কবি ও অকবি - দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় || Kobi oo Okobi - Darpana Gangapadhyay || Short Story || ছোটগল্প

 কবি ও অকবি

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়



হিপ্রোটিজম বোঝো ? হিপ্রোটিজম করে করে মানুষকে কিভাবে মেরে ফেলা যায় । আজ তোমাদের তারই এক কাহিনী শোনাবো ‌। বধির


 করে দেওয়া যায় অনায়াসে।


পাড়ায় জগা আর সোমেন দুই ভাই খেলা করে। হাজার বন্ধু বান্ধব, জগা সবার সঙ্গে মেশে,

সোমেন সব সময় বন্ধুদের বলে ওর সাথে বেশি খেলার দরকার নেই ও ভালো ছেলে না।  

 নম্বর আমি ক্লাসে বেশি পাই সুতরাং আমি ভালো--- তোমরা আমার সঙ্গে মেশো আমার সঙ্গে খেলো ওর সাথে না, --- এভাবে বন্ধুদের থেকে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জগা ।

সব বন্ধুরাই জগাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা তামাশা করে সকলেই অ্যাভয়েড করে এভাবে জগা মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।

বাড়িতেও সবাই জগা যেহেতু বড় ছেলে বাবা রিটায়ারের পর জগার ওপরই সব দায়িত্ব পড়ে।

ছোট বলে সোমেন গা বাঁচিয়ে বাড়ির বাইরে দূরে পড়াশোনার জন্য চলে যায়।

একদল টিউশনি এবং কোচিং এ পড়িয়ে বোনেদের পড়াশোনার দায়িত্ব বড় বোনের বিয়ের দায়িত্ব সব গ্রহণ করার পরেও নিজের লেখাপড়া পাশাপাশি চালিয়ে যায় ।

তার সঙ্গে নিজের লেখা লিখি ও চালিয়ে যায়। কলকাতার বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় সে কবিতা পাঠে ডাক পায় ।

বড় বড় পত্রিকায় তার লেখা ছাপা হয়। 

এভাবে বেশ কিছু বছর চলে যাওয়ার পর সে এমএ পাস করে বিএড করে এবং চেষ্টা করে পিএইচডি করার 

এসময় সে অনেক ইমপ্রুভ করে ফেলে নিজেকে কিন্তু ইহার ভাগ্য সহায় হয় না। কোন ভালো চাকরি জোটে না। সেই কোচিং এ পড়িয়েই বউ বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হয়।

 এভাবে তার ছেলেপুলেরাও বড় হয়ে যায় সে অনেক লেখালেখি করে যায় ,পত্রিকা চালিয়ে যায় ।

কিন্তু আর যোগাযোগ কারো সঙ্গে রাখতে পারে না ,অনেক চাপ থাকে তার সংসারের জোয়াল টানার।

 রিটায়ারমেন্টের পর অসুস্থ হয়ে পড়ে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে তার ফলে সে বাড়িতে বসে এবার লেখালেখি করার কথা ভাবছে যখন তখন এক অকবি তাকে বিভৎস ভাবে হিপ্রোটিজম করতে থাকে। প্রতিদিন সে তার কবিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে এবং বলতে থাকে সে কবিতার হোল টাইমার সে বড়লোকের বকে যাওয়া ছেলে। বাবার পয়সায় বসে বসে খায় আর কবিতার দালালি করে। কিন্তু এই জগার পেছনে পড়ে যায়।


দিনের পর দিন সে প্রচার করতে থাকে যে সেই বিখ্যাত কবি তার ভীষণ নাম ডাক এবং সে খুব বড় বিখ্যাত কিন্তু তোমাকে কেউই চেনে না অথচ প্রতিদিন তাহলে বিখ্যাত কবি জগারবাড়ি কি করে ?

এখনো জগা একটি পত্রিকা চালায় এবং বেশ কিছু ভূমিকা লেখা ,পুস্তক সমালোচনা করা, প্রুফ দেখা ,নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ লেখা চালিয়ে যায়।


এই অকবি তার কিছু দালাল


 দিয়ে সে নিজেকে বড় প্রমাণ করার চেষ্টা করে ,তারাও তার আশেপাশে ঘোরে এবং বলে হ্যাঁ উনি বড় কবি উনি খেতে পারেন না ও কষ্টে থাকেন আসলে সব মিথ্যে ! ভাওতাবাজি।

 দূরের লোকজন এসব কায়দা কানুন বুঝতে পারেনা তারা ভাবে হয়তো ছেলেটি খুব অভাবী 

কেন অভাব ?

 একটা সুস্থ সবল ছেলে কেন কিছু কাজ করতে পারে না ? যা থেকে তার পয়সা রোজগার হয় এবং নিজের সংসার টা চালাতে পারে। আসলে না, সে নিজেই গলাবাজি করে চিৎকার করে সবার সামনে,--- আমি বড় কবি ,আমি বড় কবি, বলে চিৎকার করে এবং বিখ্যাত, বিখ্যাত ,বলে চিৎকার করে--- জ্ঞানী গুণী এবং চেনা পরিচিত মানুষেরা ওর চিৎকারে চুপ হয়ে যায় ,মনে মনে সব বুঝলেও প্রকাশ্যে সেটা বলেনা ,কিন্তু অজ্ঞানী মানুষেরা ওকেই বড় করে তোলে ,দিনের পর দিন চলতে থাকে এইরকম অত্যাচার জগার ওপর ,---ফলে জগা বধির হয়ে যায়।

জগার লেখা কবিতার কোন সমালোচনা হয় না ,কেউ পড়ে না ,কেউ পাঠ করে না ,কোন আলোচনা হয় না।

 এদিকে অকবি নিজের মনের কথা বানিয়ে গুছিয়ে সাজিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে পয়সা দিয়ে অন্য বাচিক শিল্পী দিয়েও তা বলাতে থাকে--- ফলে ক্রমশ বিখ্যাত হয়ে উঠতে থাকে ।

এভাবে কত কত সত্য রহস্য চাপা পড়ে যায় কে জানে।।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024