চিনু মরে গেল তারপর সে দেহের কাছেই তার আত্মা ঘুরঘুর করতে লাগলো মনে প্রথমে দেও ছাড়তে চায়না তা তারপর ধীরে ধীরে যখন বুঝতে পারে নিজের শরীর হালকা হয়ে গেছে তখন ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসে তখন বুঝতে পারে সে শরীর ছাড়া। চিনুর অবস্থাও মনের মত হয়েছে মানুষ যখন ট্রেনে কাটা পড়ল সে বুঝতে পারেনি সে মনে করছে বেঁচে আছে কিন্তু তার আত্মা তখন বেরিয়ে এসেছে দেহকে দেখে ভাবছি দেহটা ওখানে পড়ে কেন তাহলে নিশ্চয়ই আমার মরন হয়েছে তাই আয়েশা আক্তার দেখছেন চিনুর শরীর।তিনি ডেথ সার্টিফিকেট দিলেন। কেউ কেউ কাঁদল।

এইগুলো আমার চিন্তা করছে মায়া ছাড়তে পারছেনা সে অনেকক্ষণ ঘুরঘুর করছিল দেহের আশেপাশে ট্রেন তার প্রতি বারবার চলে গেছিল কিন্তু আর কিছু হয়নি একবারই হয়েছে আত্মার মরন হয় না আর তাই সে বেঁচে আছে এবং অপেক্ষা করছে আজব ডাক্তার এখন কিছুক্ষণ অন্তত কয়েক ঘন্টা থাকবে তারপর হয়তো আসবে।এই পর্যন্ত অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হয়ে অনেকেই ফিরে আসেন। নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স-লব্ধ মানুষের একটা বড় অংশ এমন সাক্ষ্য বহন করে। তাঁরা অনেকেই জানিয়েছেন, তৃতীয় স্তরে কোথাও একটা চয়েস রাখা হয়। চৈতন্য মহাচৈতন্যে লীন হতে পারে আবার ইচ্ছে করলে ফিরে আসতেও পারে। জীবন অথবা মৃত্যু এই ‘চয়েস’-এর উপরেই নির্ভর করে। যিনি ফিরে আসতে চান, তিনি তৎক্ষণাৎ ফিরে আসেন। যিনি আসতে চান না, তিনি ‘মৃত্যু’ প্রাপ্ত হন। এই অবস্থাকে অনেকে স্বপ্নে বা আবিষ্ট অবস্থাতেও প্রত্যক্ষ করেছেন। ধ্যানযোগেও এই যাত্রা করেছেন অনেকেই। তাঁদের প্রত্যেকের দেওয়া বিবরণেই কিন্তু এই আখ্যানটি কমন।

আমাদের সবার চৈতন্যই মহাচৈতন্যের অংশ। কিন্তু দেহ আমাদের সেই বোধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তথাকথিত মৃত্যুর পরে সেই দূরত্ব লুপ্ত হয়। শুরু হয় আমাদের ‘নিজস্ব’ যাত্রা।     

 


অনেকে বলছে নানা বয়স হয়েছে ঠিকই গেছে কষ্ট পেত না হলে এই বয়সে মরে যায় ভালো গো। তা না হলে খুব কষ্ট হতো আর কান্নাকাটি করো না। মন থেকে থেকে যদি বিচিত্র আওয়াজ শোনেন ফাঁকা বাড়িতে, তবে নিশ্চিত হন, সেটা ছুঁচোর কীর্তি বা বিড়ালের ডাক কি না। তাতে যদি সন্দেহ না-মেটে, তবে সাবধান। আর একটা ব্যাপারেও তিনি খেয়াল রাখতে বলেছেন, যদি হঠাৎ হঠাৎ বাড়ির ভিতরে শীত বোধ হয় গরমকালে, তা হলে সমস্যা রয়েছে। তবে এটাও ঠিক, সামান্য ঠান্ডা অনুভব করা মানেই তেনারা এসে গিয়েছেন, তা একেবারেই ঠি নয়।হঠাৎ কোনও বিশেষ গন্ধ পাওয়া। গন্ধপিশাচ হতে পারে।  মতে, । বিশেষত, আপনার কোনও অনুপস্থিত প্রিয়জনের সুবাস যদি ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে ধাক্কা মারে, তা হলে সাবধান। গন্ধটা খুবই সন্দেহজনক বলে জানবেন। তান্ত্রিক  এবার বললেন একটি নতুন গল্প। এক নরখাদকের কাহিনী। সারা পৃথিবী জুড়েই নরখাদকদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের পাওয়া গেছে ফিজি, আমাজন অববাহিকা, আফ্রিকার কঙ্গোতে। এমন কি নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মিলেছে নরখাদকের সন্ধান। ইউরোপের হল্যান্ডেও সন্ধান পাওয়া গেছে।শোনা যায় উগান্ডার স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক ইদি আমিনও নাকি নরখাদক ছিলেন।প্রত্যেকটি মানুষকে খাওয়ার পর সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রে তার শিকারের স্মৃতিতে একটি করে পাথর সাজিয়ে রাখতো। তারপর খেয়ালখুশি মত গুনতে বসত, এ পর্যন্ত কটা মানুষ খেল সে। সে চাইত তার মৃত্যুর পর তাকে যেন এই পাথরগুলির পাশে কবর দেওয়া হয়। হয়েছিলও তাই। মৃত্যুর পর উদ্রে উদ্রেকে উত্তর ভিটিলেভুর এলাকার সেই পাথরের স্তূপের মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।উদ্রে উদ্রের উদরে যাওয়া সমস্ত হতভাগ্যই ছিল, ফিজির আদিবাসী গোষ্ঠী সংঘর্ষে হেরে যাওয়া যুদ্ধবন্দী। এছাড়া, উদ্রে উদ্রের দলে থাকা রাকিরাকির অনান্য আদিবাসী সর্দাররা তাদের জীবিত বন্দী ও মৃত শত্রুর দেহ উদ্রে উদ্রের হাতে তুলে দিত। মৃতদেহগুলির সৎকারের জন্য নয়, স্রেফ খাওয়ার জন্য।লিথ সাহেবকে উদ্রে উদ্রের ছেলে রাভাতু বলেছিল,  তার বাবা মানুষের মাংস ছাড়া আর কিছু খেত না। এবং  তার নরখাদক বাবা হতভাগ্য মানুষদের পুরো শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আগুনে ঝলসে খেত। একেবারে একটা দেহের সব মাংস খেতে না পারলে অর্ধভুক্ত দেহ্টি একটা বাক্সে তুলে রাখত। কিন্তু পরে পুরোটা খেয়ে নিত।সেই মৃত মানুুষের আত্মাগুলো এখন ভূত হয়ে ঘুরে বেড়ায় তারপর ঘুরতে ঘুরতে একদিন সেই নরখাদকের গলা টিপে ধরে এবং সেই আপনাদের হাতেই তার মৃত্যু হয় তাকে পাওয়া যায় ছিন্নভিন্ন একদম টুকরো-টুকরো অবস্থায় তার হাত-পা সব ছিন্নবিচ্ছিন্ন আঙুলগুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এমনই পরিণতি তার একদম সত্যি ঘটনা বাবুরা...পাহাড়ের উপরে বসে আমরা এই সব কথাগুলো শুনছিলাম তারপর সন্ধ্যে হয়ে গেলে আমরা ফিরে এলাম পিসেমশায় বন্ধুর বাড়িতে তারপর খাওয়া-দাওয়া করে ঠিক এগারোটার সময় শুয়ে পড়লাম বন্ধু আমাদের একটা আলাদা ঘর দিয়েছিল তিনজনকে পেশায় ছিলেন আমরা মেঝেতে বসে ছিলাম তারপর ঠিক বারোটার সময় আমরা দেখলাম আমাদের মশারির ভেতরে কত মশা। অনেক মশা জমা হয়েছে। পিসেমশায় বলছেন এত মশা কেনরে? তখন বললাম যে মশাগুলো মারা উচিত কমে যাবে।পিসেমশাই বললেন দাঁড়া তাড়াহুড়ো করিস না। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে তারপর দেখলাম তিনি সাধনায় বসলেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মশা কমে গেল।পিসেমশাই কিন্তু সাধনা ভেঙে উঠলেন না তিনি মারণ, উচাটন  শুরু করলেন।এক ঘন্টার পরে পিছনের ঘর থেকে বন্ধু চিৎকার করে বললেন, কেন রে এত রক্ত কেন? ঘরের মধ্যে দেয়ালে ট উপর দিয়ে রক্ত নেমে আসছে নিচে।পিসেমশাই চুপ করে থাকলেন কোন উত্তর দিলেন না পরদিন সকালে উঠে আমাদের নিয়ে ব্যাগ নিয়ে একদম বাইরে বেরিয়ে এলেন তখন পিছনে বন্ধু বলছেন এই নে  জল খেয়ে যাবি । পিসেমশাই বন্ধুকে বললেন খুব সাবধান আবার যদি আমি পাঁচ মিনিট দাঁড়ায়, তোর কিন্তু জীবনের সংশয় হবে।তারপর পিসেমাশায়ের বন্ধুটি   আর কোন কথা বলল না।আমরা সকলে বাইরে বেরিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।রতন বললো,  বাবা রে, এমন জায়গায় ঢুকেছিলাম কি করে বেরিয়ে আসবো চিন্তা করছিলাম।পিসেমশায় বললেন ওকে আর কোন দিন ঘুরে এইসব লোকের ক্ষতি করতে হবে না। তার কারণ তিনদিনের মধ্যেই পঙ্গু হয়ে যাবে।আমরা ওদের গ্রামের একটা লোকের মুখে অনেকদিন পর শুনেছিলাম  লোকটি নাকি পঙ্গু হয়ে বসে আছে। পিসেমশায় বললেন, ইয়ার্কিকা কথা নেহি,সিরিয়াস ব্যাপার হ্যায় তন্ত্র জগতমে।তিনি বাংলা হিন্দী মিশিয়ে এক জগাখিচুড়ী ভাষা তৈরি করেন আমাদের হাসাবার জন্য। রতন কাছেই ছিলো। পিসেমশাই বললেন, কি রতন কিছু বলবে? রতন বললো, আমি বোকা। অত কিছু বুঝি না। কিন্তু আপনার সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে। কত কিছু শেখা যায়।পিসেমশায় বললেন, বিদুরের নাম শুনেছো?  আমি বললাম, হ্যাঁ উনি তো পন্ডিত ছিলেন। ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। 


১৩


রতন বললো, বিদুর মহাভারত মহাকাব্যে ধৃতরাষ্ট্রের ভাই। আসলে তিনি ছিলেন দাসিপুত্র। পিসেমশাই বললেন, হ্যাঁ আরও অনেক ঘটনা আছে। তবে সে প্রসঙ্গে না গিয়ে তাঁর বাণীগুলো বলি। কিছু শিখতে পারবে। তিনি বলতেন, যার মধ্যে অনেক জ্ঞান আছে সে জ্ঞানী। আর জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে বুদ্ধিমান। আর যারা তার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন না তাঁরা বোকা। যে মানুষ সফল সে সমস্ত নেতিবাচক ভাবনা থেকে বহুদূরে থাকে। আর জীবনের প্রথম দিন থেকে বেড়ে ওঠাই তাঁদের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে তাঁরাই বুদ্ধিমান। কিন্তু বোকা মানুষ চিনতে গেলে তার কিছু লক্ষণ রয়েছে। যাঁদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো রয়েছে তাঁরাই বোকা। ধৃতরাষ্ট্রের সৎভাই বিদুর মহাভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি বলে গেছেন বোকা মানুষের সাতটি লক্ষণ রয়েছে। এখন দেখা যাক সেগুলি কী কী১ যে ব্যক্তি সর্বদা অজান্তে আত্মঅহংকার নিয়ে বাস করেন এবং পরিশ্রম না করেই ধনী হতে চান। এ জাতীয় ব্যক্তিকে বোকা বলা হয়। যে ব্যক্তি তাঁর নিজের কাজ ছেড়ে অন্যের কর্তব্য পালন করেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁরা বোকা।  এ ছাড়া যারা সর্বদা ভুল কাজ করে চলেন তাঁদের বোকা বলা হয়।এমন ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দাবি করে এবং নিজের চেয়ে ক্ষমতাবান লোকের সঙ্গে শত্রুতা করে। সেই ব্যক্তিকে বোকা বলে মনে করা হয়।যে ব্যক্তি তার শত্রুকে বন্ধু তৈরি করে এবং তার জন্য বন্ধুদেরও ত্যাগ করেন। যাঁরা ভুল সংস্থাকে অবলম্বন করেন তাঁদেরই বোকা বলা যায়।যে ব্যক্তি নিজেকে সবোর্চ্চ দেখানোর চেষ্টা করেন তাঁদের বোকা বলা হয়। যে ব্যক্তি ভুল করে অন্যকে দোষারোপ করে এবং সর্বদা তার ভুলগুলি আড়াল করার চেষ্টা করে এমন ব্যক্তিকে মূর্খ বলা হয়। যে ব্যাক্তি নিজের বাপকে অসম্মান করে এবং অজ্ঞ লোককে প্রাধান্য দেয় তাকে বোকা বলে। রতন বললো, পিসেমশাই তন্ত্র সম্পর্কে সমগ্র জ্ঞান আপনার আছে আমরা জানি। যদি এই সমুদ্রজলের একচামচ জলের ধারণা করতে পারি তো ভালো লাগবে। আর আমাদের প্রয়োজনেও লাগতে পারে। পিসেমশাই কম্ববলের  আসনে বসে আমাদের চারদিকে গঙ্গার জল ও মন্ত্র পড়ে গন্ডি কেটে নিয়ে বললেন, যেখানে সেখানে এইসব মন্ত্র পড়তে নেই। তাই স্থানশুদ্ধি করে নিলাম। তারপর তিনি শুরু করলেন তার কাহিনী। তন্ত্র- ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু গভীর তার অন্তর্নিহিত অর্থ। তন্ত্র হল এক বৃহৎ ও অতিপ্রাচীন গুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় বিষয়। মুক্ত বিশ্বকোষে বলা আছে, তন্ত্র হিন্দুসমাজে প্রচলিত ঈশ্বর উপাসনার একটি পথবিশেষ। শিব ও মহাশক্তির উপাসনা সংক্রান্ত শাস্ত্রগুলিকেও তন্ত্র সাধনা নামে অভিহিত করা হয়। তন্ত্রশাস্ত্র অনুযায়ী, এই মহাবিশ্ব হল শিব ও মহাশক্তির দিব্যলীলা। তন্ত্রে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির বর্ণনা রয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতা ও পুনর্জন্মের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া।খ্রিস্ট্রীয় প্রথম সহস্রাব্দের প্রথম দিকে তন্ত্র সাধনার বিকাশ লাভ করে। গুপ্তযুগের শেষভাগে এই প্রথার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। মূলত বৌদ্ধধর্মের হাত ধরেই পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার লাভ করে এই তন্ত্রশাস্ত্রটি। তন্ত্র ভারতের অতিপ্রাচীন এবং গুরু পরম্পরার একটি গুপ্ত বিদ্যা। প্রাচীন ভারত থেকে বহু মূল্যবান পুঁথি চীনা পরিব্রাজকরা তাঁদের দেশে নিয়ে চলে গেছেন। এটি গুরু পরম্পরা বিদ্যা বলে প্রকৃত গুরুর খোঁজ করতে হয়। দীক্ষা ছাড়া এ শাস্ত্র সম্পর্কে সহজে কেউ কাউকে কিছু ব্যক্ত ভারতের আদি ও অকৃত্রিম তন্ত্র সাধনার জায়গা হল নীলাচল পর্বত। যা 'কামাখ্যাধাম' নামে পরিচিত। তন্ত্র এমনই একটি শাস্ত্র যার মাধ্যমে নিজেকে অনুসন্ধান করা যায়। নিজের অন্তরের ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায়।তন্ত্র শব্দটির অর্থ ব্যাপক ।


১৪


তান্ত্রিক পিসেমশাই বললেন,  সংক্ষেপে তন্ত্র হচ্ছে "সৃষ্টির পরিচালনার নিয়ম " । মহাদেব বা শিবের ডমরু থেকে তন্ত্রের উৎপত্তি । সতী বা দেবি দূর্গার দশ হাতে আছেন দশ মহাবিদ্যা । এই দশমহাবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই অনেকটা তন্তশাস্ত্র গড়ে উঠেছে । তন্ত্রের বিষয়টা অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত । সাধারনভাবে, তন্ত্র অসীম জ্ঞানের আধার । সাধক শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনা রিসার্চ করলে দেখা যায়, যা অবিদ্যাকে গ্রাস করে তাই জ্ঞান । তন্ত্র জ্ঞানচক্ষু উম্মোচন করে ।সৃষ্টির কারন বুঝতে সাহায্য করে তন্ত্র । তন্ত্র সৃষ্টি , স্থিতি ও বিনাশের পরিচালনা শক্তি । ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর এই তিন শক্তির পরিচালনা নিয়ম ব্যাক্ত করে তন্ত্র ।তন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত আছে মন্ত্র ,যন্ত্র । তন্ত্র সাধনায় সাধক সৃষ্টির রহস্য জেনে পরমানন্দ অনুভব করে । আমি বললাম, একটু বিশদে বলুন। তিনি বললেন, হ্যাঁ তোমরা এখন সাবালক। সব বলা যাবে আশা করি। তন্ত্রমতে মদ, মোহ, মাৎসর্য এই নিয়ে সংসার। নারীর ভূমিকা তন্ত্র সাধনায় অপরিসীম।বায়ুরুপ লিঙ্গকে শূণ্যরুপ যোনীতে প্রবেশ করিয়ে কুম্ভক আসনে সাধনা করতে হয় সাধককে। খুব কঠিন সাধনা। চৈতন্যময়ী প্রকৃতিকে তুষ্ঠ করতেই পূজা করা হয়; যাতে পূজারী,  ভক্তের জীবন আনন্দময়, কল্যাণময় হয়ে ওঠে। তন্ত্র হচ্ছে দর্শন বা তত্ত্ব। আর পূজা হচ্ছে পদ্ধতি। পূজার উপচার বা উপকরণ নিষাদরা তাদের নিজস্ব পরিবেশ থেকেই সংগ্রহ করেছিল। পরবর্তীকালে বাংলায় তাদের এই ধারণার (প্রকৃতি কে 'চৈতন্যময়ী' বলে মনে করে দেবীরূপে ভজনা করা) বিবর্তিত হয়েছিল। এবং এই নারীকেন্দ্রিক তান্ত্রিক ধারণাটি পল্লবিত হয়েছিল। কারণ, তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী জেনেছে, মা বলে জেনেছে, মায়ের দেবীপ্রতিমা কল্পনা করেছে; দেবী মা (প্রাকৃতি কে) কে একজন তান্ত্রিক নিষ্ঠাভরে ভজনা করতে চায়, আরাধনা করতে চায়, পূজা করতে চায়। পাশাপাশি একজন তান্ত্রিক মনে করেন, একজন ভক্ত চৈতন্যময়ী শক্তির অনুগত থাকলে চৈতন্যময়ী শক্তির কৃপায় তার অশেষ কল্যাণ সাধিত হতে পারে।রতন বললো, এই হল বিজ্ঞান এবং তন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য।



                                ক্রমশ...

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024