ছোট গল্প - কাকের প্রতিশোধ || লেখক - ইমরান খান রাজ || Short story - kaker protisodh || Written by Imran khan raj


 

কাকের প্রতিশোধ 
ইমরান খান রাজ 

এক দেশে ছিল বিশাল এক বন। বনটি এতই বড় ছিল যে, তার ভিতরে কেউ ঢুকলে আর বের হতে পারতো না। হারিয়ে যেত ! সেই বনে বাস করতো এক ভয়ঙ্কর, বিশালাকৃতির হিংস্র বাঘ৷ সেখানে একমাত্র বাঘেরই রাজত্ব চলতো৷ অন্য কোন পশুপাখি তার উপরে কথা বলতো না। সবাই বাঘকে ভয় পেতো আর বাঘের থেকে সর্বদা দৌড়ে পালাতো। যেই প্রাণীটা বাঘের সামনে পরতো, হিংস্র বাঘটি তাকেই খেয়ে ফেলতো৷ বিশালাকৃতির দেহের ক্ষুধা মেটাতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে খাবার প্রয়োজন হতো তার। 

হঠাৎ একদিন বিকেলে সেই বনে শুরু হলো এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। সেই ঝড় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, বনের প্রায় বেশিরভাগ বড় গাছগুলোই ভেঙে পরে। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সেই বনটি। ঝড়ে বহু পশুপাখির বাসস্থান নষ্ট হয়ে যায় এবং ছোট-বড় অনেক প্রাণী মারা যায়। তবে বাঘের ঘর ঝড়ে কিছুই হয় না। কারণ সে তো গুহায় থাকে। 

পরদিন সকালে বাঘের ঘুম ভাঙলে, সে খাবারের উদ্দ্যশ্যে গুহা থেকে বের হয়। তবে বের হয়ে দেখে, চারিদিকে গাছপালার স্তুপ। সব ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এসব দৃশ্য দেখে সাতপাঁচ না ভেবে বাঘটি বের হয় তার খাবার খোঁজার জন্য। খাবার খুঁজতে খুঁজতে সকাল গড়িয়ে দুপুর আর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার উপক্রম হলো। কিন্তু বাঘটি কোনো খাবারই খুঁজে পেলো না। সারাদিন হাটাহাটি করার ফলে সে এখন অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পরেছে। আর এদিকে তার ক্ষুধাও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। হাটতে হাটতে হঠাৎ তার চোখে পড়লো দুটি কাকের ছানা। গতকালের ঝড়ে বাসা ভেঙে মাটিতে পরেছিল ছানা দুটো। উড়তে না পারায় মাটিতে বসেই তাদের মাকে ডাকছিল। কাকের ছানা দুটো দেখে লোভে বাঘের যেনো জিভে জল চলে এলো। সারাদিন না খাওয়ার ফলে প্রচুর ক্ষুধার্ত হয়ে পরেছিলো সে। তাই নিজের পেটের ক্ষুধা মেটাতে বাঘটি, কাকের দুটো ছানাকেই একবারে গিলে ফেললো। খাবার খেয়ে শান্ত মনে বাঘটা চলে যায় তার গুহায়। বিশ্রাম করতে। 

এদিকে 'মা' কাকটি সেই সকাল থেকেই তার বাচ্চাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাচ্চা দুটো ছিল তার নয়নের মণি। খুব ভালোবাসতো তাদের। কোথাও কোন খোঁজ না পেয়ে অবশেষে কাকটি একটি ভাঙা গাছের ওপর বসে কাঁদতে লাগলো। পাশের আরেকটি গাছেই ঝুলে ছিল এক বানর। কাকের কান্না দেখে তার মায়া হয়। বানরটি কাকের কাছে এসে তার কান্নার কারণ জানতে চাইলে, কাকটি তার দুটো ছানা হারিয়ে যাবার সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। কাকের কথা শুনে বানর বলে, "কি বলো কাক ভাই !" ঐ দুটো ছানা তোমার ছিল ? আমি কিছুক্ষণ আগে দেখলাম, দুষ্টু বাঘটা দুটো কালো পাখির ছানাকে গিলে খেল ! তখন আমি পাশের গাছেই ছিলাম। ওপর থেকে সব দেখেছি। বানরের কথা শুনে কাক অনেক দুঃখ পেল। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, দুষ্টু বাঘ তার দুটো বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে ! তাকে অবশ্যই সাজা পেতে হবে। সেই থেকে কাক বাঘের প্রতি সর্বদা নজর রাখা শুরু করলো। বাঘ'কে শায়েস্তা করার জন্য ! 

তারপর হঠাৎ একদিন খাবারের খোঁজে বাঘ তার গুহা থেকে বের হলো। ক্ষুধার জ্বালায় সারা বন হন্যে হয়ে খাবার খুঁজতে লাগলো সে৷ কিন্তু আজও কোন খাবার খুঁজে পেলো না। তাই ক্লান্ত হয়ে, বিশ্রামের জন্য দুষ্টু বাঘটি এক বিশাল আকৃতির তালগাছের নিচে বসে পড়ল। সে এতই ক্লান্ত ছিল যে, একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়লো তালগাছের নিচে। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগালো কাক। সে তালগাছের একেবারে চূড়ায় বসে ছিল। তারপর তার ঠোঁট ও পায়ের ধারালো নখ দিয়ে বড় বড় তাল ছিড়তে শুরু করলো। আর সেই তাল অনেক উঁচু থেকে সোজা পড়তে লাগলো দুষ্টু বাঘটির মাথায়৷ এক এক করে সবগুলো তাল ছিড়ে বাঘের মাথায় ফেলে সে। গভীর ঘুমে থাকার ফলে বাঘটি দৌড়ে পালানোর সুযোগ পায় না। এদিকে বাঘের মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। একটা সময় বাঘটি ঐ তালগাছের নিচেই নিথর হয়ে পড়ে থাকে এবং অবশেষে মারা যায়৷ দুষ্টু বাঘের মৃত্যুতে, কাকটি যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। 

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024