এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৬ || part - 6 || Era Kara part 6 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা


 


পতিত পাবন ওর গ্রামের ছেলে। ওরা একই সাথে পড়াশুনা করতো। পতিত পাবন মেধাবী ছেলে, পড়াশুনা ছাড়া ফুটবল, কাবাডি, জিমনাষ্টিক প্রভৃতিতে ভালোনাম করেছে। সেই জন্য স্কুলে সকলের প্রিয় পাত্র। হঠাৎ করে পতিত পাবনের প্রেমে পড়বে শ্যামলী ভাবতে পারেনি। একদিন ওদের উভয়ের প্রেম গভীরে গিয়ে ছিলো। কিন্তু এদের প্রেম ক্ষনভঙ্গুর হবে ভাবতে পারেনি পতিত পাবন। অবশ্য বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে কি শ্যামলী। যে দিন শ্যামলীর বিয়ের কথা বার্তা পাকা হলো সে দিন শ্যামলীর চরিত্র পুরো পালটে গেলো। পতিত পাবন সেদিন গভীর দুঃখের সাথে বলেছিল- আমাকে বিশ্বাস করতে পারলে না শ্যামলী! শ্যামলী প্রায় অহংভাব নিয়ে বলে ছিলো তোমার ঘরে আমাকে মানাবে না পতিত, কারন ঐ ভাঙ্গা ঘরে জ্যোৎস্নার আলো প্লাবিত হবে না, আমি যে জ্যোৎস্না সম। তুমি আসতে পারো। শ্যামলী ওদের বাড়ীতে দরজা বন্ধ করে ভেতরে প্রবেশ করলো। বুধুরামের কন্ঠস্বরে শ্যামলীর চমক ভাঙ্গলো।


কি ভাবছো বৌমা?


-ও কিছু না, বলুন আমায় কি করতে হবে।


- আমি যা বলবো তা তোমাকে করতে হবে। আমার মনের যে কামনা বাসনা তা চরিতার্থ করতে হবে। আমি তো জানি আমার ও হাজরা বাবু কথোপথন আড়ি পেতে শুনছিলে। তবে খুব ভালো করেছো। আমাকে নতুন করে বোঝাতে হবে না।


বুধুরামের অনেক দিন ধরে অন্তঃজ্বালা হচ্ছে। তার ইচ্ছে শ্যামলীকে একদিন বুকে চেপে ধরবে আদর করবে। কোন প্রকারে যদি কাছে টানার সুব্যবস্থা করতে পারে তাহলে বুধুরাম ষোল আনা কিস্তি মাত করবে। তার অদম্য লালসায় তাকে একদিন তার শয়ন কক্ষে নিয়ে যাবেই। এই চাকুরীটা করে দিলে ওকে হাতের মুঠোও পেয়ে যাবে। এক সময় ওর ভেতর যেন কাতলা মাছের মত লাফিয়ে উঠলো। সেই সময়ই শ্যামলীকে আঁকড়ে ধরে চুমু খেতে যাচ্ছিল; কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো বুধুরামের গিন্নী হারানী। বুধুরামের কাজে বাধা পড়তে দাঁত গুলোকে কড় মড় কড় মড় করতে করতে বললো- মাগী কিছু দিতে ও পারবে না আর নিতেও দেবে না। বুধুরাম অনেক সময় (রাত্রে) বিছানায় ছটপট করতে থাকে। তখন ইচ্ছে করে গলাটা টিপে বুড়ীকে শেষ করে দিব। কি আছে বুড়ির? বুকের হাড়গুলো দেখা যায়।


বুধুরাম এও জানে হরে রাম কোন কম্মের নয়। যাক ওসব কথায় মারো গুলি এখন কাজ হলো শ্যামলীকে কাছে পাওয়া, ও হাজরাকে দিয়ে আই.সি.ডি. এসের চাকুরী পাইয়ে দেওয়া। চাকুরীটা হলে শ্যামলীর মনটা ভালো থাকবে আর বুধুরামকে শ্যামলী গাম আঁঠা দিয়ে বুকে চিটিয়ে রাখবে। অনেক কথার গল্প তৈরী করতে করতে শ্যামলীকে বলে উঠলো- কি হলো বৌমা, চাকুরী করবে তো? শ্যামলী জানে ওর শশুর ও কলির কেষ্টটার মতলব টা কি। শ্যামলী চাকুরীর লোভটা ছাড়তে পারলো না। সরকারেী চাকুরী, তার সম্মান বাড়বে। তাই নম্র কন্ঠে বললো- আপনাদের ক্ষুধা নিবারন করার জন্য করতেই হবে। বুধুরাম প্রায় লাফ দিয়ে শ্যামলীকে ঝাপটে ধরে চুমু খেয়ে বললো- এই আমার বৌমা?- থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবে না। মনে মনে ভাবতে থাকলো, তোমার মত মাকড়াকে আমি ভালো করেই চিনি ও জানি। আমাকে পাবার জন্য তুমি যে কোন কাজ করতে পারো। তোমার কাছে মা, বোন, বেটি কারও মূল্য নেই। আর মূল্য থাকবে কেন। আনন্দ করো, ভোগ করো স্ফুর্তি করো, মনের জ্বালা মিটিয়ে নাও। কামনার জ্বালা মেটাতে যদি অতি নিম্নপথের যাত্রী হতে হয় তাও হবে। আর হিড়িম্ব হাজরা, সে তো আরো লম্পট, চরিত্রহীন। ব্যাটার রুচিবোধ নেই। শ্যামলী জানে মিঃ কলির কেষ্টর বাহু বন্ধনে ওকে আবদ্ধ হতে হবে। নতুবা চাকুরীর জন্য কড়ি মাপতে হবে। শ্যামলীর টাকা পয়সা নেই। তার শশুর বুধুরাম হলো হাড় কিপটে মানুষ। দিনে কটি বিড়ি খাবেন তার হিসেব রাখেন। বৌমার ইজ্জতের চেয়ে টাকা হলো আসল সম্পদ। বুধুরাম এক সময় বলে উঠলো- তাহলে বৌমা হাজরা বাবুর সাথে কথা কই কেমন? শ্যামলী বললো-বলে দেবেন আগামী সোমবার দুপুর বারটায় ওর অফিসে হাজির হবো। আর আপনি ও এক কাজ করুন- শাশুড়ী মাকে ছলে বলে কৌশলে বাপের বাড়ীতে রেখে আসুন। তাহলে আপনারও সুবিধে হবে, কারন ডুবে সাঁতার যখন কাটবেন পিছনটান থাকবে না। তাহলে আমিও রাত ভোর আপনার সঙ্গিনী হতে পারবো। বুধুরাম ওর কথাশুনে কি যে করবে ভাবতে পারছে না। এটা স্বপ্ন, না বাস্তব! আবার আরেকটা কথায় চমকে উঠলো, পারেন তো কচি পাঁঠার মাংস ও বেশ দামী ইংলিশ বোতল নিয়ে আসবেন। প্রথম শয্যাতে ওটা বাদ থাকে কেন? বুধুরাম ওর কথা শুনে নানা রঙীন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। আনন্দে বিভোর হয়ে বললো- বৌমা, শ্যামলী ততক্ষনাৎ পাল্টা জবাব দিল, বৌমা নয় বল ডালিং। আমার প্রিয়তমা। বুধুরাম আনন্দে গদ গদ হয়ে বললো- ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমার নির্দেশ মতো কাজ হবে। বুধুরাম মনে অংক কষেছিলো, হাজরা বাবুর যদি সঙ্গিনী হতেই হয়, তাহলে কেনই বা ওর পূর্বে শ্যামলীকে কাছে টানবে না। শ্যামলী যখন নিম্ন কাজে ভাসতে যাবে তখন বুধুরামের আশাখানি কেন পূর্ণ করবে না। শ্যামলীর জীবন এই ভাবেই কাটতে শুরু করলো। অবশ্য তার চাকুরীটা হয়েছে।


এবার আপনারা বলুন, আমাদের সমাজটাকে কারা অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হায়রে বিধাতা এদের কি বলে বাহবা দেবে। শুধু শ্যামলী নয় আরো কতনারী এদের পাল্লায় পড়ে এই সব অপীতিকর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ বা এদের ফাঁদে পড়ে এই জীবন শুরু করছে। কেউবা আত্ম হননের পথ বেছে নিচ্ছে। এর জন্য দায়ীকে? আপনি, আমি, না ঐ জানোয়ারের দল!



Part - 7


Part - 5


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024